মহান আল্লাহপাক মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে অনেক আয়াতে মুসলমানদের ঐক্যের কথা খুব তাগিদ দিয়ে বলেছেন। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে আল্লাহ বলেছেন"ওয়াতাসিমু বিহাবলিল্লাহে জামিয়াও,ওয়ালা তাফারত্মাকু" অর্থাৎ তোমরা সংঘবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আকড়ে ধরো,পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা। আজকে সারা বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য আমরা প্রত্যক্ষ করছি। মুসলিম প্রধান প্রায় দেশেই অনৈক্যের সুর ধ্বনিত হচ্ছে। যার ফলে ইহুদী,খ্রীস্টান ও বৌদ্ধ চক্র একের পর এক মুসলমানদের ও ইসলামের উপর আঘাত হানছে।
তাদের চক্রান্তের শিকার থেকে বাদ পড়ছেন না আমাদের প্রিয়নবী (সা ও। এই ইহুদী চক্র মহানবী (সা কে জড়িয়ে বিকৃত কার্টুন,পশুর সাথে তুলনা ও বর্তমানে সর্বশেষ রাসুল (সা কে নিয়ে ছবি নির্মাণ করেছে,"ইনুসেন্স অব মুসলিম"। যা সম্পূর্ণ একটি বিকৃত,মিথ্য.কল্পিত ও উস্কানিমূলক ছবি। যার বিরূদ্ধে বিশ্ব মুসলিম একটু দেরিতে হলেও ফুসে উঠেছে। মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা বিশ্ব মুসলিমের প্রতিবাদে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছেন,বিভিন্ন দেশে তার দেশের অধিবাসীদের বাচাঁতে যা প্রয়োজন তা তিনি করবে।
অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন বলেছেন,আমরা ওই ছবির পরিচালককে শাস্তি দিতে পারিনা,কারণ আমার দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। অন্য ধর্মকে হেয় করা,অথবা ধর্মীয় বিদ্বেষ সৃষ্টি করা যদি মত প্রকাশের স্বাধীনতা হয় তাহলে এই মত প্রকাশ নিছক ভন্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়। ওরা মুসলমানদের বলে সাম্প্রদায়িক,অথচ তাদের রক্তের মধ্যেই সাম্প্রাদায়িকতার বীজ লুকায়িত। তারা শুধু মুসলমানদের বিরুদ্ধেই পারে উস্কানিমূলক কর্মে লিপ্ত হতে অথচ অন্য কোন ধর্মের ব্যাপারে এরকম আচরণ পরিলক্ষিত হয়না। এই ছবির জন্য ১০০মিলিয়ন ডলার ব্যায় করা হয়েছে।
কিছুদিন আগে ফ্রান্সে মুসলিম মহিলাদের হিজাব পরার বিরূদ্ধে সেই দেশের আদালতে রায় দিয়েছে। আবার রাসূল (সা নিয়ে ফ্রান্সের একটি ম্যাগাজিনে বিক্রিত কার্টুন প্রকাশ করেছে। এছাড়াও আরো কয়েকটি দেশ হিজাব নিষিদ্ধ করে। মসজিদের মিনারের বিরূদ্ধে ইউরোপে রায় দেয়া হলো। টুইন টাওয়ার হামলার অভিযোগে লাদেনকে ধরার অযুহাত দিয়ে আফগানিস্তানে মার্কিন ও তার মিত্ররা যুদ্ধ পরিচালনা করে।
এতে লক্ষ লক্ষ মুসলমান শহীদ হন। এখনো এই হত্যাযজ্ঞ চলছে। পাশাপাশি দেশ পাকিস্তান সীমান্তে তালেবান অথবা আল-কায়েদাকে হামলা করার অযুহাতে নিরীহ মুসলীম শিশু ও যুবকদের হত্যা করা হয়। ইরাকে পরমানু অস্ত্র আছে এই অভিযোগে মার্কিনী ও তার মিত্ররা যুদ্ধ পরিচালনা করে অসংখ্য মুসলিম নর-নারীকে হত্যা করলো,নারী ও পুরূষদের কে বন্দী করে অমানবিক নির্যাতন করা হয়,এমনকি বিবস্ত্র করে ছবি তোলা হয়,পিপাসার্ত অবস্থায় মুখে মূত্র ত্যাগ করা হয়,ধর্ষণ করা হয়। কোরআনের উপর মূত্র ত্যাগ ও পুড়ে ফেলা হয়।
