আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কলেজ লাইফের বাঁদরামি

সুখে থাকতে ভুতে কিলায়, কথাটা প্রাচীন প্রবাদ। কিন্তু কাউকে সুখে থাকতে দেখলেও ইদানীং অনেকে ভুতের কিল খায়, কেন খায় জানি না। কলেজ লাইফটা যদিও মাত্র দুবছরের, অথচ এর মধ্যেই বাঁদরামি ইতরামি অনেক করেছি, এর মধ্যে কিছু কিছু ঘটনা মাঝে মাঝে মনে পড়ে, তখন একা একাই হাঁসি। আমার কলেজ ধানমণ্ডি আইডিয়াল, সেন্ট্রাল রোডে। কলেজের কথা বলে লাভ নেই, আমার কাছে সবই এক।

তো আমাদের কলেজের অন্য নিয়ম কানুন যাই থাকুক, সকালে প্রবেশের সময় ছিল ঠিক ৮টা পর্যন্ত ফিক্সড, এর পর যেই আসুক, প্রাইম মিনিস্টারের ছেলে হলেও ঢুকতে দেবে না। একদিন আমার ঘুম ভাঙ্গতে দেরী হয়ে গেল, সেই সুবাদে কলেজের গেটে এসে পৌঁছালাম ৮:১০ এ, অনেক কাকুতি মিনতি করার পরও লাভ হল না, এরপর বাসায় এসে পড়লাম। যতদূর মনে হয়, অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ক্লাস কখনো মিস হলে একা একা সময় কাটতে চায় না, বাসায় এসে টিভি দেখি, কম্পিউটারে গেমস খেলি, অনেক কষ্টে সময় কাঁটিয়ে যখন দেখি ঘড়িতে ১২টা বাজছে, হঠাৎ মাথায় কুবুদ্ধি আসলো দেখি একজনের ১২টা বাজাই। টিএনটি ফোনে কল দিলাম আমার বেষ্ট ফ্রেন্ডের বাসায়। এই বেষ্ট ফ্রেন্ড এমন যে, প্রথম পরিচয়ে খাওয়ার বিল বা ভাড়া আমি বলি আমি দেই, ও বলে আমি দেই, আর দুই সপ্তাহ পড়ে ও বলে দোস্ত আমারে আজকে বাসায় নিয়া যা প্লীজ, আমি বলি দোস্ত আমারে তুই নিয়া যা, এরকম সম্পর্ক।

যাই হোক, ও যেহেতু ক্লাসে, তাই ফোন ধরল ওর আম্মু। আমি বলছি, হ্যালো আন্টি সৈকত আছে?? আন্টি বলছেন, না বাবা, সৈকত তো কলেজে। আমি বলি, কি বলেন আন্টি, আজকে তো টিচারদের মীটিং এর কারনে ক্লাস ১০টায় ছুটি দিয়ে দিছে, আমরা তো এক সাথেই আসলাম, ও বাসায় যায় নাই??? আন্টি চিন্তিত গলায়, কই না তো বাবা, ও তো আসে নাই। আমি বললাম, ঠিক আছে আন্টি ও আসলে আমাকে বলবেন ফোন দিতে (আন্টি আমাকে চেনে এবং খুব ভাল জানে ) বলে রেখে দিলাম। পরদিন ক্লাসে গেছি, আমার সেই বন্ধুটির চেহারা দেখার মত।

ও আমাকে বিরস চিত্তে বাংলা ফিল্মের স্টাইলে জিজ্ঞেস করলো, "আমি তোর কি এমন ক্ষতি করছিলাম, তুই আমারে এতো বড় বাঁশ দিলি, আজকে আমার আব্বু আমারে কলেজে নিয়া আসছে, আমার আম্মু আমারে কালকে মাইর দিছে, এখন আমারে বিশ্বাস করে না, আব্বু বকা দিছে" ইত্যাদি ইত্যাদি। বাকি বন্ধুরা গল্প শুনে হাঁসতে হাঁসতে গড়াগড়ি অবস্থা। আবার এই পন্থা কে কার উপর এপ্লাই করবে সেই নিয়ে মারামারি। এরপর সেই বন্ধুটি আমাকে হুমকি দিলো, সেও আমাকে দেখে নিবে, আমি বললাম নতুন কিছু করিস, আমার সিস্টেম আমার উপরে এপ্লাই কইরা লাভ নাই আমি আবার বাসায় এসে পুরো ঘটনা আমার আম্মু, ভাইয়া আপু সবার সাথে শেয়ার করলাম, ওরা সবাই হাসাহাসি করলো কিছুক্ষণ। বলে রাখি, আমার পরিবারে সবাই অনেক মজা করে আর আমি যে অতি মাত্রায় দুষ্টামি করি এটাও জানে, কিন্তু আবার বিশ্বাসের দিক থেকেও অক্ষুন্ন।

এরপর একদিন আমার সেই বন্ধুটি বাসায় ফোন দিলো, আমি না থাকা অবস্থায়। আমার আম্মু ফোন ধরেছিল, সে আমার স্টাইলে বলতে শুরু করা মাত্র আমার আম্মু বলল, বাবা আমার ছেলে তো ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কোথাও যায় না, ও যে কত অলস আমি জানি। ও ক্লাসে না গেলে বাসায়ই থাকে, তোমার এই গল্প আমি জানি। বেচারি কিছুই করতে না পেরে আবারও মন খারাপ করে ফোন রেখে দিলো। আরেকটা ঘটনা ঠিক এক দিনের না, একাধিক বার করেছি।

যখন কোন বন্ধুর বাসায় বেড়াতে যেতাম, পুরো সময় কাঁটিয়ে যাওয়ার সময় দরজার সামনে ইচ্ছে করে সময় নষ্ট করতাম, পানি চেয়ে অথবা জুতা পড়তে গিয়ে। এর মধ্যে মুরুব্বী কেউ সামনে দিয়ে গেলে জোরে জোরে ঐ বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে বলতাম (খুব সিরিয়াস একটা ভঙ্গিতে) দোস্ত, তুই ইদানীং ক্লাস করছ না কেন ঠিক মত? ক্লাসগুলো অন্তত কর, রেগুলার ক্লাস না করলে পিছিয়ে যাবি (অথচ আমিই ছিলাম চরম ফাঁকিবাজ ) তো সেই সময় ঐ বন্ধু মুখ চেপে ধরত আর জোর করে বাইরে নিয়ে যেয়ে গালিগালাজ করতে করতে বিদায় দিত যেটা এখনো মিস করি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.