আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চারতাস 2 (ধারাবাহিক ওয়েস্টার্ন গল্প )

timursblog@yahoo.com

'কেমন আছ গেইল?' সংক্ষেপে প্রশ্ন করল বিলটন । 'এ লোক কী তোমার বন্ধু ?' টেবিলে নিজের তাস বিছিয়ে রাখা দরকার, ভাবল অ্যালেন । 'হ্যাঁ, বন্ধু কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা; এ জায়গার মালিক । ' 'তুমি রেড রকের মালিক?' অবিশ্বাসের সাথে প্রশ্ন করল বিলটন । 'ব্যাপারটা প্রমান করা তোমার জন্য খুব কঠিন হবে, তাছাড়া এ জমি এখন আইনের এখতিয়ারে ।

' 'কার আইন?' জানতে চাইল রিং । ব্রুল যে ওকে খুঁটিয়ে দেখছে, সেটা সে বুঝতে পারছে, কিন্তু এখনও নিশ্চিত হয়নি । 'আমার । আমি টাউন মার্শাল এখানকার । এখানে একটা খুন হয়েছিল, এবং যতদিন পর্যন্ত না সে খুনের কিনারা হচ্ছে, ও খুনীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান না যাচ্ছে, ততদিন এজমিতে কেউ হাত দিতে পারবেনা ।

তুমি দেখছি এর মধ্যেই কিছু পরিবর্তন করে ফেলেছ, তবে আদালত তোমাকে ক্ষমা করলেও করতে পারে । ' 'তুমি টাউন মার্শাল?' হ্যাটটা মাথার পেছন দিকে ঠেলে দিয়ে তামাকের জন্য হাত বাড়াল অ্যালেন রিং । 'বেশ ইন্টারেস্টিং ব্যাপার, যে যাই হোক, আমি তোমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি, তুমি শহরের বাইরে চলে এসেছ । ' 'তাতে কিছু আসে যায়না !' ধারালো শোনাল বিলটনের গলা । শুনেই বুঝল এরকম কথা শুনে বেশি অভ্যাস নেই মার্শালের, ওর হুকুম সাধারনত মান্য করা হয় ।

'আজ রাত নামার আগেই তুমি এখান থেকে চলে যাবে । ' 'তাতে অনেক কিছু আসে যায়,' শান্তভাবে উত্তর দিল অ্যালেন । 'এ জায়গাটা পেয়েছি, আমার যথা সর্বস্ব পোকার খেলায় বাজি রেখে । চারটে তাস টেনে আমি জিতেছি, তিনটে টেক্কা ছিল তাতে । খেলাটা বোকার মত ছিল কিন্তু আমি জিতেছি ।

আমি দলিল রেজিস্ট্রি করেছি, সুতরাং আইনতঃ এ জমির মালিক আমি । আমি এমন কোন আইনের কথা জানিনা যে একবার খুন হয়েছে বলে তিন বছর কোন সম্পত্তি ফেলে রাখতে হবে । যদি তিন বছরেও খুনের কিনারা না হয় তো আমার পরামর্শ হচ্ছে, শহরে একজন নতুন মার্শাল দরকার । ' রেগে গেছে রস বিলটন, কিন্তু নিজেকে সংযত রাখল সে । 'তোমাকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে, তুমি যদি নিজে থেকে না যাও, তবে আমি আমার ক্ষমতা খাটিয়ে তোমাকে উচ্ছেদ করব ।

' হাসল রিং । 'শোন বিলটন, তোমার এসব চাল ঝামেলা চায়না এমন লোকের জন্য রেখে দাও । তুমি হয়তো অনেক লোককে ধাপ্পা দিতে পারো, যে তোমার এরকম করার ক্ষমতা আছে । আমাকে তুমি ধাপ্পা দিতে পারবে না-আমি স্রেফ ভয় পাচ্ছি না, তাই না ব্রুল?' এত দ্রুত ওদিকে ফিরল রিং, যে জিনের ওপর জমে গেল ব্রুল । থাবা মেরে পিস্তল বের করার জন্য শূন্যে নিশ্চল হল হাত ।

