timursblog@yahoo.com
কোন মানুষ যদি পোকার খেলায় চারটে তাস টানে তখন তার এরকম একটা কিছু আশা করা উচিৎ । বেন টেইলর সম্ভবত সত্যি কথাই বলেছিল, যে তার ভাগ্য ফুরিয়ে গেছে । সে যাহোক, নিজের বলে একটা জায়গা হয়েছে তার, এটা সে রক্ষা করবে, যা থাকে কপালে ।
না, জায়গাটার কোন দোষ নেই । ঘোড়ায় চড়ে উপত্যাকায় পয়লাবার ঢুকেই অ্যালান রিং বুঝেছিল বাড়ি এসেছে সে ।
এটাই সে জায়গা, এখানেই সে থামবে । দশ বছর ধরে পশ্চিম চষে বেড়ানোর পর যদি কোথাও ডেরা বাঁধতে হয় এটা সে জায়গা ।
কেবিনটাও দেখে মনে হল ভাল । যদিও টেইলর বলেছিল জায়গাটা তিন বছর ফাঁকা পড়েছিল । বাড়িটা দেখে মনে মজবুত আর শক্তপোক্ত করে বানান, যদিও বাড়িটার চারপাশে উপত্যকায় কোমর সমান উঁচু হয়ে ঘাস জন্মেছে, কিন্তু তার মধ্যে নাল না পরান টাট্টুঘোড়া, মানে বুনো ঘোড়া চলার ট্রেইল তৈরি হয়েছে সে দেখতে পাচ্ছে ।
কিছু হরিণের পায়ের দাগও আছে । এর পাশে একটা নাল পরান ঘোড়ার ছাপও দেখতে পেল অ্যালেন ।
শেষ ট্র্যাকটা বাড়ির দরজা পর্যন্ত গিয়ে সেখানে শেষ হয়েছে । আরও দেখা যাচ্ছে খুব ছোট্ট পায়ের কেউ একজন হেঁটে গিয়ে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়েছে । কেন একজন মানুষ একটা জানালা দিয়ে দুবার উঁকি দেবে? বিশেষ করে একটা খালি বাড়ির জানালায় ? নিজেই গিয়ে উঁকি মেরে দেখল সে, ধুলো ধুসরিত অন্ধকার ঘরের ভেতরটা বিপরিৎদিকের একটা জানালার গলে আসা আলোয় দেখা যাচ্ছে ।
দক্ষহাতে বানান একটা টেবিল, একজোড়া চেয়ার আর একটা পুরনো ফায়ারপ্লেস দেখতে পেল সে ।
'তুমি কখনও ফায়ারপ্লেসটা বানাওনি বেন টেইলর,' বিড়বিড় করল রিং । 'তাস আর ইস্ত্রি ছাড়া আরকিছু চালাওনি জীবনে । তুমি কখনও তোমার জীবনে এত সুন্দর বা প্রয়োজনীয় জিনিস বানাওনি । '
লালচে পাথরের খাড়া ক্লিফটার নীচে, ঘাসে ঢাকা একটা তাক মতন জায়গায় বসে আছে কেবিনটা, ফিট পঞ্চাশেকেরও কম দূর দিয়ে বইছে ক্লিফ থেকে নেমে আসা একটা নালা ।
ঝিরঝির করে নালার পানির এসে পড়ছে একটা বেসিনে, তারপর সেখান থেকে এঁকেবেঁকে সিকি মাইল দূরের আরেকটা বড় নালায় এসে পড়েছে সেটা ।
কেবিনের চারধারে অনেকগুলো লম্বা স্প্রুস, দুটো সাইকামোর আর নালাটার ধারে একটা শিমুল গাছ । বেশ কিছু গুজবেরি ঝোপ আর দুটো আপেল গাছও আছে এখানে । আপেল গাছগুলোর ডালপালা ছাঁটা হয়েছে ।
'আর তুমি এ কাজটাও করনি বেন টেইলর !' গম্ভীর ভাবে স্বগতোক্তি করল অ্যালেন রিং ।
'গাছপালা সম্বন্ধে আমার আরও কিছু জানা থাকলে ভাল হত । '
সময়, চকিত হরিণীর মত ছুটে চলল । গোলাঘরের মধ্যে পাওয়া একটা লম্বা হাতলের নিড়ানি দিয়ে ঘরের চারপাশের ঘাসগুলো ছেঁটে ফেলল সে, কেবিনের চালের একটা ফুটো মেরামত করল যেটা দিয়ে ইঁদুরের পাল ঢুকত ঘরে । এমন কী আশপাশের বেশ কিছু ঝোপও ছেঁটে ফেলল সে । সবশেষে গোলাঘরটা মেরামত করল রিং ।
যেদিনটায় ঘরসাফাইয়ের কাজে মন দিয়েছে, সেদিনটাতেই গেইল ট্রুম্যান ঘোড়ায় চেপে হাজির হল এখানে । একটা চেয়ারের বসবার জায়গাটা মেরামত করে শেষ করে এনেছে রিং, যখন লাল টাট্টু ঘোড়ায় সওয়ার মেয়েটাকে দেখে সোজা হল সে । গাদা করে রাখা কাটা ঘাস আর পরিস্কার জানালা দেখে মুখ হাঁ হয়ে গেছে মেয়েটার । রিং দেখল মেয়েটা পিছলে নামল জিন থেকে তারপর একছুটে কেবিনের জানালার কাছে এসে উঁকি দিল । যন্ত্রপাতি ফেলে উঠে এল অ্যালেন ।
'কাউকে খুঁজছো ম্যা'ম?'
