বাংলাদেশে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত বরাবর অন্তত চারটি স্থানে বিএসএফ গুলিবর্ষণ করায় এসব অঞ্চলে বাংলাদেশী অধিবাসীদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা ও আতংক বিরাজ করছে। পাঁচবিবি সীমান্তের সোনাতলা পয়েন্টে বিএসএফের গুলিতে দুই ভারতীয় গরু ব্যবসায়ী নিহত হবার পর বিডিআর পাল্টা গুলি চালালে এক বিএসএফ সদস্যসহ 5 জন ভারতীয় নাগরিক আহত হয়। এছাড়া এ সময় একজন ভারতীয়কেও বাংলাদেশ ভূখণ্ডে আটক করা হয়। এর আগে মধ্যরাতে চুয়াডাঙ্গার বারাঙ্গী সীমান্তে বিএসএফ ও বিডিআর-এর মধ্যে 100 রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়। এখানেও বিএসএফ বিনা উস্কানিতেই গুলিবর্ষণ শুরু করে।
এদিকে বাগডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এর আগে নিহত মোমিনের লাশ গত মঙ্গলবার দুপুরে বিডিআরের কাছে হসত্দান্তর করা হয়।
পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) - গতকাল মঙ্গলবার ভোরে পাঁচবিবি সীমান্তের সোনাতলা পয়েন্ট দিয়ে ভারতীয় গরু বাংলাদেশে ঢোকার সময় বিএসএফ গুলি চালালে 2 জন ভারতীয় নাগরিকের মৃতু্য হয়। এ ঘটনার পরপরই বিডিআর-বিএসএফের প্রচণ্ড গুলিবিনিময়ে আরো 5 জন ভারতীয় নাগরিক আহত হয় বলে জানা গেছে। বিডিআর ও গ্রামবাসী জানায়, সীমান্তের সোনাতলা পয়েন্টের 280-এর 9 ও 10 সাব-পিলারের মাঝপথ দিয়ে একদল ভারতীয় গরু ব্যবসায়ী গরু নিয়ে বাংলাদেশের 50 গজ ভিতরে ঢুকে পড়ে ভোর সোয়া 5টার দিকে। এ সময় বিএসএফ 13 রাউন্ড গুলি চালালে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি থানার জামালপুর গ্রামের লক্ষণ ননিয়ার পুত্র সুভাষ ননিয়া (35) ঘটনাস্থলে এবং অজ্ঞাতনামা আর এক ভারতীয়কে বালুঘাট হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়।
বিএসএফ নিহত সুভাষের লাশ নিয়ে যাবার জন্য বাংলাদেশে ঢুকে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। বিডিআর জোয়ানেরাও গুলি চালাতে শুরু করে। তিন ঘন্টার তুমুল গুলি বিনিময়ে বিএসএফের এফএস লালমহনসহ 5 জন ভারতীয় আহত হয় বলে অসমর্থিত সূত্র জানায়। গুলিবিনিময়ে বিএসএফ এলএমজি ও রাইফেল দিয়ে 5 শতাধিক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও বিএসএফ বেলা সাড়ে 11টার দিকে হঠাৎ করে উস্কানিমূলক 1 রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে।
সকাল থেকেই বিএসএফ উপজেলার গোটা সীমানায় ভারী অস্ত্রসহ শক্তি বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে। জয়পুরহাট 29 রাইফেলস ব্যাটালিয়নের অপারেশনস্ কর্মকর্তা জানান, বিএসএফের গুলিবর্ষণের সময় ঘটনাস্থল থেকে ভারতের ফেরসা কালীবাড়ীর রঞ্জিত মহন্তকে (40) আটক করা হয়।
জয়পুরহাট সংবাদদাতা জানান, জয়পুরহাটে 29 রাইফেল ব্যাটালিয়নের টুআইসি মেজর সাকিব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, গুলিবিদ্ধ গরু ব্যবসায়ী সুভাষ পরে মারা গেছে বলে তিনি অসমর্থিত খবরে জানতে পেরেছেন। তিনি আরো জানান, বিএসএফের শক্তিবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিডিআরও হাটখোলা ও সংলগ্ন 20 কিলোমিটার সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধি করেছে এবং জওয়ানদের সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। তিনি জানান, তিন ঘন্টার গুলি বিনিময়কালে হাটখোলা সীমান্তে বিডিআর প্রায় 200 রাউন্ড ও প্রতিপক্ষ বিএসএফ 400 রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে।
