একটি দায়দায়িত্বহীন নির্দেশের ফলে 27 অক্টোবরের পর দেশে রাজনৈতিক অঙ্গণে সহিংসতার জন্ম হয়। 28 অক্টোবর পল্টনে পৈশাচিকভাবে মানবতা, মুনষ্যত্বকে ভূলুন্ঠিত করে নির্মমভাবে মানুষ হত্যা করা হয়। যখন কেয়ারটেকার সরকার শান্তিপূর্ণভাবে দায়িত্বগ্রহণ করার সকল কর্মকান্ড সম্পাদন করেছে ঠিক সেই সময় আওয়ামীলীগ জনগণকে ভীতসন্ত্রস্ত করে ঘরে ঢুকিয়ে, আইন-শৃঙ্খলাকারীদের ভীত করে গোটা দেশের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এর মাধ্যমে আওয়ামীলীগ কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পদনত করে 72 এবং 75 এর মত বাকশালী শাসন কায়েম করতে চেয়েছিল। এই ঘটনা শান্তিকামী মানুষের বিবেককে আহত করেছে।
নিরস্ত্র মানুষের বিবেককে দিয়েছে নাড়া। যাদের সন্তান, ভাই, স্বামী সেদিনের ঘটনায় নিহত হয়েছে তাদের বুক ফাটা আর্তনাদ সন্তানহারা পিতার বেদনা কিংবা স্বামীহারা স্ত্রীর অথবা ভাই হারা বোনের আর্তনাদ খোদার আরশকে পর্যন্ত প্রকম্পিত করে তুলছে। বাবা হিসেবে ছেলের লাশ কাধে নিয়ে হাটা যে কি মর্মান্তিক শুধু ভূক্তভূগীর পইে অনুধাবন করা সম্ভব। তারা কখনো ভাবেনি নিজের হাতে বড় করে তোলা প্রিয় সন্তানটি চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে। তারা একটি লাশই শুধু পাইনি, পেয়েছে তবিত হয়ে থেতলে যাওয়া মাথা, পেয়েছে পা থেকে মাথা পর্যন্ত কুপিয়ে রক্তাক্ত করা একটি শরীর, এমন একটি জায়গা পায়নি যেখানে স্নেহের পরশ দিয়ে হাত কিংবা মুখের আদরের শেষ সম্বলটুকু এঁকে দিবে।
মোট কথা একটি জায়গা পায়নি যেখানে সন্ত্রাসীরা তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ও লগি বৈঠা দিয়ে আঘাত করেনি। জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন একটি অত লাশ আর তবিত একটি লাশ বহন করা কি সমান ? তাদের সন্তান কিংবা ভাইয়েরা কি এমন অপরাধ করেছিল যার জন্য একটি অত লাশও তারা পেল না। এ কোন সভ্য দেশে বাস করছি আমরা। এই নির্মম সভ্যতার আমরা অবসান চাই, অবসান চাই এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডেরও। "এক মা আহাজারী করে বলছিল এখনও মনে হয় আমার প্রিয়জন আমার কাছেই আছে।
কখনও কখনও অবচেতন মনে মা ডাকটিও প্রতিধ্বনিত হয় বারবার। প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম আমাদেরকে মানতে হয়। কিন্তু এ নিয়মটি মানা যখন বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায় কষ্টটি হয় তখনই; নিজেকে মনে হয় অসহায়। নিরুপায় হয়ে মহান রবের কাছে প্রার্থনা করি,"আর যেন কোন মায়ের বুক খালি না হয়। "
শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আক্রমন করে লাঠি, লগি ও বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে এই সকল যুবকদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তাতে ভেঙ্গে খানখান হয়ে গেছে প্রতিটি মমতাময়ী মায়ের হৃদয়।
শুধু হত্যা করেই তারা ান্ত হয়নি বরং নিশ্চিত মৃতু্য জেনেও লাশের উপর উঠে যেভাবে নাচানাচি করেছে তাতে চরম শত্রুরও গা শিউরে উঠেছে। মানবতার এ নির্মম অপমান বিবেকবান মানুষকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। একি স্বাধীন বাংলাদেশ! নাকি ফিলিস্তিন! নাকি ইরাক কিংবা কাশ্মীর ! জনমনে আজ প্রশ্ন আওয়ামীলীগের রাজনীতি এত নির্মম কেন? কেন এমন পাশবিক চিত্র আমাদেরকে দেখতে হয়েছে? কেন একের পর এক মায়ের বুক খালি হচ্ছে? কেন স্বজনের আর্তনাদ আকাশ বাতাসকে ভারি করে তুলছে? এ পাশবিকতা থেকে কি কোন মুক্তি নেই? কি সেই মুক্তির পথ ?