সাদ্দাম হোসেনকে গেফতার করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ঈদুল আযহার দিনে হত্যা করা হয়। এইসকল জঘন্য ভিডিও তারা আবার ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে মুসলমানদের উত্তেজিত করে তোলে। লিবিয়াতে গাদ্দাফী বিরূধীদের উস্কানী দিয়ে,তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে এবং মার্কিন ও তার দোশর ন্যাটো বাহিনী একযোগে হামলা করে পাশবিকভাবে লৌহপুরূষ কর্ণেল গাদ্দাফীকে হত্যা করে। প্রতিদিনই ইসরাইল ফিলিস্তিনের নিরীহ জনগণের উপর হামলা চালাচ্ছে প্রায় ৪৫ বছর ধরে। ইহুদীদের লক্ষ্যবস্তু হলো শিশু,যারা ভবিষ্যতের কান্ডারী হবে।
তাদের উপর নির্বিচারে গুলি করা হচ্ছে এবং কখনো বিমান হামলা কখনো ড্রোন হামলা এই ভাবে এখনো চলছে। সাবেক ঈসরাইলী প্রধানমন্ত্রী ইজহাক রবিনের ছেলে ফিলিস্তিনকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে সরিয়ে দেয়ার হুমকী দিয়েছে। কাশ্মীর সীমান্ত নিয়ে বিরোধ এখনো চলছে ভারতের সাথে পাকিস্তানের। সীমান্তে মাঝে মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করে। ভারত বাংলাদেশের সীমান্ত অধীবাসীদের প্রায়ই পাখির মতো গুলি করে মারছে।
ভারতে দাঙ্গায় এই পর্যন্ত লাখো লাখো মুসলিমকে হত্যা করা হয়। কিছুদিন আগে আসামে মুসলমানদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এই বছর মায়ানমারে মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালানো হয়। খুব জঘন্য ও নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয় এবং দেহ থেকে মাথা আলাদা করে উল্লাস করা হয়। মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়,গরু কোরবানীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
এই হচ্ছে ইসলাম বিদ্বেষীদের মানবতার সামান্য চিত্র। গত কিছুদিন আগে বাংলাদেশে কঙ্বাজারের রামুতে উত্তম কুমার নামে এক ইসলাম বিদ্বেষী কোরআন শরীফের উপর পা রেখে তা ফেইসবুকে প্রচার করে। যার ফলে কঙ্বাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে,অনেক বৌদ্ধ মন্দিওে হামলা করা হয়,যা ছিল একটা ষড়যন্ত্র। ইসলামে এরকম বিদ্বেষমূলক আচরণ সমর্থন করেনা। বর্তমান সরকার এই নিয়ে আবার রাজনৈতিক খেলা খেলেছে বিরধী দলের উপর দোষ চাপিয়েছে।
অথচ আসল অপরাধী ধোরাছোয়ার বাইরে থেকে গেছে,আর যে উত্তম-কুমারকে নিয়ে এই সংকট সৃষ্টি হলো তার ব্যপারে সরকারের কোন তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি। এই হলো আমাদের মুসলমানদের অবস্থা। অতি সম্প্রতি পাকিস্তানের সোয়াত অঞ্চলের মেয়ে মালালা ইউসুপজাকে নিয়ে বিশ্ব মিডিয়া তোলপাড় শুরু হয়েছে। সে নাকি তালেবানদের বিরধিতা সত্বেও নারী শিক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। মার্কিন মিডিয়ার তথ্যনুযায়ী মালালাকে নাকি তালেবানরা এই জন্য হত্যার চেষ্টা করে,এরপরেই বিশ্ব মিডিয়ায় মালালার আবির্ভাব ঘটে বেশ জোরালোভাবে।
