সযতনে খেয়ালী!
কত পথ, কত নদী, কত সাগর পাড়ি দিয়ে আজ পড়ে আছি মাইনের মাইনকা চিপার ধারে। কত চড়লাম বাস, কত ট্রাক, কত নৌকা, কত রিক্সা চড়া শেষ করে এখন স্তুতি গাইছি ডয়েচে বান তথা জার্মান রেলের।
জানিজানি চেনাজানা কয়েকজন অলরেডি ঠোঁট উলটে বলতে নিশ্চই শুরু করেছেন, "মিয়া শুব্ধুরে শুব্ধুরে আষ্ট দিন হইলো আর তুমি ললনা আলাপ বাদ দিয়া অহন যানবাহনের আলাপ ধরবা? বা*ের আলাপ থোও মিয়া। আগুন কিছু ছাড়, শুনি...."।
ভাইরে ঢেঁকি নাকি স্বর্গে গেলেও ধান ই ভানে।
আর আমিতো নিরপরাধ, গরীবে মওলা ধুসর গোধূলি। আমি কি আর এত তারাতারি ধোলাই হইতে পারি? যতই মলামলি, ডলাডলি করেণ, কোন লাভ নাই, যেই লাউ সেই কদু। আহারে আমার লাউ, পেটেন্ট ছিনতাই কইরা নিয়া গিয়া অহন লোকজন শুনি দেশে বিদেশে লাউয়ের জু্যস নিয়া বানিজ্য করা শুরু করছে...।
অশ্লীল, সব ই অশ্লীল, অ্যাবসার্ড অশ্লীল সব!
সু. চৌ. অসুস্থ থাকায় তার উদ্দেশ্যে করা পোস্ট টা যাতে চাপা পড়ে না যায় সেজন্য পোস্টানো থেকে বিরত রইলাম কিছুদিন। ওমা লোকজন দেখি উলটা পালটা খোঁচায়।
"কি মিয়া ছঁ্যাকা খাইলা নাকি? কি হইলো অনন্তের প্রতীক্ষা নাকি? ঘটনা কি, 85-তে বইসা ধ্যান চলতাছে নাকি"? আমি দরিদ্্র ধুসর গোধূলি, মনের বেদন মনেই যাইত্যা, চাইপ্যা বইসা থাকি, কই যামু হালায়? মনে মনে গাইল্যাই, হালার বদ্দা, নার্স গো অপার সৌন্দর্য (?) থুইয়া এইবার বাড়ি মুখো হন তো দেকিনি।
বদ্দা বাড়ি ফিরেছে, ব্লগের ছেলে ব্লগে ফিরে এসেছে। আমি আবারো পোস্টাবো, ললনাদের কথা লেখবো। আহা কী মজা আকাশে বাতাসে, মুগেমবো খুশ হোয়া....। অই কে আছিস, কার্বন মাঝিকে খবর দে, তার হেরে গলায় ধেরে গান হয়ে যাক আজি এ গোধূলি লগনে !
কার্বন মাঝি তার হাসের মতো গলায় গদগদ শব্দের ঝংকার তুলে গান নামক অখাদ্য আমাদের খাওয়াক।
এই ফাঁকে আমি "ডয়েচে বান ও ললনা কাব্যে"র শুরম্ভ করার চেষ্টা আরম্ভ করি।
ললনা কথন 1 :
আমার হৃদয়টা আটলান্টিক, প্রশান্তের চাইতেও বিশাল বলে যাকে দেখি তার জন্যেই একটা প্লট বরাদ্দ দিয়ে ফেলি তৎক্ষনাৎ। সেইযে গুরু নার্সারী থেকে যার শুরু...।
তবে এখানে কিন্ত আমি বেশি কিছু বলবো না। মাত্র কয়েকটা ঘটনা, মোস্ট রিসেন্ট ফার্স্ট।
ঘটনা হলো, অনেক কেঁদেকেটে বিশ্বকাপ খেলা দেখার একটা টিকিট ম্যানেজ করলাম। তাও কাছে কোথাও না, বিশাল দূর। সবচেয়ে দ্্রুতগামী ট্রেনেও লাগে 3 ঘন্টার বেশি।
যখন ট্রেনে ওঠার জন্যে প্লাটফরমে গেলাম, দেখি ট্রেনের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে, কাহিনী কি! শত কান্না কাটির পরেও গেট কীপার মহিলার মন গলাতে পারলাম না। বুঝলাম ওই যে জন্মের সময় খানিকটা লেট, তার হাত থেকে এত সহজে কি করে ছাড়া পাই?
