আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেখে এলেম বিরাট কানা

ভস্ম হই। মৃত্যুর চুমু আমার কপোল ছুঁয়ে যায়। বেঁচে উঠি আবার। নতুন দিনের আশায়। বেঁচে উঠি বারবার।



বুয়েটের হলে এক ছেলে ছিল। যশোরের ওইদিককার। মাঝে মাঝে দৌড়ে আসত, হাতে একসেট কাগজের কর্ণারটা ধরা। কাগজগুলো চেপে ধরে আগিয়ে দিয়ে বলত, দোস দোস একটু কানা করে দেতো। প্রথম প্রথম পোলাপান একটু থতমত খেয়ে তাকিয়ে থাকত।

বেশ খানিকক্ষন গবেষনার পর উদ্ধার করত যে 'কানা' মানে ছিদ্র বা গর্ত, অর্থাৎ সে কাগজে ছিদ্র করাতে চাচ্ছে। সেই থেকে তার নাম 'কানা ফয়সাল'। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন গিয়ে আমরা তো সত্যিকার অর্থেই থ। এতো বড় ক্যানিয়ন হতে পারে সেটা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। আমরা গবেষনা করছিলাম বাংলায় গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের নাম কি দেয়া যেতে পারে? 'বিরাট গর্ত' কথাটা শুনে রাবি্ব নামের বন্ধুটার মনে পড়ে গেল 'কানা ফয়সালে'র কথা।

তাই তার সম্মানেই আমরা একে 'বিরাট কানা' নামকরন করলাম। আগের এক পোস্টেই বলেছি গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন তিনটি অংশে বিভক্ত। দক্ষিন, উত্তর এবং মাঝখান। কয়েকশত মাইল জুড়ে ছড়ানো, মাইলখানেক গভীর পর্বতমালার মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে কলারাডো নদী। আমরা গিয়েছিলাম গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের দক্ষিন অংশের টুরিস্ট এট্রাকশনে।

গাড়ী পার্ক করে ওখানকার লোকাল শাটল বাস ধরে বা হেঁটে হেঁটে পাহাড়ের মাইল চার পাঁচেক দেখার ব্যবস্থা। আমরা বাসে করে গিয়ে কিছুদুর পরপর স্পটগুলোতে থেমে দেখতে লাগলাম। একটু পরেই একটু একঘেয়েমী চলে আসল। সব জায়গায় তো সেই একই পাহাড়। যদি পাহাড় জয়ের জন্য যাওয়া যেত তাহলে একটা কথা ছিল।

শুনলাম দুদিনের একটা ট্রেইল আছে, মাইলখানেক গভীর; ক্যানিয়নের নীচে নেমে কলারাডো নদীর জল ছুঁয়ে আবার ফিরে আসা। পথে আছে বিপৎজনক গিরীখাত, মাংশাসী পাহাড়ী বাঘ, র্যাটল স্নেক, শুকনো আবহাওয়ার কামড় আর রোমাঞ্চ। আহা আমার স্বপ্নের হাইকিং! আরেকটা জিনিস মিস করেছি সেটা হলো হেলিকপ্টারে করে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ভ্রমন। তবে শুনলাম গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের গর্তের ভিতর নাকি নামতে দেয়না এখন। তাই কেমন যেন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম।

আর ঠিক চোখেও পড়েনি কোথায় সেই হেলিকপ্টার রাইড। সবকিছু মিলিয়ে আর চড়া হোল না সেটায়। দুপুর তিনটে-চারটে নাগাদ রাবি্বর বউয়ের রান্না করা মজার খিচুড়ী খেয়ে আমরা রওনা দিলাম গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন থেকে পাশেই আছে উইলিয়ামস নামের একটা ছোট্ট শহর। সেখানে আছে আইম্যাক্স আর ন্যাশনাল জিওগ্রাফির তৈরী করা গ্রান্ড ক্যানিয়নের উপর একটি থ্রি-ডী ডকুমেন্টারী ছবির সিনেমা হল। সেটা দেখতে গেলাম।

দেখলাম আসলে থ্রিডী কিছু নয়, স্ক্রিনটা এত-এত বিশাল যে মনে হয় আমরা ছবির ভিতর ঢুকে গেছি। তখন টুডি ছবিকেই থ্রি-ডী মনে হয়। যাই হোক, যদিও তেমন আহমরি তেমন কিছু নয় ছবিটা তারপরও খারাপ লাগেনি। আধাঘন্টার ছবি দেখা শেষে আবার আমরা ফিরে চললাম গ্র্যান্ড ক্যানিয়েনের ভিতরের দিকে সূর্যাস্ত দেখার জন্য। তখন সূর্য প্রায় ডোবে ডোবে, তাই সবচে সুন্দর জায়গাটা দেখার জন্য বেশী ভিতরে দিকে যেতে পারলাম না।

একটা স্পটে থেমে পটাপট কয়েকটা ছবি তুলে রওনা দিলাম ঘরের উদ্দেশ্যে। ফেরার পথে রাবি্ব আমাকে সাজেস্ট করছে, 'গিয়ে ব্লগ লিখো, দেখে এলেম বিরাট কানা'। আমরা সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম। (ক্লোজআপহাসি) ছবি পরিচিতি ----------- 1-4। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের বিভিন্ন দৃশ্য 5-6।

গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে আমি ও মৌটুসী 7-8। গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের আরও দৃশ্য 9। দূরে কলারাডো নদী 10। কলারাডো নদীর সামনে কাল্লু মামা 11। আমি ও মৌটুসী 12।

সূর্যাস্তের সময় কাল্লু মামা

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.