জাতিসংঘ ১০ নভেম্বর বিশ্ব মালালা দিবস ঘোষনা করেছে। আরো চমকপ্রদ ঘটনা হচ্ছে,মালালাকে নোবেল পুরষ্কার দেয়ার জন্য গণস্বাক্ষর চলছে। কোন স্বার্থে,এমন কি কাজের জন্য মালালা ইউসুপজাইকে নোবেলপ্রাইজ দেয়ার প্রস্তুতি চলছে তা প্রশ্ন স্বাপেক্ষ। মুসলমানদের আর কতো বোকা বানাবে আমেরিকা ও ইহুদী লবী?মার্কিনীরা ইরাকে হামলা করে আবার সেই যূদ্ধের চিত্র দিয়ে ছবি নির্মাণ করে। ছবিটি অস্কার পায় এবং অনেক টাকা আয় করে।
কি আশ্চর্য ওরা আমাদের বিরূদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে,আমাদেরকে আক্রমণ করে আবার আমাদেরকে নিয়ে ছবি তৈরী করে বহু টাকা আয় করে। উপহাস আর কারে বলে!তাদের আচরণ দেখে মনে হয়-"জাইল্লা হইয়া জাল ফেললি,মৎস হইয়া ধরা দিলি,ক্রেতা হইয়া সেই মাছ আবার কিনিলি, নানান রকম বাজার বসাইলি"। তবে এইসকল কিছু করার সাহস পাচ্ছে শুধু আমাদের মুসলমানদের অনৈক্যের কারণে। হাদিসে আছে,"আল কুফরি মিল্লাতি ওয়াহেদা" অর্থাৎ বাতিল(ইসলাম বিরধী) শক্তিগুলো এক। তাই সারা বিশ্বে মুসলমানদের বাতিল শক্তির যে ষড়যন্ত্র তার বিরূদ্ধে এখন থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে না পারলে মুসলিম বিশ্ব আরো অস্থির হয়ে পড়বে।
তারা মুসলমানদের উসকিয়ে দেয় এরপর মুসলমানরা যখন তার প্রতিবাদ করে তখন মুসলমানরা হয়ে যায় জঙ্গী ও সাম্প্রদায়িক। শয়তানকে প্রশ্ন করা হলো,তুই কি করিছিস?সে বলল কই কিছু করিনিতো,শুধূ দেয়ালে গাম লেপে দিয়েছি:অতপর যা হলো,পিপড়া এলো,মাকড়োসা এলো,টিকটিকি এলো,ইদুর এলো,ইদুর খেতে বিড়াল এলো এরপর দেয়ালের মালিক ও প্রতিবেশীর মধ্যে ঝগড়া লেগে গেলো,এইভাবে ঘটে গেল লংঙ্কাকান্ড"। বর্তমানে ইসলাম বিদ্বেষীদের অবস্থা ওই শয়তানের মতো। তারা একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। মুলমানদের হুশ আর কখন আসবে?রাসুল (সা) বলেছেন,সমস্ত মুসলমান হলো একটি দেহ,শরীরে কোন অংঙ্গে যদি ব্যাথা লাগে তাহলে সমস্ত শরীরে ব্যাথা লাগে।
পৃথিবীর একপ্রান্তে মুসলমানের যদি কোন ক্ষতি হয়,আর তাতে যদি অন্য প্রান্তের মুসলমানে মনে আঘাত না লাগে তাহলে তিনি মুমিন হতে পারবেনা। বিদায় হজ্বের ভাসনে রাসূল (সা বলেছেন,"আমি তোমাদের জন্য দুটো জিনিস রেখে যাচ্ছি,যা আকড়ে ধরলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবেনা। তা হলো-আল কুরআন ও হাদীস"। বদরের যুদ্ধে মহান আল্লাহ তাআলা ৩১৩ জন সাহাবীকে কাফেরদের বিরূদ্ধে ফেরেশতার মাধ্যমে বিজয় দান করেছেন। আল্লাহ বলেছেন,মুমিন হলে আমি তোমাদের ১জন কে ১০জনের উপর বিজয় দিব।
সেই আল্লাহ এখনো বিদ্যমান তাই আমাদের ও সাহায্য আসবে তবে আমাদেরকে পূর্ণ মুমিন হতে হবে। তাই বিশ্ব মুসলিমের আভ্যন্তরীন দ্বন্দের অবসান ঘটিয়ে বাতিলের বিরুদ্ধে একইসুরে আন্দোলন করতে হবে,কবির সুরে বলতে হবে-
"মুসলিম আমি সংগ্রামী আমি,আমি চির রনবীর।
আল্লাহকে ছাড়া কাউকে মানিনা,নারায়ে তকবীর"।
মোহাম্মদ নুরূল আবছার(টিপু)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।