আমি ঘুরিয়া ঘুরিয়া সন্ধানো করিয়া স্বপ্নেরও পাখি ধরতে চাই আমি স্বপ্নেরও কথা বলতে চাই আমার অন্তরের কথা বলতে চাই... এই রায়ের ফলে আমাদের কি লাভ হল ?
বাচ্চু মরলেই আমাদের কি, বাঁচলেই কি ?
হ্যা এই রায়ের ফলে তেলের দাম কমবে না,
১০ টাকা দামের ডিম আবার ৩ টাকা হবে না,
যেই শ্রমিকদের ঘামের ফসল সভ্যতা সেই শ্রমিকদের জীবনমান বাড়বে না ।
কিন্তু একটু ভাবুন আইনের শাসন বলে যে একটা জিনিস আছে, কোন মানুষ আইনের ঊর্ধ্বে না(এমন কি হোক সে "বুখারী শরীফের" অনুবাদক কিংবা বনানী মসজিদের ইমাম)এটা কোন কথার কথা না এটা সত্যি ।
এক জাহানারা ইমাম যে সময়ে এই যুদ্ধটা লড়েছিলেন তখন এর অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে এমন কি দেশদ্রোহিতার মামলা হয়েছিল, কেউ কি ভাবতে পেরেছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নড়বড়ে মঞ্চে ১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ করা বিচার একদিন বাস্তবতার রূপ দেখবে ?
এই মুনতাসির মামুন কিংবা শাহরিয়ার কবিরের মত লোকের তাদের সারাটা জীবন ধরে যে গবেষণা করেছেন যে আন্দোলন করেছেন আজ তাদের জয়। তাদের জয় বলছি কারণ প্রচণ্ড দুর্দিনেও তারা আশা হারাননি, জনমত গড়ে তুলেছেন। একটা সময় নিজামি,সাইদীর,বাচ্চুর মত বেজন্মাদের টেলিভিশন কভারেজ দিত দিন রাত আর আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল,ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবালের মত স্বজন হারা রা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতেন, কারণ তারা বিশ্বাস করতেন সত্যের জয় তো হবেই।
এটা খুব বড় একটা শিক্ষা,
জাফর ইকবাল স্যার এমনকি ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেননি কারণ, তিনি এদের নিয়ে আগেও লেখালিখি করেছেন । এই বিচারের আদালত গড়ার জন্য আন্দোলন করেছেন, কেউ যেন আঙ্গুল তুলে বলতে না পারে নিজেরা আদালত করে নিজেরাই বিচার করে . . . .
একটি আক্রান্ত পরিবারের নিরপেক্ষ থাকা যে কত বড় ব্যাপার আমরা ভাবতেও পারি না , আমার বাবার হত্যাকারী, তাকে আমি আবার
আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেব ! ! !
আপিলের সুযোগ দেব ! ! !
আমাদের অগ্রজরা আমাদের এই উদারতার শিক্ষাই দিয়ে গেলেন ।
আমরা জানলাম অন্যায় হলে যদি সংগঠিত হয়ে অন্যায়ের বিরোধিতা করা যায় তাহলে দোষী যত ক্ষমতাশালী হোক বিচার সম্ভব,
আমরা জানলাম আমরা যদি গার্মেন্টসের বেতন বৃদ্ধির জন্য যদি সংগঠিত হয়ে আন্দোলন করি,
আমরা জানলাম আমরা যদি সীমান্তে হত্যার বিরোধিতা এবং বিচার দাবী করে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন করি,
আমরা জানলাম আমরা যদি ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপের বিরোধিতা করে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন করি,
আমরা জানলাম আমরা যদি তেলের দাম বৃদ্ধি,জ্বালানির অসম(আমার গ্যাসে,তাদের ৭০%আমাদের৩০%)চুক্তির বিরোধিতা করে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন করি,
হোকনা সে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী লোক আমাদের জয় হবেই . . .
তাহলেই কিন্তু এই রায়ের ফলে তেলের দাম কমব না, ১০ টাকা দামের ডিম আবার ৩ টাকা হবে, যেই শ্রমিকদের ঘামের ফসল সভ্যতা সেই শ্রমিকদের জীবনমান বাড়বে।
শুধু আইনের শাসন নিশ্চিত হলে
বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায় হওয়ার মধ্য দিয়েই আমাদের সে পথে যাত্রা শুরু হল। আর পিছন ফিরে তাকানোর অবকাশ নেই।
১৯৭১-এ যেসব মায়েরা তাঁদের সন্তানকে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মতো দেশের জন্য তুলে দিয়েছিলেন, যেসব মায়েরা তাঁদের সন্তানহারা হয়েছিলেন, যেসব বাবারা তাঁদের সন্তানকে হত্যা করতে, লাঞ্ছিত হতে দেখেছেন এই রাজাকারগুলোর কাছে, আজকের এই রায়ে সেসব বাবা-মা দের আনন্দ যে কতখানি তা অনুভব করছি, যদিও তা আমার অনুভবের বাইরে . . . .
শেষ করি "জোছনা ও জননীর গল্প" থেকে শেষ দু'লাইন দিয়ে
"বাংলার মাটি পরম আদরে তার বীর সন্তানদের ধারণ করেছে ।
জোছনা রাতে সে তার বীর সন্তানের কবরে অপূর্ব নকশা তৈরি করে ।
গভীর বেদনায় বলে, আহারে ! আহারে ! . . ."
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।