আধপাক ঘুরে ওর দিকে তাকাল মেয়েটা, ওর বড় বড় নীল চোখে অভিযোগের ছোঁয়া । 'কী করছো তুমি এখানে ? এভাবে হুট করে ঢুকে পড়ার মানে কী?'
হাসল অ্যালেন, কিন্তু ব্যাপারটা ধাঁধায় ফেলছে ওকে । বেন টেইলর কোন মেয়ের কথা বলেনি, এরকম কোন মেয়ের কথা তো নয়ই । 'কী আশ্চর্য ! আমিই এখন জায়গাটার মালিক । তাই আমি থাকার মত করে একটু মেরামত করে নিচ্ছি বাড়িটাকে ।
'
'তুমি এর মালিক?' বিস্মিত, ব্যথিত কন্ঠস্বর তার । 'তুমি এটার মালিক হতেই পারোনা ! ও কখনও এ জায়গাটা বিক্রি করতোনা । কখনোইনা !'
'আসলে ও ঠিক আমার কাছে বিক্রি করেনি ম্যা'ম.' কোমল গলায় জানাল রিং । ' ও আসলে পোকার খেলায় বাজিতে হেরে গেছিল আমার কাছে টেক্সাসে থাকতে। '
'পোকার খেলায়?' রীতিমত আতংকিত দেখাল মেয়েটাকে ।
'হুইট বেইলি পোকার খেলত? বিশ্বাস করিনা আমি !'
'যে লোকটার কাছে থেকে আমি জায়গাটা পেয়েছি তাকে সবাই বেন টেইলর বলেই চেনে ম্যা'ম। ' পকেট থেকে জমির দলিলটা বের করল রিং । 'সত্যি বলতে কী ও বলেছিল বটে, যদি কেউ হুইট বেইলি সম্বন্ধে জিগ্যেস করে তো, বলতে গুয়াডালুপসে সীসের বিষক্রিয়ায় হুইট বেইলি মারা গেছে । '
'হুইট বেইলি মারা গেছে?' বিস্ময়ে হতবাক মনে হল মেয়েটাকে । 'তুমি ঠিক জান? ওহ!'
শাদা হয়ে গেল মেয়েটার মুখ, মনে হল ভেতরে একটা কিছু নিভে গেল তার ।
হতাশ একটা ভঙ্গি করে উপত্যকাটার দিকে ফিরল সে । অদ্ভুত, ব্যাপারটা প্রথমবারের মত লক্ষ্য করল অ্যলেন রিং । একটা পরিচিত কিছুর উপস্থিতি অনুভব করল সে ।
ওর সামনে লম্বা ঘাসে ঢাকা উপত্যকা, শরতের ছোঁয়ায় কিছুটা বাদামী রং নিয়েছে । আর ওর ডান দিকে কুচকাওয়াজে পিঠ সোজা করে দাঁড়ানো সৈনিকের মতই সটান দাঁড়িয়ে আছে স্প্রুস গাছের বীথি, তারও খানিক দূরে উঠে গেছে পাহাড়ের ঢাল ।
আরও একটু দূরে আরও ডানে পাহাড়ের শেষ মাথায় আরেকটা বড় উপত্যকা মিলিয়ে গেছে দূরের ঘন নীলাভ-বেগুনি রংএর রেখায় । এখানে সেখানে দেখা যাচ্ছে শিমুল গাছের সোনালী বীথি, ঠান্ডায় শিমুল পাতা সোনালী রং নিয়েছে ।
কোন কথা দিয়ে একে প্রকাশ করা যায়না । এ একটা ছবি, এমন ছবি যা একজন মানুষ কেবল স্বপ্ন দেখতে পারে, কিন্তু আঁকতে পারেনা ।
'এটা-এটা সুন্দর, তাই না ?'
