আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।
আঠারশো শতাব্দীর কোন এক দুপুরে হস্তে লাঠি লইয়া সামনে দন্ডায়মান জমিদারবাবুকে দেখিয়া এই গ্রীষ্মেও ঠকঠক করিয়া কাঁপিতে লাগিলো মৃণাল । বুঝিতে পারিলো সে কি ভুল ই না করিয়াছে । মনের ভুলে নগ্ন পদযুগলে না থাকিয়া জুতা পরিধান করিয়া জমিদারবাবুর গৃহের সামনে হাঁটিয়া যাইতেছিলো । খোদ জমিদারবাবুর নজরে পড়িয়া গেলে নিজের সর্বনাশ টের পাইলো ।
কিন্তু ততক্ষণে বড্ড বিলম্ব হইয়া গিয়াছে । নিজেকে ধীক্কার দিবে সেই সময়টুকুও তাহার হইলোনা । জমিদারবাবু লাঠি নিয়া সামনে আসিয়া দাঁড়াইলেন । কোন বাক্যমালা খরচ না করিয়া পীঠের উপর বাড়ী পড়িতে লাগিলো সপাং সপাং করিয়া । নিজেকে শাপশাপান্ত করা ব্যতীত মৃণালের নিকট ভিন্ন কিছু করবার থাকিলোনা ।
সময় তরতর করে এগিয়ে গেছে স্বাভাবিক নিয়মেই । আঠারশো শতাব্দীর সেই জমিদারবাবুরা সময়ের বিবর্তনে স্যুট - টাই পরা আমলা হয়েছেন , মন্ত্রী - মিনিস্টার হয়েছেন । একবিংশ শতাব্দীতে কর্পোরেশনের একচ্ছত্র আধিপত্য দেখে কর্পোরেট বাবু বনেও দেশ , জাতি উদ্ধার করে বেড়াতে পারছেন । এদের ক্ষুদ্রাকৃতির এক তর্জনীর হেলনে গোটা শয়েকের বাসস্থান উচ্ছেদ হয় , হাজারের মতো মানুষ রেল স্টেশনে নিজেদের ঠিকানা বানিয়ে নেয় , লাখের উপরের মানুষের কাছের জনেরা ক্রসফায়ারে পড়ে কাত হয়ে যায় । আবাল মানুষজন সন্ত্রাস কমেছে ভেবে নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিলায় ।
এমনই এক ঘোর ক্রান্তিকালে মিজান দরদর করে সিএনজিতে ঘামছে ।
বউটার ডেলিভারী হবার কথা ছিলো সপ্তাহ দুয়েক পর । শরীর ভালো লাগছিলোনা দেখে অফিসে যাওয়া ক্যানসেল করলো । বেলা বাজতে এগারোটা বউয়ের চিৎকার শুনে অফিস ক্যানসেল করার জন্য নিজের পীঠ চাপড়ে দেওয়ার ইচ্ছার পর বউকে নিয়ে বের হয়ে পড়লো । চটজলদি মহাখালীর উদ্দেশ্যে রওনা দিতে সিএনজি খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও গিয়েছিলো ।
প্রেসক্লাবের সামনে এসে প্রথম সিএনজি ট্রাফিক জ্যামের মুখোমুখি হলে ড্রাইভার সহ প্রথমে ভাবলো সিগনালের জ্যাম । সেই ভাবনায় ছেদ পড়লো মিনিট দশেক সিএনজি একই জায়গায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হলে । তারপর আরো অল্প কিছু দূর এগিয়ে যেই জ্যামে পড়লো সেই বাঁধা ডিঙ্গিয়ে যেতে পারছেনা অনেকক্ষণ ধরে । এদিকে মিজান ক্রমশ দরদর করে ঘামছে । কিন্তু মন্ত্রীর বিদেশ থেকে আগমনের ফলস্বরুপ গোটা শহরের রাস্তার অচলাবস্থা অতশত কেয়ার করেনা ।
অবশেষে একসময় দরদর করে ঘেমে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলেও সমস্ত মাথা শূন্য হয়ে গিয়েছিলো মিজানের ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।