আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পৃথিবির সর্ববৃহৎ সাসপেনশন ব্রীজ সমুহ ( মেগাপোস্ট )

আমি যা শুনি এবং যা বুঝি তাই নিশ্বঙ্ক চিত্তে বলতে চাই।
ব্রীজ মানুষ নির্মিত একটি অত্যান্ত পুরানো স্ট্রাকচার। এটি মুলত ব্যাবহৃত হত রাস্তার মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা পারহতে। আগে বাশ কাঠ এবং পাথরখন্ড ব্যবহার করা হত ব্রিজ নির্মান করার জন্য। আধুনিক ব্রীজ নির্মান শৈলি যেমন উন্নত হয়েছে তেমনি বড় হয়েছে এর দৈর্ঘ্য।

ব্রীজের বিভিন্ন রকমফের আছে যেমন ১) বীম ব্রীজ ২) ট্রাস ব্রীজ ৩) ক্যান্টিলিভার ব্রীজ ৪) আর্ক ব্রীজ ৫) টাইড আর্ক ব্রীজ ৬) সাসপেনসন ব্রীজ ৭) কেবল স্টেইড ব্রীজ আমরা আমাদের এই লেখায় শুধু সাসপেনসন ব্রীজ নিয়ে কথা বলব। সাসপেনসন ব্রীজ হচ্ছে সেইসব ব্রীজ যেগুলোর ডেক মানে লোডবিয়ারিং এর অংশটুকু সাসপেনশন কেবলরে মাধ্যমে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। এই ব্রীজ গুলোতে দুইটির বেশি পিলার থাকবে না। বাকি ব্রীজটি এই দুইটি পিলারের সাথে কেবল দিয়ে বেধে দেয়া হবে। এই বিষয়টিই একে অন্য ব্রীজ থেকে আলাদ করেছে।

সাসপেনশন ব্রীজ প্রথম দেখতে পাওয়া যায় তিব্বত এবং ভুটানের পাহাড়ি অঞ্চল গুলোতে। সেখানে এক পাহার থেকে আর এক পাহারে যেতে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হত এখনো ঠিক তাই ব্যবহৃত হয়। এক পাশথেকে সাপোর্টের মাধ্যমে কলামের সাথে এটাচ করে পুরো ব্রীজটিকে তারের উপর ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এই ধরনের ব্রীজগুলোর সুবিধা গুলো হচ্ছে ১) ঘনঘন পিলার না থাকায় কনস্ট্রাকশন কস্ট খুবই কম। ২) পুরো কাজটি কেবলের মাধ্যমে করা হয় বলে ব্রীজ নির্মানকালিন সময়ে পানি পথে জাহাজ চলাচলের ব্যাহত হবার কোন সম্ভাবনা থাকে না।

৩) মাঝখানের স্পান অন্যকোন ব্রীজথেকে খুব বেশি পাওয়া যায়। ৪) যেকোন ভুমিকম্পন প্রবন বা টাইফুন প্রবন এলাকাগুলোতে পিলার সাপোর্ট ব্রীজ এর থেকে এই ব্রীজগুলো খুব নিরাপদ। একেবারে সহজ কথায় বলতে পারেন রাঙামাটির ঝুলন্ত ব্রীজের মত। শুধু ব্যবধান হচ্ছে এটা অনেক বড় এবং এতে গাড়ি এবং রেল চলে। এই ধরনের ব্রীজ বানাতে কিছু বিষয় সমস্যা হয়ে দারায় এবং তার চমৎকার কিছু সমানও বের করেছেন ইঞ্জিনিয়াররা যেমন ১) এর কলাম গুলো যেহেতু কেবলের সাথে টেনশনের উপর ( মানে টানের উপর ) থাকে তাই ঝরো আবহওয়া বা ভুমিকম্পের কারনে ব্রীজটি দুলে উঠলে তারের টানের ফলে পিলার দুটোর উপর প্রচন্ড টান পরবে।

ফলে এগুলোর মাথা গুলো যা কেবলের সাথে বাধা থাকে তা ডানে অথবা বামে নরতে চাবে। তো এই সমস্যার সমাধান হল কলাম গুলো কে কেবলের টানের সাথে নরতেদিতে হবে। তাই ইঞ্জিনিয়াররা সিদ্ধান্ত নেন কলাম গুলোকে হলোব্লক(পাইপের মত ছিদ্র সম্বলিত অত্যান্ত পুরু স্টিলের পাত বিশিস্ট) স্টিল কলামের মাধ্যমে নির্মান করা। এতে কেবল টান দিলে কলাম গুলো যেকোন দিকে নরাচারা করতে পারবে এবং কোন ক্র্যাক করবে না। ২) প্রচন্ড শক্তিশালি ক্যাবল গুলোকে ব্রীজের গোড়া থেকে সাপোর্ট দেয়া।

