আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পর্ব-৬ - যে কারণে মানুষ উদ্ভট হাদীসগুলো বিশ্বাস করেঃ শরীয়া আইন এর অনুপযোগিতা

ভাল কথা বলুন

বেশ কিছু হাদীস পড়ার পর অনেকের মনেই মাঝে মাঝে হাদীসগুলোর বিষয়বস্তু নিয়ে অনেক প্রশ্ন জেগে উঠে, তারপর নিজেকে এই বলে প্রবোধ দেয় যে আমার তো এত জ্ঞান নেই তাই আমি নিশ্চয়ই এর সঠিক ব্যাখ্যা বুঝতে পারছিনা। এই প্রবোধ দেয়ার ব্যাপারটা আসলে যুগে যুগে আলেমদের শিখিয়ে দেয়া কৌশল মাত্র। যখন সবাই না বুঝে বা কম বুঝে দৈনন্দিন জীবনে হাদীসের প্রায়গিক ব্যাবহার করে যাচ্ছে তখন কেউ এসে কিচ্ছু বলেনা। কিন্তু কোন হাদীসের ব্যবহার নিয়ে কারো মনে প্রশ্ন উঁকি দিলেই চারপাশ থেকে লোক জড়ো হয়ে নানা রকম উপদেশ দেয়া শুরু করবে। আলেমরা বলবে- হাদীস শাস্ত্র, কোরআন, ইসলামের ইতিহাস, ফেকাহ, তর্ক শাস্ত্র, দর্শন, আরবী ভাষা ও শব্দ তত্ত্ব ইত্যাদি সহ আরো নানান বিষয়ের উপর দখল না থাকলে হাদীস নিয়ে সমালোচনা করা যায়না।

হাদীসের বক্তব্য ভালভাবে বুঝতে হলে সমগ্র হাদীস শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে, কারণ একই বিষয়ের উপর একাধিক হাদীস থাকতে পারে যাথেকে মাত্র একটি হাদীস পড়লে সেই বিষয়ের উপর সম্পুর্ণ ধারণা না পেয়ে শুধু আংশিক বা বিকৃত ধারণা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কোন হাদীস বুঝতে হলে হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ থেকে সেই হাদীসটির ব্যাখ্যা পড়ে হাদীসটি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পেতে হয়। ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলোর আকার আবার এতটাই বিশাল যে শুমাত্র বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাথ-আল-বারী রাখলে একটি আলমীরাতে অন্য বই এর স্থান সংকুলান হবেনা। কিন্তু আসল সত্য হচ্ছে আলেমরা শুধুমাত্র মানুষের মনে আসা প্রশ্নকে দমিয়ে রাখতেই এই কাজ করেন। সারা দুনিয়ার ৬ বিলিয়ন মানুষের মাঝে ১ % মানুষেরও কি সাধ্য আছে যে এত এত কঠিন বিষয় আয়ত্ব করে তারা ধর্ম পালন করবে? তথাপী সমগ্র হাদীস শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান থাকলেও বা হাদীস এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ পড়লেও হাদীস এর বক্তব্যের ধোঁয়াশা থেকে বের হওয়া যায়না।

বরং এত এত কন্ট্রাডিকশন, প্রশ্ন এসে ভীড় করে যে গোঁজামিল না দিয়ে পার পাওয়া অসম্ভব। এর প্রমাণ একটু পরেই পাবেন। তার আগে একজন নামকরা ও বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার এর সাথে পরিচিত হয়ে নেয়া যাক। শায়খ আব্দআল হাকিম মুরাদ ড. আব্দআল হাকিম মুরাদ একজন ব্রিটিশ ইসলামিক স্কলার এবং শিক্ষক। তিনি বহুল পরিচিত ''সুন্নাহ প্রোজেক্ট'' এর ডিরেক্টর যে প্রোজেক্ট থেকে প্রধান এবং সর্বপ্রথম সুন্নি হাদীস সংগ্রহগুলোর এরাবিক এডিশন পাবলিশ করা হয়েছে।

তিনি বর্তমানে ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ এ লেকচার দেন। তিনি মুসলিম একাডেমি ট্রাস্ট (লন্ডন) সহ আরও বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট, ডিরেক্টর, সেক্রেটারী ইত্যাদি পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি উলফসন কলেজ এর থিওলজি বিভাগের ডিরেক্টর অফ স্টাডিজ পদে ছিলেন। ইসলামিক বিষয়ের উপর তার অনেক আর্টিকেল, পাবলিকেশন, অনুবাদ ও বই আছে। তার শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ ১) ক্যাম্ব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবী বিষয়ে ডাবল ফার্স্ট সহ গ্র্যাজুয়েশন।

