একপাতা টিপ কিনতে ইচ্ছা হল। লাল! বৌ নামক যে প্রাণীটি আছে ঘরে তার প্রতি যত্ন নেওয়ার সময় হয়না সব সময়! আটপৌরে জীবনে বৌ-কে ভালবাসা, আদর বা স্নেহ করা একটা বাড়াবাড়ি! বাচ্চা-কাচ্চা হয়েছে। তাদের মুখে দুটো ভাত তুলে দিয়ে নিজেদের পেটে দানা দান করতে গেলে বৌ-কে আদর করার সময় কোথায়? রাতে ঐ যা একটু পাশবিকতা! এটাও করতে হয় বলে করা। মন টানেনা কিন্তু বেয়াড়া শরীর তেতে ওঠে। তখনি যা দলন পেষন করা হয়।
এটাকে কি আদর বলে? এই আদরের কোন শিক্ষা নেই, শিল্প নেই। স্বাভাবিক ভাবেই তা দুটো টিনের কলসির মাঝে ঠোকাঠুকি। যেখানে বৌটি নির্জীব জড় পদার্থের মত। কি পায় তা না বুঝেই নিয়ম পালন করে যায়। পতি সঙ্গদান! ফলাফল, বাচ্চা।
নাট-বোল্টদের সংখ্যা বছরে বছরে বাড়ছে!
বিয়ে হয়েছে বছর সাত হবে। এই সাত বছরে বৌ-কে নিয়ে কোথাও ঘোরা হয়নি। যাওয়ার মধ্যে শুধু বৌ যায় তার বাপের বাড়ি। কোথায়ইবা ঘুরবে এছাড়া? টাকা কোথায়? দু একটা আত্মীয়-স্বজন ব্যতীত অন্য কোথাও ঘুরতে যাওয়া বিলাসীতা।
কিছু কিনে দেওয়ার মধ্যে শুধু ধরা যায় মাসে মাসে এক বোতল নারকেল তেল।
ঈদ বা অনুষ্ঠানে পরে যাবার মত শাড়ি ঐ বিয়ের সময় দেওয়া শাড়িটাই। তাছাড়া বছরে দুটো পরার কাপড়, সায়া-ব্লাউস দেওয়া হয় মাত্র। আলতা, স্নো, পাউডার এসব দিতে ইচ্ছা হত একসময়। যদিও মায়ের ভয়ে দেওয়া হয়নি। আর এখনতো পুরোনো বৌ।
তাই অপ্রয়োজনিয়!
হা হা। আজ হাট থেকে বাড়ি ফেরার পথে মনিহারির দোকান থেকে এই টিপের পাতাটা কেনার শখ হল। আজবই বলা চলে। মেয়েটার বয়স তিন বছর হয়ে গেল। কোথায় তাকে কিনে দেবে, তা নয়, বৌ এর জন্য! অন্য পুরুষে শুনলে ব্যাপারটা সম্মান হানীকর হবে!
কোনদিন সিনেমা দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়নি।
ভাল কোন হোটেলে খাওয়া হয়নি। কি করতে থাকে বৌটি বছরের পর বছর, কিসের আশায়? দুবেলা ভাত আর বছরে দুটো মোটা কাপড়ের জন্য? এতই ভাত কাপড়ের অভাব? বোঝা মুশকিল।
বাস্তব বড় কঠিন। দিনের পর দিন সুখহীন, একঘেয়ে জীবন যাপন করতে তার বাঁধে না, দুবেলা খাবার জন্য! উপরি পাওনা সন্তান ও সতি-স্বাধ্বী রমনির তকমা। এছাড়া গতি কি? পুঁথিগত বিদ্যাও নেই একদম।
তাই, স্বামির সেবা কর। নিজেকে নিজের বলে ভেবো না। কিছু প্রত্যাশা করো না। কিছু চাওয়া যদিও থাকে, স্বামির কাছে প্রত্যাশার অধিকাংশই মাঠে মারা যায়। তখন নিজেকে নিজের বলে ভাবতেও মনে হয় বাঁধে!
এসব লিখতে যাওয়া বা বলা ঠিক না।
স্বামি-স্ত্রির সম্পর্ক তাদের একান্ত দাম্পত্য ব্যাপার। আমি-তুমি কে হে কিছু বলার?
লালটিপের পাতাটা অবশ্য কেনা হল। মাত্র দুটাকা। বিড়ি খেতেও এরচেয়ে ঢের বেশি টাকা খরচ হয় দিনে। কিন্তু এই সাত বছরে নিজ থেকে বৌ এর জন্য এই দুটাকার টিপের পাতা! ‘প্রিয়তমা স্ত্রি’ কথাটার মর্যাদা রক্ষার্থে কি উত্তম উপহার!
টিপতো কিনলো কিন্তু বৌ পরবে কবে? রান্নাঘরের তেল-কালি লাগা আটপৌরে কাপড়টা পরে এই টিপ পরলে কি মানাবে? তাহলে কি বিয়ের সেই শাড়িটা পরতে বলবে? কোন আচার-অনুষ্ঠানতো নেই।
তাহলে ওটাও পরা হচ্ছেনা। দুটো টাকাই নষ্ট হল তাহলে?
মেয়েটা চুলের ফিতে কিনে আনতে বলেছে। তার এখন সাজু-গুজুর সময়। কিন্তু মেয়ের মায়ের কি সময় শেষ হয়ে গেছে এই চব্বিশ বছর বয়সে !?
ধুর...টিপের পাতাটি বৌ-কে নয় মেয়েকেই দিয়ে দেবে। অন্যথা বৌ নিজেই বলবে তার ভীমরতি হয়েছে।
যে মানুষটা গত সাতটি বছর বাচ্চা-কাচ্চা ছাড়া আর কিছুই উপহার পায়নি স্বামির কাছ থেকে, আজ সামান্য একপাতা টিপও সে মেনে নিতে পারবেনা। তার না পাওয়াই স্বাভাবিকতা হয়ে গেছে!
এটাই জীবন। জীবন যেখানে জীবনের জন্য কালক্ষেপণ করে জীবন জন্ম দেওয়ার জন্য। সুখের সামান্য জিনিসও তাই অপ্রত্যাশিত।
-শাশ্বত
০৩-০৬-১৩
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।