কারন এই কেবল এর সাথে ব্রিজটি ঝুলে থাকে। খুব শক্তিখালি সাপোর্ট ছারা এটি যেকোন ভাবে ছিড়েগেলে বড় ধরনরে দুর্ঘটানা ঘটার সম্ভাবন থাকে। কেবল গুলোকে তৈরি করা হয় অনেকটা সুতা বোনার মত। একটা পুলির মধ্যে কম্পোজিট ম্যাটরিয়ালস এর তৈরি সরু তার পেচিয়ে এটিকে বার বার এপার থেকে ওপার করায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে। ফলশ্রুতিতে তৈরি হয় একটি অত্যান্ত শক্তিশালি কেবল যার মুল সুতাগুলো লম্বা করলে দৈর্ঘ হবে কয়েক হাজার বা ৩ লক্ষ কিলোমিটার।

৩) একই সাথে ক্যাবল এবং ব্রিজ নির্মান করা আর একটা চ্যালেঞ্জ। তারা এই সমস্যাটার সমাধান কিভাবে করেছে তা এই ছবিটি দেখলে পরিস্কার হয়ে যাবে। ব্রীজের আলাদা স্পান গুলো কে প্রিকাস্ট করে একসাথে কেবলের সাথে জুরে দেয়া হয়। ফলে খুব দ্রুত এই ব্রীজগুলো নির্মান করা যায়। এই বার দেখি বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং বিখ্যাৎ সাসপেনশন ব্রীজগুলো ১০) Golden Gate Bridge আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো এবং মেরিন কাউন্টির মধ্যে যোগাযোগকারি এই ব্রিজটি একটি খুব বিখ্যাত ব্রীজ।

বিভিন্ন হলিউডি মুভিতে এটি ভাঙতে পরিচালকদের বেশ মুন্সিয়ানা দেখা যায়। এটি মুলত পৃথিবিতে আধুনিক সাসপেনসন ব্রীজের সুচনা করে। ৯০ ফিট প্রসস্ত ৬ লেন রাস্তার এই ব্রীজটি লম্বায় ১২৮০ মিটার বা ১.২ কিলোমিটার। পুরোটাই স্টিল ম্যটেরিয়ালস ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৩৩ সালে এর কাজ শুরু হয় এবং গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ১৯৩৭ সালে।

দীর্ঘ ৭৩ বছর ধরে এই ব্রীজটি বহন করছে লক্ষ লক্ষ গাড়ি এবং সাক্ষি হয়ে দারিয়ে আছে অনেক ইতিহাসের। ০৯) Hardanger Bridge নরওয়ের হর্ডল্যান্ড এ এই ব্রীজটি অবস্থিত। ব্রীজটি ৬৬ ফিট প্রসস্ত এবং ১৩৫০ মিটার বা ১.৩৫ কিলোমিটার লম্বা। এর কন্সট্রাকশন শুরু হয় ২০০৯ সালে এবং গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ২০১৩ সালে। এই ব্রীজটির মজার ব্যাপার হল এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় টানেল যুক্ত ব্রীজ।

এর উত্তর দিকে প্রায় ৭.৫ কিলোমিটার এবং দক্ষিন দিকে প্রায় ২.৫ কিলোমিটার টানেল রয়েছে। ০৮) Tsing Ma Bridge হংকংএ অবস্থিত এই ব্রীজটি। দুই পার এর শহরের নাম থেকে মুল নামটি নেয়া হয়েছে। ব্রীজটির প্রস্থ ১৩৫ ফিট এবং লম্বা ১৩৭৭ মিটার বা ১.৩৭ কিলোমিটার। দু তলা বিশিস্ট ব্রিজটিতে উপরের তলাতে ৬ লেনের রাস্তা এবং নিচের লেনে ২ লেনের রেল লাইন রয়েছে।

এছারা মেইনটেনেন্স কাজের জন্য নিচের তলায় আরে দুটো আলাদা গারির রাস্তা রয়েছে। সাসপেনশন ব্রীজগুলো মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি লোড নেয় এবং বেশ কয়েকটি শক্তিশালি টাইফুন মোকাবেলা করে এখনো বহাল তেবিয়েৎ দারিয়ে আছে। এটির একটি মজার বিষয় হচ্ছে এর এক পাশে প্রায় ১০ টি ফ্লইওভার একসাথে এসে মিলিত হয়েছে। ফলে যে কোন ব্রীজের চেয়ে এটি অনেক বেশি ট্রাফিক লোড নেয়। ০৭) Jiangyin Bridge ইয়াংজি নদি গন চীনের একটি খুব গুরুত্বপুর্ন নদি।

