যা বুঝি, যা দেখি, যা শুনি এবং যা বলতে চাই
ভূমিকা: টেকস্টবুক বোর্ডের কল্যাণে পাঠ্যবইগুলোই প্রথম আমাদের মগজে নানা থিওরি চালানের চেষ্টা করে। সেসব থিওরি সম্পর্কে আম-পাবি্লকের মনোভাব যে ইয়ার-দোস্তসুলভ না, তা পাড়া হাঁকিয়ে বলার কিছু নেই। মুরুবি্বরা নবীশ শিক্ষার্থীর থিওরি-প্রীতিকে অংকুরেই ডলা দিয়ে দেন। 'বুঝলে বাছা, জীবন মোটেও সবুজ-সাথীর তত্ত্বকথার জায়গা নয়। জীবন বড় প্র্যাকটিক্যাল'।
মানলাম তাদের কথা, যে পাঠ্যবইয়ের তত্ত্বকথায় জীবন চলে না। কিন্তু প্র্যাকটিক্যাল জীবনকে বুঝতেও যে থিওরি প্রয়োজন, সেকথা মানবে এমন লোক কই? এক্ষেত্রে ইংরেজি গ্রামার বইয়ের ট্রান্সলেশনের বাক্যই ভরসা। বাংলা করলে তা দাঁড়ায় এরকম, 'প্রয়োজন আইন মানে না'। সুতরাং জীবনের প্রয়োজনে তত্ত্ব বানাতে নিজের মাথার উপর আস্থা রেখে দরকারমাফিক ঘামাতে হয় নিজেকেই। বিনয় ভেঙে বলি ঘামাতে ঘামাতে আমার মাথা এখন প্রায় কেশশূন্য।
ইতোমধ্যে বৃন্তচু্যত কেশের সাথে অনেক তত্ত্বও উপড়ে ফেলেছি। কিন্তু যথাযোগ্য গিনিপিগ না পাওয়ায় তত্ত্বগুলো টেস্ট করা যাচ্ছে না। বাঁধ ভাঙার আওয়াজে এখন শ' শ' ব্লগার ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের ভরসায় তত্ত্বগুলো টেস্টিং করার আশায় প্রকাশ্যে আনলাম।
নাম দেখে বাঙালি নারী চেনা (উৎসর্গ অবশ্যই হিমুকে)
আজান দিয়ে নারী-লিপ্সার কথা জানান দেয়ার পরও যে নারীসঙ্গে মশহুর থাকা যায়, সে কায়দা হিমুর চেয়ে ভালো আর কে জানে? আলুর্দোষবিশিষ্ট পুরুষকে নারী বাঁকাচোখে দেখে বলেই জানতাম।
হিমুই আমার ভুল ভাঙাল। চোখের এই বঙ্কিম ভঙ্গিটাই যে নারীর মনের কথা না তা সময়ে জানতে পারিনি। খুশির খবর যে, হিমু তা জানে। নারী বিষয়ক এই তত্ত্ব তাই হিমুকেই উৎসর্গ করলাম। এ দেখে ফায়দা তোলার কায়দাও হয়তো সেই ভালো বুঝবে।
এই তত্ত্বের মৌল হাইপোথিসিস হলো নাম দেখে বাঙালি নারীকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
1. নায়িকা চরিত্রের নারী।
2. মা চরিত্রের নারী ও
3. মিশ্র চরিত্রের নারী।
1. নায়িকা চরিত্রের নারীঃ এধরনের নারীরা সিনেমার নায়িকাকেও হার মানায়। আচার-আচরনে তারা লেটেস্ট নাটক-সিনেমার ঝকঝকে ডিভিডি-কপি।
প্রেমিকা হিসেবে এদের সুনাম পাড়া, ভার্সিটি পেরিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয় না। এরাই যে বাসত্দবজীবনের পর্দামাতানো নায়িকা তা বুঝতে এ. আর. রহমানের বাদ্য বাজানোর দরকার করে না। নাম দেখলেই এদের নেত্য করার ক্ষমতা বলে দেয়া সম্ভব। নামের শুরুতে বা শেষে না থাকলেই নায়িকা হওয়ারই সম্ভাবনাই অধিক। এই তত্ত্ব তাই দাবী করছে।
ক. 'না' দিয়েই শুরু হয় যাদের নাম। শুরুতেই না করে দেয়া নারীর চরিত্রে যে নায়িকার মোহনীয়তা থাকবে আর তা টানবে পুরুষকূলকে পতঙ্গের মত তা নিশ্চিত। এরকম নামের মেয়েদের কথা একবার স্মরণে আনুন। আমি কিছু যোগান দিচ্ছি; যেমন: নায়না (ডবল না থাকায় সুপারহিট নায়িকা স্বভাবে র হওয়ার কথা), নায়লা, নাহিদ, নাতাশা, নাবিলা, নাজলী, ইত্যাদি।
