আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পূজার শহর বগুড়ার শেরপুর

বগুড়ার পৌর শহর শেরপুর। করতোয়া নদীপাড়ের এই শহরের সাড়ে ছয় বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এবার ৩৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। এ যেন এক পূজার শহর।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমারনাথ প্রথম আলো ডটকমকে জানালেন, বাংলাদেশে এই আয়তনে এত সংখ্যক পূজা আর কোথাও হয় না।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বগুড়া থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণের এই শহরের পূজার ইতিহাস শহরটির মতোই পুরোনো।

জমিদারদের স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে তাঁদের স্থাপিত অনেক দুর্গামন্দির। সেসব মন্দির কত পুরোনো, এর সঠিক ইতিহাস কারও জানা নেই।
শহরের সবচেয়ে পুরোনো বলে পরিচিত পূজা মন্দির ষোলোআনা কাছাড়ি। ষোলো জন কুণ্ডু জমিদারের (শরিক) উদ্যোগে এখানে পূজা চালু হয়। তাই এর নাম ষোলোআনা কাছাড়ি।

সময়ের আবর্তে শরিকের সংখ্যা বেড়ে গেছে। পূজার জৌলুসও নেই আগের মতো। কিন্তু ঐতিহ্যের স্মারক বহন করে সোয়া দুই হাত প্রস্থ আর আট হাত দৈর্ঘ্যের কাঠামোতে পূজিতা হচ্ছেন দুর্গা। এটি শহরের সবচেয়ে বড় প্রতিমা।
শত বছরের ছোঁয়া লাগা শহরে আরও পূজা মন্দিরের মধ্যে আছে তরফদার, মুন্সী ও মজুমদারদের চণ্ডী মণ্ডপ।

সাবেকিয়ানার অনেক কিছুই অটুট এই মন্দিরেও।
দুই মন্দিরেই প্রতিমা এক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু দুই মন্দিরে পূজার ধরন আলাদা। ষোলোআনায় পূজা হয় বৈষ্ণব মতে। চণ্ডী মণ্ডপে হয় শাক্ত মতে।

এখানে পাঁঠা বলি দেওয়া হয় অষ্টমী ও নবমী এই দুই দিন।
শরিকি পূজার বাইরে শত বছরের পুরোনো পারিবারিক পূজা হয় লক্ষ্মীকান্ত ভট্টাচার্যের বাড়িতে। প্রাচীন মন্দির নতুনের ছোঁয়া পেয়েছে। কিন্তু পূজার রীতির পরিবর্তন হয়নি।
আনন্দময়ী দুর্গাকে জমিদারি বা ব্যক্তির মন্দিরের বৃত্ত থেকে বের করে এনে শুরু হয় বারোয়ারি পূজার চল।

এভাবে দুর্গোত্সব হয়ে ওঠে আরও সার্বজনীন। শেরপুরে বারোয়ারি পূজার মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো স্যানাল বাড়ির মাঠের টাউন বারোয়ারির পূজা। এই পূজাও এবার ৬২ বছরে পড়ল। আসলে শহরের পূজার প্রাণকেন্দ্র এটিই। টাউন বারোয়ারির পূজাকে ঘিরে পাঁচ দিন ধরে চলে মেলা।

পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রামকৃষ্ণ মোহন্ত বলেন, এবার পাঁচ দিন ধরে চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শেরপুরের উন্নয়নে যাঁরা ভূমিকা রেখেছেন, বারোয়ারি পূজা কমিটি অন্যান্য বছরের মতো এবার এমন পাঁচজনকে সংবর্ধনা দিচ্ছে।
শহরের উত্তরের পালপাড়া থেকে দক্ষিণের শেরুয়ার গলিতে গলিতে পূজার আয়োজনের বড় বৈশিষ্ট্য সব ধর্মের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। উপজেলা শহরের পূজা হলেও বগুড়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীদের ভিড় জমে শেরপুরে।
দশমীতে এই মিলনমেলার অবসান হয়।

মন্দির ও পারিবারিক পূজার প্রতিমা বিকেলে করতোয়ায় বিসর্জিত হবেন। আগে করতোয়া যখন অনেক বড় ছিল, তখন বড় বড় নারকেলি নৌকা আসত। সেই নৌকায় প্রতিমা উঠিয়ে সারা বিকেল নদীপথে প্রদক্ষিণ শেষে সন্ধ্যায় বিসর্জন দেওয়া হতো। এটা বেশি দিন আগের কথা নয়। এখন করতোয়ার শীর্ণ বুকে নৌকার প্রদক্ষিণ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

দু-একটি প্রতিমা প্রদক্ষিণ হয়।
বেশির ভাগ বারোয়ারি প্রতিমা নিয়ে দশমীর সন্ধ্যায় শোভাযাত্রা বের হয়। শহরজুড়ে নারী-পুরুষ ভিড় জমান ব্যান্ড পার্টি আর মাদলের তালে নৃত্যরত হাজার মানুষের শোভাযাত্রা দেখার জন্য। সারা শহর প্রদক্ষিণ শেষে করতোয়ার বিভিন্ন ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। আগমনীর গানে বিসর্জনের ব্যথা ভুলে আবার নতুন বছরের প্রতীক্ষায় থাকে শহরের মানুষ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।