"কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরিয়া গেছে.। " প্রথম যেদিন তুমি এসেছিলে ভবে
তুমি শুধু হেসেছিলে কেঁদেছিল সবে
আমন জীবন করিতে হবে গঠন
মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভূবন-
সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে যে কয়জন ক্ষণজন্মা পুরুষ নিজের মৃত্যুতে সমগ্র বিশ্বকে কাঁদিয়ে যাওয়ার ঐশ্বরিক সৌভাগ্য নিয়ে জন্মেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাদের অন্যতম। বাংলাদেশের বগুড়া জেলার বাগমারা গ্রামে জন্ম নেওয়া শিশু কমল এক সময় হয়ে উঠেন বাংলাদেশ ও বিশ্বের স্বাধীনচেতা গনমানুষের প্রিয় মুখ জিয়াউর রহমান। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংগঠিত শিয়ালকোট যুদ্ধের বীর যোদ্ধা জিয়াউর রহমান সময়ের দাবিতে এক সময় হয়ে উঠেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক এবং মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গনের অমিত বিক্রম সৈনিক এবং তারপর দেশের সফল রাষ্ট্রনায়ক ও ক্যারিশমেটিক রাজনীতিবিদ।
ক্যারেশমেটিক এই মানুষটিকে নিয়ে লিখতে হলে সময় ও কাগজের আনলিমিটেড যোগান প্রয়োজন।
স্বল্প পরিসরে এই মানুষটির জীবন ও কীর্তি লিপিবদ্ধ করা দূরহ ব্যাপার। তবুও সময়ের স্বল্পতা কে মনে নিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বর্নীল জীবনে অতি চৌম্বক অংশ তুলে ধরার ইচ্ছা কে থামাতে পারলামনা বলেই এই ছোট্ট লিখার অবতারণা।
শহীদ প্রেসডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহীনির একজন চৌকস অফিসার। ১৯৬৫ সালে ইন্দো-পাক যুদ্ধে তার অসামান্য কৃতিত্বে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির মুখোমুখি হয় ভারতীয় বাহিনী এবং তারা পশ্চাদপদসারণ করে। ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমান ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড -ইন-কমান্ড ছিলেন।
এর অবস্থান ছিল চট্টগ্রামের ষোলশহরে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে ওই রাতেই তিনি বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
২৫ মার্চ রাত ১১টায় অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জানজুয়া (পাকিস্তানি) জিয়াউর রহমানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরে যাওয়ার জন্য। আকস্মিক ও রহস্যজনক এই নির্দেশের অর্থ তাঁর বোধগম্য হয়নি। রাত সাড়ে ১১টার দিকে জানজুয়া নিজে এসে তাঁকে নৌবাহিনীর একটি ট্রাকে তুলে ষোলশহর থেকে বন্দরে দিকে রওনা দেন।
জিয়াউর রহমানকে রাস্তার ব্যারিকেড সরিয়ে সরিয়ে যেতে হয়। আগ্রাবাদে একটি বড় ব্যারিকেডের কারণে আবার তাঁর ট্রাক দাঁড়িয়ে পড়ে। এ সময় পেছন থেকে ছুটে আসে একটি ডজ গাড়ি। ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান চৌধুরী ওই গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে যান জিয়াউর রহমানের কাছে। হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যান রাস্তার ধারে।
খালেকুজ্জামান জিয়াকে বলেন, পশ্চিমারা গোলাগুলি শুরু করেছে। শহরের বহু লোক হতাহত। তাঁর উত্তেজিত কণ্ঠস্বর থেকে আরেকটি কথা ঝরে পড়ে। ‘কী করবেন জিয়া ভাই এখন?’ খালেকুজ্জামানের কথা শুনে গভীর চিন্তায় তলিয়ে যান জিয়া। তারপর বজ্রনির্ঘোষে বলে ওঠেন: ‘উই রিভোল্ট।
’
