দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ঢেউ সীমানা পেরিয়ে এখন আছড়ে পড়েছে বৃটেনে পর্যন্ত। সম্প্রতি ব্রিটেনে বাংলাদেশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা সেই ইঙ্গিতই করছে।
চলতি মাসে বার্মিংহামে যুক্তরাজ্য যুবলীগের সম্মেলনে দুই পক্ষের কর্মীদের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা আর কুইনমেরি ইউনিভার্সিটিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সেমিনার দলীয় অন্তঃকোন্দলে পণ্ড হওয়ায় প্রবাসী বাঙালি কমিউনিটিতে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি করে। সবশেষ, গত ১০ সেপ্টেম্বর লন্ডনে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলা ইউকে অফিসে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে লাঞ্ছিত করার ঘটণা নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। ঘটণাটি দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
প্রতিটি ঘটনায়ই বৃটেন পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। বৃটেনে বসবাসরত রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা মনে করছেন, এসব ঘটনা বৃটেনের বাংলাদেশী কমিউনিটির মধ্যে শুধু অস্বস্তিই জন্ম দিচ্ছে না, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণ সম্পর্কেও বিদেশিদের কাছে বিরূপ বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বৃটেনে এসে হামলার শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ও সাংবাদিক ব্যক্তিত্ব। এমনকি হামলার শিকার হতে হয়েছে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের একজন বিচারপতিকেও। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক লন্ডনে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ডেগেনহাম এলাকায় হামলার শিকার হন।
এদিকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৃটেনে একটি কর্মী সম্মেলন দলীয় কর্মীদের বিশৃঙ্খলায় পণ্ড হয়ে যায়। পরে স্থান পরিবর্তন করে সভাটি সম্পন্ন হয়।
এছাড়া বার্মিংহামে হামলার শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত বর্ষিয়ান নেতা আব্দুল জলিল। লন্ডনে লাঞ্ছিত হয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। বৃটেনে গিয়ে আক্রমণের শিকার হয়েছেন আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহামুদুর রহমানও।
এর আগে ২০১০ সালে হাউজ অব লর্ডসের সদস্যদের সামনে স্কুল অব ইকোনমিক্সসে আওয়ামী লীগ-বিএনপি'র লড়াই দেখেছেন বিদেশিরা। আর দলীয় সঙ্কীর্ণ রাজনীতির প্রভাব শুধু রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মাঝে নয়, পড়ছে বাংলাদেশভিত্তিক বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোতেও।
বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের ফাইন্যান্স ডিরেক্টর ও লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুহিব চৌধুরী বললেন, বাংলাদেশের রাজনীনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিরতার ঢেউ বৃটেনে বাংলাদেশী কমিউনিটির ওপর আছড়ে পড়ছে। এটা কমিউনিটির অসম্মান বয়ে আনছে। এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশিদের বিভিন্ন অর্জনকে ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে।
দুই নেত্রী একে অপরের প্রতি যে অসহিষ্ণু রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন তা বৃটেনের রাজনীতিকে কলুষিত করছে। তিনি বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসনের সময় বৃটেনে এ ধরনের কিছু রাজনৈতিক সংঘাত হয়েছিল। পরে ণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘদিন এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট নিরসন হলে তার ইতিবাচক প্রভাবও বৃটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে পড়বে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রিটেনে বসবাসকারী অভিবাসীদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশি।
শত বছরের বেশি সময় ধরে ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশীদের অর্জনও কম নয়। বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত আছে বৃটেনে পার্লামেন্টে। আছেন হাউজ অব লর্ডসের সদস্য। বৃটেনের অসংখ্য বার কাউন্সিলরসহ বাংলাদেশিদের মধ্য থেকে আছেন নির্বাহী মেয়র। বৃটেনে বাংলাদেশের রাজনীনৈতিক সহিংসতা বাঙালি জাতির সীমাবদ্ধতাকেই তুলে ধরছে।
বৃটেনের মূলধারায় অবদান রাখা বাংলাদেশিদের জন্য দুর্নাম বয়ে আনছে। আর বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক ধারা বৃটেনে বেড়ে উঠা বাঙালি ছেলে মেয়েদের মাঝে দেশ সম্পর্কে অনাগ্রহ ও ঘৃণা জন্ম দিচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।