আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অভিনয় একটা আটলান্টিক মহাসাগর: অনন্ত

এম এ জলিল অনন্ত, সংক্ষেপে অনন্ত জলিল। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের এ সময়ের আলোচিত নায়ক। ‘খোঁজ—দ্য সার্চ’ ছবির মধ্য দিয়ে দেশীয় চলচ্চিত্রে তাঁর অভিষেক ঘটে। প্রথম ছবি থেকেই নানাভাবে আলোচিত। গত রোজার ঈদে মুক্তি পায় অনন্ত অভিনীত ও পরিচালিত ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ ছবিটি।

এবারের ঈদেও ছবিটি বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে চলছে। অভিনয়ের বাইরে অনন্ত একজন সফল ব্যবসায়ী। সাভারের হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে সাড়ে ২৮ বিঘা জমির ওপর তৈরি করেছেন এজিআই গ্রুপ। এখানে এখন সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো শ্রমিক কাজ করেন। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অবদানের জন্য অনন্ত দুবার সিআইপি নির্বাচিত হয়েছেন।

গত রোববার দুপুরে অনন্ত তাঁর সাভারের হেমায়েতপুরে ফ্যাক্টরিতে মুখোমুখি হন প্রথম আলো ডটকমের সঙ্গে। আলাপকালে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে নিজের ভাবনা, ব্যবসা, পরিবারসহ নানা দিক নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন।

প্রথম আলো ডটকম: ঈদের দিন কীভাবে কাটে?
এম এ জলিল অনন্ত: সকালে ঈদের নামাজ শেষে কোরবানির প্রস্তুতি। কোরবানির সবকিছু সম্পন্ন করতে করতে সাধারণত দুপুর হয়ে যায়। তিনটি এতিমখানার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত ইনভলভমেন্ট।

আমি ঈদের দিন এতিমখানাগুলোতে যাই, এতিমদের খোঁজখবর নিই, মাংস পাঠাই, সেখানে সবার সাথে কিছুটা সময় পার করি। তারপর আমি ফ্যাক্টরিতে যাই, কারণ ফ্যাক্টরিতে সিকিউরিটি এবং আনসাররা ডিউটিতে থাকেন। আমি তাঁদের জন্য মাংস পাঠাই, তাঁদের খোঁজ-খবর নিই এবং বাকি সময়টা আমি আমার পরিবারের সাথে কাটাই। এভাবেই মূলত আমার ঈদের দিন কেটে যায়।

প্রথম আলো: ঈদে পাওয়া সবচেয়ে সেরা উপহার?
অনন্ত: ব্যক্তিগত উপহার বলতে আমার স্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া কোনো উপহার আমার কাছে সবচেয়ে সেরা।

আর সমষ্টিগত সেরা উপহার বলতে সব মানুষের ভালোবাসা। এখন অনেকেই আমার সাথে দেখা করতে আসেন, শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তাঁদের ভালোবাসা এবং আমি যখন এতিমখানায় যাই, তখন আমি তাদের মুখে হাসি দেখতে পাই, এটাই আমার বড় পাওয়া।

প্রথম আলো: গরুর হাটের অভিজ্ঞতা...
অনন্ত: সত্যি বলতে কী, আমার আসলে হাটে যাওয়া হয় না, নিজের কখনো হাটে গিয়ে গরুও কেনা হয় না। আমার অফিসের লোকজনই সবকিছু ব্যবস্থা করে, আর আমি মাংস বিতরণের সময় পাশে থাকি।

প্রথম আলো: বর্ষাকে এবার যে উপহার দিলেন...
অনন্ত: প্রিয়জনকে উপহার দিতে সবারই ভালো লাগে। আর আমার প্রিয়জন হচ্ছে বর্ষা, এটা আপনার সবাই জানে। বর্ষাকে এবারের ঈদের উপহারটা একটু ভিন্নভাবে দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে আমরা দুবাই গিয়েছিলাম। দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে বুলগারি ব্র্যান্ডের একটি ঘড়ি কিনে দিয়েছিলাম, যার মূল্য হচ্ছে ২২ হাজার ইউএস ডলার (১৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা।

প্রতি ডলার ৭৮ টাকা হিসাবে)। এ ছাড়াও বর্ষাকে তার পছন্দ অনুযায়ী শাড়ি, সেলোয়ার-কামিজ কিনে দিব।

প্রথম আলো: ‘মোস্ট ওয়েলকাম ২’ কি ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’কেও ছাড়িয়ে যাবে বলে আপনার ধারণা?
অনন্ত: ‘মোস্ট ওয়েলকাম ২’ ছবিটি নিঃস্বার্থ ভালোবাসাকে ছাড়িয়ে যাবে কি না, এটা আসলে দর্শকদের গ্রহণযোগ্যতার ওপর নির্ভর করবে। আমার সব সময়ের চেষ্টা দর্শকদের ডিফরেন্ট (ভিন্ন) কিছু উপহার দেওয়ার। আর আমি কোয়ালিটি নিয়ে কখনো কম্প্রোমাইজ (সমঝোতা) করি না।

‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’র সাথে ‘মোস্ট ওয়েলকাম ২’ ছবির নির্মাণে অনেক ভেরিয়েশন আছে। এখানে অ্যাকশন, রোমান্স, ইমোশন—সবকিছু টোটালি ডিফরেন্ট। ‘মোস্ট ওয়েলকাম ২’ তে দর্শকেরা সুপার স্লো মোশন গান পাবে, দুইটা থ্রিডি অ্যানিমেশন সং পাবে। আমি গানের শুটিং ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে করব। এই ছবির মাধ্যমে আমি বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে হাইলাইট করেছি এবং ছবিতে দেশের জন্য বিভিন্ন মেসেজ রয়েছে।

প্রথম আলো: অভিনেতা হিসেবে আরও ভালো কিছু দেওয়ার জন্য যা করছেন...
অনন্ত: অভিনয়, এটা একটা আটলান্টিক মহাসাগর। যেমন, আজ পর্যন্ত এটার গভীরতা কেউ পায়নি। এর গভীরতাটা খুঁজে পাওয়াটাও মুশকিল। আসলে আমি অভিনেতা হিসেবে ভালো কিছু দেওয়ার চেষ্টা সব সময় করি। কিন্তু তা আমার হয়ে ওঠে না, কারণ আমি একজন অভিনেতা হয়েও আমাকে আমার শুটিংয়ের সবকিছু দেখাশোনা করতে হয়।

শুটিং লোকেশন, স্ক্রিপ্ট, সিকোয়েন্স, থিম, ফরেন আর্টিস্ট সবকিছু আমাকেই দেখতে হয়। একজন অভিনেতা যখন শুটিংয়ে গিয়ে এই সবকিছু দেখাশোনা করে, ওকে করা, আবার শট দেওয়া, তখন আলটিমেটলি ভালো অভিনেতা হিসেবে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে শো করা যায় না। আপনারা হয়তো বলতে পারেন, আমার টিমে চলচ্চিত্রের অনেক মানুষ থাকার পরও আমি কেন এসব দেখি? কারণ হচ্ছে আমার চলচ্চিত্র অন্যান্য বাংলা চলচ্চিত্রের ধারার নয়। আর এই ডিফরেন্ট মুভি আমার দর্শকদের উপহার দিতেই আমার নিজের এত পরিশ্রম করতে হয়, যা দর্শকেরা জানেন না। কারণ তারা শুধু ক্যামেরার সামনের অনন্তকে দেখে।

আর তাই আমি ‘মোস্ট ওয়েলকাম ২’ ছবিটির পর আর কোনো ছবির পরিচালনা করব না। কারণ আমি যেমন একজন ডিরেক্টর হিসেবে আমার ছবির আর্টিস্টদের কাছ থেকে অভিনয় আদায় করে নিই, ঠিক তেমনি আমি এমন একজন ডিরেক্টর বেছে নেব যিনি আমার কাছ থেকে অভিনয় আদায় করে নিতে পারবেন।

প্রথম আলো: অবসরে কী করেন? আপনার শখ কী কী?
অনন্ত: অবসরে আমি আমার পরিবারকে সময় দিই। মুভি দেখি আর তা অবশ্যই হলিউডের অ্যাকশন মুভিগুলো। কারণ এইসব মুভি থেকেও আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।

অবসরে পিস টিভিতে ইসলামিক প্রোগ্রামগুলোও দেখি। এক কথায় বলতে গেলে, অবসর সময়টাকেও শিক্ষার কাজে লাগাই।

প্রথম আলো: সফল ব্যবসায়ী হওয়ার গোপন রহস্য কী?
অনন্ত: শুধু ব্যবসায়ী হিসেবে নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতার গোপন রহস্য হলো ওয়েল ডিসিপ্লিন, ডেডিকেশন, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কন্ট্রোল, অনেস্টি, স্ট্রাগল আর পেশেন্স। এ গুণগুলোই হলো সফলতার মূল চাবিকাঠি, যা আমি আমার জীবনে প্রতিটি মুহূর্তে মেনে চলি।

প্রথম আলো: একদিকে ব্যবসা অন্যদিকে সিনেমা—সবকিছু সামলান কী করে?
অনন্ত: আমি কখনো টাইম ওয়েস্ট করি না।

ওয়েল ডিসিপ্লিনড ওয়েতে চলি। সকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘুম থেকে উঠি। চেষ্টা করি সব সময় নামাজ আদায় করতে, তারপর জিম (ব্যায়াম) করি। নাশতা সেরে অফিসে আসি, অফিসের সব কাজকর্মের ফাঁকে শুটিংয়ের কাজগুলো করি। মিডিয়াতে সময় দেই।

শুটিং থাকলে শুটিংয়ে যাই। কখনো রাত জাগি না আর সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠি না। তাই সবকিছু সম্ভব। আল্লাহ আমাকে ক্ষমতা দিয়েছেন আর আমার একান্ত চেষ্টাতেই সবকিছু সম্ভব।

প্রথম আলো: আপনি পুরোপুরি কমেডি ধাঁচের কোনো সিনেমা বানাবেন কখনো?
অনন্ত: না, আমি কমেডি কোনো সিনেমা বানাতে চাই না।

