আমিও বাধ ভাংতে চাই... কয়েকটা বাস্তব গল্প দিয়ে শুরু করি। আসলে এই গল্পগুলোই দুঃস্বপ্নের মত তাড়া করছে আমাকে বেশ কিছুদিন ধরে। এজন্যই লিখতে বসা।
১। ৩ সন্তানের জনক, বিবাহিত জীবন ৩২ বছর।
ভদ্রলোকের বয়স ৫০+। স্ত্রীর কলিগের স্বামী মারা যাওয়ায় ব্যবসায়িক কারণে স্ত্রীই পরিচয় করিয়ে দেন স্বামীর সাথে। এরপর ৫ বছরের প্রেম(!) এবং মাসখানেক আগে তিনি ওই মহিলাকে বিয়েই করে ফেলেছেন, তা-ও গোপনে। এখন জনে জনে বলে বেড়াচ্ছেন, প্রথম বিয়েটা ছিলো তাঁর জীবনের সবচে বড় ভূল!
২। এই ঘটনাটা প্রায় প্রথমটার মতই।
পরিচয়ের ক্ষেত্রটাই যা আলাদা। অবশ্য এক্ষেত্রে ভদ্রলোকের বাবা বিষয়টা জানতে পেরে অনাচার ঠেকানোর জন্য বিয়েটা করিয়ে দিয়েছেন। এখন দুই স্ত্রী একই বাসায় থাকছেন। প্রথম স্ত্রীর রাত কাটে ঘুমের ওষুধের দয়ায়! প্রথম পক্ষের ছেলেমেয়েরা লজ্জ্বায় বিমূঢ়।
৩।
স্বামীর বয়স ৩৫, স্ত্রী সমবয়সী। পছন্দের বিয়ে। বাচ্চা হয় না ৪ বছর। ডিপ্রেশনে স্ত্রীর আশা করার ক্ষমতা ফুরিয়ে গেলেও অসীম ধৈর্যশীল স্বামী সাহস যুগিয়ে যান বারবার। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সুখবর আসে।
সম্পূর্ণ বেডরেস্টের জন্য স্ত্রীকে চলে যেতে হয় বাবার বাড়ি। এই ফাঁকে স্বামীপ্রবরের একাকীত্ব ঘুচাতে এগিয়ে আসেন তার এক্স কলিগ। বাচ্চা কোলে বাসায় ফিরে স্ত্রী দেখেন তাঁর জায়গাটি আর খালি নেই। ড্রেসিং টেবিলে সগর্বে অবস্থান করছে আরেকজনের নির্লজ্জ প্রসাধনী। ভালোবাসার দাবিতে মাটি কামড়ে কিছুদিন পড়ে ছিলেন বেচারী।
কিন্তু দিনের পর দিন তাঁর সামনেই একসাথে ঘরে ঢুকে বেডরুমের দরজা আটকে দিতেন স্বামী আর তার প্রেমিকা। লজ্জ্বা, ঘৃণা, অপমানে তিনি মাসখানিক পর ফিরে এলেন বাবার বাড়ী, সম্ভবত চিরতরেই...
৪। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়লেও ইসলামী অনুশাসনের মধ্যেই বড় হয়েছিলো মেয়েটা। বিয়ের পর স্বামির সাথে পাড়ী জমায় মধ্যপ্রাচ্য। চাকুরী করতেন সেখানে আর বাকি সময় শপিং।
যদিও স্বামীর আয় এবং সামাজিক মর্যাদা অনেক বেশী ছিলো, তবু চাকুরিতে বাধা পাননি কখনো। বিয়ের ১২ বছরে কোলে আসে দুটি ছেলে, মায়ের মতই মায়াভরা সুন্দর দুটা খেলনা যেন! এরপর স্ত্রী ঘোষণা দেন তিনি আর এই লোকের সাথে থাকতে পারবেন না। কেন? সে গোসল করে না, ব্যবহার খারাপ। কিছুদিন আগেই ফেসবুকে আর এক বাঙ্গালী ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছে। সে ২ বছর পর বিয়ে করবে উনাকে।
সেই ভরসায় ১২ বছরের সংসার ভেঙ্গে এসে পড়লেন। পরিবারের অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের সামনে স্বামী মেয়েটার পায়ে পড়ে গেলেন। তিনি মৈনাক পর্বত! প্রথমে ছেলেদের কাছে রাখলেও পরে পাঠিয়ে দেন তাদের বাবার কাছে। ২য় বিয়েটা করে ফেলেছেন মাস ছয়েক হয়।
..........................................................................................