জিয়াউর রহমান সঙ্গে সঙ্গে খালেকুজ্জামানকে ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার্সে ফিরে যেতে বলেন। তিনি তাঁর মাধ্যমে অলি আহমদকে নির্দেশ পাঠান ব্যাটালিয়নের সব বাঙালি সেনাকে প্রস্তত করতে। একই সঙ্গে আরও নির্দেশ পাঠান ব্যাটালিয়নের সব পাকিস্তানি সেনাকর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের।
খালেকুজ্জামান যাওয়ার পর জিয়াউর রহমান ফিরে যান ট্রাকে। ট্রাকে তাঁর সঙ্গে ছিল একজন পাকিস্তানি সেনাকর্মকর্তা।
তাকে তিনি বলেন, হুকুম বদলে গেছে। বন্দরে যেতে হবে না। আর বাঙালি সেনা যাঁরা তাঁর সঙ্গে যাচ্ছিলেন, তাঁদের ইশারায় বলেন অস্ত্র লোড রাখতে। প্রয়োজন হতে পারে।
তাঁরা ফিরে যান ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার্সে।
সেখানে পৌঁছেই সঙ্গে থাকা পাকিস্তানি সেনাকর্মকর্তা ও নৌসেনাদের জিয়াউর রহমান আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। হকচকিত পাকিস্তানি সবাই আত্মসমর্পণ করে। এরপর তিনি একাই একটি গাড়ি নিয়ে ছুটে যান কমান্ডিং অফিসার জানজুয়ার বাড়িতে।
কলবেল টিপতেই ঘুম ভেঙে উঠে আসে জানজুয়া। তাঁকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে।
কেননা তার ধারণা ছিল, পরিকল্পনা অনুযায়ী জিয়া বন্দরে বন্দী হয়েছেন। জানজুয়াকে আটক করে জিয়া তাকে ষোলশহরে নিয়ে যান।
এরপর জিয়া টেলিফোনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তাঁদের কাউকে না পেয়ে তিনি টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ফোন করেন। অপারেটরকে বলেন সবাইকে ফোন করে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গলের বিদ্রোহ ঘোষণার কথা জানাতে।
অপারেটর সানন্দে তাঁর নির্দেশ পালনে রাজি হন। এরপর জিয়া কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৬ মার্চ নিজের নামেই স্বাধীনতার ঘোষনা দেন। কিন্তু পরবর্তীতে চৌকস সেনা অফিসার জিয়া বুজতে পারেন যে মুক্তিযুদ্ধ একটা রাজনৈতিক বিষয়। কাজেই এখানে রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্পর্শ অত্যাবশ্যক। তাছড়া জিয়ার নামে স্বাধীনতার ঘোষনা হলে পাকিস্থানী সামরিক জান্তা সেটাকে সেনা বিদ্রোহ বলে বিশ্বময় প্রচার করবে এবং বাংলাদেশেরে মানুষের স্বাধীনতার সংগ্রাম কে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
তাই তিনি পরক্ষনে পাকিস্থান কারাগারে বন্দী বাংলাদেশের অবিসংবাদীত রাজনৈতিক নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে পূনরায় ২৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনা দেন। কিন্তু পরে এভাবে শুরু হয়ে যায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষনা সম্পর্কে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা(সিআইএ) রিপোর্টে বলা হয় " একজন পাকিস্তানী সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করেন" ( সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো ০৮/১২/২০১২)
জিয়াউর রহামনের ঘোষণায় বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন মুক্তিযোদ্ধাসহ সবার মনে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করে। জিয়াউর রহমান এর পর আর পেছন ফিরে তাকাননি। চট্টগ্রাম এলাকায় প্রতিরোধ যুদ্ধকালে তাঁর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পরিচালনায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নেন।
