বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে সমস্যা আছে। ইতিবাচক সব অর্জনের চেয়ে নেতিবাচক প্রচারণা প্রবল। রাজনৈতিক বিভেদের কারণে নিজেরাই নিজেদের অর্জনগুলো পায়ে ঠেলে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদগারে মেতে উঠি। গাঁটের টাকা খরচ করে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় নিজের দেশের বিরুদ্ধে, দেশের সরকারে বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালাই। সেই চলমান সংস্কৃতির মাঝেও বাংলাদেশের অনেক ইতিবাচক অর্জন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়।
বাংলাদেশ উঠে আসে এক আলাদা উচ্চতায়। কোনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত তাকে দাবিয়ে রাখতে পারে না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সেই অমোঘ উক্তি, ‘সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। ’ সেই সত্তরে বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা যায়নি। আজ ২০১৩’তে এসে ১৬ কোটি মানুষের অর্জনকেও কেউ ম্লান করে দিতে পারবে না।
বাংলাদেশ আজ অসংখ্য কৃতিত্বের মধ্য দিয়ে বিশ্বের দরবারে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্প, জনশক্তি রপ্তানি, ওষুধ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, আউটসোর্সিংসহ অনেক দিক থেকে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অসংখ্য কৃতিমান মানুষ বিশ্বের খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
ঢাকার মেয়ে আমিরা হক
এমনই একজন কৃতিমান বাঙালি আমিরা হক।
আমিরা হক জাতিসংঘের উচ্চপদে অধিষ্ঠিত বাংলাদেশী নারী। তিনি গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরে এসে অনেক ইতিবাচক স্বীকৃতি দিয়ে যান নিজের দেশকে। আমিরা হক ৩৭ বছর ধরে কাজ করছেন জাতিসংঘে। সেই ১৯৭৬ সাল থেকে। এ দীর্ঘ সময়ে জাতিসংঘের হয়ে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন বাংলাদেশী নারী আমিরা হক।
জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা দলের অন্যতম সদস্য আমিরা হকের বর্তমান পদবি আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল। গত ১১ জুন তিনি জাতিসংঘের ফিল্ড সাপোর্ট বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান। এ যাবৎ জাতিসংঘে দায়িত্ব পালনকারীদের মধ্যে তিনিই সর্বোচ্চ পর্যায়ের বাঙালি।
আমিরা হক তার বর্তমান অবস্থানের পাশাপাশি নিজের দেশটিকে নিয়েও গর্ববোধ করেন। কারণ, তিনি যে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন সেই দেশ বাংলাদেশ আজ জাতিসংঘে সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ।
তিনি তার কাজের মাধ্যমে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। ২০০৯ সাল থেকেই আমিরা হক ছিলেন তিমুর লেসতেতে জাতিসংঘের সমন্বিত মিশনের প্রধান এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের তিমুর-লেসতে বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি। তারও আগে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের উপবিশেষ প্রতিনিধি, সুদানে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের সমন্বয়ক, আফগানিস্তানে জাতিসংঘ মহাসচিবের উপবিশেষ প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের সমন্বয়ক ছিলেন।
ব্যাপক পরিসরে ব্যবস্থাপনা ও উচ্চ পর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা আছে আমিরা হকের।
আমিরা হক নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমিউনিটি অর্গানাইজেশন ও প্ল্যানিং এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসা প্রশাসনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
ওহাইয়োর অক্সফোর্ডের ওয়েস্টার্ন কলেজ থেকে তিনি ব্যাচেলর অব আর্টস ডিগ্রি লাভ করেন। তার শৈশবের শিক্ষাজীবনের কিছুটা কেটেছে ভারতের আসামের শিলংয়ে। ১৯৬৫ সালে তিনি ঢাকায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে সিনিয়র ক্যামব্রিজ (ও) লেভেল সম্পন্ন করেন। ১৯৬৬-১৯৬৮ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন হলিক্রস কলেজের ছাত্রী। হলিক্রস থেকেই তিনি মানবিকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।
ঢাকায় ব্যস্ত আমিরা হক
সেই আমিরা হক এবার ঢাকা এসে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তির স্বীকৃতি দিয়ে গেলেন। বলে গেলেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশী সদস্যদের কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের কথা। আমিরা হক গত ৫ জানুয়ারি ঢাকায় আসার পর হযরত শাহ্জালাল বিমানবন্দরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকাস্থ ইউএন মিশনের কর্মকর্তারা তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। মহাসচিব বান কি মুনের বিশেষ দূত থেকে আন্ডার সেক্রেটারির দায়িত্ব পাওয়া বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ওই কর্মকর্তা ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করেন। এ সময় তিনি আলোচনা করেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধির সঙ্গে।
