নিভু নিভু জোছনায় দূর্বা ঘাসের শিশিরবিন্দু।
ধোয়া শার্ট টা নিজ হাতেই ইস্রি করে নেয় ইভান। কলেজে যাওয়ার সময় তো হয়ে এল প্রায়। তাড়াতাড়ি রেডি হয়েই কলেজের উদ্দেশে পা বাড়ায় ইভান, তাড়াতাড়ি করার কারন টা হল সময়ের একটু গড়মিল হয়ে গেলে সে তো মোহনার দেখা পাবে না। মোহনা ইভানের সাথেই পড়ে, একই কলেজের একই সেকশনে।
এক মাস ধরে ক্লাসমেট হিসেবে ওরা পরিচিত হয়েছে কথা বলছে একটু একটু, যদিও এর মধ্যেই মোহনাকে ইভানের ভাললাগা শুরু হয়েছে। ০৮:০০ বাজে ক্লাস শুরু হবে, এখনতো মাত্র ০৭:১৫ বাজে তারপরও ইভানের তর সয়না। তাড়াতাড়ি এসে একটা চা এর দোকানের পিছনে দাড়ায়। এই চা এর দোকানের পিছনে দাঁড়ানোর কারন টা হল এই দোকান থেকে কলেজ যাওয়ার রাস্তাটা পুরোপুরি দেখা যায়। মোহনার আসার ঠিক নেই ০৭:৩০ থেকে ০৭:৪৫ এর মধ্যেই আসে মেয়েটা।
দুর থেকেই মোহনাকে দেখতে পায় ইভান কিন্তু মোহনা ওকে দেখতে পায়না, এটাই অবশ্য ইভান চায়। আরেকটু কাছে আসার পর ই চায়ের দকান থেকে বের হয়ে হাটা শুরু করে ইভান। এমন ভাব করে যেন সে মোহনা কে দেখতেই পায়নি। আস্তে আস্তে হাঁটতে থাকে ইভান। ‘আরে,এখনও মেয়েটা আসতেছে না কেন? ওকে কি দেখতে পায়নি, নাকি দেখেও কথা বলতেছে না! এখন তো পিছনেও তাকান যাবেনা, যদি ওর অভিনয় টা ধরা পড়ে যায়’ – মনে মনে ভাবে ইভান।
- কিরে কি খবর?
-এইতো ভাল। তুই কখন আসলি? একটু অবাক হওয়ার ভাব নেয় ইভান।
-মাত্রই, রিক্সা থেকে নামার পর এ তোকে দেখলাম।
-ও। কথা চালিয়ে নেয়ার ছুতো খুজে মনে মনে ইভান।
মোহনার সাথে কথা বলার সুযোগ টা হাতছারা করতে চায় না ইভান। ফিজিক্স পরেছিস?
- হ, পরছি। কিন্তু মেথ করতে পারিনি।
- ক্যান? বহুপদির মেথ তো সোজা। আমি করছি।
- যা যা ভালা করছস। নোট করছিস?সামনের সপ্তাহে তো ক্লাস টেস্ট।
- হু, বলেই মনে মনে ভাবে ক্যান সে মোহনার সাথে মিথ্যা বলল? হ্যাঁ, ইভানের পরার প্রতি আগ্রহ দেখে যদি ওর প্রতি মোহনার একটু ভাল ভাবনা জন্মে! ভাল ছাত্রের মত একটা ভাব যে নিতেই হবে।
- তাহলে তোর নোটটা আমাকে একটু দিস তো।
- আচ্ছা।
ক্লাস থেকে ফিরেই পড়াশুনার প্রতি অত্যাধিক মনোযোগী হয় ইভান। কালকের মধ্যে য মোহনা কে নোট করে দেখাতে হবে। সারারাত জেগে অনেক বই খুজে নোট টা কমপ্লিট করে সে। কিন্তু নোট করতে গিয়ে মনে মনে একটা ফন্দি করে ইভান। সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট মেথ টা একটু জামেলা পাকিয়ে করে রাখে।
