নিজেকে জানার প্রচেস্টায় অহর্নিশ ভাবিত (কিছু দিন আগের আমার ফেইসবুকের একটা স্ট্যাটাসের কপি রাখলাম ব্লগে)
জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে দেশে হরতাল চলছে।
সুতরাং তেল নিয়ে একটা তৈলাক্ত পোস্টও দেয়া দরকার।
সম্পর্ক উন্নয়নে তেল বিশেষ ভূমিকা রাখে। কর্মক্ষেত্রে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, চাকুরীর প্রোমোশনে, রাজনৈতিক পদে তেলের অমিত ব্যবহার। এমনকি প্রেমিক-প্রেমিকারাও নিজেদের মধ্যে তেল দিয়ে চলে।
রান্নাঘর থেকে শুরু করে প্রশাসন, মসজিদের ঈমাম হওয়া থেকে শুরু করে বিচারক নিয়োগ কোথায় নেয় তেল! জোৎস্নার আলোর মত জাতির মাথা থেকেও তেল যেন চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ে। তেল যখন এমনই একটি চালিকা শক্তি সর্বক্ষেত্রে, সেখানে তেলের মূল্যবৃদ্ধি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা হবে এটাই স্বাভাবিক।
আর, তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে পুরো জাতির নিজেদের সম্পর্ক খসখসে হয়ে যাওয়ার একটি বিরাট সম্ভবনা দেখা দেয়। সুতরাং এর দাম বাড়ার সাথে বিক্ষোভে ফেটে পড়ার সম্পর্ক সমানুপাতিক।
এতক্ষণ উপরে যা বললাম, তা হল অদৃশ্য তেলের কেরামতি।
এই তেলে যারা তৈলাক্ত থাকেন তারা সাধারণত উপরের স্তরের মানুষ। এই তেল দেয়া নিয়ে প্রতিযোগীতাও হয়ে থাকে। কে কাকে কত ভাবে তেল দিতে পারে, চলে তার প্রতিযোগীতা। আর সেই প্রতিযোগীতাতেও ঘটে যায় নানা রঙ্গ। সেই দিক আর না গেলাম।
এবার আসেন তেলের দাম বাড়লে জীবনের বৈচিত্রময়তার কিছু দৃশ্য দেখিঃ
বাসের ভাড়াঃ
তৈলমূল্যবৃদ্ধির সাথে বাসের ভাড়ার প্রেমের সম্পর্ক কে না জানে। মধ্যরাত থেকে তেলের দাম বাড়ার কথা থাকলেও বাস ভাড়া বাড়ে আগের দিন সন্ধ্যায়। কারণ, জানতে চাইলে বাসের হেল্পারদের থেকে উত্তর পাবেন, ‘রাত থ্যাইকা দাম বাড়ব এর ল্যাইগা তেল বেচন বন্ধ কইরা দিছে। আপনাগো ল্যাইগা খোলা যায়গা থ্যাইকা বেশি দামে তেল ক্যিনা বাস চালাইতেছি’। বাসের হেল্পারের এমন তেল মাখা কথা শুনে অনেকে তেলের দামের কথা ভুলে যান।
এই সুযোগে তারা ৫টাকার ভাড়া যেখানে হবে ৭টাকা, তারা ৮টাকা নিতে ভুল করে না।
কেউ কেউ আবার পেছন সীট থেকে এই চাপাবাজীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়, ‘ত্যালের দাম বাড়ছে বাস চালানার দরকার কি? গাড়ি গ্যারাজে হান্দায়ে রাখ!’
তবে এর ভাল প্রভাব দেখা যায় দু’দিন পরেই যখন হাতাহাতি, নাকাহাতি (হাত দিয়ে নাকে ঘুষি) শুরু হয়ে যায়।
তখনকার কথা গুলো থাকে এমন,
-কয় টাকা দিলেন? আরও দেন
-তুই কোন হিসাবে এতো টাকা চাস। তেলের দাম বাড়ছে ‘এত’, নিবি এত।
-না পারুম না, আরও দেন।
-এটাই ভাড়া, আরও চাস তো থাপড়া দিমু।
-না, ভাড়া দেন।
-কইলাম না থাপড়া দিমু!
