আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'বয়েজ স্কুল' আর 'গার্লস স্কুল'

পাগলের প্রলাপ....

কাজী নজরম্নল ইসলাম তার 'নারী' কবিতায় পুরম্নষের পাশে নারীকে সমান স্থান দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন তিনি কতটা আধুনিক, যা আমরা কয়েক দশক পেরিয়ে ইন্টারনেট তথা ই-লার্নিং এর যুগে এসেও পারিনি কেবলমাত্র 'বয়েজ স্কুল' আর 'গার্লস স্কুল' নামক দুটি শব্দের কারণে। সারা বিশ্বে যখন নারী-পুরম্নষ একই সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উন্নয়নের কথা ভাবছে, তখন কিছু স্কুল-কলেজের কারণে বাংলাদেশ গোটা বিশ্ব থেকে কয়েক ধাপ পিছিয়ে রয়েছে। কো-এডুকেশনের কথাই বলা হচ্ছিল। ঢাকা শহরের দুটি খ্যাতনামা কলেজের কথাই ধরা যাক না কেন, একদিকে ভিকারম্নননিসা নূন কলেজ, অপরদিকে নটরডেম কলেজ- কে কার থেকে এগিয়ে? উত্তর দেয়া কঠিন। তবে প্রশ্ন থেকেই গেল, কেন ভিকারম্নননিসার মতো একটা ভালো কলেজে ছেলেরা পড়তে পারবে না, আর কেনই বা নটরডেম কলেজে মেয়েরা পড়তে পারবে না? ৰতিটাই বা কোথায়? লাভের অঙ্কটাই বেশ ভারী কো-এডুকেশনের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব সৃষ্টি করা, আবার সহযোগিতার হাতও বাড়িয়ে দেয়া।

কো-এডুকেশনে পড় ুয়া ছেলেমেয়েদের ৰেত্রে বেশিরভাগ সময়ে দেখা যায় কে কার থেকে বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারে তার প্রতিযোগিতা। আবার একটি মেয়ে একটি মেয়েকে যত না সহজেই বইপত্র কিংবা পড়াশোনার বিষয়ে সাহায্য করতে পারে একটি ছেলে খুব সহজেই তা পারে। একে অনেকেই হয়তো ঠোঁট উল্টিয়ে বলবেন, 'চুম্বকের ধর্ম অর্থাৎ সমমেরম্নতে আকর্ষণ আর বিপরীত মেরম্নতে বিকর্ষণ'। একটু পজেটিভলি ব্যাপারটা দেখলে ৰতি কি বলেন তো, একসাথে লেখাপড়া করতে গিয়ে ছেলেতে মেয়েতে যদি কোনো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে তা অবশ্যই দোষের কিছু নয়। বরং গার্লস স্কুল আর বয়েজ স্কুলের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি যে দুর্বার আকর্ষণ থেকে যায় তা থেকে অনত্দত রেহাই পাওয়া যায়।

আবার বিপরীত ক্রমে দেখা যায়, মেয়েদের স্কুলের সামনেই ছেলেদের যত ভিড় যা বাইরে থেকে দেখলে খুবই দৃষ্টিকটূ লাগে। কথা হলো, ইডেন কলেজের ছাত্রী নাজনীনের সাথে। সে একদম ছেলেবেলায় অর্থাৎ নার্সারিতে পড়েছিল কো-এডুকেশনে, তারপর ক্লাস ফাইভ পর্যনত্দ কো-এডুকেশনে পড়লেও তা ছিল ভিন্ন ভিন্ন শিফটে অর্থাৎ ছেলেদের আলাদা শিফটে আর মেয়েদের আলাদা শিফটে। আবার 5ম থেকে এসএসসি পর্যনত্দ গার্লস স্কুলে। কলেজে গিয়ে উইমেন্স কলেজে, এখন সে অনার্স করছে ইডেন থেকে।

অর্থাৎ জীবনের বেশিরভাগ সময়েই সে লেখাপড়া করেছে মেয়েদের মাঝে। যার ফলশ্রম্নতিতে নিজের অজানত্দেই তার মনে যেমন দানা বেঁধেছে পুরম্নষ বিষয়ক অদম্য কৌতূহল তেমনি পুরম্নষ ভীতিটাও কিন্তু কম নয়। একই রকম সমস্যার কথা বলেছেন, কলেজ অব হোম ইকোনোমিক্সের ছাত্রী নুসরাত। একটানা পাঁচ বছর মেয়েদের সাথে লেখাপড়া করতে গিয়ে আপনা থেকেই নিজের মধ্যে একপ্রকার জড়তা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। যা তিনি বুঝতে পারলেন চাকরি জীবনে পা দিয়ে।

