অতীত খুড়ি, খুঁজে ফিরি স্বজাতির গুলিবিদ্ধ করোটি
পথের কুকুর
অবশ্য সে পথের কুকুর। সারাদিন
এদিক ওদিক ছোটে, কখনো-বা ডাস্টবিন খুঁটে
জুড়ায় জঠরজ্বালা, কখনো আবার প্রেমিকার
মনোরঞ্জনের জন্য দেয় লাফ হরেক রকম।
হাড় নিয়ে মুখে বসে গাছের ছায়ায়,
লেজ নাড়ে মাঝে-মধ্যে, ফুর্তিবাজ প্রহরে কখনো
ধূলায় গড়ায়। কখনো সে শূন্যতাকে সাজায় চিৎকারে।
আমি বন্দী নিজ ঘরে।
শুধু
নিজের নিঃশ্বাস শুনি, এত স্তব্ধ ঘর।
আমরা ক'জন শ্বাসজীবি
ঠায় ব'সে আছি
সেই কবে থেকে। আমি মানে
একজন ভয়ার্ত পুরুষ,
সে অর্থাৎ সন্ত্রস্ত মহিলা,
ওরা, মানে কয়েকটি অতি মৌন বালক বালিকা-
আমরা ক'জন
কবুরে স্তব্ধতা নিয়ে বসে আছি। নড়ি না চড়ি না
একটুকু, এমনকি দেয়ালবিহারী টিকটিকি
চকিতে উঠলে ডেকে, তাকেও থামিয়ে দিতে চাই-
পাছে কেউ শব্দ শুনে ঢুকে পড়ে ফালি ফালি চিরে
মধ্যবিত্ত নিরাপত্তা আমাদের। সমস্ত শহরে
সৈন্যরা টহল দিচ্ছে, যথেচ্ছ করছে গুলি, দাগছে কামান
এবং চালাচ্ছে ট্যাঙ্ক যত্রতত্র।
মরছে মানুষ
পথে ঘাটে ঘরে, যেন প্লেগবিদ্ধ রক্তাক্ত ইদুর।
আমরা ক'জন শ্বাসজীবি
ঠায় ব'সে আছি
সেই কবে থেকে। অকস্মাৎ কুকুরের
শানিত চিৎকার কানে আসে, যাই জানালার কাছে, ছায়া-প্রায়। সেই
পথের কুকুর দেখি বারংবার তেড়ে যাচ্ছে জলপাইরঙ
একটি জীপের দিকে, জীপে
খাকি উর্দিপরা নরঘাতকের দল। ভাবি, যদি
অন্ততঃ হতাম আমি পথের কুকুর!
২১ জুলাই, ১৯৭১
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।