জিয়াউর রহমান প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে প্রথমে ১ নম্বর সেক্টর, পরে ১১ নং সেক্টর এলাকার অধিনায়ক এবং পরবর্তীকালে ‘জেড’ ফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সার্বিক নেতৃত্ব ও পরিচালনায় বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি বড় বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এর মধ্যে কামালপুর, ছাতক, ধলই বিওপি ও রাধানগরের যুদ্ধ অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি সিলেট এলাকায় ছিলেন। কৌশলগত ও ভয়াবহতার দিক দিয়ে কামালপুরের যুদ্ধ বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম সেরা একটি যুদ্ধ।
এখনো বিভিন্ন দেশের সামরিক কোর্সের পাঠ্যা তালিকায় কামালপুরের যুদ্ধ রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় জিয়াউর রহমানকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ০৩।
যাই হোক বাংলাদেশের আপামর জনগনের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহন ও অজস্র জীবন ও রক্ত বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের অল্প সময়ের মধ্যে বাঙ্গালীর স্বাধীনতার রঙ্গীন স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শোষন মুক্তির স্বপ্নে যে সশস্ত্র যুদ্ধ জীবন বিসর্জন তার কিছুই অর্জিত হয়নি। বরং রাজনীতিতে নেমে আসে এক দলীয় শাষনের লাল ঘোড়া। গলা চিপে হত্যা করা হয় শিশু গনতন্ত্র কে। বাক ও গনমাধ্যমের স্বাধীনতা কে পাঠিয়ে দেওয়া হয় হিমাগারে। রাজনৈতিক হানাহানী, ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাস, লুটতরাজ, দূর্নীতি, ডাকাতি, অব্যাবস্থাপনার কবলে পড়ে দিশেহারা হয়ে উঠে জাতি।
রাষ্ট্র পুরাটাই পরিণত হয় একটা নিয়ন্ত্রনহীন সংগঠনে। পরিণতিতে ১৯৭৪ সালে দেশে নেমে আসে ভয়াবহ দূর্ভিক্ষ। না খেয়ে মারা যায় হাজার হাজার মানুষ। বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করে তলা বিহীন ঝুড়ির দেশ হিসেবে।
এই অবস্থায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতির মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে কান্ডারীর ভূমিকায় অবতীর্ন হন জিয়াউর রহমান।
১৯৭১ সালে দিশেহারা মুক্তিকামী মানুষের মনে যেমন সাহস ও আশার সঞ্চার করেছিলেন তেমনি রাজনীতিতেও তিনি গোটা দেশের হাল ধরেন শক্ত হাতে। হতাশা গ্রস্ত জাতিকে তিনি আবার নতুন স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন। তার পুরা শাষন আমল যেন সাফল্যের এক মহাকাব্যিক উপাখ্যান। তিনি উন্নয়ন পরিকল্পনার বাণী নিয়ে কোদাল হাতে ছুটে বেড়িয়েছেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে তিনি তলাবিহীন ঝুড়িকে করেছিলেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ন।
ভিক্ষুকের হাত কে করেছিলেন কর্মীর হাত। সারা বিশ্বে তুলে ধরেছিলেন বাংলাদেশ কে। আরব বিশ্ব সহ নানা দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্কে জোরদার করেছিলেন তিনি। জনশক্তি রপ্তানী ও গার্মেন্টস শিল্পের তিনি সূচনাকারী।
জনগন কে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন কাঙ্খিত গনতন্ত্রের স্বাদ।
দেশে চালু হয়েছিল বহুদলীয় গনতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা।