জানেন, এরকম আরও কয়েকটা ঘটনা তাজা ক্ষতের মত আমার চোখের সামনে ভাসছে।
কিন্তু এতো মন খারাপ লাগছে আর লেখা সম্ভব না। এই সবগুলো পরিবারের উভয় পক্ষ আমার পরিচিত, কারো সাথে শৈশবের কত স্মৃতিও আছে। বিশ্বাস হয় না সেই নরম মানুষগুলো আজকে এইভাবে বদলে গেছে। এটা ঠিক আমি কোনটার ব্যপারে দুইপক্ষের সাথে সমাধানকারীর মানসিকতায় কথা বলি নাই। আমার জানায় ফাঁক থাকতেই পারে।
কিন্তু আমি কেন যেন এখন আমাকেই বিশ্বাস করতে পারিনা। মনে হয় কেউ যদি কখনো আমার বাবা সম্পর্কেও এসে এরকম একটা অভিযোগ করে আমি মনে হয় তাকে বকা দেয়ার আগে আব্বুকে একবার জিজ্ঞেস করে নেব!
আমি মানুষ অনেক ছোট। কোন বিশ্লেষণের জন্য এখানে বসিনি। কিন্তু আমার কাছে এসবের কারণ হিসেবে একটা কারণকে খুব প্রমিনেন্ট মনে হচ্ছে। দুনিয়ায় আমরা সব পেতে চাই, এই জীবনটাকে করতে চাই সবচেয়ে পারফেক্ট।
আমার সব লাগবে, সব। সাজানো সংসারও লাগবে, টাকা লাগবে অঢেল, সিনেমার নায়ক নায়িকাদের মত পারফেক্ট গ্ল্যমারাস জীবনসঙ্গী লাগবে,যে কখনো আমাকে ভালোবাসতে টায়ার্ড হবে না, আমার সংসারের সর্বময় ক্ষমতা হবে আমার। কোন কিছুতে একটু ঘাটতি পেলেই আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়ি শূন্যস্থান পূরণে। মা-সন্তান, স্বামি-স্ত্রীর সম্পর্কগুলোর চিরায়ত বাঁধনগুলো আমাদের কাছে মাকড়সার জালের মত পলকা। আগে বিবাহিত/বিবাহিতা হলেই অনেক উটকো মানুষের আগ্রহ থেকে রেহাই পাওয়া যেতো, আজকাল এই প্রশ্নও শুনতে হয়ঃ আপনি ওর সাথে হ্যপি তো?(মানে হোল আমার জন্য একটু ফাঁকা আছে নাকি?)।
আমার একজন দুঃসম্পর্কের ননদ স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ির পর দুই বাচ্চা না পেয়ে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। মাঝে মাঝেই ঘর থেকে বের হয়ে যেতেন। এভাবেই একবার বের হয়ে আর ফেরেননি। এখনও কেউ জানে না তিনি কোথায়। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে উনাকে পেলে জিজ্ঞেস করতাম কোত্থেকে পেয়েছেন এত্তো ভালোবাসা? কোন টানে ঘর ছেড়েছেন?আমাদের বাচ্চারাও তো এরকম নাড়ি ছিঁড়েই বের হয়, বাবার ঘামে ভেজা কষ্টে বড় হয়? তবু কেন আজকাল আর এইরকম ভালোবাসা বাসতে দেখি না? কেন এই মায়ার বাঁধনকে অগ্রাহ্য করে নতুন সুখের জন্য দৌড়াই আমরা? নাকি আমরাই পাগল?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।