আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-ভুতুড়ে শহর (কত অজানা রে পার্ট-১০)

আমার "কত অজানা রে" সিরিজের সব গুলো পোষ্ট সংগ্রহে থাকা বই, গুগোল মামা ও বিভিন্ন সাইট থেকে অনুবাদ করা, তবে কোন ভাবেই কপি-পেষ্ট নয়। জানার জন্য পড়ন, ভুল হলে সঠিকটি বলার দায়িত্ব আপনাদের। আনন্দের সাথে পড়ুন। আমার ব্লগ কেচাল মুক্ত। ভুতুড়ে শহর !!! এক ভুতের ভয়েই পাবলিক কাহিল হয়ে যায় আর পৃথিবীতে এমন কিছু শহর আছে যাদেরকে ভুতুড়ে শহর বলা হয়।

এর কয়েকটা ট্রুরিষ্টদের জন্য উন্মুক্ত, কয়েকটি খুবই বিপদজনক আর কয়েকটি জায়গায় যাওয়া অবৈধ। চলেন দেখে আসি এমন কিছু ভুতুড়ে শহর থেকে। ১) KOLMANSKOP (Namibia) কোলমানসকোপ, দক্ষিন নামিবিয়ায় অবস্থিত একটি ভুতুড়ে শহর। লুদেরিটজ সমুদ্রবন্দর থেকে কয়েক কিলোমিটার ভিতরে। ১৯০৮ সালে নামিব মরুভুমিতে মাগনা মাগনা ডায়মন্ড পরে থাকতে দেখে কালা মানুষের মাথা খারাপ হয়ে যায়, সাথে সাদা মানুষগুলা ছোকছোক স্বভাব মোতাবেক রক্ত চুষতে চলে আসে।

মাএ দুই বছরের ভিতর আকখা মরুভুমির ভিতর একটা জাকজমকপূর্ন শহরের জন্ম হয়। এমন একটা শহর যেখানে ক্যাসিনো, স্কুল, হসপিটাল ও বিলাসবহুল আবাসিক ভবন ছিল। মাগার কিছুদিন পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ফলে ডায়মন্ডের দাম কমে যায়। যা হবার তাই হলো, দাম কমলে কারও দাম থাকে না।

তাই এখান থেকে দলে দলে লোক চলে যেতে থাকে। ১৯৫০ সালের ভিতর এই জমজমাট শহরটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ফাইনালি মরুভুমির বালু তার হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পায়। এখন মানুষ এই ভাঙ্গা ঘর বাড়ি ও বালু দেখতে ২৪০০ ডলার খরচ করে। ২) PRYPIAT Prypiat হলো উত্তর ইউক্রেনের একটি পরিত্যক্ত শহর যাকে বলা হয় "যোন অফ এলিয়েনেশন"।

এটা ছিল চারনোবিল পারমানবিক পাওয়ার প্ল্যান্ট কর্মীদের আবাসিক এলাকা, ১৯৮৬ সালে চারনোবিল দুর্যোগের পর পরিত্যক্ত হয়। দুর্ঘটনার পূর্বে এর জনসংখ্যা ৫০,০০০ এর কাছাকাছি ছিল। এই কিছুদইন আগে পর্যন্তও, জায়গাটি কার্যকরীভাবে ছিল একটি যাদুঘর, সোভিয়েতপরবর্তী যুগের দলিল হিসাবে। অ্যাপার্টমেন্ট ভবন, সমস্ত সুইমিং পুল, হাসপাতাল এবং অন্যান্য ভবন বাতিল করে দেওয়া হয়, এবং বিল্ডিং ভেতরের সবকিছু রেকর্ড, কাগজপত্র, TVS, বাচ্চাদের খেলনা, আসবাবপত্র, পত্র, এবং পোশাক সহ বাকি যা ছিল তা ওভাবেই পরিত্যাগ করা হয়। অধিবাসীদের শুধুমাত্র একটি স্যুটকেসে নথি, বই ও কাপড় নিবার অনুমতি পেয়েছিল যা কন্টামিনেটেড হয়নি।

তবে ২১ শতকের শুরুতে প্রায় সব অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে যা কিছু ছিল তা সম্পূর্ণভাবে ডাকাতি হয়ে যায়। ডাকাতদল এখন থেকে এমন কি বাথরুমের কমডের ঢাকনিটাও তুলে নিয়ে যায়। দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ডাকাতির ঘটনা ছিল এটা, ব্যপ্তি কাল ছিল কয়েকদিন। এখন পর্যন্ত জায়গাটি মানুষ বসবাসের অনুপযুক্ত। পারমানবিক শক্তির ক্ষমতায় আমি স্তমভিত।