ওর মুখে বিরক্তি ছোঁয়া খেলে গেল এবং তারপর ওকে চিনতে পারল ব্রুল । 'অ্যালেন রিং,' বলল ব্রুল । 'তুমি আবার !' 'ঠিক তাই ব্রুল, শুধু এবারে ইন্ডিয়ান এলাকার মধ্যে গরু নিয়ে যাচ্ছিনা আমি । সেবারে গরুচোরের দলের সাথে ছিলে তুমি । ' বিলটনের দিকে ফিরল রিং, 'তুমি না আইনের লোক ? এ লোক তোমার সাথে কেন ? টেক্সাসের প্রত্যেকটা কাউন্টিতে ঘোড়াচরি থেকে খুনের দায় ব্রুলের নামে হুলিয়া ঝুলছে ।

' অনেকক্ষন ওর দিকে চেয়ে রইল বিলটন । 'তোমাকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে,' বলল সে । 'আমি থাকছি এখানে,' তীক্ষ্ন গলায় উত্তর দিল অ্যালেন রিং । 'আর আবার এদিকে এলে ওই কয়োটিগুলোকে সাথে এনো না, আমি পছন্দ করছিনা ওদের !' ব্রুলের আঙ্গুলগুলো ছড়িয়ে পড়ল, শীতল ক্রোধে কঠিন হয়ে পড়েছে ওর ঠোঁটজোড়া । শান্তভাবে ওকে দেখল রিং, 'তুমি জানো ও কাজ করে কোন লাভ হবেনা ।

আমার পিঠ ফেরানো পর্যন্ত অপেক্ষা কর । তুমি যদি পিস্তলের দিকে দিকে হাত বাড়াও তো, ঘোড়ার পিঠ থেকে ফেলে দেব আমি তোমাকে । ' কৌতুহলের সাথে ওকে দেখছিল গেইল ট্রুম্যান । 'আজব ব্যাপার ! ব্রুল তোমাকে দেখে ভয় পাচ্ছে ! বিস্ময় প্রকাশ করল সে । 'ঠিক কে তুমি, আসলে ?' ধীরে ধীরে হাত শিথিল করল ব্রুল ।

নির্বাকভাবে ওর দুই সঙ্গী বিলটন আর হেগেনের দিকে চাইল সে, চোখ গরম করে গোটা ব্যাপারটা দেখছিল ওরা । 'কেউ না ম্যা'ম,' সরলভাবে উত্তর দিল অ্যালেন । 'আমি কোন বন্দুকবাজ নই । সাধারন একজন মানুষ, যার কিনা ভয় পাওয়ার মত যথেষ্ট ঘিলুও নেই মাথায় । ও জানে ও আমাকে হারালেও হারাতে পারে, কিন্তু ওকে আমি খুন করব ।

ওর সামনেই ওর এক দোস্ত ব্লেজ গার্ডেনকে খতম করেছি আমি । ' 'কিন্তু-তাহলে তুমি নিশ্চয়ই কোন বন্দুকবাজ! ব্লেজ গার্ডেন একটা খুনী ! আমি বাবা আর অন্য লোকদের ওর সম্বন্ধে গল্প করতে শুনেছি !' 'নাহ, আমি কোন গানম্যান নই । আসলে আমার আগে ড্র করেছিল ব্লেজ । সত্যি বলতে কী আমার পিস্তল হোলস্টার থেকে বের হওয়ার আগেই ওর পয়লা গুলিটা বেরিয়ে গেছে । ওর দ্বিতীয় আর তৃতীয় গুলি আমাকে আঘাত করেছিল ।