পরেরদিন একি কাজ করে মোহনার সাথে দেখা করে ইভান। এটাই ওর কাছে আনন্দের। মোহনার সাথে প্রতিদিন এক সাথে কলেজে যাওয়ার মাঝে একটা অন্যরকম ফিলিংস পায় ইভান। ক্লাস শেষে নোট দিয়ে ইভান বলে, কিছু না বুজলে যেন ওকে ফোন দেয়। এই বলে নোটের সাথে নিজের সেল নাম্বার টাও দিয়ে দেয় আর মনে মনে ভাবে আজ সে মোহনার নাম্বার টা তো পাবে! সরাসরি চায়নি যদি আবার মেয়েটা খারাপ কিছু ভাবে! পছন্দের মানুষের কাছে তো খারাপ ভাবার সম্ভাবনা ও রাখতে নেই।
হ্যাঁ, সেদিন ইভান তার ফন্দি তে সফল হয়েছিল। সে মোহনার সেল নাম্বার পেয়েছে । তারপর আস্তে আস্তে কথা বলা শুরু করে।
এই ইভান, ক্যান্টিন এ যাবিনা? ইভানের বন্ধু আবিদ ডাক দেয়।
- নারে, যাবো না।
তুই শালা একটা দুনিয়ার হারকিপ্টা। ২ টাকা ও খরচ করবিনা তুই, ভেংচিয়ে বলে আবিদ।
অপবাদ টা নিরবে সয়ে নেয় ইভান, কারন ওর মাথায় এখন একটাই চিন্তা। সামনে ঈদ আসছে, মোহনার জন্য একটা ভাল দেখে একটা ঈদকার্ড কিনতে হবে। ওগুলো ও খুব পছন্দ করে।
তাই না খেয়েই ওকে টাকা জমাতে হবে কারন ওর যে টাকা ইনকাম করার রাস্তা নেই। নিজের খরচের জন্য বাসা থেকে যা পায় টা থেকেই জমাতে হবে। আর মোহনার খুশির জন্য এটা কোন এইটা কোন ব্যাপার না, ভাবে ইভান।
এভাবে বিভিন্ন অজুহাতে মোহনাকে খুশি করার চেষ্টা করে ইভান, যদিও মোহনা এসবের কিছুই জানতে পারেনা। এভাবেই আস্তে আস্তে মোহনার সাথে ভাল একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে ইভানের।
মোহনার যাবতীয় সব কাজ’ই ইভান করে দেয়, সেটা করতে যত কষ্টই হোক না কেন। সপ্নের জাল বুনতে থাকে ইভান কিন্তু মোহনাকে তার ভালবাসার কথা কথা বলতে পারে না। যদি ফিরিয়ে দেয়? পাছে যদি বন্ধুত্ব টাও হারাতে হয়। না, এত রিস্ক নেয়ার দরকার নেই এখন ভাবে সে। এভাবেই দেড়টি বছর পেরিয়ে যায়।
না, আর পারেনা ইভান। মোহনাকে ওর ভালবাসার কথা না বলে আর থাকতে পারছে না। আবার বলতেও ভয় পায়। কি করা যায় ভাবতে ভাবতে মোহনার বান্ধবি নিশির কাছে সে তার ভালবাসার কথা বলে। নিশিকে বলে মোহনা কে বলতে।
নিশি ইভানের কাছে এই ঘটকালির জন্য চকলেট দাবি করে জানায় সে রাতে মোহনা কে বলে ইভান কে জানাবে। ইভান খুব উত্তেজনায় নানারকম স্বপ্নে বিভোর হতে থাকে। রাতের অপেক্ষায় সময় আর কাটতে চায়না।
অবশেষে রাতে নিশির মেসেজ আসে।
‘মোহনা তোমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ ব্রেকআপ করেছে।
তোমার মত একটা অসুন্দর চেহারার ছেলের সাথে ও রিলেশন করবে না। ও বলেছে শুধুমাত্র বন্ধু হয়ে যদি থাকতে পারো দ্যান থাকতে। কিন্তু ও তোমাকে আর বন্ধু হিসাবে ও দেখতে চায় না। সরি’।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।