অস্টিন মার্ফি পেশায় একজন ক্রীড়া সাংবাদিক। স্পোটর্স ইলাসট্রেটেড পত্রিকায় কাজের সুবাধে তিনি আমেরিকার ফুটবল সংবাদ সংগ্রহের জন্য দেশজুড়ে ঘুরে বেড়াতেন। পেশাগত জীবনে মাত্র একবারই ফুটবল খেলা ধারণ করা তার প েসম্ভব হয় নি। কারণ তখন পত্রিকা থেকে তাকে প্রেরণ করা হয়েছিল ফোরিডায় অনুষ্ঠিত সাতার প্রতিযোগিতায়।
এইতো গেল অস্টিন মার্ফির পেশাগত পরিচয়।
কিন্তু তার জীবনে আছে চমকপ্রদ এক ঘটনা।
34 বছর পর ওহাইয়ূ স্টেট যখন জাতীয়ভাবে রাজ্য উপাধি পেল তৎকালীন 2002 সালে বিশ্ববিদ্যালয় মৌসুমের ফাইনাল খেলা দেখতে সে গিয়েছিল সেই রাজ্যে। সেসময় মার্ফি দেখতে পান মাঠে দুই কন্যা আর স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে উক্ত রাজ্যের অপ্রীতিকর সমন্বয়ক জিম বলম্যান। যখন জিম বলম্যান তার পরিবার নিয়ে আনন্দে উদ্বেলিত, তখন মার্ফি বুঝতে পারে সে কাঁদছে।
তারও দু'দিন পর ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান আনসেলমোয় নিজ বাড়িতে মেঝেতে পায়ের ওপর পা তুলে পারিবারিক ছবির এলবাম দেখতে দেখতে সে পুনরায় বলম্যানকে ভাবতে থাকে।
ছবিতে মনোযোগ দিতে গিয়ে মার্ফির অনুভূতি তার ভাষায় ছিল 'ছবির পর ছবি, অথচ কোথাও আমার একটি ছবিও নেই, কোথাও নেই আমার কন্যা উইল্যার বাবা, ইষ্টারের ডিম শিকারে আমি ছিলাম না, ছিলাম না জন্মদিনের আনন্দে এমনকি ছিলাম না, সমুদ্র উপকূলের সাপ্তাহিক ছুটিতেও। ' তাই অন্যদের ছবি দেখে সে আর বিস্মিত হয় না। মার্ফি নিজেকে খুঁজে পায় না তার নিজস্ব সত্তাতেও।
অস্টিন মার্ফির পরিবার জুড়ে ছিল তার স্ত্রী লর্যা হিলজার্স,আর তাদের দুই সন্তান আট বছরের কন্যা উইল্যা ও ছয় বছরের পুত্র ডেভিন। বাচ্চাদের বেড়ে ওঠা আর ঘরের স্বচ্ছলতা এইসব মিলিয়ে লরা লেখালেখিকে ক্যরিয়ার হিসেবে বেছে নিল।
অন্যদিকে মার্ফির মধ্যে শুরু হল শূণ্যতা বোধ। এই শূণ্যতা হতে সে সিদ্ধান্ত নিল আগামী ছয় মাসের জন্য সে তার কর্মস্থল হতে ছুটি নিবে। এই সময়টা সে তার পরিবার পরিজনদের দেবে আর গৃহস্থালি সব কাজকর্মগুলো সম্পন্ন করবে। ফলে লরা তার লেখালেখির কাজটাও ভালোমত করতে পারবে। মার্ফি যদিও গোপনে ভাবতে থাকে গৃহস্থালি কার্যাদি কিভাবে সম্পন্ন করবে তবুও সে স্বপ্ন দেখে এই ছয়মাসে সে হবে পৃথিবীর সবচে সুখী স্যাড (ঘরে থাকা বাবা)।
কিন্তু যখনই এমনটাই ঘটতে যাচ্ছে ঠিক তখন 2002 এর অক্টোবরের 14 তারিখে ফরচুন পত্রিকায় ছাপা হলো ঘরকুণো, ঘরজামাই, গৃহস্থ প্রকৌশলীদের নিয়ে 'ট্রফি হাজব্যান্ড' শীর্ষক প্রতিবেদন। উক্ত প্রতিবেদনে ঘরের সমৃদ্ধি ও স্ত্রীর স্বাধীণতার জন্য গৃহস্থালি কাজ করে যারা, সেসব স্বামীদেরকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