২) মিশরের বিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ''ট্র্যাডিশনাল ইসলামিক সায়েন্স'' বিষয়ে ৩ বছর অধ্যয়ণ। ৩) জেদ্দায় ৩ বছর ইসলাম বিষয়ক বিভিন্ন কাজকর্ম ৪) লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ বছর তুর্কি ও পারস্য ভাষা অধ্যয়ণ। ৫) অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক বিষয়ে পি.এইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন। শায়খ আব্দআল হাকিম মুরাদের লিখা একটি বই এর ভূমিকা থেকে হাদীসের ব্যাপারে স্কলারদের প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে বেশ পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। বইটির নামঃ Introduction to the translation of Ibn Hajar al-Asqalani's commentary on selected hadith বইটি কেউ কিনতে না চাইলে Click This Link এই লিঙ্ক থেকে বইটির ভূমিকা অংশটি পিডিএফ আকারে পড়া যাবে।

ইংরেজী পুরোটা রেখে সেই সাথে আমি এটির বাংলায় অনুবাদ করে দিচ্ছি। আর বোল্ড হরফে নিজের মন্তব্য দিচ্ছি। The booklet intends to introduce non-Arabic speakers to one of the most seminal genres of Muslim religious literature, namely, the hadith commentary. It is surprising that no serious translations at present exist from this voluminous and influential body of writing, given that there are few hadith which can be understood adequately without reference to the often complex debates which have taken place concerning them between the scholars. এই পুস্তিকাটির উদ্দেশ্য আরবী ভাষাজ্ঞানহীন পাঠকদের ''হাদীস ব্যাখ্যাগ্রন্থ'' নামক মুসলিম ধর্মীয় সাহিত্যের একটি প্রাথমিক প্রকরণের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। এটি আশ্চর্য্যজনক যে এমন সব বৃহদায়তন এবং প্রভাব বিস্তারকারী গ্রন্থ সমূহের কোন ঐকান্তিক অনুবাদ নেই অথচ খুব কম হাদীসই আছে যেগুলো স্কলারদের মাঝে প্রায়শঃই সংঘটিত জটিল সব বিতর্কের সাথে সম্পর্কস্থাপন ছাড়া যথার্থ ভাবে বুঝা যায়। এর মানে হাদীস এর অর্থ নিয়ে স্কলারদের মাঝেই জটিল বিতর্ক বা ভিন্নমত আছে।

These discussions have included investigations of the precise linguistic and lexicological meaning of the Prophetic speech, studies of the isnad, debates over the circumstances surrounding the genesis of each hadith (asbab al-wurud), and issues of abrogation by stronger or later hadiths or by Qur’anic texts. Sufyan ibn ‘Uyayna, the great early hadith scholar, used to remark: al-hadith madilla illa li’l-‘ulama’: ‘the hadith are a pitfall, except for the scholars.’ For this reason no Muslim scholar of repute uses a hadith before checking the commentaries to ascertain its precise meaning, context, and application. এইসব আলোচনার মাঝে আছে নবীর বানীর ভাষাগত ও শব্দগত সঠিক অর্থের অনুসন্ধান, সনদের পরীক্ষা, প্রতিটি হাদীসের সূচনালগ্নের পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্ক, এবং বেশী শক্তিশালী বা পরবর্তী হাদীস অথবা কোরানের বানী দ্বারা হাদীস রদের ঘটনা। মহান হাদীস স্কলার সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা বলতেন, ''স্কলার ছাড়া বাকিদের জন্য আহাদীস হচ্ছে একটি ফাঁদ''। একারণে কোন খ্যাতনামা মুসলিম স্কলারই হাদীসের ব্যাখ্যা যাচাই না করে সেটির সঠিক অর্থ, অনুষঙ্গ এবং প্রায়োগিক ব্যবহার নিরূপণ করেন না। হাদীস পড়া বা ফাঁদে পা দেয়ার আগে একবার ভেবে দেখবেন কি? The importance of this literature may be gauged by the fact that at least seventy full commentaries have been written on Imam al-Bukhari’s great Sahih. The best-known of these include al-Kawakib al-Darari by Imam Shams al-Din al-Kirmani (d. AH 786), ‘Umdat al-Qari by Imam Badr al-Din al-‘Ayni (d.855), and the Irshad al-Sari by Imam Ahmad ibn Muhammad al-Qastallani (d.923). এই সাহিত্যের গুরুত্ব যে ব্যাপারটি দ্বারা মাপা যায় তা হচ্ছে ইমাম বুখারীর মহান সহিহ হাদীস গ্রন্থটির উপর অন্তত ৭০ টি ব্যাখ্যাগ্রন্থ লিখিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সুপরিচিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে ইমাম শামস আল-দ্বীন আল-কিরমানি (মৃত্য ৭৮৬ হিজরী) এর আল-কাওয়াকিব আল-দারারি, ইমাম বদর আল-দ্বীন আল-আইনি (মৃত্য ৮৫৫) এর উমদাত আল-ক্বারী, এবং ইমাম আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ আল-ক্বাস্তাল্লানি (মৃত্যু ৯২৩) এর ইরশাদ আল-সারি।

