কেবলই নিজেকে খুঁজছি
নানান দেব-দেবীর ভিড়ে পৌরুষদীপ্ত সুদর্শন কার্ত্তিককে
কখনও বাড়িতে দেখিনি, সেই ছেলেবেলা থেকেই।
কেন?
আমার নাকি এক জ্যাঠা ছিলেন। তখন তার বয়স তেরো-চৌদ্দ
বাড়িতে কার্ত্তিক পূজার আয়োজন চলছে। পাল বাড়ি থেকে আনা হয়েছে
সুদর্শন কার্ত্তিক ঠাকুর।
ছেলে-ছোকড়াদের হই-হুল্লোর চলছে, নানান রকম পটকা ফুটছে
তার-ই ভেতর হঠাৎ কাঁন্নার রোল;
একটু আগেও যাকে বন্ধুদের সাথে পটকা ফোটাতে দেখা গেছে
সেই তেরো-চৌদ্দ বছরের সুবোধ-শান্ত কিশোরটি আর নেই!
নিথর শরীর।
যেন ঘুমিয়ে আছে!
থেমে গেছে হই-হুল্লোর
বন্ধ হয়েছে পটকার আওয়াজ।
মন্দির থেকে বিতারিত সুদর্শন কার্ত্তিকের জায়গা হলো উত্তরের মাঠে
গর্ত খুঁড়ে মাথা নিচে দিয়ে তাকে পুঁতে ফেলা হলো মাটিতে।
সেই থেকে বাড়িতে সুদর্শন কার্ত্তিকের প্রবেশ নিষেধ
তাই ‘উড়ো খই’য়ের সঙ্গে আমার পরিচয় বাড়িতে নয়।
কিন্তু কার্ত্তিক পূজার এক-দুদিন পরই বাড়ির সামনে ভ্যান এসে থামতো
দূর থেকে দেখা ভিন গাঁয়ের কুঞ্জলালের সমাধী মঠ সদৃশ বিশাল শিঙে নিয়ে
ছোট মামা হাজির। মামা বাড়িতে কার্ত্তিক পূঁজার চল ছিল।
একবার মায়ের সাথে মামা বাড়িতে গেলাম কার্ত্তিক পূজায়
পূজার দু-তিন দিন পর কার্ত্তিক ঠাকুর বিসর্জন দিতে হবে
পাশেই ক্ষীণকায়া চন্দনা নদী। বড়রা নিলেন কার্ত্তিক ঠাকুর
আমরা ছোটরা নিলাম খইয়ের ছোট ছোট হাড়ি-
নদীতে যেতে যেতে খই ছিটাতে হবে।
মহা উৎসাহে সেদিন মুঠোয় মুঠোয় খই উড়িয়েছিলাম
সেদিন-ই জানলাম এর নাম-‘উড়ো খই’।
‘উড়ো খই’য়ের মালিক থাকে না, নলেন গুড়ে মাখা থাকে না
পথে পথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে, পাখ-পাখালি খুঁটে খায়।
অনেক বছর বাদে আবার যখন পটকা ফুটলো, রক্তগ্রন্থন শিথিল হলো
মুঠোয় মুঠোয় উড়িয়ে দিল অনেক বছর ধরে জমানো স্বপ্নগুলো
তখন-ই বুঝলাম আমি আর কোথাও বাঁধা নই
মুঠোয় মুঠোয় উড়ে উড়ে বনে গেছি ‘উড়ো খই’।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।