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহামান্য রাষ্ট্রপতি মহদয় ও উপদেষ্টাবৃন্দকে বলছি যদি এ সন্তানটি আপনার হতো! আপনি কি পারতেন চুপচাপ বসে থাকতে? সরকার যদি তার বিচার না করে তবে কে করবে তার বিচার? আমরা কার কাছে বিচার প্রার্থনা করব ? এই অন্যায় যারা করেছে আমরা যারা নিরবে এই অন্যায় সহ্য করব জাতি যদি তাদেরকে সমান অপরাধি করে ফেলে তাতে কি এই সম্মানজনক আসনটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে না ? নোবেল পুরস্কারে ভুষিত বাংলাদেশ যখন বিশ্বের দরবারে এক নতুন ইমেজে অধিষ্ঠিত ঠিক তখনই জীবন্ত মানুষকে পিটিয়ে হত্যার সেই ইমেজকে ম্লান করেছে বিশ্বের সর্বত্র। নিউইর্য়ক সিটির টাইমস স্কোয়ারে রয়টার হেডকোয়াটর্ারের উপর স্থাপিত বিশাল টেলিভিশন স্ক্রিনে বারবার প্রদর্শিত হচ্ছিল এ অসহায় মানুষদেরকে নির্মমভাবে হত্যার এই দৃশ্য। ঘটনার বীভৎসতা দেখে চোখ ঢেকেছেন আমেরিকানরা।
আমেরিকান বাংলাদেশীরা তাদের সন্তানদের টিভি দেখতে দেয়নি, যাতে তারা জীবন্ত মানুষের হত্যার দৃশ্যটি না দেখে। যে দৃশ্য দেখে বিশ্ববাসী স্তব্ধ। বাংলার 14 কোটি জনগণ লজ্জায় বাকরুদ্ধ ! সেই দৃশ্য দেখে শেখ হাসিনা কি ব্যথিত হয়েছেন ? কারণ তিনিওতো কোন সন্তানের মা। এসব কিছূ দেখার পরেও এই নির্মম পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে দেশের বিবেকবান রাজনীতিবিদরা ঐক্যবদ্ধ হবে না ? আপনার শানিত কলমটি কি রুখে দাড়াবে না ? সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত আওয়ামীলীগ, 14 দলের বা অন্যকোন দলের নেতা কমর্ীদের প্রতি জাতির বিবেকবান নাগরিকদের আহ্বান দয়া করে সহিংসতা পরিহার করুন। গণতান্ত্রিক উপায়ে রাজনৈতিক কর্মতৎপরতা চালান যেন আর কোন তাজা প্রাণ অকালে ঝরে না পড়ে এবং জাতির আলোগুলোকে প্রজ্জ্বলিত রাখার ব্যাবস্থা করুন।
সমাজের অন্ধকার দূরীভূত করে ভালো, সত্য এবং সুন্দরকে প্রতিষ্ঠিত করুন। তাতে অন্তত আমাদের সন্তানদের আত্মত্যাগের কিছুটা মূল্য দেশ-জাতি উপভোগ করতে পারবে। আর যেন কোন মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়। মুজাহিদ কিংবা শিপনদের মায়েরাই হোক সর্বশেষ শোকাহত মা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।