প্রতিটি আর্টিস্টের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। কেউ কমেডিয়ান হিরো, কেউ রোমান্টিক হিরো, কেউ অ্যাকশন হিরো। সবাই আমাকে অ্যাকশন হিরো হিসেবে গ্রহণ করেছে। আমার বৈশিষ্ট্য হলো অ্যাকশন বেজড। তবে একটা ছবিতে রোমান্স থাকবে, ফান থাকবে, অ্যাকশন থাকবে—এ সবকিছু মিলিয়েই একটি পরিপূর্ণ ছবি।

প্রথম আলো: আপনার দেখা সেরা তিনটি সিনেমা কী কী?
অনন্ত: জিরো জিরো সেভেন সিরিজের এবং টম ক্রুজের প্রায় সবগুলো ছবি ভালো লাগে, তবে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো ‘পার্ল হারবার’, ‘মিশন ইম্পসিবল ফোর’ ও ‘ভির জারা’।

প্রথম আলো: আপনার সিনেমায় অনেক জায়গায় অ্যানিমেশন ব্যবহূত হয়েছে। ভবিষ্যতে পুরোপুরি অ্যানিমেশন সিনেমা বানানোর জন্য উদ্যোগ নেবেন কি? আমাদের দেশে তো অ্যানিমেশন সিনেমা হয় না...
অনন্ত: না। অ্যানিমেটেড ছবিগুলোর মূল দর্শক হলো শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম। আর একটা পুরোপুরি অ্যানিমেশন ছবি নির্মাণে হলিউডের অনেক বাজেট থাকে, যা সত্যিই অনেক ব্যয়বহুল।

আমি পুরোপুরি অ্যানিমেশন ছবি নির্মাণ করে হাসির পাত্র হতে চাই না। তাই বাস্তবতার সাথে মিল রেখে ছবির যেখানে অ্যানিমেশন প্রয়োজন, সেখানে ব্যবহার করব।

প্রথম আলো: ‘অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্তর কাজ’—এই ডায়ালগ এখন মানুষের মুখে মুখে। আপনি জীবনে কোনো অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন বলে মনে করেন?
অনন্ত: প্রথমে আমি কৃতজ্ঞ আমার সব দর্শকের কাছে, কারণ তারা আমার প্রথম টেলিভিশন বিজ্ঞাপনকে গ্রহণ করেছে এবং এই বিজ্ঞাপনের কথা সবার মুখে মুখে। আসলে আমার কাছে অসম্ভব বলে কিছু নেই।

উদাহরণ হিসেবে বলি, আমাদের বাংলা চলচ্চিত্র যখন খুবই খারাপ অবস্থানে, সব দর্শক যখন বাংলা চলচ্চিত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, ঠিক সেই সময় আমার প্রযোজিত ও অভিনীত ‘খোঁজ—দ্য সার্চ’ চলচ্চিত্রটি সব দর্শককে আবার হলমুখী করেছে। পরবর্তী সময় একে একে ‘হূদয় ভাঙা ঢেউ’, ‘দ্য স্পিড’, ‘মোস্ট ওয়েলকাম’, ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’—যা সব দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছে। ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ ছবিটির মাধ্যমে আমাদের বাংলা চলচ্চিত্র রপ্তানির দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এ সবকিছু কি আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের অসম্ভবকে সম্ভব করা নয়?

প্রথম আলো: সত্যিকারের জেমস বন্ড হলে প্রথমেই কী করতেন?
অনন্ত: সত্যিকারের জেমস বন্ড হলে প্রথমে আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করব। তারপর আমি ফ্রিডমলি ছবি নির্মাণ করব।

কারণ জেমস বন্ড মূলত একটি স্পাই বা গোয়েন্দাভিত্তিক চরিত্র, আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের কাজ বা ছবি নির্মাণ করা যায় না। কারণ আপনারা জানেন যে জেমস বন্ডের প্রতিটি ছবি কাহিনির পরিপ্রেক্ষিতে একটি দেশ এবং অন্যান্য দেশ যেমন রাশিয়া, ইংল্যান্ড এসব দেশের সাথে বিরোধ সম্পর্ক দেখানো হয়, যা আমাদের দেশে করা সম্ভব নয়। এ ধরনের ছবি নির্মাণের পর আমাদের দেশে সেন্সর পাওয়া যাবে না। সত্যিকারের জেমস বন্ড হলে, আমি তখন এ ধরনের ইন্টারন্যাশনাল গোয়েন্দাভিত্তিক ছবিগুলো ফ্রিডমলি নির্মাণ করব।

প্রথম আলো: কোন কাজটাকে অসম্ভব বলে মনে হয়?
অনন্ত: আমার কাছে অসম্ভব বলে কিছু নেই।

চেষ্টা, অধ্যবসায়, সততা, নিষ্ঠা থাকলে সব অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ
অনন্ত: প্রথম আলো পরিবার এবং দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা ‘প্রথম আলো’র পাঠকসহ দেশের সব মানুষকেও ধন্যবাদ।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।