দাগ থেকে যদি ভালো কিছু হয় দাগই ভালো
"আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ ছিল না। কিন্তু আমার ২ বছর বয়সে ব্লাড ক্যন্সার ধরা পরার পর থেকে ক্রমশ ই খারাপ হতে লাগলো। আব্বার প্রথম ছেলে হবার কারণে আমাকে অনেক ভালবাসতেন। আমার তিন জন বড় বোন ছিল। ৩ মেয়ের পর ১ ছেলে হবার কারণেই আদর টা বেশি ছিল।
আব্বা সরকারী চাকুরী করতেন। যা দিয়ে ৬ জনের সংসার চালিয়ে সন্তানের ব্লাড ক্যন্সারের চিকিৎসার খরচ চালানো সম্ভব ছিল না। কিন্তু আব্বা কখনো হাল ছাড়েন নি। তিনি চাকুরীর পাশাপাশি হোমিওপ্যথি ওষুধের দোকান দিলেন। সারা দিন অফিস করে রাতে ফার্মেসীতে বসতেন।
ফার্মেসী থেকে ফিরে রাতে আবার বোনদের পড়াতে বসতেন।
যাই হোক এইবার কুরবানি প্রসঙ্গে আসি। এই টানাটানির সংসারে কুরবানি দেয়া আব্বার পক্ষে অসম্ভব ছিল। কিন্তু আমার বাচ্চা মন কি আর তা বুঝে ? আব্বাকে বলতাম "সবাই দিতাসে,আমরা কে দিমু না? " আব্বা সান্তনা দিতেন এই বলে যাদের ঋণ আছে তাদের নাকি কুরবানি জায়েজ না। আমাদের অনেক ঋণ ছিল।
আমাদের মফস্বল শহরে ৩ শতাংশ জায়গার উপর একটা বাড়ি ছিল। যাদের বাড়ি আছে তাদের কুরবানি না দেয়া টা আমার জন্য আত্নসম্মানে লাগার মত ছিল। লজ্জা ঢাকার জন্য নানুবাড়িতে কুরবানি দেয় সহ নানা চাপা মারতাম সবার সাথে। মানুষের গরু ছাগল কে খুব আগ্রহের সাথে আদর করতাম । ঘাস খাওয়াতাম।
অনেক সময় মানুষ নানা লজ্জা দিত কিংবা তারিয়ে দিত। ছোট হবার কারণে প্রায় ই চোখের পানি আটকে রাখতে পারতাম না। আব্বাকে বলতাম একবার চিকিৎসা বন্ধ রেখে হলেও কুরবানি দিতে । আমি একদিন টের পেয়েছিলাম আব্বা রাতে আমি ঘুমানোর পর ঝর ঝর করে কাদতেন। আব্বা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে দুই একবার ঈদের আগের দিন খাসি কিংবা শরিক হয়ে গরু কিনেছিলেন ও।
কিন্তু ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় কেনায় আদর করার সুযোগ থাকতো না পশু কে।
এখন আমি আর পৃথিবী তে নাই বছর ৪ এক হল। এখন আমাদের বাসায় প্রতি বছর কুরবানি হয়। আমার ছোট ভাই কুরবানির পশুকে নিয়ে নিয়ে খুব মজা করে। আর আমার আব্বা খালি আড়ালে ঝর ঝর করে কাঁদেন।
"
....................................................................................................................................................................
সম্পূর্ণ সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে লেখা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।