মেয়েটা ফিরল ওর দিকে, এবং মনে হল প্রথমবারের মত ওকে ভাল করে দেখল ।
গম্ভীর ধুসর চোখ আর একরাশ লালচে-বাদামী চুল মাথায় দীর্ঘদেহী এক তরুন, নিঃসঙ্গ, ঘোড়সওয়ারের ভাবটা লেগে আছে ওর চেহারায় ।
'হ্যাঁ, জায়গাটা সুন্দর । ' আমি এতবার এসেছি এ দৃশ্য দেখতে, হ্যাঁ কেবিনটাকেও । আমার মনে আমার দেখা সবচয়ে সুন্দর জায়গা এটা । আমি অনেক স্বপ্ন দেখতাম-' হঠাৎ খেই হারিয়ে চুপ করে গেল সে ।
' ওহ, আমি দুঃখিত, এভাবে বলাটা ঠিক হয়নি আমার । '
ওর দিকে ফিরে গম্ভীরভাবে বলল মেয়েটা. 'এখন আমার যাওয়াই উচিৎ, এখন তুমি এটার মালিক । '
ইতস্তত করল অ্যালেন । 'ম্যা'ম,' বলল সে জায়গাটা আমার, এবং আমি কোন কিছুর বিনিময়ই এটা বদল করবনা । কিন্তু দৃশ্য, সেটার ওপর কারো মালিকানা নেই ।
যার চোখ আছে এবং যে দেখতে যায় সেই দেখতে পারে । অতএব তুমি যখন খুশি আসতে পারো দেখতে । '
হাসল রিং, 'আসলে আমি বাড়িটা মেরামত করছি ভেতর থেকে যাতে বাড়ি বাড়ি মনে হয় জায়গাটা । লাল হল সে 'আর এব্যাপারে আমার তেমন ধারনা নেই, কারন সারাটা জীবন বলা যায় বাংক হাউজেই কাটিয়েছি আমি । '
সহানুভুতির আসি হাসল মেয়েটা ।
'নিশ্চয়ই! খুব ভাল লাগবে সাহায্য করতে, শুধু,'-হাসি মুছে গেল তার-'তুমি এখানে থাকতে পারবেনা । রস বিলটনের সাথে তোমার দেখা হয়নি, হয়েছে কী ?'
' কে সে? কৌতুহলী হয়ে জিগ্যেস করল রিং । এগিয়ে আসা ঘোড়সওয়ারদের দিকে মাথা নাড়ল সে । 'ওই লোকটার কথা বলছ ?'
দ্রুত ঘুরে তাকিয়ে মাথা নাড়ল মেয়েটা । 'হুঁশিয়ার থেকো ! ও টাউন মার্শাল ।
ওর সাথের লোক দুটো হচ্ছে আছে বেন হেগেন আর স্ট্যান ব্রুল । '
ব্রুলের কথা ওর মনে আছে, ব্রুলের কী ওর কথা মনে আছে ?
'তো যাই হোক, আমার নাম অ্যালেন রিং,' নীচু গলায় বলল সে ।
'আমি গেইল ট্রুম্যান,' জানাল মেয়েটা । 'আমার বাবা, টল টি ব্র্যান্ডের মালিক । '
শাদা হ্যাট পরা বিলটন বিশালদেহী মানুষ ।
দেখে ঠিক পছন্দ হলনা রিংএর এবং বুঝল ব্যাপারটা আসলে দু'তরফা । ব্রুলকে সে চেনে, তাহলে গাট্টাগোট্টা লোকটা বেন হেগেন । ব্রুল পাল্টেছে সামান্য, একটু পাতলা হয়েছে সে, কিন্তু ওর কুঠারের মত মুখটা সেই আগের মতই সরু আর বিষাক্ত ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।