আমি তখনও গুলি করিনি, এগিয়ে চলেছি ওর কাছে । ঘাবড়ে গিয়ে পিছে হটল ও আর ওর চতুর্থ গুলিটা অণেক ওপর দিয়ে চলে গেল । এবারে আমি গুলি করলাম, একটা গুলিই যথেষ্ট যদি ঠিক জায়গামত লাগান যায় । ' হাত তুলে চারপাশটা দেখাল রিং, 'কী ঘটেছিল এখানে, বলবে ?' 'আসলে খুবই সোজাসাপটা সবকিছু, এখানে এমন কিছু আছে যাতে মানুষ বন্দুকবাজিতে মেতে ওঠে । এবং একটা ঘটনা থেকে আরেকটা ঘটনায় মোড় নেয় পরিস্থিতি ।

' 'হুইট বেইলি এ জায়গাটার মালিক ছিল । খুব করিৎকর্মা লোক ছিল সে । সবসময় একটা কিছু নিয়ে মেতে থাকতো সে । লম্বা, সুদর্শন একজন মানুষ, যাকে সব মেয়েরাই ভালবাসত । ' 'তুমিও ছিলে নাকি তাদের মধ্যে ?' জিগ্যেস করল রিং ।

লাল হল মেয়েটা । 'হ্যাঁ, সেভাবে বললে তাই । আমার বয়স এখন আঠারো, আর ব্যাপারগুলো ঘটেছিল তিন-চার বছর আগে, চোখে পড়ার মত কেউ ছিলাম না আমি তখন । ' স্যাম হ্যাজলিট এ তল্লাটের সবচেয়ে ধনী লোকদের একজন, একটা ঘোড়ার ব্যাপারে হুইটের সাথে বচসা হয়েছিল তার । আশপাশে অনেক ঘোড়াচুরি হচ্ছিল তখন ।

হ্যাজলিট তার কিছু চুরি যাওয়া গরুঘোড়াকে হুইটের এই র্যাঞ্চে আবিসকার করে, অন্তত তার দাবি ছিল তাই । হুইট তাকে ফালতু কথা না বলতে বলে, এবং সাফ জানিয়ে দেয় এর পর থেকে যেন এ র্যাঞ্চে পা না দেয় সে । এরপর ঠিক ঘটেছিল তা নিয়ে মানুষজনের দ্বিমত আছে । হুইটের অনেক বন্ধুবান্ধব ছিল আর হ্যাজলিটের ছিল খুবই ঘনিষ্ঠ চার ভাই । এর অল্প কিছুদিন পরে বাক হ্যাজলিটের র্যাঞ্চ থেকে কয়েকজন রাইডার এ পথ দিয়ে যেতে দেখে উঠানে, ঠিক ঝর্ণাটার ধারে একটা লাশ পড়ে আছে ।

ভেবেছিল হুইট বোধহয় আঘাত পেয়েছে, কিন্তু কাছে এসে দেখে, লোকটা স্যাম হ্যাজলিট । পিঠে গুলি করে মারা হয়েছে ওকে । 'সোজা শহরের দিকে রওনা দিল ওরা, হুইটকে পাকড়াও করবে । হুইটকে পেয়েও গেল ওরা, কিন্তু গোটা ব্যাপারটা অস্বীকার করল সে । ওকে ঝোলাবে বলে ওর গলায় দড়ি পড়িয়ে দিয়েছে ওরা এমন সময় আমি-আমি শপথ করে বললাম যে আজ সারাদিনে র্যাঞে যায়নি ও ।

' 'কথাটা কী সত্যি ছিলনা পুরোপুরি?' অ্যালেনের চোখ মেয়েটার মুখ পরীক্ষা করছে তীক্ষ্ন ভাবে । ওর চোখ এড়ীয়ে গেল সে, আরও লাল হয়ে উঠেছে সে । 'না, মানে ঠিক তা নয় । কিন্তু আমি জানি ও নির্দোষ! ও কারো পিঠে গুলি করতে পারেনা । আমি ওদের বলেছি ও আমাদের বাসায় ছিল, মানে এসময় ওর পক্ষে স্যাম হ্যাজলিটকে মেরে আসা সম্ভব নয় ।