খ. 'না' দিয়ে নাম শেষ হলেও ঐ একই কথা।
না শেষে থাকলেই জোরটা বেশি হবে। আর শাস্ত্র বলে না যত জোরে হবে এ্যাকশন ততো উল্টা হবে। সুতরাং এরাও নায়িকাসুলভ। এই দলে আছেন এমন কিছু নারী: শাহানা, জরিনা, পান্না, স্বপ্না, কারিনা, শাবানা, সুমনা, জনা, রুনা, সাবিনা ইত্যাদি।
2. মা চরিত্রের নারীঃ এধরনের নারীকে আসলে খালাম্মা ডাকাই ভালো।
তবে মাসীর দরদ মায়ের চেয়ে বেশি হয় না বলে মা শব্দটাই ব্যবহার করতে হচ্ছে বাধ্য হয়ে। যাদের প্রেমিকা বা স্ত্রীর নাম এরকম তারা ক্ষিপ্ত হবেন না। আধুনিক বিজ্ঞান বলছে পুরুষেরা তাদের মায়ের গায়ের গন্ধের মত গন্ধওয়ালা শরীরের মেয়েকেই জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পেতে চায়। কেন এদেরকে মা বলাটা সঙ্গত? কারণ, এরা তাদের আশে-পাশের পুরুষদেরকে মা-মুরগির মতো পক্ষপুটের ছায়া দিয়ে বাধিত করেন। নাম দেখেই এদেরও চরিত্র বুঝা সম্ভব।
ক. যাদের নামের শুরুতেই মা আছে। যেমন: মারুফা, মাহমুদা, মাশীদ, মাহফুজা, মাইশা, মাজেদা ইত্যাদি।
খ. যাদের নামের শেষে মা আছে। যেমন: ফাতেমা, রহিমা, আসমা, তাসমিমা, রেহনুমা, শামীমা, উমামা (খেয়াল করুন ডবল মা), ইত্যাদি।
3. মিশ্র চরিত্রের নারীঃ এরকম চরিত্রের নারীর সংখ্যা হয়তো বেশি কারণ উপরের বিভাজন অনুযায়ী নাম হয়না এমন নামের সংখ্যা প্রচুর।
স্বাভাবিকভাবে এধরনের নারীর মধ্যে নায়িকা ও মা-চরিত্রের একটি মিশেল থাকে। তবে বিশাল এই ভাগের মধ্যে আরো গোটা তিনেক উপভাগ আলাদা করে উল্লেখ করতে হয়।
ক. যাদের নামের মধ্যে শুরুতে বা শেষে না ও মা উভয়ই আছে। যেমন: নাজমা, মাননা, মারিনা,। এরা নায়িকা বা মা যেকোনো চরিত্রের অধিকারিনী হয়ে উঠতে পারে।
নির্ভর করবে তাদের নাম উচ্চারণের সময় লোকে ন না ম কোন অক্ষরের ওপর বেশি চাপ দেয় তার ওপর।
খ. যাদের নামের মধ্যে না বা মা নেই কিন্তু ন ও ম উভয়ই আছে। যেমন: রুমনি, ঝুমনি, নমিতা, মনিরা, মনিকা, কামিনী, শবনম, মুনমুন ইত্যাদি। (না বা মা না থাকলেও ন ও ম অক্ষরও কখনও কখনও নায়িকা বা মা স্বভাবের ইঙ্গিত দিতে পারে। )
গ. যাদের নামের মধ্যে ন বা ম এ দুটো অক্ষরের কোনোটিই নেই।
যেমন, সারিয়া, প্রাপ্তি, রূপা, কেকা, কুহেলি, গোধূলি, শিখা, রেখা ইত্যাদি।
উপসংহারঃ সংক্ষেপে থিওরিটি হচ্ছে যে বাঙালি নারীর নামে না থাকলে সে নায়িকাসুলভ এবং মা থাকলে সে মা-সুলভ আচার-আচরণ করবে।
ভুল প্রমাণের সুযোগ না থাকলে থিওরি কখনও থিওরি হয় না। এই থিওরির ক্ষেত্রে যদি আপনারা প্রমাণ করতে পারেন যে না আছে এমন নামের বেশিরভাগ নারী প্রকৃতপক্ষে মাতৃস্বভাবের কিংবা মা আছে এমন নামের বেশিরভাগ নারীরা আসলে নায়িকাস্বভাবের তবে প্রমাণিত হবে থিওরিটি ভুল। তো শুরু হয়ে যাক থিওরি টেস্টিং।
(টেস্টের বিচারক হিমু। )
টেস্টঃ কতটুকু বুঝলেন থিওরি তার একটা ছোট্ট টেস্ট। কারো নাম যদি হয় রুমানা, তবে তার বৈশিষ্ট্য কিরকম হবে? নায়িকাসুলভ নাকি মা-সুলভ? নাকি মাঝামাঝি কিছু?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।