৩) SAN ZHI উত্তর তাইওয়ান মধ্যে, এই আধুনিক গ্রামটি ধনীদের বিলাসি অবকাশযাপন কেন্দ্র হিসাবে নির্মান করা হচ্ছিল। নির্মানের সময় এখানে একটি মারাত্মক দুর্ঘটনার অনেকেই মারা পরে ফলে নির্মান স্থগিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে অর্থের অভাব এবং সমন্বয়ের অভাবে নির্মান কাজ স্থায়ীভাবে থামিয়ে দেয়া হয়। এবং এই অদ্ভুতদর্শন বাড়ি গুলো এভাবেই পরে থাকে। পার্শ্ববর্তী সময়ে গুজব ছরিয়ে পরে যে, যারা​ ​মারা গেছিল তাদের ভুত এই শহরে ঘুড়ে বেরায়।

পরে এই ভুতের কাহিনীই সরকার তাদের এই প্রজেক্ট বাতিলের কাভার আপ হিসাবে ব্যবহার করে। মানে হইলো তারা উপর মহলের লোক দের ভয় দেখায় যে যদি এই ভবন গুলা ভাঙ্গা হয় তাহলে এই ভুত গুলো তাদের ক্ষতি করবে। হোয়াট এন আইডিয়া স্যার জি !!! ৪) CRACO Craco, ইতালির ব্রাসিলিকাটার বিভিন্ন অঞ্চল এবং মাটিরা প্রদেশসমূহ মধ্যে অবস্থিত,টরান্টো উপসাগর থেকে ২৫ কিমি ভিতরে। মধ্যযুগীয় এই পাহাড়ি শহরে এলাকায়, পাহাড়ি গম এবং অন্যান্য ফসল চাষের জন্য আদর্শ ছিল না। ১০৬০সাল থেকে এই শহরটির মালিকানা আর্চবিশপদের ছিল।

১৮৯১ সালে, Craco জনসংখ্যা ২০০০ ছিল, কৃষি উৎপাদে সমস্যা ও দারিদ্রতার কারনে ১৮৯২ থেকে ১৯২২ সালের মধ্যে ১৩০০ জনের মত অধিবাসীকে উত্তর আমেরিকা সরানো হয়েছে। দরিদ্রতা, চাষাবাসে সমস্যা, ভূমিকম্প, ভূমিধস, এবং যুদ্ধের কারনে ১৯৫৯ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে Craco ধ্বসস্তুপে পরিনত হয়। ১৯৬৩ সালে অবশিষ্ট বাসিন্দাদের একটি কাছাকাছি উপত্যকায় স্থানান্তর করা হয়। এখন ক্রাকো একটি ভুতের আবাসে পরিনত হয়েছে। ৫) ORADOUR-SUR-GLANE এটি ফ্রান্সের একটি ছোট্ট একটি গ্রাম, যেখানে সব মিলিয়ে আধিবাসী ছিল ৬৪২ জন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানী সেনাবাহিনী এই গ্রামের পাশের গ্রামে আক্রমনের কথা থাকলেও তারা ভুল করে এই গ্রামটিতে আক্রমন করে বসে। দিনটি ছিন ১০ই জুন ১৯৪৪। ঐ দিনের ভয়াবহ আক্রমনের মধ্যে যারা বেঁচে গেছিল তারা বলে যে, জার্মান বাহিনী, গ্রামের পুরুষদের পায়ে গুলি করে ধীরে ধীরে মৃত্যুবরনের জন্য। আর নারী ও শিশুরা যারা চার্চে আশ্রয় নিয়েছিল তাদের কে ভিতরে রেখেই আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আগুনের তাপে যখন তারা বের হয়ে আসে তখন তাদের ম্যাসিনগানের গুলিতে জীবন দিতে হয়।

জার্মান বাহিনী ঐ গ্রামের সব কিছু আগুন দিয়া জ্বালিয়ে দেয়। ফ্রান্স এই গ্রামটা ঠিক ঐ ভাবেই সংরক্ষন করে আসছে স্মৃতি হিসাবে। আমাদের নিজেদের দেশটা পুরাটাই তাহলে মিউজিয়াম হয়ে যেত যদি আমরা তা করতে চাই। ৬) GUNKANJIMA এই দ্বীপ হল জাপানের ৫০৫ টি বসতিহীন দ্বীপের একটি যা নাগাসাকি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে। এটি "Gunkan-jima" অথবা "রণতরী দ্বীপ" নামেও পরিচিত।

১৮৯০ সাল থেকে এখানে বসতি স্থপন শুরু হয় যখন "মিত্সুবিশি" কোম্পানী দ্বীপেটি কেনা নেয় এবং সমুদ্রের নিচ থেকে কয়লা আহরণের জন্য একটি প্রকল্প শুরু করেন। এই অনেক মনোযোগ আকৃষ্ট, এবং ১৯১৬ সালে তারা একটি বড় কংক্রিট ভবন নির্মাণ করতে বাধ্য হয় যা শ্রমিকদের আবাস্থল এবং সামুদ্রিক হারিকেন থেকে তাদের রক্ষা করতে ব্যবহার করা হতো। ১৯৫৯ সালে প্রতি হেক্টরে জনবসতি ছিল ৮৩৫ জন এবং আবাসিক এলাকায় এর ঘনত্ব ছিল ১৩৯১ জন প্রতি হেক্টর। তখনকার দুনিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ছিল এটি। ১৯৬০ সালে মানুষ কয়লার পরিবর্তে তেল ব্যবহার শুরু করে ফলে কয়লা খনি গুলো একে একে বন্ধ ঘোষনা করা হয়।