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা - গত সোমবার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল 7টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার বারাদী সীমান্তে বিএসএফ-বিডিআরের মধ্যে প্রায় 100 রাউন্ড গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে।
চুয়াডাঙ্গাস্থ 35 রাইফেলস্ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক জানান, প্রথমে বিএসএফ আনর্্তজাতিক পিলার 79 ও 80-এর মধ্যবতর্ী ভারতীয় সীমানা থেকে বাংলাদেশের দিকে গুলি ছোঁড়ে। রাত দেড়টা থেকে সকাল পর্যন্ত বিএসএফ জোয়ানগণ বিনা উস্কানিতে থেমে থেমে 4/5 রাউন্ড করে গুলি ছোঁড়ে। সীমান্তের বাংলাদেশী অংশে কর্তব্যরত বিডিআর জোয়ানগণ পাল্টা গুলি ছুঁড়ে বিএসএফ'র গুলির জাবাব দিয়েছে। বিডিআর অধিনায়ক জানান, সীমান্তে লোকবল বৃদ্ধি করে গত 4/5 দিন যাবৎ বিএসএফ বিনা উস্কানিতে এবং অকারণে এই গুলি চালাচ্ছে।
মহেষপুর (ঝিনাইদহ) থেকে সংবাদদাতা জানান, মহেষপুর বাগডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশীর লাশ 5 দিন পর ফেরত দেয়া হয়েছে। সীমান্ত জুড়ে আবারও দফায় দফায় অর্ধশত রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়। নিখোঁজ 4 বাংলাদেশীর এখনও সন্ধান মেলেনি।
শ্যামকুড় সীমান্তে সোমবার দিবাগত রাতে বিএসএফের গুলিবর্ষণের পর থেকে বাংলাদেশী 4 জন নিখোঁজ রয়েছে। এদের এখনও কোন সন্ধান পায়নি বিডিআর।
তবে বাগাডাঙ্গা গ্রামবাসী জানায়, এদের মধ্যে সেলিম ও উজ্জল মারা গেছে এবং ওবায়দুল কৃষ্ণনগর হাসপাতালে মৃতু্যর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
চুয়াডাঙ্গা ও দামুড়হুদা - গত রবিবার ও সোমবার রাতে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা সীমান্তে বিডিআর বিএসএফের মধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও গ্রামবাসী জানায়, রবিবার রাতে সীমান্তের 79 পিলারের কাছে ভারতের নদীয়া জেলার বিজয়পুর ক্যাম্পের বিএসএফ বিনা উস্কানিতে 5 রাউন্ড গুলি ছুঁড়লে প্রতিবাদে বাড়াদি ক্যাম্পের বিডিআর 40 রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। এর পর থেকে উভয় সীমান্তে দু'দেশের সৈন্যরা যুদ্ধ সাজে অবস্থান নেয়। পরদিন সোমবার রাতে বিএসএফ 14 রাউন্ড গুলি করলে বিডিআরও প্রায় 20 রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে।
আতংকিত গ্রামবাসী আইনাল হক (62) জানান, বিএসএফ বাংকার খনন ও সীমান্তবর্তী গ্রামের ঘরের ছাদে অস্ত্র গোলাবারুদ মজুদ করছে। চুয়াডাঙ্গা বিডিআর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোতাহার হাসান জানান, সীমান্ত পরিস্থিতি ক্রমেই শান্ত হয়ে আসছে, ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে বিএসএফকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
ঃঃ দৈনিক ইত্তেফাক ঃ 17.01.2007 ঃঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।