আমি কিন্তু মোটেও পাতি মাস্তান না রস আলোর পুরনো একটা সংখ্যা পেলাম সোমবার ২৩জুলাই ২০১২ রস [সিমু নাসেরর][দরজার ওপাশে হুমায়ূন আহমেদ]লেখাটি পড়ে আমাকে খুব ভাললাগল তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করছি যদি এর আগে লেখাটি প্রকাশ হয়ে থাকে তাহলে ক্ষমা চাচ্ছি
***নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালের গেটে একটা ছোট্ট জটলা। হেভি গ্যাঞ্জাম বেধেছে সেখানে। হলুদ পাঞ্জাবির হিমু গ্যাঞ্জামের হোতা। পাশে দাঁড়িয়ে রাগে গজরাচ্ছে বাদল। তার শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো।
সে তার হিমু ভাইয়ের নির্দেশ পাওয়ামাত্রই সিকিউরিটি গার্ডের ওপরঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত। ঘটনা হলো, তাদেরকে হাসপাতালে ঢুকতে দিচ্ছে না দশাশই চেহারার কালো সিকিউরিটি গার্ড।
‘আমি বলছি যে আপনি এমন খালি পায়ে হাসপাতালে ঢুকতে পারবেন না। আমাদের নিয়ম নাই। খালি পায়ে ডিজিজ স্প্রেড হওয়ার অশঙ্কা থাকে।
পা ধুয়ে জুতা পায়ে আসুন। ’ কড়া গলায় বলল সিকিউরিটি। নেমপ্লেটে তার নাম দেখা যাচ্ছে উইলিয়াম।
হিমু উদাস ভঙ্গিতে তাকাল আকাশের দিকে। নিউইয়র্কের আকাশে তখন ঝকঝকে রোদ।
এমন রোদ ঢাকায় হলে তাকে বলা যেতপিচগলা রোদ। কিন্তু নিউইয়র্কের রাস্তা মনেহয় স্পেশাল পিচে তৈরি। পিচে এরা দুই নম্বরি করেনি, তাই এত সহজে গলবে মনে হচ্ছে না।
হিমুর মনটা আজ বিশেষ খারাপ। হুমায়ূন স্যার অনেক দিন হয় অসুস্থ।
গতমাসে তাকে জরুরি তলব করেছেন। আসি আসি করেও আসা হয়ে ওঠেনি এত দিন। গত একটা মাস এক গাছ বাবার সন্ধানে বাদলকে নিয়ে কড়াইল বস্তিতে ঘাপটি মেরে থাকতে হয়েছিল তার।
বাদল সিকিউরিটির পণ্ডিতি আর সহ্য করতে পারছিল না। বলল, ‘হিমু ভাই, দিই একটা থাবড় ব্যাটাকে? কত বড় সাহস, স্যারকে দেখতে দেবে না।
আরে হাসপাতাল কি তোর বাপের? খালি অনুমতি দেন একবার। থাবড়া দিয়ে শোয়ায়ে দেব না ব্যাটাকে। ’
হিমু বলল, ‘শান্ত হ বাদল। থাপড় ট্রিটমেন্টে এর কাজ হবে না। অন্য ট্রিটমেন্ট দিতে হবে।
’
বাদল বলল, ‘তাইলে হিমু ভাই একে জয়েন্ট লক ট্রিটমেন্ট দেন। এমন ট্রিটমেন্ট, যেন ব্যাটা আর কোনো দিন হাত-পায়ের জয়েন্ট না নাড়াতে পারে। লক ছুটাতে যেন ম্যাডিসন স্কয়ারে এসে আপনার পা ধরে বসে থাকে। ’
হিমু আবার এগিয়ে গেল সিকিউরিটির দিকে। একটারহস্যময় হাসি তার মুখে।
বলল, ‘জনাব উইলিয়াম, আপনি কোন থানার আন্ডারে?’
উইলিয়াম বলল, ‘জ্যামাইকা থানা। ’
‘জ্যামাইকা থানার ওসি কে?’
‘সেটা জেনে আপনার কী?’
‘কালা আদমি তোর কত বড় সাহস। হিমু ভাইয়ের সঙ্গে এভাবে কথা বলিস। কোনো আদব-কায়দা নেই। আজতোর একদিন কি আমার একদিন।
’ বলে বাদল প্রায়ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সিকিউরিটির ওপর। হিমু তাকে ঠেকাল অনেক কষ্টে।
একটু দূরে ঘাড় গুঁজে সিগারেট ফুঁকছিলেন খাটো করে এক মধ্যবয়সী লোক। তিনি এগিয়ে এলেন জটলার দিকে। বললেন, ‘এভাবে হবে না হিমু, তুমি রূপাকে ফোন দাও।
তার বাবা প্রভাবশালী আছে। একটা ফোন করে দিলেই আমাদের ঢুকতে দেবে। ’
হিমু অবাক হয়ে দেখল লোকটা তার পরিচিত। মিসির আলী। তাকেও হুমায়ূন স্যার জরুরি তলব করে পাঠিয়েছেন, ‘আর বলো না হিমু, আমি একা মানুষ, বাসার কাজের ছেলে রতনটার জ্বর।
এর ভেতর হুমায়ূনের জরুরি তলব। রতনকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে দিয়ে ফ্লাইট ধরতে হলো। এত লম্বা ফ্লাইট হাত-পায়ে একেবারে ঝিঁঝি ধরে গেছে। যাই হোক, সময় বেশি নাই। তাড়াতাড়ি ঢুকতে হবে।
তুমি রূপাকে ফোন করার ব্যবস্থা করো। ’
তিনজনের দলটি বেলভিউ হাসপাতালের সামনে থেকেনেমে এল রাস্তায়। সূর্যের আলোয় হাঁটছে তিন যুবক একটা টেলিফোনের দোকানের খোঁজে। একটু যেতেই তিনজনের এই দলটির সঙ্গে দেখা হলো মোটা ফ্রেমের চশমার এক যুবকের সঙ্গে। তার হাতে একটা মোটা বই।
হন্তদন্ত হয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল শুভ্র। তাদের দেখে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আরে হিমু ভাই, বাদল ভাই। মিসির আলী স্যার, সালাম। কোথায় যাচ্ছেন আপনারা?’