'প্রতিদিন তুমি কি কাজ কর?'- এমন একটা বিরক্তিকর প্রশ্ন দিয়েই মার্ফির যাত্রা শুরু হয়। ঘরের সব কাজ, বাচ্চাদের স্কুলের পড়া তৈরি, বাচ্চাদের জন্মদিনের পরিকল্পনা ইত্যাদি সহ মোট 23 ধরনের কাজের তালিকা লর্যা উপস্থাপন করেছিল। তবে রান্নার কাজ মার্ফিকে সবচে বেশি নিরুৎসাহিত করতো।
কিন্তু যখন তার দাদীমা মসেস 75 বয়সেও ছবি আঁকার প্রতি ঝোঁক কমাননি, তখন 41 বছর বয়সের মার্ফি কেন রান্নার কাজ পারবেনা- এই ভেবে সে এগিয়ে যায়। একদিন মার্ফি শ্যামন মাছ রেধেঁছিল। রান্না যদিও ঠিকঠাক ছিল কিন্তু একই সাথে রান্না করা আলুর রোস্টের প্রতি ডেভিনের ছিল অনিহা। তরকারিতে ঝোলহীনতা আর লবনাক্ত হওয়ার ফলে মার্ফি বুঝতে পেরেছিল তার সন্তানদের ভেতরটা অন্ধকারাছন্ন।
মার্ফি খাওয়ার সময় ডাইনিং এর আলো ীণ রাখতো, যাতে বাচ্চারা ঠিক মতো খাবার দেখতে না পায়।
কিন্তু তবুও উইল্যা যখনই পোড়ালাগা আলু বুঝতে পারলো তখনই মুখ থেকে কয়েক সেমি. দূরে সেটি ছুঁড়ে ফেলল। আর মহাবিরক্তিকর দৃষ্টি নিপ্তি করল বাবার দিকে। তবুও উইল্যা বলল, 'বাবা তুমিতো মাত্র শুরু করলে, আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। পারোতো আমাকে কিছু টোস্ট করে দাও। ' যদি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মার্ফির মা হওয়ার প্রথম সপ্তাহ বর্ণনা করা যায় তবে তা হবে অত্যন্ত কান্তিকর একটা বিষয়।
কান্তিটা মার্ফির ভাষায় 'একটানা দশ কিমি দৌড়ানো কিংবা 50কিমি সাইকেল চালানোর মতো নয়, এটি ছিল পরের বউয়ের পিছনে কোনো একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে তিন ঘন্টা ধরে পিছু নেয়ার মতো হতভম্ব অবস্থা। ' সারাদিনের ম্যারাথন দৌড় শেষে মার্ফি রাত 9টার মধ্যে কান্তিতে বুঁদ হয়ে যেত। এরমধ্যে আবার যখন কাপড় ভাঁজ করার কথা মনে পড়ত তখন একরাশ হতাশা তাকে আকঁড়ে ধরত।
সকালবেলাটা মার্ফির জন্য ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। সকালবেলা অন্যান্য বাবা কিংবা মায়েদের মতন তাকেও বাচ্চাদের নিয়ে যেতে হতো স্কুলে নামিয়ে দিতে।
লর্যা তাকে বুঝতে পেরে মন্তব্য করে গৃহস্থালি কার্যাদি মার্ফিকে সহজাতভাবে হতাশাগ্রস্থ করে তুলছে। তাছাড়া লর্যার মতে মার্ফি পরিকল্পনা না করে সবকিছুতেই তাড়াহুড়ো করতে চায়। তাই মার্ফি তার স্বভাবের কিছু পরিবর্তন পূর্বক পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলার চেষ্টা করতে থাকে। আনন্দের সন্ধানে সে একটি তালিকা প্রস্তুত করে। সেই তালিকা অনুসারে সে এগিয়ে চলে একজন দ শ্যাড হওয়ার বাসনায়।
