মুরুব্বিরা যে কতটা নির্ভুলভাবে ভবিষ্যদ্বাণী দেন, তার একটা উদাহরণ দেই। একসময় দশে চরম আকাল পড়লে, রমজান মাসে বেগুনীর পরিবর্তে পেপেনি খাবার রেওয়াজ চালু হয়। তা দেখেই আমার দাদি বলে গেছিলেন, 'তোরা এসব কি ছাতার মাথা খাস?' উত্তরে আমি বলেছিলাম, 'কই দাদি, এগুলা তো হেলদি ফুড। অনেক পুষ্টিগুণ আছে!' নিঃসন্দেহে আমার বলার ধরণটা আজকালকার টিভিসি'র নেপথ্যে যারা কণ্ঠ দেয়, তাদের মত শুনিয়েছিল। তবে আমার দাদি এতশত চিন্তা করেন নাই।
তিনি স্ট্রেইট কাট বলে দিয়েছিলেন, 'হেলদি ফুড না ছাই। এই হেলদি ফুডের ধুনা তুইলা তোরা একসময় সত্যই ছাতার মাথা গিলবি। ' দাদির মুখে 'হেলদি' শব্দটা শুনে অবাক হবেন না। উনি কিন্তু ক্লাস ফাইভ পাস ছিলেন!
তবে কথা সেইটা না। দাদির কথা আকস্মিকভাবেই ফলে গিয়েছে।
সেরকম আকস্মিক, যেমনটা হলে বেলে মাটিতেও ফজলি আম ফলে। আমরা প্রকৃতই আজকাল ছাতার মাথা খাচ্ছি। ব্যাঙের ছাতা আরকি! তা আবার শুধু যে খাচ্ছি, এমন নয়। ভরপেট গলধঃকরণের পর মস্ত ঢেঁকুর তুলে অনেককে বলতেও শুনছি, 'আহা! আজ আমাদিগের অগ্ন্যাশয় বেশ উন্নত পুষ্টিমানের সাক্ষাত পাইয়াছে। আয়ুষ্কাল মোদের নিঃসন্দেহে বাড়িয়া গেল ক্ষণকতক।
আহা! সবাই বল, রাখে হরি মারে কে!'
তবে হরিকে বশে এনে, যমের উদ্দেশ্যে 'চ্যালেঞ্জ টু' ছুড়ে দিয়েও কিন্তু অনেকেরই শেষ রক্ষা হচ্ছে না। ভেজালের জালে যখন গোটা দেশ আচ্ছন্ন, তখন ব্যাঙশিল্পেও তো তার একটু আধটু প্রভাব পড়বে! ব্যাঙের ছাতায় ক্ষতিকর বিষের উপস্থিতি থাকায় গোটা বিশ্বজুড়ে অনেক অভাগাই প্রাণ হারিয়েছে। আমাদের দেশও কিন্তু এ থেকে নিস্তার পায়নি। (যারা ভাবছেন, এমন খবর পত্রিকায় চোখে পড়ে না কেন, তাদের বলি শোনেনঃ পত্রিকার ভেতরের পাতাটিকে আর অবহেলা করবেন না। জরুরি খবর সব সেখানেই থাকে।
প্রথম পাতার রাজনৈতিক কাদা ছোঁড়াছুঁড়িই কিন্তু সব না, নিউজ আভি বাকি হ্যায় মেরে দোস্ত!)
এবার তাহলে সুশীল সমাজ বিচারকের আসনে বসে বিচার করুন, হেলদি ফুড খেয়েও কি আজকাল প্রাণরক্ষা সম্ভব হচ্ছে? অথচ সবাই আমরা জানি, 'জান বাঁচানো ফরজ'। কিন্তু এই ফরজ কাজটা কিভাবে করব আমরা? নরমাল ফুড, হেলদি ফুড, রিচ ফুড, ফাস্ট ফুড ----- দিকে দিকে আজ ফুডের ছড়াছড়ি। কিন্তু প্রকৃত ফুড বলে কি আর কিছু অবশিষ্ট আছে? গুগলে সার্চ দিয়ে লাভ নেই, এই লেখা শুরুর আগে আমি নিজেই সুনিপুনভাবে তা সম্পন্ন করেছি। রেজাল্ট অবশ্য সেই মস্ত বড় গোল্লাই!
খাওয়াটাই কিন্তু জীবনের সবচেয়ে বড় বিষয়বস্তু নয়। খাওয়া, খাওয়ার পড় হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়া বাদেও সুষ্ঠু সুন্দর জীবন লাভে আরও কিছু জিনিসের প্রয়োজন।
এবার সেসবের কথায় আসি। এবং সেটাই হল কাজের কথা। আপনার চারপাশের পরিবেশটা ভাল না থাকলে আপনি কি ভাল থাকবেন? থাকবেন না। অথচ আপনার চারপাশের পরিবেশও ভাল নাই। রোজ রোজ ককটেল ফুটছে, দু-পাঁচটা মনুষ্য সন্তান পরপারের টিকিট কাটছে।
এই সবই নাকি রাজনীতির অঙ্গ। যে রাজনীতি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর বদলে, মানুষের মুখকে দুঃখ-দুর্দশার আঁচে কিম্ভূতকিমাকার করে তুলছে; সে ধরণের রাজনীতি থেকে লাভ কি? নিজের ভাল পাগলেও যেমন বোঝে, আমরা বাংলাদেশিরাও এটা বুঝি। আর তাই আমরা এ সমস্যা নিরসনে সবচেয়ে সহজ পথ বেছে নেই। পাঁচ বছর অন্তর রাজনীতির অভিভাবক চেইঞ্জ করে দেই। কারণ, 'উই নিড চেইঞ্জ!' কিন্তু আমাদের কি এই চেইঞ্জ দরকার? ৫ বছর অন্তর দল পাল্টালেই কি চেইঞ্জ এসে দেশকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে? তা-ই যদি হত, তবে তো বারবার সরকার পরিবর্তনের ফলে আজ আমরা উন্নয়নের বঙ্গোপসাগরে মনের সুখে সাঁতার কাটতাম!
এইবার তাহলে মন দিয়ে ভাবুন, রিচ ফুড, হেলদি ফুডের চক্করে ফাঁসবেন নাকি রিয়াল ফুড খুঁজবেন? রিয়াল ফুড পেতে গেলে কিন্তু বনে যেতে হবে।
যেখানকার খাদ্যে কোন ফরমালিন দেয়া নাই। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, প্রকৃত রাজনীতির সন্ধান পেতে আমাদেরকে সমাজবিজ্ঞানের গোঁড়ায় ফিরে যেতে হবে। তারপর দুইটা কাজ করতে হবে। প্রথমত, নিজেদের উদ্যোগে একটা তৃতীয় শক্তির উদ্ভব ঘটাতে হবে। আর দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক সমাজে যেসব আবর্জনা জন্মেছে, তাদেরকে শিকড়সমেত উৎখাত করতে হবে।
আর হ্যাঁ, টক-শোতে গিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা কিংবা তিনদিন বাথরুম না হওয়া ব্যক্তির মত মুখ ভ্যাংচালে হবে না।
তা না হলে, ৫ বছর অন্তর দল পাল্টিয়ে হয়ত আপনি হরিকে বশে আনতে চাইবেন, যমের উদ্দেশ্যে 'চ্যালেঞ্জ টু'-ও ছুড়ে দেবেন। কিন্তু মামা! (বন্ধু, সুহৃদ) শেষ রক্ষা কিন্তু হবে না!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।