ধরলাম পরের ট্রেন, তার মানে শিডিউল মোতাবেক পৌঁছালেও খেলার প্রথমার্ধ মিস হবে।
কী আর করা।
ট্রেনে উঠেই দিলাম চৌধুরী সাহেব কে ফোন। কথার এক পর্যায়ে বল্লাম, "বদ্দা হাগেন"। বদ্দা কয়, "ছিঃ ছিঃ কি কও মিয়া, ট্রেন ভর্তি মানুষ, আর তুমি কও আমারে হাগতে? নাহ মিয়া তুমি হালায় মানুষ হইলা না"।
"কি কইতে যে কী বুঝেন না দাদা, আপনেরে হাগতে কমু ক্যা? নিয়্যত পরিষ্কার করেণ মিয়া।
আমি কইতাছিলাম নেক্সট স্টপ হইলো 'হাগেন'।
"অ.... তাই কও, আমি কই কি না কি....হো হো হো"
কথা শেষ কইরা টের পাইলাম পেটের ভিতরে হ্যামিলনের সব ইন্দুর একসাথে লম্ফঝম্ফ শুরু করে দিয়েছে। খাওয়ার কথা মনে ছিলো না। যাইহোক, গুটি গুটি পায়ে গেলাম বোর্ড রেঁস্তোরার দিকে।
বোর্ড রেঁস্তোরার খাবার সরবরাহকারিণী-কে দেখে খেলা মিস করার আক্ষেপটা হঠাৎই দমে গেলো।
আহা, এ যে সাক্ষাত পরী। আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীর ডানা খুঁজছি, এমন সময় কাছে এসে মিনমিনিয়ে বলে "বিটে শুয়েন"। আহা গলা তো নয় যেন একসাথে হাজারটা ঠুমরী পিরিং-পারাং করে বেজে উঠে! কই যাই, কই যাই....
চোখের সামনে ভেসে উঠলো ফুলবন, ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনা, আমরা দু'জন দোল আর চিনাবাদাম খাচ্ছি চিবিয়ে চিবিয়ে.... আর রবি বাবুর ঐ গানটা গাচ্ছি, ইয়ে মানে কোনটা যেনো....? আচ্ছা বাদামের সাথে ব্যাটা লবনের পুটলিটা দেয় নাই ক্যান?
বিটে শুয়েন, শুনে এবার ফুলবনের ঝুলনা ছেড়ে আসতে হলো দ্্রুতগামী ডয়েচে বানের খাবারের বগিতে।
বল্লাম, কিতা কইন গো আফা?
"কিতা খাইবেন তারতারি কন, আমার বেইল নাই"।
বাইরে তাকিয়ে দেখলাম, আসলেই তো বেইল ডুবে ডুবে।
গোধুলী বেলা, লালচে আভা চারদিকে। এমন সুন্দর লগ্নে এত চটজলদি অর্ডার প্লেস করে মুহুর্তটাকে অসুন্দর করতে সাধ জাগলো না।
বল্লাম, বাদে আইয়োন যে, নট ইয়েট ডিসাইডেড।
হেলেদুলে চলে যেতে যেতে দেখলাম পিছন ফিরে তাকালো একবার পরীবিবি। সে চোখে দৃষ্টি ছিল না, ছিল আগুন, কে যেন বলেছিল! আমি গুন গুন করছিলাম, কে যাও বাছা, দুলিয়ে পা*া.....।
আরও দুইবার ফিরিয়ে দিলাম অর্ডার ঠিক হয়নি অজুহাতে। আসলে ডয়েচে বানের পরীকে দেখার ইচ্ছেটাই ছিল আসল। প্যান প্যান করে বিটে শুয়েন বলবে, আমি মোঘল সম্রাটের মতো গাম্ভীর্য নিয়ে, মাথা দুলিয়ে বলবো, "একি সাকী, সুরা কই? আর তোমার চোখ এত ঘোলা কেনো? যাও যাও নৃত্য করো, বেলা যে পড়ে এলো...!
