আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প ১৯৯৩ ।। পুরোনো বন্ধুদের থেকে সাবধান

স্বেচ্ছাচার না করা গেলে তারে স্বাধীনতা বলে না। স্বাধীনতা মানেই স্বেচ্ছাচারের অধিকার।

এই গল্পটা ছাপা হইছিল সংবেদ, জুন ১৯৯৪ সংখ্যায়। সম্পাদক পারভেজ হোসেন। আট পৃষ্ঠার গল্প।

কম্পোজ কইরা পোস্ট করতেছি বিধায় যেটটুক যেটটুক কম্পোজ করতে পারি পোস্ট করি। গল্পটা ১৯৯৩-র দিকে লেখা। পরে বাংলাবাজার পত্রিকায়ও ছাপা হইছিল। ১৯৯৭-এ মনে হয়। পুরোনো বন্ধুদের থেকে সাবধান ১. তো, পুরোনো আমার যে-বন্ধু সে আমাকে সকালে যোগাযোগ করে।

আমি বলি, কী ব্যাপার, এতদিন কোথায় ছিলেন? তিনি রুষ্ট হন : হারামজাদা, আপনে কইরা কইতেছো যে! আমি ‘সরি’ বলি। সে বলে, ‘তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসতেছি, বাসায থাকবা নাকি?’ আমি বলি আমি খুব ব্যস্ত। কিন্তু সে বলে রাতে কোনো কাজ আছে নাকি? আমি বলি, ‘কখেন?’ সে বলে, ‘রাতে। ’ আমি ভয় পাই। বলি, ‘রাতে সময় হবে না, বরং দিনের বেলায়ই; এবং আমি নিজেই আসছি, তোমার ঠিকানাটা বলো।

’ সে ঠিকানা বলে। আমি তার বাসায় যাই। তার বাসা যথারীতি। বিবাহিত। কাজের মেয়ে আছে।

অসুন্দর; এবং--বাগানে ডালিয়া ফুল। বাগান মানে বারান্দা। বারান্দায় অনেক টব। টবের ফাঁকে কসরৎ করে বসানো চেয়ার। সেখানে আমরা বসি।

বসার পর তাকে ভালো লেগে যায়। কিন্তু ইহজনমে তাকে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। তবে কণ্ঠ কর্কশ বিধায় আগে হয়তো শুনে থাকবো। সে বলে, ‘বড়ো সুখ লাগে বুঝলা রাইসু, তুমি প্রাপ্তিতে বড়ো সুখ হয়। ’ আমি বলি, ‘তোমার কণ্ঠ বোধহয় আগে শুনে থাকবো।

’ সে বলে, ‘শুয়ারের বাচ্চা!’ আমি হাসি। সে-ও হাসে। তার দাঁত সুন্দর। আমি বলি, তোমার দাঁত বোধহয় আগে কখনো দেখে থাকবো। ‘কিন্তু আগে কোনোদিনই দাঁতই ছিল না আমার!’--সে উঠে আমার ঠোঁট কামড়ে ধরে।

আমার শিহরণ হয়। তার ছেলে আসে বারান্দায়। পাঁচ-ছয় বছরের শয়তান। কালো মোটা ফ্রেমের ইন্টেলেকচুয়াল চশমা। দাঁতের বিন্যাস মায়ের মতো নয়।

পরস্পরবিচ্ছিন্ন। ফলে ভালো লাগে। তার মা, আমার পুরোনো দিনের বন্ধু, পরিচয় করিয়ে দেয় তার ছেলের সঙ্গে। বলে, ‘তোমার বাবা হন ইনি। হ্যান্ডশেক করো খোকা।

’ খোকাবাবু হ্যান্ডশেক করে। বলে, ‘আগে কখনো দেখে থাকবো আপনাকে। ’ ‘আমিও। ’ ‘কী করছো এখন?’ তার মা জিগ্যেশ করে। ‘ছেলেটা কার আসলে?’ আমি জানতে চাই।

সে হাসে, ‘যাও বাবা ঘরে যাও। ’ তার ছেলে ঘরে যায়। সে বলে, ‘তোমারই ছেলে। তা তুমি এখন কী করছো?’ আমি বলি, ‘গল্প-টল্প লিখি। ’ ‘আর কিছু না?’ ‘না, আর কিছু না।

’ ‘চলো, আমার সঙ্গে ঘুরবে আজ। ’ সে রিকশা নেয় এবং বলে, ‘গল্প কীভাবে লেখো, তোমার লজ্জা হয় না?’ আমি বলি, ‘গল্প লেখায় আবার লজ্জা কীসের?’ সে কিছুক্ষণ ভাবে। তারপর বলে, ‘ঠিকই বলেছো, গল্প লেখায় আবার কীসের লজ্জা?’ : কিছু কিছু গল্প অবশ্য আছে, লিখতে সত্যি লজ্জা করে। সে আগ্রহী হয় এবং আমি তাকে কিছু বলি না। সে পুনরায় আগ্রহী হয় এবং আমি তাকে বলি।

সে বলে, কী বললা বুঝলাম না। আমি তার কানের কাছে মুখ নিই এবং কিছু বলি না। সে খুব উল্লসিত হয়। বলে, ‘তাই নাকি! আমার খুব ভালো লাগছে। পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ছে।

ইশ্!’ আমিও ‘ইশ্’ বলি। সে বলে, ‘কী, ভেঙচাচ্ছো নাকি?’ আমি বলি, ‘না ভেঙচাচ্ছি না। তোমার ছেলের বয়স কতো?’ ‘সাত। ’ ‘সাত কেন?’ ‘কীভাবে বলবো! আমি কীভাবে বলবো বলো! আমার কি বলার কিছু আছে। ’ সে কাঁদতে লাগে।

ফলে আমি হাসতে শুরু করি। আমি তাকে বলি, ‘তোমার মধ্যে উত্তেজনা হইছে লাইলি!’ সে বলে, ‘আমি লাইলি না, আমি যুলেখা। ’ আমি বলি, ‘ঐ একই কথা। যাহা লাইলি তাহা--’ ‘তাহা কী? বল্ কুত্তার বাচ্চা, তাহা কী?’ সে বক্র হয়। মোচড় দিয়ে তার যৌবন প্রকাশ করে।

এবং তার অবস্থান থেকে খানিক উত্থিত হয়। ফলে তার ব্যক্তিত্ব। সে বলে, ‘চুতমারানি, এটাকে প্রেমের গল্প বানাবার ধান্দায় আছো, না?’ তার গালাগালকে আমার নারীবাদ ভ্রম হয়। আমি বলি, ‘না, এটা ঠিক প্রেমের গল্প না; এটা ক্রুয়ালটির গল্প। আমি শুধু ক্রুয়ালটির গল্পই লিখতে চাই।

’ ‘ক’টা লিখেছো?’ ‘সাতটা। ’ ‘আমাকে দেখাবে?’ আমি তাকে হাসি : ‘কিন্তু আমাকে দেখা করতে চেয়েছেন কেন?’ ‘সব বলছি। রহো। ’ 2. (বাকি অংশ কম্পোজ করলে পরে এইখানে পেস্ট করুম। সংবেদ পত্রিকার প্রচ্ছদ।

- লেখক)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.