মিসির আলী বললেন, ‘ওয়াআলাইকুম সালাম শুভ্র। এখন কথা বলার সময় নাই।
তুমি কি বলতে পার আশপাশে কোথায় ফোনের দোকান আছে নাকি?’
শুভ্র বলল, ‘জি, স্যার আছে। আমার পরিচিত একটা ওষুধের দোকার আছে। গ্রিন ফার্মেসি। তাদেরওখানে ফোন করা যায়। চলেন যাই।
’
গ্রিন ফার্মেসির দিকে হাঁটতে হাঁটতে শুভ্র অনেকটা আপনমনেই বলল, ‘আমি এসেছিলাম স্ট্যানফোর্ডের একটা সেমিনারে। কোয়ান্টাম মেকানিকসের ওপর আমার একটা গবেষণা ছিল, সেটা নিয়ে। কাল বিকেলে হুমায়ূন স্যার আমাকে জরুরি তলব করেছেন। বলেছেন, আমাকে একটু দেখতে চান। যেন অবশ্যই হাসপাতালে আসি।
তাই যাচ্ছিলাম। ’
কথা বলতে বলতে তারা পৌঁছে গেল গ্রিন ফার্মেসির সামনে। ফার্মেসির মালিক ছেলেটি বাংলাদেশি। সে তার দোকানের সামনে হিমু আর বাদলকে দেখতে পেয়ে হতভম্ব হয়ে গেল। এটা কি স্বপ্ন না সত্যি! হতভম্ব ভাব কাটিয়ে উঠে সে ঝাঁপিয়ে পড়ল হিমুর পায়ের ওপর, ‘হিমু ভাই, আমাকে চিনতে পারেন নাই।
আমি খায়ের। আমি ফকিরাপুলের খায়ের। ওই যে একবার টহল পুলিশ ধইরা ছেচনি দিল, আপনে সেদিন না থাকলে আমারে ক্রসফায়ারে দিয়ে দিত শিউর। আপনে আমার জান বাঁচাইছিলেন। ’
হিমু বলল, ‘হ্যাঁ, খায়েরচিনতে পেরেছি।
তুমি এখানে কী কর? আমেরিকা আসলা কবে?’
খায়ের বলল, ‘সে এক হিস্টোরি হিমু ভাই...’
তাদের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে মিসির আলী বললেন, ‘হিমু, আগে ফোন, পরে খাজুরা আলাপ করো। ’ বাম হাতের কবজিটা ঘুরিয়ে ঘড়ি দেখে একটু খুকখুক করে কেশে তিনি যোগ করলেন, ‘আমাদের হাতে সময় বেশি নাই। ’
শুভ্র খায়েরকে বলল, ‘খায়ের ফোনটা দাও। হিমুভাই রূপা ম্যাডামকে ফোন করবেন। ’
খায়ের তাড়াহুড়া করে ফোনটা এগিয়ে দিল হিমুর দিকে।
হিমু রূপার ঢাকার টিঅ্যান্ডটি নম্বরে ফোন করল। ওপাশে ফোন ধরল রূপার বাসার কাজের বুয়া, ‘আফা তো বাসায় নাই। বিদেশ গেছে কাইলকা। আম্রিকা। আর বইলা গেছে আপনে ফোন করলে যেন তার মোবাইলে ফোন করেন।
’
হিমু জানে রূপার ফোন রোমিং করা থাকে। তাই ঢাকার মোবাইল ফোন নম্বরেই ডায়াল করল হিমু, ‘হ্যালো রূপা, আমিহিমু। তুমি কোথায়?’
ওদিক থেকে রূপা বলল, ‘হিমু আমি তো বেলভিউ হাসপাতালে। হুমায়ূন স্যার জরুরি আসতে বলেছেন আমাকে। তুমি কোথায়?’
‘আমিও তো নিউইয়র্কে।
স্যার আসতে বলেছেন। বেলভিউর সামনে গিয়েছিলাম। কিন্তু খালি পা দেখে আমাকে ঢুকতে দিচ্ছে না সিকিউরিটি গার্ড। তুমিকি একটু ব্যবস্থা করবে? আমার সঙ্গে বাদল,শুভ্র আর মিসির আলী বাঁকি লেখা এখান থেকে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।