আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোহাগে যখন থমকে গেল সময়

মুশফিক ভাইয়ের প্যাডে লেগে বলটা যখন ওপরে উঠল, আমি যেন থমকে গেলাম। সাকিব ভাই ডাইভ দিয়ে ক্যাচটি নেওয়ার পর...আর কিছু মনে নেই’—গোধূলির ম্লান আলোতেও চারপাশ ঝলমল করছিল সোহাগ গাজীর উজ্জ্বল হাসিতে। যে সময়টার কথা বলছেন, তখন তিনি লাফাচ্ছেন, ঝাঁপাচ্ছেন, বাঁধা পড়ছেন সতীর্থদের আলিঙ্গনে। বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসে ওই মুহূর্তটার কথা তাঁর মনে থাকতে না-ই পারে। তবে মনে রাখবে ক্রিকেট ইতিহাস।

ওই মুহূর্তটায় যে থমকে দাঁড়িয়েছিল সময়!
১৩৬ বছরের টেস্ট ইতিহাস। পরতে পরতে জড়িয়ে রোমাঞ্চ, কত উত্তেজনা, সাফল্য-ব্যর্থতার হাজারো আখ্যান, অভাবনীয় সব কীর্তি। কিন্তু ওই মুহূর্তটায় যা হলো, তেমন কিছু আর কখনো দেখেনি ক্রিকেট। আরও নির্দিষ্ট করে বললে অসাধারণ এক কীর্তিও পরিপূর্ণতা দিল ওই মুহূর্তটি। ব্রেসওয়েলের ক্যাচ সাকিবের হাতে জমা পড়ায় হ্যাটট্রিক হয়ে গেল সোহাগের।

তা হ্যাটট্রিক টেস্ট ক্রিকেটে কালকের আগেও হয়েছে ৩৯টি। গত পরশু ব্যাট হাতে করেছেন সেঞ্চুরি, টেস্ট ক্রিকেটে এর আগে সেঞ্চুরি হয়েছে ৩৬৪৫টি। কিন্তু দুটি একসঙ্গে, একই ম্যাচে কালকের আগে কখনোই নয়। এখানেই সোহাগ গড়েছেন অনন্য কীর্তি। একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিকের সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে ৬ উইকেট।

স্রেফ ‘বিশ্ব রেকর্ড’ কথাটির সামর্থ্য নেই এই কীর্তির বিশালতাকে ধারণ করার। এমন একটা কিছু, যা ছিল আকাশের দূরত্বে। মাত্র সপ্তম টেস্ট খেলতে নামা সোহাগ ছুঁয়েছেন আকাশ।

অথচ তাঁর পা ঠিকই মাটিতে। সংবাদ সম্মেলনে আক্ষরিক অর্থেই সেটি দেখা গেল।

এমন একটা কীর্তির প্রতিক্রিয়ায় স্রেফ ‘ভালো’ শব্দটাই ঘুরেফিরে এল। আরেকটু বিশদ বলার চাপাচাপি করার পর পাশে বসে থাকা অধিনায়কের দিকে বিব্রত হাসি, ‘ভালোর পরে তো আর কিছু নেই!’ হ্যাটট্রিক হয়ে যাওয়ার পরের অনুভূতি, ‘কোনো কিছুই মনে হয়নি, হঠাৎ করেই হয়ে গেছে। ’

কিন্তু এসব কথায় সাংবাদিকদের চলবে কেন? কীর্তি যতটা বিশাল, সেটার মহিমা তুলে ধরতেও তো চাই তেমন কোনো লেখা। কিন্তু কীর্তিমানের প্রতিক্রিয়ায় যদি ‘হ্যাঁ-না-ভালো’ এসবেই আটকে থাকে, তবে কীর্তির মহিমা ফুটিয়ে তোলা তো বিপদ। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তাই চলল সোহাগের ভেতরটাকে বের করে আনার চেষ্টা।

প্রশ্ন হলো, ‘সোহাগ, এই ম্যাচটি মনে থাকবে তো?’ ভরা মজলিসে হাসির হুল্লোড়ের মাঝে চমক-জাগানিয়া উত্তর, ‘না, মনে থাকবে না। এসব মনে রাখলে পরে মনে ক্যাজুয়াল ভাব চলে আসতে পারে। এটা এখানেই শেষ। ’

কিন্তু এই কীর্তি তো ভবিষ্যৎ পথচলায় বড় একটা অনুপ্রেরণাও, মনে না থাকলে চলবে কেন? এবার পুরো উল্টো উত্তর, ‘না, ওটা আসলে প্রশ্নের জবাবে বললাম এমনি। মনে রাখার ব্যাপার তো আছেই, অবশ্যই বড় একটা অনুপ্রেরণা হবে।

’ এসব আলাপচারিতাতেই পরিষ্কার, কীর্তির বিশালতাটা ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি তিনিও। সতীর্থদের মনে যদিও দারুণ আলোড়ন তুলেছে এই কীর্তি। অধিনায়ক মুশফিকের কণ্ঠে গর্ব, ‘মাঠেই আমরা কথা বলছিলাম এটা নিয়ে, কিন্তু নিশ্চিত ছিলাম না। ড্রেসিংরুমে এসে জানলাম সোহাগই প্রথম। ওর সতীর্থ হিসেবে, অধিনায়ক হিসেবে অবশ্যই আমি গর্বিত।

দলের জন্য, দেশের জন্যও বিশাল গর্বের ব্যাপার। ’ উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে গেছেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালামও, ‘আমি নিশ্চিত ওর দল ওকে নিয়ে গর্বিত। পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার সামর্থ্য আছে ওর। ’

কিন্তু এই কীর্তির নায়ক নির্লিপ্ত বসে সংবাদ সম্মেলনে। ভয়ংকর ব্যাটসম্যানকে তিনি বোতলবন্দী করতে পারেন, নিখুঁত টেকনিকের ব্যাটসম্যানের দেয়ালে ধরাতে পারেন চিড়, প্রয়োজনে ব্যাটকে বানাতে পারেন তরবারি, গ্যালারি ভরা দর্শকের সামনে হতে পারেন গ্ল্যাডিয়েটর।

কিন্তু টিভি ক্যামেরা আর ঘরভর্তি সাংবাদিকদের সামনে একটুও সপ্রতিভ নন। অথচ সংবাদ সম্মেলন থেকে বেরিয়েই কথার খই ফুটল মুখে। একটু গলা নামিয়ে বলেও ফেললেন, ‘সবার সামনে এক কথা বলতে পারি না, বাইরে যত ইচ্ছে জিজ্ঞেস করেন। ’

তাতে ক্ষতি নেই। সংবাদ সম্মেলনের নায়ক হতে হবে না, মাঠের নায়ক হয়েই থাকুন।

ভবিষ্যৎ পথচলা যেন হয় তাঁর কথার মতোই, ‘এই ম্যাচ এখানেই শেষ। সামনে আরও ভালো করতে চাই!’

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।