স্কলাররা হাদীসের অর্থের ব্যাপারে ধোঁয়াশা কাটিয়ে উঠতে পারেননি, তাদের মাঝে মতপার্থক্য এবং বিতর্ক চলছিল, তাই শুধু ইমাম বুখারীর সংকলিত হাদীসগুলোর উপরেই ৭০ টি ভিন্ন ব্যাখ্যাগ্রন্থ লিখিত হয়েছে। একই হাদীসের ব্যাখ্যা একেকজন একেক রকম ভাবে দিয়েছেন, তারা সকলেই আবার হাদীসের স্কলার, হাদীসের ব্যাখ্যা নিয়ে আবার তাদের মাঝে মতপার্থক্যও আছে। However the most celebrated is without question the magnificent Fath al-Bari (‘Victory of the Creator’) by Imam Ibn Hajar al-‘Asqalani, a work which was the crown both of its genre and of the Imam’s academic career. It is appreciated by the ulema for the doctrinal soundness of its author, for its complete coverage of Bukhari’s material, its mastery of the relevant Arabic sciences, the wisdom it shows in drawing lessons (fawa’id) from the hadiths it expounds, and its skill in resolving complex disputes over variant readings. যাই হোক, এগুলোর মাঝে প্রশ্নাতীতভাবে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হচ্ছে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী লিখিত চমৎকার গ্রন্থ ''ফাথ আল বারী'', যা কিনা এই ধরণের অন্যান্য গ্রন্থ এবং ইমামদের পান্ডিত্য যাত্রার মুকুট ছিল। আলেম সমাজ কর্তৃক গ্রন্থটি সমাদৃত হয়েছে গ্রন্থটির লেখকের যোগ্যতা, বুখারীর সম্পূর্ণ সংকলণের উপর গ্রন্থটির ব্যাপ্তি , প্রাসঙ্গিক এরাবিক সায়েন্স এর উপর গ্রন্থটির আধিপত্য, গ্রন্থে ব্যাখ্যাকৃত হাদীসগুলো থেকে গ্রন্থটির শিক্ষা বের করে আনার মত বিজ্ঞতা, এবং ভিন্ন ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলোর মাঝে বিদ্যমান জটিল বিতর্ক নিরসনে গ্রন্থটির দক্ষতার কারণে। তার মানে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী সেই ব্যক্তি যিনি বুখারী শরীফ নিয়ে স্কলারদের মাঝে বিদ্যমান জটিল সব বিতর্কের সমাধান করেছেন।

কিন্তু ইমাম ইবনে হাজারের জন্ম হয়েছে ইমাম বুখারীর মৃত্যুর ৫৭৮ বছর পর। এই দীর্ঘ ৫৭৮ বছর সকলেই তাহলে বুখারী শরীফের হাদীসের অর্থ নিয়ে অন্ধকারে ছিলেন? আর ইমাম আসকালানী নিজেও তো বিভ্রান্তির বাইরে ছিলেন না। মুতা বিবাহ নিয়েই উনার বিভ্রান্তির একটি উদাহরণ দেয়া যাক। মুসলিম শরীফের হাদীস আছে হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন যে নবী (সঃ) নিজেই খায়বার যুদ্ধে মুতা বিবাহের নিয়ম রদ করে গিয়েছেন। মুসলিম শরীফের অন্য হাদীসে আছে (খায়বার যুদ্ধে নয় বরং) মক্কা বিজয়ের সময় নবী মুতা বিবাহের নিয়ম বাতিল করেন।

