আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দৌড়া, বাঘ আইলো!

মাঝে মাঝে বৃষ্টি দেখে হাত বাড়ানোর ইচ্ছে জাগে... ভেতর ভেতর যাই পুড়ে যাই, কেউ জানেনা আমার আগে...

১. বাংলাদেশ তখনও ওয়ানডে স্ট্যাটাসই পায় নি। চার বছর পরপর অনিয়মিতভাবে কখনো সখনো এশিয়া কাপ খেলার সুযোগ পায়। যাকে বলে কালেভদ্রে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সবেধন নীলমণি সুযোগ! এছাড়া জাতীয় দল আন্তর্জাতিক না হলেও আন্তর্জাতিক ফ্লেভারের ক্রিকেট বলতে গেলে যা খেলে, তা হোল, এমসিসি (মেরিলিবন ক্রিকেট ক্লাব)'র সাথে কিছু ম্যাচ, কিংবা ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলংকার এ দলের সাথে বাংলাদেশের জাতীয় দলের খেলা। সেইসব ম্যাচে বাংলাদেশ গোহারা হারে। তারপরও বুলবুল বা আকরাম যদি ফিফটি মারে, আমরা রেডিওতে শুনে শুনে লাফাই।

শান্ত বা মনি উইকেট পেলে কেমন শিরশিরে অনুভূতি হয়। বুকের ভেতর ছলাত ছলাত শব্দ হয়। সেই ছলাত ছলাত শব্দের ভেতর 'ভালবাসি, বাংলাদেশ!' ২. তখনো টেলিভিশনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা বলতে গেলে দেখাই যায় না। আমরা তখন ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকার খেলা দেখে ভাবি, আচ্ছা, বাংলাদেশের খেলা টিভিতে দেখালে রানের স্কোর লেখাটা যেখানে থাকে, সেখানে বাংলাদেশকে সংক্ষেপে কি লেখা হবে? শ্রীলংকাকে লেখে SL, পাকিস্তানকে লেখে PAK, ভারতকে লেখে IND, তাহলে বাংলাদেশের খেলা দেখালে কি লেখা থাকবে? BD? BDESH? BANG? BAN? BDSH? এই চিন্তায় আমরা অস্থির। সেবার এশিয়া কাপের খেলা দেখাচ্ছে টিভিতে।

ব্যাট করছে বাংলাদেশ। টিভি স্ক্রিনের উপরের দিকে ডান পাশে মাত্র তিনটি অক্ষর লেখা BAN!! মুহূর্তে ওই তিনটি শব্দ যেন বুকের ভিতর প্রবল শক্তিতে ঢিল ছুড়ল। গোটা বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো অদ্ভুত উচ্ছ্বাসে। সেই উচ্ছ্বাস জুড়ে, 'ভালবাসি, বাংলাদেশ!' ৩. ওয়াসিম আকরাম, চামিন্দা ভাস কিংবা জাভাগাল শ্রীনাথরা গুটিগুটি পায়ে দৌড়ে এসে আগুনের গোলা ছুড়ছেন। সেই গোলা সাপের মত হিসহিস করে বেড়িয়ে যাচ্ছে আতাহার আলী, আকরাম, নান্নু, বুলবুলদের গা ঘেঁষে।

কখনো আচমকা ছোবল মেরে যাচ্ছে স্ট্যাম্পে, প্যাডে, বুকে, কাঁধে। ঘর্মাক্ত শরীরে জড়সড় সেই ক্রিকেটারদের দেখে আমাদের বুকের ভেতর কেমন কান্না কান্না চলে আসে। পাশের সিটে বসা মকবুল চাচায় হেঁড়ে গলায় আওয়াজ তোলেন, 'কোনোমতে পঞ্চাশ ওভার খেইল্যা আয় ভাই। তাইলেই আমগো জিত! আকরাম, ভাস, শ্রীনাথগো লগে খ্যালতাছি, এইডাইতো অনেক। খালি খামি খাইয়া কিরিজে টিক্যা থাক ভাই।