মার্ফি তার ঘুমন্ত ছেলের গা ঘেঁষে ঘুমাত। আধো ঘুম আধো জাগরণে ডেভিন তাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরত যেন মার্ফির শ্বাসনালী আটকে যাওয়ার অবস্থা হতো। সে স্কুলে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথে রিয়ারভিউ আয়নায় উইল্যাকে দেখত- আর ভাবত সে দেখতে খুবই সুন্দর। আর কাশে ডেভিনের ভাঙা ভাঙা বাক্য উচ্চারণ সে দারুণ উপভোগ করত।
মা দিবসের দিন কয়েক পূর্বে একটি স্থানীয় টিভি রির্পোটার ওয়েইন ফ্রিডম্যান মার্ফিকে ফোন করে।
উইল্যার বন্ধুর বাবা ফ্রিডম্যান সবকিছু জেনে একদিন মার্ফির সাথে থেকে তার ক্যামেরাম্যান সহ সবকিছু ধারন করার সময় চান। তার ঘরে যেদিন ক্যামেরা আসল তখন বাচ্চাদের ম্যাগাজিনে প্রকাশিত রেসিপি অনুসারে স্পঞ্জবব স্কয়্যারপ্যান্ট স্পঞ্জ কেক তৈরি করছিল। রেসিপির যে অংশে ডিমের সাদা অংশ ও কুসুম আলাদা করার জন্য বড়দের সাহায্য নিতে বলা হলো, সে অংশটা পড়ে সে খুবই ব্রিবত হল।
যখন সে গাড়ি চালিয়ে বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাচ্ছিল তখন টিভি ক্যামেরা গাড়ির পিছন থেকে সব কিছূ ধারণ করল। সে যখন গাড়িটি স্কুলের সামনের নির্ধারিত স্থানে থামিয়ে গাড়ি থেকে নামছে তখন ওপাশে তার বন্ধু দিবোর ও অবাক হয়ে ল্য করছিল একটি টিভি ক্যামেরা মার্ফিকে অনুসরন করছে।
পরের দিন বন্ধু দিবোরের কাছে সে সবকিছু ব্যাখ্যা করে বলল, 'আমার মা হওয়ার বিষয়টি নিয়ে টিভি চ্যানেলটি একটি অনুষ্ঠান নির্মাণ করছে'।
অনুষ্ঠান নির্মাণের দুমাস পর এ কাজ থেকে অব্যাহতি পায় সে। মার্ফি পুনরায় তার কাজে ফিরেছে। তবুও এখনও সপ্তাহ দু'একদিন সে রান্না করে। মাঝে মাঝে মুদির দোকান থেকে বাজার করা, কাপড় ধোয়া, ঘর পরিষ্কারের কাজ করে সে।
লরার মতে মার্ফি আনন্দ লাভের চেয়ে একজন বাবা হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য কাজ শুরু করায় মার্ফি পরিপূর্ণ বাবা হয়ে উঠেছে।
বর্তমানে মার্ফি যখনই বাইরে থাকে তখন সবসময় সে কম্পিউটার নিয়ে বের হয়। কম্পিউটারে থাকে নতুন ডিজিটাল ক্যামেরাতে তোলা ছবি। এখন ছবিগুলো দেখে পূর্বের বিষাদময় অনুভর্ূতি তার হয় না বরং প্রিয়জনদের সাথে এখন সে নিজেকেও ছবিগুলোতে খুঁজে পায়।
এখন মার্ফি ছবির মধ্যে তাকে দেখতে ভালোবাসে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।