আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার স্কুলজীবন: তালপাতার সেপাই



এক. প্রথম হাতে খড়ি হয় কঞ্চির কলম দিয়ে। কয়লা পিষে তার সাথে গাবের আঠা মিশিয়ে তৈরি করা হতো কালি আর সেই কালির দোয়াতে কঞ্চির কলম ডুবিয়ে লিখতে হতো। লিখার জন্য কাগজের খাতা ব্যবহৃত হতো না। তালের পাতা কেটে শুকিয়ে গোছা করে বেঁধে তৈরি হতো খাতা আর সেই খাতার ওপর কঞ্চির কলম হাতে আঁকিবুকি করতো ছোট্ট বলাই। হাতের লিখা ভালো হওয়ার এটা নাকি একটা পূর্ব শর্ত।

বাংলা বর্ণমালা স্বরবর্ণ দিয়ে শুরু হলেও বর্ণমালা লিখতে শেখার প্রক্রিয়া শুরু হয় 'ক' বর্ণ দিয়ে। 'ক' লিখতে শেখানোর পদ্ধতিটা খুব মজার। মা তিনটা বিন্দু এঁকে আমার হাতে কঞ্চির কলম ধরিয়ে দিয়ে বিন্দুগুলো একটার পর একটা যোগ করতে বলতেন। যোগ করা শেষ হলে একটা বিন্দু দেখিয়ে দিয়ে একটা হুকের মত জিনিস আঁকতে বলতেন। হুকটা অনেক সময়ই উলটাপালটা করে ফেলতাম।

ফলে সেটা 'ক' না হয়ে 'ব' এ 'উ-কার' হয়ে যেত। মা পরম মমতায় হাত তাঁর হাত দিয়ে আমার হাতটি ধরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঠিক করে দিতেন। বর্ণমালা লিখা শেষ হলে ফলা শেখা শুরু হয়। আদর্শলিপি দেখে দেখে ফলাগুলো লিখতে শেখার এই পর্যায়ে প্রথম স্লেট পাই। স্লেটটি একটু বড় সাইজের, চারপাশ যত্ন করে কাঠ দিয়ে বাঁধানো ছিলো।

লিখার কাজে ব্যবহৃত হত খড়ি মাটি। চকের ব্যবহার সম্ভবত তখনো অতো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। স্লেটটা অনেকদিন ছিলো। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় একবার কলা চুরি করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত পায়ের নিচে পড়ে স্লেটটি ভেঙ্গে যায়। কষ্ট পাই খুব।

সেই কষ্টের রঙ আজো ফিকে হয়ে যায় নি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।