এবার এসে বল্লো , "হুজুর কি এবার পানাহারের অভিপ্রায় আরজ করবেন। আমার যে শতকাজ পড়ে থাকে"।
আমার মাথায় তখন গোধূলীর কনে দেখা আলো, জলসা ঘরের তাকধিনা ধিন আর নূপুরের নিব্ধন শব্দ।
হাতের কাছের মেন্যুটা নিয়ে খুলেই দেখলাম, "ডিলিশাস বেকড পটেটো উইথ স্মোকড স্যালমন"। যাও সাকী, আমার জন্য এই নিয়ে আসো...।
জো হুকুম জাঁহাপণা বলে সাকীর ছন্দময় প্রস্থান। আমিও আবার ডুব দিলাম ভাবনার নিরন্তর মহাসমুদ্্রে। বাইরে কনে দেখা মনে পুলক জাগানো আলো, ভেতরে ক্যান্ডেল লাইটের মতো করে রাখা ছোট ল্যাম্প, আর দ্্রুত ধেয়ে চলা ট্রেন...।
আমি ই তো পৃথিবীর শেষ স্বাধীন সম্রাট।
সম্রাট রাজাধিরাজ, লুটতরাজ ধুসর গোধূলি!
সাকীর ডাক শুনে আবার খাবার টেবিলে। এঁ্যা ভগবান, এ কি? বিশাল এক গোলআলু চোকলা সহ সিদ্ধ করে মাঝ খানে কেটে তাতে গারলিক সস ঢুকানো, পাশে কিছু লেটুস-ফেটুস, আরেকটা প্লেটে আলট্রা স্মল সাইজের বাঁশ পাতার ন্যায় স্মোকড স্যালমন।
আমার সম্রাটগিরী ট্রেনের পাঁটাতন গলে পালানোর উপক্রম এবার। এই জিনিষ খাবো আমি? ক্ষুধার রাজ্যে সব কিছুই কথাময়।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও খাওয়া শুরু করলাম...।
এক চামচ খাই, এক দৃষ্টি বাইরে তাকাই, নিজেকে আবার ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনায় খুঁজে পাই। শুধু সাকীর জায়গায় এবার প্রমান সাইজের একটা গোলআলু।
অনেক কষ্টে গলাধ:করণ করলাম, শুধু সাক্ষাত পরী এনে দিয়েছে বলে। নাইলে অর একদিন কি আমার তিনদিন আছিল সেদিন......
ভেবেছিলাম বাকি জার্ণীটুকু পরী বিবির মাজারের কাছে বসে বসে, আমার জলসা ঘরে তার পদযুগলের নূপুরের রিণিঝিনি শব্দ আর কুটিকুটি দাঁতের ফাঁক গলে আসা খিলখিল হাসি শুনেই কাটিয়ে দেবো।
কিন্ত বিধি বাম, তা আর হলো না।
দাম মিটিয়ে দিয়ে একটা সতেজ ধন্যবাদ আর প্রাণখোলা গ্লুকোজ হাসি বিনিময়ের পরে আমার নিজের জায়গায় ফিরে এলাম,
সাকীর ঝিলিমিলি হাসিখানা চোখে লেগে থাকলেও অন্যরকম একটা ভালো লাগায় মনটা ভরে গেলো। বাইরে কনে দেখা আলো, আমি অনেক ছোট বেলার একটা শখ পুরণের প্রায় দ্্বারপ্রান্তে দাড়িয়ে...।
কলা বেচার সাথে সাথে যাত্রাও দেখা হয়ে গেলো আমার
কাহিনী চলবে না...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।