' 'মানুষজন ব্যাপারটা পছন্দ করেনি । কেউ কেউ এখনও বিশ্বাস করে হুইট বেইলিই স্যাম হ্যাজলিটকে মেরেছে । আর কেউ কেউ ব্যাপারটা পছন্দ করেনি কারন আমি যেভাবে বলেছি কথাটা, হুইট অনেক কম বয়সী একটা মেয়ের সাথে ভাব করছিল । আমি হুইটকে আমাদের বাসার সামনে দেখিছি, যদিও বাকিটা পেট বানানো কথা । সে যাই হোক কয়েক সপ্তাহ পরেই হুইট এ জায়গা ছেড়ে চলে যায় ।

' 'আচ্ছা- তো কেউ জানে না স্যাম হ্যাজলিটকে কে মেরেছে ?' 'কেউ না । একটা ব্যাপার কেউ বুঝতে পারছেনা স্যামের হিসাবের খাতাটার কী হল । জিনিসটা ছিল একটা টালি খাতার মত । অনেক জিনিস টুকে রাখত স্যাম খাতাটায় । খাতাটা ওর পকেটে পাওয়া যায়নি ।

কেউ জানে না ওটা কোথায় গেছে, কিন্তু ওর পেন্সিলটা পাওয়া গেছে, কাছের বালির ওপর । বাবার ধারনা, স্যাম গুলি খাওয়ার পরেও কিছুক্ষন বেঁচেছিল । ও এ সময় খাতায় খুনীর নাম লিখে গেছে । খুনী খাতাটা পেয়ে ওটা নষ্ট করে ফেলেছে । ' 'র্যাঞ্চ কর্মীদের ব্যাপার কী ? বিলটন কী ওদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি?' 'ওহ বিলটন! বিলটন তখনও শহরের মার্শাল হয়নি ।

ও তখন বাক হ্যাজলিটের র্যাঞ্চে কাজ করত । স্যামের লাশ ওই আবিস্কার করেছে !' মেয়েটা চলে যাবার পর ঘরে ঢুকে গোটা ব্যাপারটা মনে মনে খতিয়ে দেখল । এখান থেকে চলে যাবার কোন ইচ্ছা ও নেই, এখানেই ও থাকবে । কিন্তু সমস্যাটা চমকপ্রদ । এ বাড়িতে বাস করে এবং চারপাশটা খতিয়ে দেখে হুইট বেইলি সম্বন্ধে অনেক কিছু জেনেছে সে ।

গেইল ঠিকই বলেছে । হুইট ছিল 'কাজের লোক' । কারন, আশপাশে ও হাতের তৈরি অনেক জিনিস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, মজবুত করে বানান ফায়ার প্লেস থেকে শুরু করে সুন্দর করে ছাঁটা আপেল গাছগুলো সব তার হাতের নিপুণতার পরিচয় বহন করছে । লোকটা কোন খুনী ছিলনা যে সে ব্যাপারে বাজি ধরতে রাজি আছে অ্যালেন । টেইলর বলেছিল হুইট বেইলি সীসার বিষক্রিয়ায় মারা গেছে ।

কে ওকে মেরেছিল ? কোন সাধারন তর্কাতর্কি ঘটিত ডুয়েল? নাকি প্রতিশোধ নিতে এসেছিল কোন বন্দুকধারী ? নাকি কারোর ধারনা হুইট খুব বেশি কিছু জানে, ওকে চুপ করেই দেয়া দরকার? 'জায়গাটা পছন্দ করবে তুমি,' বলেছিল টেইলর । মানে কী দাঁড়াল? জায়গাটা বেন টেইলর এসে দেখে গেছে! যতই দেখছে ততই জটিল মনে হচ্ছে পরিস্থিতিকে । রাতের খাওয়া সেরে ঘরের বাইরে গিয়ে কেবিনের দেয়ালে হেলান দিয়ে একটা সিগারেট ধরাল অ্যালেন ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।