আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ ২০ বছরের যুবক এক রাস্ট্র।

প্রথম ঘটনা: অনেক অনেক দিন আগের কথা। নানাবাড়ীতে বেড়াতে গেছি। একদিন পুরো নানাবাড়ী যেন কেপে উঠল। একটা শোর উঠল চারিদিকে। দৌড়ে বেড়িয়ে দেখি এক অপরূপ দৃশ্য।

দড়জা দিয়ে ঠিক সোজা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে দেখা গেল কুকুর সদৃশ কিন্তু লেজটা ফুলানো একটা প্রাণী পুকুর পাড় ধরে দৌড়ে যাচ্ছে। এই সুন্দর দৃশ্য বেশীক্ষণ স্থায়ী হলনা। কিছুক্ষণ পর দেখলাম একদল পুরুষ মানুষ হাতে বড় বড় লাঠি, ইট, বাশ নিয়ে সেই খেকশিয়ালটিকে তাড়া করছে। এর ঠিক মিনিট দশেক পরের ঘটনা। ঐ মানব মিছিল বেশ পরিতৃপ্তি নিয়ে, গর্বিত ভঙ্গীতে ফিরে আসছে।

গর্বিত হওয়ারই কথা!!!! এইমাত্র তারা একটি শিয়ালকে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ণ করে এসেছে। এর চেয়ে মহৎ কিছু দুনিয়াতে আছে। যারা মেরেছে তাদের সাহস-বীরত্বের প্রশংসা অনেক মেয়েকেও করতে দেখেছি যদিও তারা সেই হত্যাকান্ডে সরাসরি হাত লাগায়নি। দ্বিতীয় ঘটনা: এ প্রায় বছর বিশেক আগের ঘটনা হবে। বাসা থেকে সকালে নিষেধ জারি হল বাইরে যাওয়ার।

বাইরে নাকি অনেক ভয়ানক কিছু ঘটে গেছে কিন্তু পিচ্চি বলে পুরো ঘটনা আমাকে জানানো হচ্ছেনা। তবে কিছুক্ষণ পরে শুনতে পারলাম যে সন্ত্রাসী খৃস্টান বাবুকে আরেক সন্ত্রাসী চাপাতি মেরে পিস পিস করে রাস্তায় ফেলে রেখে গেছে। মারার আগে বাবু অনেক কাকুতি মিনতি করেছিল পানি খাবার জন্য। মানুষ তার আকুতি শুনেছে কিন্তু কেউ ঘর থেকে বেড়িয়ে গিয়ে এক ফোটা পানিও দেয়নি বাবুর মুখে। মানবতা আর সাহস দুটোরই অভাব ছিল ঐ মানুষগুলোর মধ্যে।

তৃতীয় ঘটনা (যখন নিজেই শামিল): বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম সংসদের সামনে। হঠাৎ ফোন পেয়ে রওনা হলাম চন্দ্রীমা উদ্যানে। এক বন্ধুর বোন অভিযোগ করল তাকে ৮-১০ জনের একটা গ্রুপ উত্যক্ত করেছে এবং এখনো ছেলেগুলো আছে জিয়ার মাজারের ঐখানে। বন্ধুর বোনকে নিয়েই মাজারে গেলাম এবং বন্ধুর বোন পালের গোদাটাকে চিনাতে দেরী কিন্তু আমাদের হামলে পড়তে দেরী হলনা। মিনিট তিন চারেকের মধ্যে গলায় পাড়া দিয়ে নেতা গোছের ছেলেটাকে ইহকালের থেকে পরকালের টিকেট প্রায় ধরিয়ে দিয়েছিলাম আমরা।

ঘটনা বোধ হয় ঘটেই যেত যদি না অভিযোগকারিনী বন্ধুর বোন মরে যাবেত বলে আমাদের না ঠেকাত। সেদিন বুঝেছিলাম দেখতে আপাত শান্ত মনে হলেও নৃশংসতায় আমরাও কম যাইনা। তবে সেটা বিশ বছরের রক্ত গরম থাকা সময়। চতুর্থ ঘটনা নয় আসলে হবে নিয়তি: দেশে এর মধ্যে অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে। পুলিশের হাত থেকে অপরাধী ছিনিয়ে জনতা পিটিয়ে মেরেছে।

অনেককে স্রেফ সন্দেহের বশে আবার কাউকে কাউকে শত্রুতা করেও গণপিটুনির মাধ্যমে ইহকালের মায়া ত্যগ করিয়ে ছাড়া হয়েছে। তবে পরপর দুইদিন এইরকম ঘটনা পরপর ঘটে যাওয়া আগে কখনো ঘটেনি বোধ হয়। প্রথমে কালিয়াকৈরে এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ছেলে ধরা সন্দেহে এবং গতকালকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে গাজীপুরে অজ্ঞাতনামা দুজনকে। এগুলো এখন কেমন যেন গা সওয়া হয়ে গেছে। আমি এই লোকগুলোকে মানে যারা পিটিয়ে মেরেছে তাদেরলকে আলাদাভাবে কিছু বলবনা।