একই সাথে পুরম্নষ কলিগদের সাথে কাজ করতে গিয়ে কথা তো বলতেই হয়, এমনকি একই রিকশায় চড়ে কাজে বেরোতে হয়। যা তিনি খুব সহজভাবে করতে পারেন না, কথা বলতে গেলেই আটকে যায়, দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন। একই রিকশায় উঠলে ভয় পান কেউ দেখে ফেললে না জানি কী বলবে। যে প্রতিক্রিয়াটা কো-এডুকেশনে অনেক আগেই তৈরি হয়ে যায়। আর চাকরি জীবনে তা হয়ে ওঠে আরো সহজ।

অপরদিকে কো-এডুকেশনে পড় ুয়া ছাত্রী মিতু। ছোট থেকেই ছেলেদের সাথে লেখাপড়া করেছ। ফলে তার অনেক ছেলে বন্ধুও তৈরি হয়ে গেছে। আর বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে পেয়েছে ছেলেদের সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা বলার দৰতা, একা একা চলাফেরা করার স্বাধীনতা আর ছেলেদেরকে একজন ভালো বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করার মানসিকতা। মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ যথেষ্ট পরিমাণে উৎসাহ থাকা সত্ত্বেও ছেলেমেয়েরা কো-এডুকেশনে পড়তে পারছে না।

এর কারণটা শুরম্ন হয় পরিবার থেকে, ধমর্ীয় মূল্যবোধ আর সামাজিক অসঙ্গতি থেকে। ছেলেদের ৰেত্রে এই বাধা যতটা প্রচ্ছন্ন মেয়েদের ৰেত্রে ঠিক ততটাই প্রকট। কারণ, একটা মেয়েকে যখন কলেজে ভর্তি করা হয়, তখন তার নিজস্ব মতামতকে পাত্তা না দিয়েই চিনত্দা করা হয় উইমেন্স কলেজই মেয়েটির জন্য যথেষ্ট নিরাপদ। তার অর্থ কী দাঁড়াল? কো-এডুকেশনে মেয়েরা নিরাপদ নয়। সম্পূর্ণ নেতিবাচক একটি ধারণা।

একটু ভালোভাবে লৰ্য করলেই দেখা যাবে, গার্লস স্কুলের মেয়েদেরকেই রাসত্দাঘাটে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কো-এডুকেশনে ছেলেরাই ছেলেদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। আর তাই কো-এডুকেশনেই মেয়েরা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। কোনো কিছু যখন খুব বেশি সহজলভ্য হয়ে যায়, তখন তার অপব্যবহার করতে দেখা যায়। কো-এডুকেশনেও তাই হয়।

কো-এডুকেশনে ছেলেমেয়ের বন্ধুত্ব খুবই সাবলীল একটা ব্যাপার যা অনেক সময় উচ্ছৃঙ্খলতায় রূপ নেয়। এর কারণ হিসেবে অবশ্যই কো-এডুকেশনকে দায়ী করা ঠিক নয়। আজকে রাসত্দা ঘাটে, অফিস-আদালতে, পার্কে, রেসত্দোরাঁয় সবখানেই যখন ছেলেমেয়ে একসাথে বিচরণ করতে পারছে বরং বাসে কিছুটা ঠেলাঠেলি সহ্য করেও কিংবা একটু ধাক্কা খেয়েও মেয়েরা ছেলেদের সাথে চলাফেরা করতে পারছে তখন কেবলমাত্র শিৰা ৰেত্রেই কেন ছেলেমেয়েদের জন্য আলাদা একটা গণ্ডি বেঁধে দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের কথাই ধরা যাক না কেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটা মেয়ে কেবলমাত্র বই পড়েই একটা ছেলে সম্পর্কে যত না ভালো বুঝতে পারে, তার চেয়েও ভালো বুঝতে পারে বইয়ের পাশাপাশি তার ছেলে বন্ধুটির সাথে কথা বলে, আলোচনা করে কিংবা আচার ব্যবহারে। এ থেকে কি এই প্রমাণিত হয় না, কো-এডুকেশন খুবই জরম্নরি একটি বিষয়, ভালো একটি শিৰা প্রতিষ্ঠান তো বটেই।

আর জীবনের প্রতিটি ৰেত্রেই ভালো একজন বন্ধুর প্রয়োজন খুব বেশি, সেই প্রক্রিয়া যদি শুরম্ন হয় স্কুল থেকেই, ৰতি নেই কোনোই।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।