-থাপড়া দিবেন দেন, আগে ভাড়া দেন।
-তরে কিন্তু সত্যি সত্যি থাপড়া দিমু আরেকবার চাইলে।
-ভাড়া দিয়া থাপড়া দেন।
অনেক রসিক ক্ষুব্ধ যাত্রী হেল্পারের চাওয়া ভাড়া দিয়েই একটা মাঝারী ধরনের থাপ্পড় দিয়ে বসে। থাপ্পড় খেয়ে হেল্পার কয়েক সেকেন্ড সময় নেয় কি হল বোঝার জন্য।
সম্বিত ফিরে পেয়ে অপমানিত ভাব নিয়ে বলে, ‘পারেন তো খালি গরিবের প্যাটে লাত্থি মারতে! হ্যাগো তো কিছু কইতে পারেন না’
এতক্ষণ যারা তাকায়ে তাকায়ে রঙ্গ দেখছিল তারা বলে, ‘হইছে, টাকা পাইছত, থাপ্পড় খাইছত, এখন অফ যা’
প্রেমিক-প্রেমিকার বাইকে ঘোরাঃ
অনেক মেয়ে আছে যারা বাইকে ঘুরতে পছন্দ করে, আবার অনেকে প্রেম করার প্রথম শর্ত হিসাবে দেখে ছেলের বাইক আছে কিনা। সুতরাং যাদের শর্তই থাকে ‘বাইক’, তারা নিয়মিত লং বাইক ড্রাইভে যাবে এটাই স্বাভাবিক। এখন যখন তেলের দাম হু-হু করে বাড়ছে তখন বাইকের ব্রেক চাপার সাথে সাথে প্রেমিকাকে নিয়ে ঘোরার ব্রেকটাও কিছুটা চেপে ধরতে হয়।
আর এটা করতে গিয়ে যতখুনসুটিঃ
-জান, আজকে আর বেশি দূর না যায়। দিনকাল যা খারাপ পড়ছে বেশি দূর যাওয়া ঠিক হবে না।
-কেন, প্রেম করার আগে তো বলছিলা বাইকে করে সারা দেশ ঘুরবা! আর এখন, আশুলিয়া থেকেই ঘুরতে চাও?
-আসলে জান, ট্যাংকে যতটুকু তেল আছে তাতে গেলে ঠিকমত ফিরতে পারব কিনা সন্দেহ।
-হইছে চল, আর যেতে হবে না। সব তোমার ফন্দি-ফিকির, এখনই এই অবস্থা বিয়ের পর বাইক বলে বাসায় কিছু থাকবে না।
একটা বাইক চালানোর তেল-ই ঠিক মত জোগাড় করতে পারো না, আমাকে চালাবা কিভাবে!
প্রেমিকার এমন অভিমান ভাঙ্গাতে আবার সেই তেল মারতে হয় প্রেমিককে কয়েকদিন ধরে।
কাঁচা বাজারঃ
বাজারে আগুন লাগছে বললে আমরা যে বাজার বুঝি সেটাই কাঁচা বাজার। বর্তমানে এর যা অবস্থা তাতে একে কাঁচা বাজার না বলে পাকা বাজার বলাই ভাল। দামের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ। কিছুদিনের মধ্যে আবারও দাম বাড়তে যাচ্ছে।
আগে সবজীর দাম উঠানামার সাথে ফরমালিনের গোপন সম্পর্ক ছিল। ফরমালিনের দাম বাড়লে এসবের দাম বাড়ত আবার দাম কমলে এসবেরও দাম কমে যেত। সেই জায়গায় পরকীয়া প্রেমিকের মত স্থান দখল করে নিচ্ছে জ্বালানী তেল। সুতরাং টমেটোর দামের সাথে ফরমালিনের দামের পিরিতের সম্পর্কের একচ্ছত্র আধিপত্যের ইতি।
কৃষিকাজঃ
যে সমস্ত কৃষকরা বেশ কয়েক বছর ধরে পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ-বাস করে আসছিলেন তারা উৎপাদন খরচ কমাতে দেখা যাবে সব ট্রাক্টর, পাওয়ারটিলারগুলোকে অবসরে পাঠায়ে দিয়েছে।
এক সকালে কৃষক তার পুরানা সেই লাঙ্গল নিয়ে বের হতে যাচ্ছে এমন সময় বউ পেছন থেকে হাক ছাড়বে, ‘কি ব্যাপার! বুড়া বয়সে ভিমরতি! এরশাদের দলে নাম লেখাইছো, না? বুড়া বয়সে সতীন ঘরে আসলে এই ঘর জ্বালায়ে দেব, কয়ে রাখলাম!!!’
কৃষক বেচারা হয়ত মলিন বদনে ঘর থেকে বের হয়ে যাবে লাঙ্গল নিয়ে।
পরে এসে স্ত্রীর মনের জং সারাতে দিবে তৈল।
যাইহোক। ।
তেল থাকুক জীবনের সব মন্ত্রে।
তেল থাকুক রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রে।
সব খানে তেল দেন
স্ত্রী, কিংবা প্রেমিকার ভাঙ্গাতে অভিমান
আর তোলেন স্লোগান, তেলের দাম কমান”
আপাতত লেখার ধৈর্যের তেল শেষ। বিদায়। । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।