তিনি দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন রাজনৈতিক চেইন-অব কমান্ড তথা স্থীতিশীলতা। জনগনের সামনে তুলে ধরেছিলেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের যাদুকরী দর্শন। বাংলাদেশী জাতিয়তাবাদের দর্শন দেশের দর্ম- বর্ণ- গোত্র- নৃ গোষ্ঠী তথা আপামর সকল মানুষ কে অভিন্ন প্লাটফরমে এনে দাঁড় করিয়েছিল । আমাদের জাতীয় জীবনে যে আত্মপরিচয়ের সংকট প্রকট হয়ে উঠেছিল- দেশ টা কেন? কাদের জন্য? এদেশের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী? গন্তব্য কী? স্বপ্ন কী - এর সব কিছুর সমাধান তিনি তার রাজনৈতিক দর্শন বাংলাদেশী জাতিয়তাবাদের মধ্যে সংস্থাপন করেন।
ফলে বাংলাদেশ বিভেদ ও হানাহানির বাইরে জাতীয় ঐক্যও সংহতি তৈরির জন্য একটা সুনির্দিষ্ট পাটাতন লাভ করে। রাজনীতি, অর্থনীতি, কৃষি শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও নারী-শিশু সবকিছুতেই একটা বিপ্লব ঘটিয়ে গেছেন।
জিয়ার শাষনামল সম্পর্কে ততকালীন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ)রিপোর্টের ভাষ্য ছিল- " প্রায় ছয় বছরের নেতৃত্বে এক আশা বিহীন দরিদ্র ও বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ কে সমস্য মোকাবেলা করার উপযোগী করে তুলেছিলেন" ( সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো ০৮/১২/২০১২)
মোটকথা তুরষ্কের যেমন কামাল আতাতুর্ক, মিশরের যেমন নাসের, ঘানার যেমন নক্রুমা, কিউবার যেমন ফিদেল কাষ্ট্রো, ভারতের যেমন নেহেরু, মালয়শিয়ার যেমন মহাথির, বাংলাদেশের জিয়াউর রহমান ঠিক তাই।
কিন্তু ষড়যন্ত্রকারী,বাংলাদেশের শত্রুরা ইতিহাসের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র কে বাঁচতে দেয়নি। যারা বাংলাদেশ কে ব্যার্থ ও তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছে তাদেরই দোসররা ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্রগাম সার্কিট হাউজে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতরত অবস্থায় জিয়াউর রহমান কে গুলি করে হত্যা করে।
শাহাদাত বরণ করেন বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান। সেদিন শোকে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ। গুমোট রূপ ধারণ করেছিল আকাশ। শহীদ জিয়ার জানাজায় নেমেছিল শোকাহত লাখো মানুষের ঢল। যেন একটি কফিনের পাশে এসে থেমে গিয়েছিল একটি বাংলাদেশ।
তার মৃত্যুতে বিদেশী পত্রপত্রিকার শিরোনাম ছিল
" যখন রহমান মারা গেলেন তখন বাংলাদেশের আশাও মারা গেল"
" দক্ষিন এশিয়ার মানুষ তাদের পথ প্রদর্শক কে হারালো। "
১৯৮১ সালের ৩ জুন দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনে স্পীকার মির্জা গোলাম হাফিজ একটি শোক প্রস্থাব উত্থাপন করেন। সেই শোক প্রস্তাবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে -
ততকালীন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও আওয়ামিলীগ সংসদ সদস্য জনাব আছাদুজ্জামান খান বলেন," জনাব স্পীকার আজকে অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে এখানে বক্তব্য রাখতে হচ্ছে। আজকে মরহুম জিয়াউর রহমান সাহেব আমাদের মধ্যে নেই। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, জনাব স্পীকার তিনি ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষনা করেছিলেন।
জাতি সেটা স্মরণ করবে.....
