আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্রোহী পুরাণ ০২

একমাত্র ব্যানমুক্ত ব্লগ!

“দ্রোহী পুরাণ সিরিজের গল্পগুলোর মাল-মশলার যোগানদার মুখফোড়” ****************************************** ইদানিং আদম খুব বখিয়া যাইতেছে! তাহাকে প্রায়শই নিষিদ্ধ বৃক্ষের আশে পাশে ঘুরাফিরা করিতে দেখা যাইতেছে। কতিপয় স্বর্গদূত আসিয়া ঈশ্বরকে বলিলো, আদম তাহাদিগকে ঘুষ প্রদান করিয়া নিষিদ্ধ ফল হাতাইতে চাহিয়াছে! ঈশ্বর চিন্তিত হইয়া পড়িলেন। আদমের একটা বিহিত না করিলেই নয়! তিনি বুঝিতে পারিলেন, আদমকে শাস্তি প্রদান করিবার সময় ঘনাইয়া আসিয়াছে। আদমকে দেয়া সাবধানবাণী অনুযায়ী তিনি আদমকে পৃথিবীপৃষ্ঠেই নিক্ষেপ করিবেন বলিয়া ঠিক করিলেন। আদমকে পৃথিবীপৃষ্ঠে নিক্ষেপ করার পূর্বে পৃথিবী সৃষ্টি করিতে হইবে।

আর তাই ঈশ্বর একটি পাইলট প্রজেক্টের অনুদান চাহিয়া একখানা প্রজেক্ট প্রপোজাল লিখিয়া জেমস বন্ডাইল মারফত পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করিলেন। পরিকল্পনা কমিশন একটি সাময়িক প্রজেক্টের জন্য অনুদান দিতে রাজী হইলো। ঈশ্বর বলিলেন, “লেট দেয়ার বি লাইট!” কারিগর স্বর্গদূতগন জিজ্ঞাসা করিলো, “আলো কিরুপে তৈয়ার করিব?” ঈশ্বর স্বর্গদূতদিগকে বুঝাইয়া দিলেন, “একটি বিশাল অগ্নিকুন্ড সৃষ্টি করিবে। তাহাই হইবে আলোকের উৎস। ” স্বর্গদূতগন বলিলেন, “অগ্নিকুন্ড হইতে যে ধোঁয়া সৃষ্টি হইবে তাহা কিরুপে নিয়ন্ত্রন করিব?” ঈশ্বর বিরক্ত হইয়া স্বর্গদূতদিগকে ধোঁয়াবিহীন অগ্নিকুন্ড সৃষ্টি করিতে নির্দেশ প্রদান করিলেন।

স্বর্গদূতগন ঈশ্বরকে জানাইলো আলোক উৎস সৃষ্টি করিলে পরিবেশের কোনরুপ ক্ষতিসাধিত হইবে না এই মর্মে “বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর” হইতে একখানা নির্মান পারমিট ইস্যু করিতে হইবে। ঈশ্বর আলোক উৎস সৃষ্টি করিবার অনুমতি প্রদান করিবার জন্য একখানা নির্মান পারমিট চাহিয়া “বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর” বরাবরে পত্র লিখিলেন। বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর আলোক উৎস তৈয়ার করিবার অনুমতি প্রদান করিল এবং সেইসাথে জানাইয়া দিল- ক্রমাগত আলো জ্বালাইলে থার্মাল পলিউশনে জগতের ক্ষতিসাধিত হইবে। সুতারাং অর্ধেক সময় ধরিয়া আলোক উৎস বন্ধ রাখিতে হইবে। ঈশ্বর চরম বিরক্ত হইয়া ক্ষেদোক্তি করিলেন, “ভালোই হইয়াছে! অর্ধেক সময় ধরিয়া আদমকে পাপাচার হইতে বিরত রাখা সম্ভব হইবে।

