আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফরিদার জীবন

একজন জীবন গবেষকের দিনলিপি - অন্তরজালের ডায়্#2

ফরিদার বাড়িটা রাস্তার ধারেই । পাকা পিচময় রাস্তা থেকে খুব বেশি দূরে হেঁটে যেতে হয় না। বাড়ি ঘর মাটির কিন্তু বেশ সুন্দর পরিষ্কার , নিয়মিত যত্ন হয় বুঝা যায়। আমরা সেখানে থাকি না। আরো কয় ঘর পরে হাসির বাড়ি যাই।

হাসি , ফরিদাকে দেখেছে মাস খানেক ধরে । দুই বারে ,কয়েক মাসের ব্যবধানে । মেয়েটা একদম কাবু ছিলো । হাসি জানায় আমাদের । মাত্র ১৮ বছর বয়স।

অথচ দেখলে ১৪/১৫ এর বেশি মনে হবে না। মাত্রই বিয়ে হয়েছে। প্রথম সন্তান। মেয়েটার চোখে মুখে প্রথম প্রথম মাতৃত্বের আনন্দ ফুটে থাকতো । শরীরের কষ্ট বুঝার উপর নাই।

সারাক্ষণ হাসছে । পেটের ভারে হাটতে ক্লান্ত লাগে, তাও দরজায় বসে সবার সাথে কথা বলতো । খুব হাসতো । ঐ শরীর নিয়েই হাসির রান্নায় সাহায্য করতে চাইতো । সবার সাথে হাসি খুশি , ছটফটে ।

কে না ভালোবাসে এমন উচ্ছ্বল একটা চড়ুই ? পরের বার এলে আর সেই হাসিটা দেখিনি, হাসি বিষন্ন মুখেই বলে। মেয়েটার নাকি বাচচা হয়েছিলো । মেয়েটা সামান্য কটা টাকা বাপের বাড়ি থেকে পেয়েছিলো , হাসপাতালে তার প্রথম বাচ্চাকে দুনিয়াতে নিয়ে আসার জন্য। স্বামী , শ্বশুশ্বাশুড়িকে রাগানোর সাহস তার শেষে হয় নাই। দাই এর হাতে বাড়িতেই হয়েছিলো ওর ছেলেটা ।

দ্বিতীয়বার হাসির বাড়িতে এসে ছিলো কারন বাচচা বের হওয়ার পরেও ফুল বের হয় নাই । ৩ দিন ধরে রক্তক্ষরণ সয়েছে মেয়েটা । আমাদের তদন্ত সেইখানেই । কাছাকাছি আধুনিক হাস্পাতাল থাকা সত্ত্বেও কেন গেল না ওরা? হাসির মুখটা বুকের কাছে নেমে আসে, আমার এলাকায় এই সময়তক কাউকে বিনা চিকিৎসায় মরতে দেই নাই। কিন্তু ...... কারন কি ছিলো? ফরিদার স্বামীর টাকা ছিলো না , তা নয় ।

তবে ছেলের বউ এর পিছনে ৫০০ টাকা খরচ করা ঠিক হবে কি না , এটা তাদের যুক্তিতে টেকেনি । আর ১৮ বছর বয়সে ফরিদা তাই মরহুম হয়ে গেছে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।