আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মারিয়ার গল্পসহ আত্নপ্রকৃতি (3)

বৃষ্টি হচ্ছে সুনিশ্চিত এই মুহুর্তে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও

মারিয়া ক্রোয়েশিয়ার মেয়ে। জন্মের পরে একটা বড় সময় কেঁটেছে জার্মানীতে। ওখানেই চারুকলার উপরে পড়াশুনা করছিলো। কিন্তু ভালো লাগেনি বার্লিনের যান্ত্রিক জীবন। সুতরাং ভাষা নিয়ে পড়তে ভিয়েনা ইউনিভার্সিটিতে আসা।

আমি ভিয়েনাতে যে ইউথ হোস্টেলে উঠেছিলাম, সেখানেই ওর সাথে পরিচয়। হোস্টেলে নিত্যনতুন মানুষজন আসছে, বেশিরভাগই ইউরোপের ছাত্রছাত্রীরা যারা সামার টু্যরে চষে বেড়াচ্ছে বুদাপেস্ট, প্রাগ, ভিয়েনা, রোম। আমি সেই হোস্টেলে বেমানান বাদামী চামড়া, কে আর পাত্তা দেয়! এই মেয়েটা একটু ব্যতিক্রম। প্রথম দেখাতেই আগ বাড়িয়েই পরিচয় দিয়ে অনেক গল্প। নিজে কফি বানালে খুব সুন্দর করে এসে জিজ্ঞেস করতো, উড ইউ লাইক টু হ্যাভ এ কাপ অফ কফি? কয়জন আগ বাড়িয়ে একজন অচেনা মানুষের জন্য কফি বানায়! তাও আমার মতো বিশ্রি দেখতে একজনের জন্য।

বুঝেছিলাম মেয়েটা খুব ভালো। আমি শ্রোতা হিসেবে খারাপ না। ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে ওর গল্প শুনি। ওর ইংরেজী উচ্চারন খুব ভালো, আর সবচেয়ে বড় কথা মেয়েটা খুব বুদ্ধিমতি। সারাদিন মাথায় ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা।

আমি ওকে এটা ওটা টিপস দিতাম, কোথায় কোথায় কাজ করা যায় যেগুলো নিয়ে আলাপ করতাম। ভিয়েনা ঘোরা শেষ করে রাতে আমি যখন ফিরে আসতাম তখন ওর দেখা মিলতো। দু'জনে বসে টুকটাক অনেক গল্প হয়েছে। খুব অল্প সময়ে খাতির হয়ে গিয়েছিলো। এখন কিছুদিন ভলান্টিয়ারী কাজ করবে একটা ক্রোয়েশিয়ান দ্বীপে, এনভারোনমেন্টের উপরে।

দ্বীপের পশুপাখির দেখা শোনা করা। সেই গল্প শুনে বেজার যেতে ইচ্ছে করেছিলো। ওর জন্য মঙ্গল কামনা। ওর সাথে ভিয়েনা ইউনিভার্সিটিতে একটা ঘুলি্ল দিয়ে এসেছিলাম। সেখানেই ক্যান্টিনে আমাদের কফি পান, ওর সিগারেট ফোঁকা।

সিগারেট খাওয়া নিয়ে খোঁচা দিলে খুব লজ্জা পেত। আমি বলতাম, তুমি এনভারোনমেন্ট নিয়া কাজ করো, আর এদিকে মাদার আর্থরে পলিউটেড করছো। খুব লজ্জায় মাথাটাথা নেড়ে বলতো, ছেড়ে দিবো, খুব শিঘ্রি ছেড়ে দিবো। ওকে বলে রেখে এসেছিলাম, যেদিন তুমি সিগারেট ছাড়বে সেদিন আমাকে একটা ইমেইল কইরো তোমার পোস্টাল এ্যাড্রেস সহ। একটা উপহার পাঠাবো, তা তুমি চাঁদে থাকো আর মঙ্গলেই।

ভিয়েনা ভার্সিটির আলো আঁধারীমাখা ওই্ ক্যান্টিনে সিগারেটের ধুঁয়ার গন্ধ খুব উপভোগ না করলেও সিগারেট খাওয়ার সময়ে ওর নিরাসক্ত ভঙ্গিটা আমার খুব ভালো লেগেছিলো। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, 'জগতে কিছু যেন নাহি আর' - টাইপের একটা ব্যাপার আছে ওর চেহারার মধ্যে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।