এছাড়া আরও দশ বারোটা হাদীস গ্রন্থে দশ বারো রকমের হাদীস পাওয়া যায়, একজায়গায় বলে যে কোরানে বিবাহ বিচ্ছেদের আয়াতের পর মুতা বাতিল হয়, আরেক জায়গায় বলে ইদ্দতের আয়াতের পর মুতা বাতিল হয়, আরেক জায়গায় বলে সম্পত্তি বন্টনের আয়াতের পর মুতা বাতিল হয়। তো ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী এই সবের ধার ধারেননি, তিনি একটি হাসান হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন মুতা বাতিল হয় উমরাতুল কাদহার সময়, এই হাদীসের সপক্ষে আরেকটি হাদীস দেখিয়ে তিনি হাসান হাদীসকে সহিহ মর্যাদা দিয়েছেন। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে তালখিস আল হাবির গ্রন্থে এই আসকালানী সাহেবই আরও দুটো হাসান হাদীসের বরাতে বলেছেন যে মুতা বাতিল হয়েছিল হুনাইন এর যুদ্ধে। কি পরিমান বিভ্রান্ত হলে তিনি মুসলিম শরীফের হাদীস বাদ দিয়ে দূর্বল হাদীস এর বরাতে একেক বার একেক কথা বলেন? আবু দাউদ এবং ইবনে মাজাহ, সিহাহ সিত্তার এই দুই হাদীস গ্রন্থে আবার বলা আছে বিদায় হজ্বের সময়ও মুতা বিবাহ চালু ছিল, কিন্তু সেদিনই নবী এটা নিষেধ করেন। অথচ কত কত সহিহ হাদীসে কত আগেই মুতা বিবাহকে চীরতরে নিষিদ্ধ করে দেয়া আছে।

আবার মুসলিম শরীফের হাদীস আছে যে ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর মত সাহাবী বলেছেন যে মুতা বিবাহ বাতিল হয়নাই। এইনিয়ে সাহাবাদের মাঝে বিরাট ঝগড়াও হয়েছে। এইসব কন্ট্রাডিকশনের কোন অভাব নাই হাদীস গ্রন্থগুলোতে। For Bukhari’s text has not come down to us in a single uniform version, but exists in several ‘narrations’ (riwayat), of which the version handed down by al-Kushmayhani (d.389) on the authority of Bukhari’s pupil al-Firabri is the one most frequently accepted by the ulema. This is, for example, why the new and definitive edition of the Sahih, through the authorized narration of the best-known hadith scholar of recent times, Shaykh al-Hadith ‘Abdallah ibn al-Siddiq al-Ghimari, uses the Firabri version (for this text see http://www.thesaurus-islamicus.li). Ibn Hajar frequently uses the Kushmayhani variant as his standard text, but gives his reasons, often in complex detail, for preferring other readings where these seem to have particular merit. In doing this he makes it clear that he is authorized, through the ijaza-system, for all the riwayat he cites. বুখারীর হাদীস গ্রন্থটি আমাদের কাছে একটি একক অভিন্ন সংস্করণ হিসেবে আসেনি, বরং এর বিভিন্ন বর্ণনা আছে, এদের মাঝে বুখারীর ছাত্র আল-ফিরাব্রি হয়ে আল-খুশমায়হানি হতে প্রাপ্ত বর্ণনাটিই আলেমদের নিকট সবচেয়ে বেশি গৃহীত। যেমন, বর্তমান সময়ের সবচেয়ে সুপরিচিত হাদীস স্কলার আব্দুল্লাহ ইবনে আল সিদ্দীক আল ঘিমারী বুখারী শরীফের নতুন এবং নির্দিষ্ট সংস্করণ বের করার জন্য আল-ফিরাব্রির সংস্করণটি ব্যবহার করেছেন।