১৯৭০ সালে "মিত্সুবিশি" কোম্পানী এই কয়লা খনি বন্ধের আফিসিয়ালি ঘোষনা দেয়। এখন এখানে এমন কি মানুষ ঘুরতেও যায় না। এর ভিডিও চিএ পাবেন ২০০৩ সালের ছবি 'Battle Royale II'-এ এবং এশিয়ান গেম "Killer7" এর ফাইনাল লেভেলে। ৭) KADYKCHAN যখন সোভিয়েত ইউনিয়ান ভেঙ্গে যায় তখন অনেক ছোট ছোট শহরের মতই এই শহর টিও বিরান ভুমিতে পরিনত হয়। যারা এখানে ছিল তারা মাএ দুই দিন সময় পেয়ে ছিল অন্য এলাকায় যেয়ে নতুন ঘর তুলে যায়গা দখল করার তা না হলে তারা পানি,স্কুল ও চিকিৎসা সেবা থেকে বন্চিত হবে এই ঘোষনা দেয়া হয়।

এই টিন মাইনিং শহরটি ১২০০০ লোক ছিল। তারা এই জায়গা এতো তারাতারি ছেড়ে গেছে যে এখনও গেলে তাদের ব্যবহার করা জিনিস পএ পাওয়া যাবে। ৮) KOWLOON WALLED CITY একটা ছবি আছে, "ডিসট্রিক ১৩" আমার ধারনা এখান থেকেই কাহিনী নেয়ে হয়েছে। এই জায়গাটা ছিল হংকং এর সামান্য দুরে। এই ঘনবসতিপূর্ণ জায়গাটা আগে ব্রিটিশশাষিত ছিল, পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানিদের দ্বারা।

যুদ্ধের পর এমন কি চিনারাও এর দায়িত্ব নিতে চায় নি। কারন ছিল এখানে যারা বাস করতো তারা শুধু নিজেদের আইন মানতো আর কাওকে মানতো না। এই ছোট্ট জায়গাটার ভিতর কি ছিল না!! ক্যাসিনো, পতিতালয়, ফুড কর্নার যেখানে কুকুরের মাংস সার্ভ করতো, কোকেইন পার্লার, হিরোইন পার্লার এবং এমন কি গোপন কারখানা! পুরা টাউনটাই ছিল এক ছাদের নিচে। এবং এটা শুধু উপরের দিকেই বেড়েছে। ফলে এর নিচের ফ্লোর গুলোতে কখনোই সুর্যের আলো পৌছাতো না।

১৯৯৩ সালে এটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। ৯) FAMAGUSTA বিশ্বাস হয় এই জায়গাটা ছিল এক সময়ের সাইপ্রাসের ট্রুরিস্ট কেন্দ্রবিন্দু। যুদ্ধের ভয়াবহতায় তা এখন বিরান ভূমি। ১০) AGDAM এটাও যুদ্ধের বলি। এক সময় এখানে প্রায় ১৫০০০০ লোক বাস করতো।

কিন্তু ১৯৯০ সালে এটি "the Nagorno Karabakh war" পরিত্যাক্ত হয়ে যায়। এর ঘর-বাড়ি গুলো ধ্বংশ হয়ে গেলেও মসজিদ গুলো এখনো ইনটেক আছে। আজারবাইজানে যেতে হবে এই জায়গা দেখতে হলে। সবাইকে শুভকামনা , আজ এ পর্যন্তই ... আমার "কত অজানা রে" সিরিজ: পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-উৎসব (কত অজানা রে পার্ট-১) পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-কম্পিউটার মাউস (কত অজানা রে পার্ট-২) পৃথিবীর যত কিছু আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-প্রাকৃতিক গরম পানির লেক (কত অজানা রে পার্ট-৩) পৃথিবীর যত কিছু আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়- জাপানের কিছু পুকুর যাকে তারা 'হেল' বা নরক বা জিগোকু বলে (কত অজানা রে পার্ট-৪) পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-দুবাই ওয়াল্ড (দেখলেও পস্তাইবেন না দেখলেও পস্তাইবেন) (কত অজানা রে পার্ট-৫) পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-ক্রেজিয়েষ্ট ম্যানমেইড ফাউনটে (কত অজানা রে পার্ট-৬) পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয় - জিওলজিকাল বিশ্ময় (এর অনেক গুলো আজ প্রথম দেখবেন) (কত অজানা রে পার্ট-৭) পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-এক্সট্রিম বডিবিল্ডার (কত অজানা রে পার্ট-৮) পৃথিবীর যত সব আজব-অদ্ভুত ... আজকের বিষয়-জীবন্ত পাথর (পাথর কেটে বানানো বিশাল মূর্তি) (কত অজানা রে পার্ট-৯) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.