বন্ধ জানালা, খোলা কপাট !
আমাদের সমুখে তাজা রজনীগন্ধা বুকে ধারণ করা গর্বিত নীলফুলদানী । সতেজ রজনীগন্ধারা আমাদের নীরবতার নীরব সাক্ষী । রজনীগন্ধার মোহনীয় সৌরভ গায়ে মেখে মুখোমুখি বসে আছি আমরা । গোলাপী মোমবাতির মৃদু আলো ছড়ানো ঘরময় । সে নরম আলোয় আমি তাকে দেখছি ।
নিটোল মুখ, নিমীলীত নেত্র । পদ্মকরে মেহেদির আলপনা । আলতা রাঙ্গা পদযুগল । মসলিন সুতোর লাল শাড়ি আবৃত দেহাবয়বের দিকে তাকাতে পারিনা-মুগ্ধতায় দৃষ্টি অবশ হয়ে আসে । এ কোনো সুন্দর স্বপ্ন দৃশ্যের মত মনে মনে হয় আমার ।
স্বপ্নাবিষ্ট আমি জানিনা,কতোটা সময় বয়ে গেছে এভাবে । ক্ষয়ে যাওয়া মোমবাতি দেখে অনুমান করি-হবে অনেকটা সময় ।
দু'জনার কারো মুখেই কথা নেই, বুকে জমছে কথার পাহাড় । ইচ্ছে হয় চিত্তকার করে বলি,'বধূ ! কথা কও !' খুব ইচ্ছে হয়, প্রেমের কবি নজরুলের সেই তারার ফুল এনে তার খোঁপায় গুঁজে দেই ! অসম্ভাব্যতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে বরং তার খোঁপা থেকে রঞ্জিকা গোলাপ তুলে নেই । গোলাপের আলতো পরশ দেই ওর চিবুকে ।
ভীত হরিণী চোখ তুলে তাকায় । তার আলোয় মুহূর্তে আলোকিত হয়ে উঠি আমি । গানের ওই লাইনটি মনে পড়ে যায়-বধূ এ কোন আলো লাগলো চোখে...! তার হাতের সাথে মিতালী গড়তে যায় আমার হাত । সন্তর্পনে হাত ছাড়িয়ে খানিকটা পিছু সরে যায় ও । চেপে রাখা কথামালারা অবগুন্ঠন ঠেলে বেরিয়ে আসে যেন ,-'দোহায়; আমাকে ছুঁবে না !' তার বুকে জমা কথার পাহাড় ওই চারটা শব্দেই ভেঙ্গে চুরচুর হয় ! বুঝতে না পারা মানুষের মত সাগরসম জিজ্ঞাসা নিয়ে তার চোখে গভীর করে চোখ রাখি ।
আমার হাত না ধরেও তার জীবন ইতিহাসের গলিতে সে আমাকে টেনে নিয়ে যায় । ওর জীবনের সেলুলয়েড ফিতা আমার সামনে দৃশ্যমান হয় যেন । বলতে শুরু করে সে-'যদি বলি আমার পিতা-মাতা বলে যাদের জেনেছ,তাদের ঔরষজাত নই আমি, খুব কষ্ট পাবে ?'
বিস্ময় বিমূঢ়তায় আমার মুখে কথা সরেনা । হিমশীতল এক শ্রোত বয়ে যায় শুধু মেরুদন্ড বয়ে । ফের বলতে থাকে ও-
'জন্মের পর আমার স্থান হয় কোনো এক আস্তাকুঁড়ে ! বাবা-মা সেখানেই আমাকে কুড়িয়ে পান...।
নিজ সন্তানের মতনই আমাকে মানুষ করেছেন তারা । কিন্তু সত্যিটা এই যে, আমার কোনো জন্ম পরিচয় নেই !'
বলতে বলতে গলা ধরে আসে তার । ঝরঝর কেঁদে ফেলে সে । গোলাপ পাপরি ছড়ানো মখমল নরম বিছানাটা আমার কাছে পাথুরে মনে হয় । মনে হয়, এ বিন্ধুতেই থেমে যাক সময় ! স্তব্ধ হয়ে যাক পৃথিবী ! আর কখনই যেন কারো কাউকে ভালবেসে কষ্ট পেতে না হয় ।
জগতের তাব্ত্ নীরবতা আমাদের বদ্ধ ছোট্ট ঘরটাতে নেমে আসে । ধীরে বয়ে যায় বিষাদী সময় । আমাদের শব্দরা হারিয়ে যায় যেন দূরে কোথাও । মৌনতা ভেঙ্গে বাস্পিত কন্ঠে একসময় জানতে চায় ও-'কিছুই কি বলার নেই তোমার ?'
'কি বলব ! এসব কিছুইতো জানানো হয়নি আগে । এখন এই সুন্দর রাতটাকে নষ্ট না করলে হতো না !'
'জানানো হয়নি কারণ,মা-বাবা জানাতে চাননি ।
কিন্তু আমি বিশ্বাস করি মিথ্যে ইটে গড়া ইমারত ধ্বসে যাবেই । এখন যদি তুমি আমায় চলে যেতে বলো,অপরাধীর মত দরোজা খুলে বেরিয়ে যেতে রাজি... !'
ওর সকরুণ কথামালায় আমার ভেতর তোলপাড় হয়,ভাঙ্গচুর হয়। ওর কষ্ট আমাতে ওক ও অভিন্ন বোধহয় । এক ও অভিন্ন আত্মা যেন । পূর্ণ নির্ভরতায় মুঠো ফুরে নেই তার হাত ।
আমি এবং ও, আমরা দুজনে অপেক্ষায় থাকি,পৃথিবীর জানালায় কখন ফুটবে দিবাকর ! নতুন দিনের নতুন সূর্যালোকে স্নাত হবো আমরা !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।