গনতন্ত্রী পার্টির নেতা ও সংসদ সদস্য শ্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেছিলেন< " ৩০ মে থেকে ৩ জুন যে লক্ষ লক্ষ জনতা শুধু ঢাকা নগরীতে নয়, গোটা বাংলাদেশে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেছে, তার মাধ্যমে প্রমাণীত হয়েছে যে আমাদের রাষ্টপতি বাংলাদেশের মানুষের কত্ কাছাকাছি এবং প্রাণপ্রিয় ছিলেন। এটা বলতে যদি কেউ কুন্ঠাবোধ করেন, এটা তার মানসিক দৈন্য এবং রাজনৈতিক বিচক্ষনতার অভাব বলে আমি মনে করি... এি যে লক্ষ লক্ষ জনতার স্রোত কেন এসেছিল এই লাশটির পাশে, কেন এসেছিল জানাজায় এবং গায়েবী জানাজায়? এসেছিল একটি মাত্র কারণে - সাবেক রাষ্ট্রপতির সততার প্রতি অভিনন্দন ও শ্রদ্ধা জানাতে। ..আমি কিভাবে এ পার্লামেন্টে এলাম, কিভাবে আমি এখানে কথা বলছি? এটা সেই গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ এবং বাংলাদেশে সেই গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এভাবে চলছে...রাষ্ট্রপতিকে কখন হত্যা করা হল? ১৯৮০ তে নয় ১৯৮১ সালের মে মাসে যখন রাষ্ট্রপতি দূর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করলেন, যখন রাষ্ট্রপতি দৃঢ় প্রত্যয়ে দূর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম ঘোষনা করলেন, যখ ন শোষনহীন সমাজ ব্যাবস্থার কথা বলতে চাইলেন, দক্ষিন এশিয়া, পৃথিবীর বিভিন্ন আন্তরজাতিক ফোরামে গেলেন, সিরিয়ায় গেলেন, যখন নর্থ সাউথ ডায়ালগ ওপেন করতে গেলেন, আর সেই মুহুর্তে তার উপর আঘাত এলো..."
সংসদ সদস্য জনাব রাশেদ খান মেনন বলেছিলেন , " মাননীয় স্পীকার, মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সাহেবের উপর আপনি যে শোক প্রস্তাব এনেছেন তার প্রতি আমি আমার ব্যাক্তিগত ও দলের তরফ থেকে একাত্মতা ঘোষনা করছি.... মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আমার পরিচয় । তাকে সেভাবেই আমি দেখেছি , তাকে সেভাবেই আমি সন্মান করেছি। তার সঙ্গে তার যে কীর্তি সেই কীর্তি অমর এবং অক্ষুন্ন থাকুক - এটা কামনা করি..."
এভাবে সারা দেশ সহ গোটা বিশ্বের মানুষ কে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ জিয়াউর রহমান।
দেশ ও বিদেশের কৌটি মানুষের কান্না ও দোয়া সাথে নিয়ে সংসদ ভবনের পাশে ক্রিসেন্ট লেকের পাড়ে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন গনমানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা বাংলাদেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান। কিন্তু জিয়া মরেও মরেনি। জন্মেই যে অমর, ঘাতকের সামন্য বুলেট তাকে মেরে ফেলতে পারেনা। জৈবিকভাবে অনুপস্থিত থাকলেও জিয়া আজো স্বগৌরবে বিরাজ করেন বাংলাদেশের হাটে-মাঠে-ঘাটে এবং তার প্রিয় জনগনের হৃদয়ের মনিকোঠায়। সেদিন একটি কফিনের পাশে নেমে এসেছিল জনতার যে সমুদ্র সেটা আজ মহাসমুদ্র।
আর সেই মহাসুমুদ্র থেকে নিত্য কল্লোলে গর্জন শোনা যায়, " কে বলেরে জিয়া নাই... জিয়া আছে সারা বাংলায়"
শাহাদাত বরণের ৩২তম বার্ষিকীতে এসে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গনতন্ত্রের প্রবক্তা, আধুনিক বাংলার রূপকার, বাংলার কান্ডারী মুক্তিযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম কে।
তথ্য সূত্র ও কৃতজ্ঞতা : দৈনিক প্রথম আলো- ০৮/১২/১২ এবং ২৯/১২/১২
কবি আবদুল হাই শিকদার
শাকিল ওয়াহেদ ( সহ তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক বিএনপি)
(অফটফিক: দয়া করে কেউ কোন তুলনামূলক আলোচনার অবতারনা করে অহেতুক প্যাচাল করবেন না। ইতিহাসের মুখ একটাই। ইতিহাস যার যার জায়গা সম্পূর্ন আলাদা। আর আমি কোন ফেরেশতা কে নিয়ে আলোচনা করিনি করেছি রক্ত মাংসে গড়া একজন মানুষ কে।
)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।