সযতনে খেয়ালী!
নাগরী বাজারের সেমেট্রির ওয়ালে বসে বসে বাদামের প্যাকেটের ভেতর অমনযোগী হাত চালাচ্ছেন গোয়েন্দা প্যারীচাঁদ মিত্তির। পিসি মিত্তির বলে যিনি এক নামে পরিচিত একেবারে সুউচ্চ ডন এলবাবাদমদম এর কাছেও।
হাতের ডানদিকে কতগুলো কাগজ, তার ওপর একটা আতশী কাঁচ। হাতের বাম দিকে আধো খাওয়া বাদামের প্যাকেট। এই নির্জন সেমেট্রির ওয়ালে পিসি মিত্তিরকে পা দুলিয়ে আয়েশী ভঙিতে পায়েস খাবার মতো মনে হলেও ঘটনা কিন্তু একদমই সেরকম না।
এবারের 'কেইস'টা একটু বিখাউজ্যা। জটলা খুলতে গিয়ে গিট্টু আরো লেগে যাচ্ছে। সাসপেক্টসরাও ইয়্যুজুয়াল না। সবাইকেই মনে হচ্ছে পুকুরের কাঁদার কাছাকাছির। "দেয়ার মাস্ট বি সাম ওয়ে..." বলেই শ্যাওলা পড়া ওয়ালে ডান হাত দিয়ে একটা কিল মারে পিসি মিত্তির।
হাতের কনুইয়ের খোঁচা লেগে আতশী কাঁচ সহ কাগজ গুলো পরে যায় মাটিতে।
সুন্দর জোছনা রাত। সাক্ষাত পূর্ণিমা। ইয়া বড় একটা চাঁদ মনেহয় কয়েকশো মিটার দূরেই আছে। এমন রোমান্টিক একটা পরিবেশে কিনা তাকে ভাবতে হচ্ছে একটা ঘিরিঙ্গি মার্কা কেইস নিয়ে! চার্চের দিকে তাকিয়ে পিসিমিত্তির দেখে ফাদার স্টিফেনের ঘরের বাতি এখনো জ্বলছে।
ফাদারের সাথে দেখা করতে যাবে নাকি পানজোরা ফিরে যাবে এমন দোটানায় যখন সে দুলছে ঠিক তখনো কাছে কোথাও 'পতপত' শব্দ তুলে একটা প্যাঁচা উড়ে গেলো, ঠিক তার পরক্ষণেই ডেকে উঠলো ভয়ার্ত কণ্ঠে!
ডাকটাকে অনুসরণ করতে গিয়েই তার চোখ আটকে গেলো মাটিতে পড়ে থাকা কাগজ গুলোয়। চাঁদের স্পষ্ট আলোয় ঝলমলে মুখের ছবিটা দেখতে পেলো সে। হাতে তুলে নিয়ে দেখতে লাগলো সাসপেক্টসদের প্রোফাইলগুলো আবার...
সাসপেক্ট ১ : শরিফ বেগতিক
বয়স : ৩২ বছর ৩ মাস ৩ দিন
বাবার নাম : অজ্ঞাত,
বউয়ের নাম : অজ্ঞাত,
শালির পরিমান : সম্ভবত ১ টা (শিউর না),
শালির বয়স : অজ্ঞাত,
পেশা : ব্লগিং (ফুলটাইম)
স্পেশাল কোয়ালিটি : রমনীভাগানী;
সাসপেক্ট ২ : টাকশিক
বয়স : ৩৩ বছর ৫ মাস ৪ দিন
বাবার নাম : অজ্ঞাত,
বউয়ের নাম : অজ্ঞাত,
শালির পরিমান : ১টা,
শালির বয়স : বেশী না,
পেশা : ফাঁপড়বাজী,
স্পেশাল কোয়ালিটি : গালাগালি;
সাসপেক্ট ৩ : কামাল ডাঙ্গর
বয়স : ৩৫ বছর ৯ মাস ৬ দিন,
[সাসপেক্ট বড়ই ঘিরিঙ্গি। কোন রেকর্ড নাই]
প্রথম পাতা উল্টিয়ে পিসি মিত্তির যেইনা দ্বিতীয় পাতায় সাসপেক্ট ৪ -এর ডিটেইলসে চোখ বুলাতে যাবে ঠিক তখনি অদূরে কেউ যেনো সেমেট্রির ঝরা পাতায় খুব দ্রুত পা মাড়িয়ে পেছনের অপেক্ষাকৃত অন্ধকারের দিকে ছুটে গেলো। পিসি মিত্তিরও কাগজ গুলো রেখে ছুটলো পেছন পেছন।
কালো গাউন পরা কেউ দৌড়ে যাচ্ছে খুব দ্রুত। সেমেট্রির প্রায় শেষ প্রান্তে এসে একটা ইঁদুরের গর্তে পা ফেঁসে গিয়ে ধপাস করে না পড়লে হয়তো ধরে ফেলতে পারতো গাউন পরা "ছায়া" টাকে। একটু পরেই একটা সাদা রঙের মাইক্রো বেড়িয়ে যেতে দেখলো মাটিতে ধপাস অবস্থাতেই।
"বাহ্, শুরু করতে না করতেই লেজে 'কোম্পানী' লেগে গেলো"! -ঠোঁটের কানায় হাসি ঝুলিয়ে পিসি মিত্তির উঠে পড়লো। হাত দিয়ে ঝাপ্টিয়ে জামায় লেগে থাকা ধূলা ঝেড়ে রওনা দিলো শ্যাওলা পরা ওয়ালের দিকে, যেখানে আধা খাওয়া বাদামের প্যাকেট আর কাগজগুলো পড়ে আছে।
ফিরে এসে কাগজগুলো হাতে নিয়েই কিছু একটা অসামঞ্জস্য ঠেকলো তার। কাজগগুলো উল্টে দেখলো ভেতর থেকে কয়েকটা মীসিং। সাসপেক্ট ১, ২, ৩, তারপরে ৪ আসার কথা। কিন্তু সেই এনটায়ার পাতাটাই গায়েব। এবার শব্দ করে হেসে ওঠে পিসি মিত্তির।
ওভার কোটের ভেতর থেকে টিনের কৌটায় চুমুক দেবার পরপর সেই হাসিটাও মিলিয়ে যায় যখন সে টের পায় তার আধা খাওয়া বাদামের প্যাকেটটাও হতচ্ছাড়াটা নিয়ে পালিয়েছে।
পিসি মিত্তিরের এবার কান্নায় গলা ধরে আসে!
(-চলবে-)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।