ইবনে হাজার বারংবার খুশমায়হানির সংস্করণটি তার স্ট্যান্ডার্ড ট্যাক্সট হিসেবে ব্যবহার করেছেন, কিন্তু অন্যান্য সংস্করণও কিছু নির্দিষ্ট গুণের কারণে মাঝে মাঝে ব্যবহার করেছেন আর তার কারণ অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে জানিয়েছেন। এই কাজ করার জন্য তিনি এই ব্যাপারটি পরিষ্কার করেছেন যে এভাবে হাদীস বর্ণনার জন্য তিনি ইজাজা পদ্ধতির মাধ্যমে অনুমোদন প্রাপ্ত। এই আশ্চর্য্যজনক ব্যাপারটি নিয়ে এখন আর নতুন করে খুব বেশী কিছু বলার নেই। আগের পর্বে এ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। প্রশ্ন শুধু এটুকুই যে একটা মাত্র বুখারী শরীফের এতগুলো ভার্সন থাকার পরও বুখারী শরীফকে অবিকৃত ভাবা হয় কিভাবে? ইমাম বুখারীর নিজের মূল কপি তো দূরের কথা তার শত শত বছর পরের ছাত্রেদের মূল কপি গুলোরই কোন অস্তিত্ব নেই, তার পরেও বুখারীর হাদীসের এত গুরুত্ব? যাই হোক এতক্ষণের আলোচনায় এ কথা স্পষ্ট বুঝা যায় যে হাদীস শাস্ত্রে পান্ডিত্য অর্জন করে বা হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ পড়ে হাদীস নিয়ে মনে উত্থিত প্রশ্নের উত্তর তো পাওয়া যাবেইনা বরং সন্দেহ আরও ঘনীভূত হবে।

আর মুখে বললেই তো কেউ দুই দিনের মধ্যে হাদীস শাস্ত্রে পান্ডিত্য অর্জন করে ফেলতে পারবেনা, এর জন্য বহু বছরের পড়াশুনা প্রয়োজন, তাই আলেমরা নিশ্চিন্তে হাদীসের পান্ডিত্যের দোহাই দিয়ে যুগ যুগ ধরে হাদীস নিয়ে মানুষের মনে উদয় হওয়া প্রশ্ন ধামাচাপা দিয়ে রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। তবে আলেমদের এই শঠতার সুদিন বুঝি ফুরিয়ে এল। কারণ তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে কিছু খুঁজতে হলে কাউকে বিশাল বড় পন্ডিত হতে হয়না। কম্পিউটার আর ইন্টারনেট এর বদান্যতায় একজন সাধারণ মানুষই অল্প সময়ে সার্চ করে প্রাসঙ্গিক সমস্ত হাদীস আর কোরানের আয়াত বের করে ফেলতে পারে। আর কারো হাতের কাছেই যখন একটি বিষয় নিয়ে সমস্ত তথ্য থাকে তখন সবগুলো তথ্য মিলিয়ে সেই বিষয়টি বুঝতে কারোরই কোন অসুবিধা হবার কথা না।

অতএব ''আমি হাদীস শাস্ত্রে পন্ডিত নই তাই হাদীস বুঝা আমার কাজ নয়'' ইসলামে এমন অবান্তর ধারণা করার কোনই যৌক্তিকতা নেই। পবিত্র কোরানেই বলা আছে এই কোরান সহজ, সরল ও প্রাঞ্জল। মানুষের বুঝার জন্য কোরানকে সহজ করে নাজিল করা হয়েছে। শুধুমাত্র আলেমরাই দাবী করেন যে কোরান অনেক কঠিন, হাদীস হচ্ছে কোরানের ব্যাখ্যা আর হাদীস ছাড়া কোরান বুঝা সম্ভব না। আবার হাদীস নিয়ে প্রশ্ন উঠলে আলেমদের কথায় হাদীসও অনেক কঠিন হয়ে যায়, আর হাদীসের ব্যাখ্যা ছাড়া হাদীস বুঝা অসম্ভব হয়ে যায়।

তবে যাই হোক মানুষ যদি এসব ব্যাপারে সচেতন হয় তখন তাদের এমন সচেতনতার পর কি আলেমরা থেমে যাবে? না, নিজেদের ক্যারিয়ারের স্বার্থেই তারা থামবেনা। এখনই যারা আলেমদের এসব ধোঁকায় না পড়ে হাদীস অস্বীকার করতে চায় তাদের তখন হাদীস বিজ্ঞান আর ইসনাদ এর মাহাত্ত্ব বুঝানো হয়। ইসনাদের ব্যাবহারে হাদীস বিজ্ঞান নাকি এতটাই নিখুঁত যে কোন জাল হাদীসের পক্ষে এখন আর নিজেকে লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। পরবর্তী পর্বে এই হাদীস বিজ্ঞান ও ইসনাদ এবং তাদের ত্রুটি নিয়ে আলোচনা করা হবে। চলবে


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।