নিজের দেশের মেয়ে হলেও তার সফরকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছে ঢাকা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. দীপু মনির সঙ্গে তিনি সৌজন্য বৈঠক করেছেন। তার সম্মানে একটি ডিনার পার্টির আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে মন্ত্রণালয়ের তরফে তাকে সম্মাননা জানানো হয়। এছাড়া পররাষ্ট্র দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্তদের সঙ্গে শান্তিরক্ষা মিশনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেন জাতিসংঘের মহাসচিবের পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদধারী ওই কর্মকর্তা।
সফরকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গেও সৌজন্য বৈঠক করেন আমিরা হক। এছাড়া তার সম্মানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের দেওয়া ভোজসভায়ও যোগ দেন তিনি। আলোচনায় বসেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া ও পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সামরিক-বেসামরিক প্রতিনিধিরা আফ্রিকা মহাদেশের যুদ্ধপীড়িত লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিয়ন, সুদান, আইভরি কোস্টসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। সেই সঙ্গে সেসব দেশে শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছেন তারা।
ওই মিশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব এবং আনুপাতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘদিন ধরে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের ঢাকা সফরে বাংলাদেশের পক্ষে দাবিটি জোরালোভাবে উত্থাপিত হয়। ফিল্ড সাপোর্ট বিভাগের প্রধানের এ সফরেও বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।
শান্তিরক্ষা মিশনে সেরা বাংলাদেশ
এদিকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বেশ কয়েক বছর ধরে শান্তিরক্ষী পাঠানোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অবস্থানটি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। ঢাকার একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়, জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের নভেম্বর মাসের শেষ দিন পর্যন্ত ২৩ মাসের মধ্যে ১৫ মাসই বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল।
গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের ৯টি সংকটাপন্ন দেশে মোট আট হাজার ৮৪১ জন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে পুলিশ এক হাজার ৮২৫ জন। মিশনে নারী পুলিশের সংখ্যার দিক থেকেও বাংলাদেশ শীর্ষে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ‘রোল মডেল’ হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃত। প্রায় দুই যুগ ধরে বিশ্বের ৫৪টি দেশে শান্তিরক্ষায় অনন্য ভূমিকা রেখে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা দেশের গৌরব বাড়িয়েছেন।
একই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও ব্যাপক অবদান রেখেছেন তারা। ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজে গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত জীবন হারাতে হয়েছে ১১২ জনকে। আহত হয়েছেন প্রায় ১৫০ জন। জাতিসংঘের ‘ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশন্স’-এর ওয়েবসাইটে শান্তিরক্ষা মিশনে কোন দেশ কত সামরিক ও পুলিশ সদস্য পাঠিয়েছে, তার বছর ও মাসভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। এতে ২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তথ্য রয়েছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সামরিক ও পুলিশ সদস্য প্রেরণকারী দেশের মধ্যে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শীর্ষ অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। এ সময় বাংলাদেশের আট হাজার ৯১৭ জন পুরুষ ও ২২৫ জন নারী মিলিয়ে ৯ হাজার ১৪২ জন শান্তিরক্ষী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে ৯ হাজার ১১৩ জন শান্তিরক্ষী নিয়ে পাকিস্তান দ্বিতীয় অবস্থানে এবং সাত হাজার ৮৯৯ জন শান্তিরক্ষী নিয়ে ভারত তৃতীয় অবস্থানে ছিল।
পরের মাস নভেম্বরের শেষে সামান্য ব্যবধানে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে নেমে আসে। এ মাসে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী সেরা ১০-এর বাকি দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান আট হাজার ৯৫৮ জন শান্তিরক্ষী পাঠিয়ে প্রথম এবং ভারত সাত হাজার ৮৬৪ জন শান্তিরক্ষী পাঠিয়ে তৃতীয় স্থানে ছিল।
এ ছাড়া ইথিওপিয়া পাঁচ হাজার ৬৯৭, নাইজেরিয়া পাঁচ হাজার ৫৫৬, রুয়ান্ডা চার হাজার ৫৮৪, নেপাল চার হাজার ৪৯২, মিসর চার হাজার ১০৯, জর্দান তিন হাজার ৫৯৬ এবং ঘানার দুই হাজার ৮০৫ জন শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ মিশনে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশন্সের তথ্য অনুসারে ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ২৩ মাসের মধ্যে পাকিস্তান বাংলাদেশের তুলনায় সামান্য ব্যবধানে শীর্ষে ছিল আট মাস। এ সময়ে ভারতের তৃতীয় অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২০১২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসের মধ্যে মে, জুন, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর পাকিস্তান ছিল শীর্ষে। বাকি মাসগুলোতে বাংলাদেশই শীর্ষস্থান দখল করে রাখে।
গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত যে ৯টি দেশে জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা দায়িত্ব পালন করছিলেন, এর মধ্যে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৯৪৯ জন শান্তিরক্ষী ছিলেন কঙ্গোতে। আইভরি কোস্টে ছিলেন দুই হাজার ৫৪১ জন এবং লাইবেরিয়ায় ছিলেন এক হাজার ৪১০ জন। এ ছাড়া দক্ষিণ সুদানে ছিলেন ২৯০ জন এবং দারফুরে (সুদান) ছিলেন ৯৬৮ জন।
সশস্ত্র বাহিনী সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ইরাক-ইরানে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেওয়া শুরু হয়। এরপর এ পর্যন্ত এক লাখ ১০ হাজারের ওপরে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী এ দায়িত্ব পালন করেছেন।
জাতিসংঘের মোট ৬৮টি মিশনের মধ্যে ৫৮টিতে দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী এ মিশনে দায়িত্ব পালন করে আসছেন ১৯৯৩ সাল থেকে। বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরা এ মিশনে অংশগ্রহণ করে আসছেন ১৯৮৯ সাল থেকে।
নেতৃত্বে প্রশংসিত
শুধু সংখ্যার দিক থেকেই নয়, শান্তিরক্ষা মিশনে নেতৃত্বেও বাংলাদেশ প্রশংসিত। ২০১১ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশী সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল আবদুল হাফিজ পশ্চিম সাহারায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ফোর্স কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পান।
এর আগে তিনি আইভরি কোস্টে জাতিসংঘ মিশনের ফোর্স কমান্ডার হিসেবে প্রশংসনীয় দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বেই আইভরি কোস্টের নির্বাচন-পরবর্তী সবচেয়ে সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির অবসান ঘটে। মেজর জেনারেল আবদুল হাফিজের আগে বাংলাদেশের আরেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর সুদান মিশনে ফোর্স কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১১ সালে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক শাহ জামান রাজু তিমুর লেস্টে জাতিসংঘ মিশনে ডেপুটি পুলিশ কমান্ডার হিসেবে এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কমান্ডার মোহাম্মদ বেনিজ আলী মিয়া লেবাননে জাতিসংঘ মিশনে চিফ অব নেভাল অপারেশন সেন্টারের দায়িত্ব লাভ করেন।
বাংলাদেশের পুলিশও সর্বোচ্চ অবস্থানে
গত বছরের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত ‘ইউএন পুলিশ ম্যাগাজিন’-এর অষ্টম সংখ্যার তথ্য অনুসারে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল শীর্ষে।
ওই সময় বাংলাদেশের মোট দুই হাজার ৮৩ জন পুলিশ সদস্য শান্তিরক্ষার দায়িত্বে ছিলেন। এক হাজার ৯২৭ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল জর্দান এবং ভারত ছিল ১১০ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে। পুলিশের নারী ইউনিটের ক্ষেত্রেও প্রথম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
অর্থনীতিতে অবদান, বছরে দেড় হাজার কোটি টাকা আয়
গত বছর ৮ মার্চ আইএসপিআর জানায়, ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে জাতিসংঘ শন্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আয় করে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট সেনা সদস্যদের বেতন-ভাতা বাবদ আয় হয় ৫৬০ কোটি টাকা এবং অস্ত্রশস্ত্র, যানবাহন ও অন্যান্য সরঞ্জামের বিপরীতে আয় হয় ৩৪০ কোটি টাকা।
সেনা সদস্যদের বেতন-ভাতা ছাড়া মিশন থেকে অর্জিত এসব অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হয়ে থাকে।
শন্তিরক্ষা মিশন থেকে সেনাবাহিনী ছাড়াও বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী এবং পুলিশের আয়ও রয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী সূত্রে জানা যায়,
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তিরক্ষায় সাফল্যের মাধ্যমে দেশের জন্য শুধু সম্মান অর্জনই নয়, দেশকে আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করছেন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে প্রতিবছর গড়ে আয় হচ্ছে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। বাংলাদেশের যুদ্ধবহর, যানবাহন, অস্ত্র, গোলাবারুদ, যন্ত্রপাতি এবং জনবল জাতিসংঘের প্রয়োজনে ব্যবহার হওয়াতে ওই পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে।
একই সঙ্গে জাতিসংঘ ও সমস্যাকবলিত দেশগুলোর আস্থা ও নির্ভরযোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে নিজ দেশের জন্য অপার সম্ভাবনার ক্ষেত্রও প্রস্তুত করে চলেছেন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।