আমি এর আগে এই নদির উপর বানানো পৃথীবির সবচেয়ে বড় হাইড্রোলিক ড্যামটি নিয়ে পোস্ট দিয়েছি। এই ব্রীজটি ইয়ংজি নদির উপর অবস্থিত। প্রায় ১৩৮৫ মিটার বা ১.৩৮ কিলোমিটার লম্বা এই ব্রীজটি চিনের নির্মিত প্রথম এই ধরনের ব্রীজ। ১৯৯৪ সালে কাজ শুরু হয় এবং ১৯৯৭ সারে শেষ হয়। ০৬) Humber Bridge এটি যুক্তরাজ্যে অবস্থিত।

১৪১০মিটার বা ১.৪১ কিলোমিটার লম্বা। এটির কাজ শুরু হয় ১৯৭২ সালে এবং শেষ হয় ১৯৮১ সালে। অতিরিক্ত খরচের জন্য এটিথেকে খুব উচ্চহারে টোল আদায় করা হয়। ০৫) Nanjing Fourth Yangtze Bridge ইয়াংজি নদির উপর আর একটি সাসপেনশন ব্রীজ। এটি ১১২ ফিট প্রসস্ত এবং ১৪১৮ মিটার বা ১.৪১৮ কিলোমিটার লম্বা।

৬ লেন সম্বলিত এই ব্রীজটি ২০১২ সালে জনসাধারনের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ০৪) Runyang Bridge ইয়ংজি নদিতে এই তিনটি সাসপেনশন ব্রীজ রয়েছে যারা একই সাথে সর্ববৃহৎ ব্রীজের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। ১৪৯০ মিটার লম্বা ব্রীজটি ২০০৫ সালে সাধারন জনগনের জন্য খুলে দেয়া হয়। পুরো কম্পেক্সটি দুইটি বড় ব্রীজের সমন্বয়ে নির্মিত। ০৩) Great Belt Bridge সত্যিকার অর্থে সবগুলো ব্রীজের মধ্যে এই ব্রীজটি আমার খুব ভালো লেগেছে।

ডেনমর্কের ফুল্যান্ড এবং জিল্যান্ড দ্বীপদুটির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে ব্রীজটি। ১০২ ফিট প্রস্থ এবং ১৬২৪ মিটার বা ১.৬২ কিলোমিটার লম্বা সাসপেনসন অংশটি। মুল ব্রীজটি ৬৬৬২৭ মিটার বা ৬.৬৭ কিলো লম্বা। এটির পানির লেভেল থেকে উচ্চতা ৮৩৩ ফিট যা একটি অসাধারন রেকর্ড। মুল পরিকল্পনা ছিল স্বাভাবিক একটি কলাম বেইজ ব্রীজ নির্মন করার জন্য।

কিন্তু সমস্যা বাধে এই পানি পথটি একটি খুব গুরুত্বপুর্ন পথ। এখান থেকে ইউরোপের খুব গুরুত্বপুর্ন ট্রেড গুলো হয়ে থাকে তাই খুব উচু করে এই ব্রীজটি নির্মান করা হয়েছে। ছবিটির দিকে ভাল করে তাকালেই ব্রিজটির উচ্চতা সম্পর্কে একটি ভাল ধারনা আসবে। ০২) Xihoumen Bridge আবার চায়না। ব্রীজটির স্প্যান ১৬৫০ মিটার এবং এটি ২০০৯ সালে জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

এটি সম্পর্কে ভালো কোন ইনফো পাচ্ছি না। ০১) Akashi Kaikyō Bridge এটি সেই বিখ্যাত ব্রীজ যার জন্য আমি এই লেখাটি লেখার আগ্রহ পেয়েছি। এটি জাপানের কোবে এবং আওয়াজি দ্বিপদুটোকে একত্রিত করেছে। ১৯৯১ মিটার বা ১.৯৯ কিলোমিটার লম্বা ব্রীজটির নির্মান কাজ শুরু হয় ১৯৮৮ সালে। এটিতে ব্যবহার করাহয়েছে সবচেয়ে লম্বা ক্যাবল ওয়ে।

মোট ৩ লক্ষ কিলোমিটার লম্বা এই কেবলগুলো। এর নির্মান কাজ শেষ হয় ১৯৯৮ সালে। মুল ব্রীজটির স্পান ছিল ১৯৯০ মিটার। কিন্তু ১৯৯৫ সালের এক ভয়াবহ ভুমিকম্পে মুল টাওয়ার দুটি ১ মিটার দুরে সরে যায়। ফলে ব্রীজটির স্পান ১ মিটার বেশি করে নির্মান করা হয়।

পুরো ব্রীজটিতে ১৭০০ এর মত লাইট ব্যাবহার করা হয়েছে। পোস্ট বেশি বড় হয়েগেছে। আসলে আমি নিজে আমার ব্যাক্তিগত কিছু কাজে এই বিষয়টা নিয় একটু স্টাডি করছিলাম। হঠাৎ মনে হল কেননা সামুর সাথে বিষয়টা শেয়ার করি। আশাকরি সবার ভাল লাগবে।

ধন্যবাদ।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.