কারণ আমরা অনেকেই আসলে সুযোগের অভাবে চরিত্রবান। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে আমরাও যে কম যেতামনা সেটা আর বলতে। কিন্তু তারপরও আমাদের নিজেদেরই নিজেদের বলা উচিৎ - যথেস্ট হয়েছে এবার চলুন আমরা থামি। শেষ ঘটনা এবং দুর্ভাগা যথারীতি আমি রিকশায় উঠে বসে পড়লাম কিন্তু রিকশাওলার চাহিদামত ভাড়া দেয়া সম্ভবনা বিধায় আর একজন পার্টনারের অপেক্ষায় আছি। একসময় আমার পার্টনার পেয়ে গেলাম - বছর বিশেকের স্মার্ট ছেলে।

যাক সে কথা রিকশা চলছে ভালোমতই। হঠাৎই পিছন থেকে একটা রিকশা ওভারটেক করল ঝড়োগতিতে তবে তার বাতাসের ঝাপটায় আমাদের রিকশা প্রায় কাত হয়ে যায় আরকি। বাংলাদেশী পাব্লিক বলে কথা হঠাৎই মেজাজ আমার বিলা হয়া গেল। যদিও হওয়াটাই স্বাভাবিক কারণ রিকশা যে দাড়াইয়া থাকবে এইটাই আমি আশা করিনাই। আমি মনে মনে লাফ দেওয়ার প্ল্যান পর্যন্ত করছিলাম।

যাইহোক সামনে জামের মধ্যে ঐ রিকশাওয়ালারে দেখা মাত্রই লাফ দিয়া নাইমা দৌড়াইয়া রিকশাওয়ালার মুখটা আমার দিকে ঘুড়াইয়া আরামছে চড়থাপ্পড় মারার জোগাড় করতেই বরফের মত জমে গেলাম। বয়স্ক একজন মানুষ। কম করে হলেও ৬০ বছর বয়স হবে। আমার হার্টের পেশেন্ট বাপের বয়সী। কেমনে হাত তুলি? আমি তো ২০ বছরের যুবক নাই এখন!!! তবে আমার এই হঠাৎ পরিবর্তনে বোধ হয় চাচা নবযৌবনপ্রাপ্ত হইলেন।

উনার শরীরের সমস্ত তেজ ঢাইলা আমারে বললেন, গায়ে হাত দিলেন কেন? আমি তো পুরা বিস্ময়ে বিমূঢ়। রিকশাওয়ালার মুখে এমন দম্ভ! কিন্তু বিস্ময়ের মাত্রা আরো কয়েক ডিগ্রী চড়াতে এসে হাজির আমার ২০ বছরের সহযাত্রী। ঠাস ঠাস করে বুড়া চাচার গালে চড় আর তার চেয়েও বাজে ভাষার গালি। উপায় নাই গোলাম হোসেন!!!! জড়িয়ে ধরে ২০ বছরের ভ্রাতাকে পিছিয়ে নিয়ে গেলাম কিন্তু রিকশা ওয়ালা চাচারে মনে হচ্ছে ৬০ বছরের শরীরে ১৮ বছরের যুবক। উনিও সমানে বলে যাচ্ছেন মাইর আমরাও দিতে পারি।

খালি দেইনা দেইখা। এইবার তো ২০ বছরের ভাইরে সামলাইয়া রাখা ঝামেলা। সে প্রথমে দুইটা চড় মারতে গেল কিন্তু আমি ঠেকানোর কারণে বিফল হয়ে মারল গোটা তিন চার লাথ্থি চাকার উপর। রিকশার চাকা নগদে বেকে গেল। আমার আর পথচারীদের পীড়াপীড়িতে রিকশাওয়ালা চাচা তার রিকশা নিয়ে গজড়াইতে গজড়াইতে স্থান ত্যাগ করল।

২০ বছরের ভাইরে বললাম এইরকম বয়স্ক একজন মানুষের গায়ে কেমনে হাত তুললেন? ২০ বছরের ভাই কয় অন্যায় করল ও এবং তাও আপনার সাথে। আর আপনেই কিনা ওরে সেইফ করতে ঝাপাইয়া পড়লেন। এরজন্যই কারো উপকার করতে হয়না। উপকারীরে বাঘে খায়। আমি সাথে সাথে আমার ২০ বছর বয়সে চলে গেলাম।

আমিও তো এই বয়সে এইরকম মানুষের অপমানে, নিজের অপমানে, নিজের ফূর্তিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালাইয়া দিতাম। আবার লক্ষ্য করলাম ২০ বছরের ভাইরে। কী ভয়াবহ তার ক্ষোভ, কী ভয়াবহ তার ক্রোধ!! এইটা নিশ্চয়ই ২০ বছরের রোগ। তবে পুরা জাতি যদি এইরকম ২০ বছর রোগে ভূগে তাইলে তো সমস্যা। কারণ ২০ বছরের যুবকরা এক হলেই এইরকম খুন খারাবি, গণধোলাই বেড়ে যায়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.