” অতঃপর তিনি আলোকোজ্জল অংশের নামকরণ করিলেন “দিন” এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশের নামকরন করিলেন “রাত”। পৃথিবী সৃষ্টি করিবার পর ঈশ্বর ভাবিলেন, “পৃথিবীকে উদ্ভিদ ও প্রাণীতে পরিপূর্ণ করিয়া দেয়া যাক! আকাশে পাখি উড়িয়া বেড়াইবে, ঝরনা হইতে পানি ঝরিবে, চারিদিকে সবুজের সমারোহ হইবে। পশু-পাখীরা খেলাধুলা করিয়া পরমানন্দে দিনাতিপাত করিবে। দেখিতে বেশ হইবে!” স্বর্গদূতগন জানাইলো, “উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টি করিতে হইলে যথাক্রমে “বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর” এবং “পশুসম্পদ অধিদপ্তর” হইতে অনুমতি লইতে হইবে। ” বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কেবলমাত্র প্রাকৃতিক বীজ হইতে উদ্ভিদ সৃষ্টি করিবার অনুমতি প্রদান করিলো।

কিন্তু পশুসম্পদ অধিদপ্তর ক্যাচাল লাগাইলো- তাহারা জানাইলো, পশু-পাখীদের খেলাধুলার ব্যবস্থা করিবার জন্য “ক্রীড়া নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের” অনুমতি লাগিবে। ঈশ্বর ক্রীড়া নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর বরাবরে একখানা পত্র লিখিয়া পশু-পাখীদের খেলাধুলা করিয়া দিনাতিপাত করিবার অনুমতি প্রদান করিবার জন্য জানাইলেন। ক্রীড়া নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর ঈশ্বরকে জানাইলো, “খেলাধুলার ব্যবস্থা করিতে হইলে স্টেডিয়াম বানাইতে হইবে, ইহাতে নিদেনপক্ষে বছরখানেক সময় লাগিবে। স্টেডিয়াম তৈয়ার করিবার জন্য দরপত্র আহবান করা হইয়াছে। ইহা ছাড়াও ধর্ম মন্ত্রনালয়ের সহিত মিটিং করিয়া নারীদিগের জন্য খেলাধুলা করিবার অনুমতি লইতে হইবে।

সবকিছু মিলাইয়া একবছরের বেশী সময় লাগিবে। ” ঈশ্বর বলিলেন, “কিন্তু আমিতো ছয়দিনে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করিয়া সপ্তম দিনে বিশ্রাম লইবো বলিয়া ভাবিতেছি!” ক্রীড়া নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর জানাইলো, তাহারা নিরুপায়- বিভিন্ন অধিদপ্তরের লাল-ফিতার দৌরাত্ব্য হইতে স্বয়ং ঈশ্বরেরও মুক্তি নাই! সুতারাং একবছরের কম সময়ে তাহারা উক্ত প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করিতে পারিবে না জানাইয়া ক্ষমাপ্রার্থণা করিল। ঈশ্বর ইতিমধ্যেই মহাবিশ্ব সৃষ্টির জন্য ছয়দিন সময় বরাদ্দ করিয়া লইয়াছিলেন। তিনি ভাবিতে বসিলেন কি রুপে এই ছয়দিন সময়কে কাজে লাগাইবেন। তিনি সিদ্ধান্ত লইলেন, এই ছয়দিন ধরিয়া তিনি এমন কিছু একটা বানাইবেন যাহা পৃথিবীতে নিক্ষেপের আগ পর্যন্ত আদমের অজ্ঞাতসারে তাহাকে মডারেট করিবে।

অতঃপর তিনি পরিকল্পনা কমিশনের কাছে পত্র পাঠাইলেন - কোন অধিদপ্তরের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি আগামী ছয়দিনে একজন মডারেটর তৈয়ার করিতে চান, যাহার মান নিয়া তাহার কোনরুপ মাথাব্যাথা নাই। পরিকল্পনা কমিশন আদমকে মডারেট করিবার জন্য মডুরাম হিসাবে “ছাগুরাম” সৃষ্টির জন্য একটি প্রজেক্ট অনুমোদন করিল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.