তাইলে আমরা জিতছি!! সেই টিকে থাকার মন্ত্রেই হয়তো কেউ কেউ ব্যাটের খোঁচায় চার মেরে দেন, পাইলট কেমন কেমন করে দানে বায়ে লাফিয়ে ক্যাচ ধরে ফেলে, পাগলা রফিক দুম করে একটা ছয় মেরে দেয়! আরিহ! ভাসের বলে ছয়! ওয়াসিম আকরামের বলে চাইর! এও কি সম্ভব! আমরা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতন গর্জে উঠি। সেই গর্জনের নাম, 'ভালবাসি, বাংলাদেশ!' ৪ আইসিসি ট্রফি, ওয়ানডে স্ট্যাটাস, বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং, কেনিয়া, পাপুয়ানিউগিনি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিজি, মালয়েশিয়া এমনকি জিম্বাবুয়ের মতো অধ্যায়গুলোকে ওই আকরাম-বুলবুল-নান্নুরা একে একে চার-ছক্কা মারার মতো করে বাধার সীমানা পার করে আনে। আমরা গগন বিদারী চিৎকারে বাংলাদেশ প্রকম্পিত করি। এই কম্পন জুড়ে, 'ভালবাসি, বাংলাদেশ'। ৫ এরপর দৃশ্যপট জুড়ে ক্রিকেট, শুধুই ক্রিকেট।

টেস্ট ক্যাপ, দৈত্য বধের গল্প, পাকিস্তান, ভারত, ওয়েস্ট ইন্দিজ, ইংল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলংকা... দৈত্য বধের গল্প! আসলে গল্প নয়, সত্যি। সেই সত্যি জুড়ে বাংলাদেশ। আসলে দৃশ্যপট জুড়ে ক্রিকেট, শুধুই ক্রিকেট নয়, সাথে বাংলাদেশ। ক্রিকেট মানেই যে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের অন্য নাম যে ক্রিকেট! ক্রিকেট! ক্রিকেট! ৬ এই গল্পের শেষ নেই! তবুও দৈত্য বধে নিউজিল্যান্ডের নাম নেই! কি করে থাকবে? নিউজিল্যান্ডকেতো সেই কবেই চুনোপুঁটি বানিয়ে ফেলেছি। ওদের কাছে দৈত্য যদি কেউ থেকে থাকে, সেতো বাংলাদেশ! বাংলাদেশ! না হলে মুশফিক নামের ওই পিচ্চি ছেলেটা কি করে অমন অবলীলায় বলে ফেলে, 'ইয়েহ! ডেফিনিটলি, দ্যা টার্গেট ইজ হোয়াইট ওয়াশ!' জ্বী, হোয়াইট ওয়াশ! ধবল ধোলাই।

যাহাকে আপনি চুনকাম বলিয়াও ভাবিতে পারেন। তবে উহার আরও একখানা নাম রহিয়াছে, উহার নাম 'বাংলাওয়াশ। ' এই বাংলাওয়াশ জুড়েও ফিসফিস শব্দ, 'ভালোবাসি, বাংলাদেশ!' পরিশিষ্টঃ ------------------- কুলীন পৃথিবী কথায় কথায় বলে, আমরা ঠগ, প্রতারক, দরীদ্র, বন্যার্ত, সহিংস, অস্থিতিশীল, অশিক্ষিত। কি ভাবছেন, 'উত্তর নাই?' - উত্তর কিন্তু আছে। ক্রিকেট জগতের অভিজাত সম্প্রদায় সুযোগ পাইলেই নাক সিটকান?- বেশ, ভালো, আপনের নাক আপনি সিটকাবেনাতো কে সিটকাবে? সিটকান।

টেস্ট স্ট্যাটাস কাড়িয়া লইবার হুমকি দ্যান?- বেশ, ভালো, দ্যান। না-পাকিস্তানের ইউনিস খানরা, সেই স্ট্যাটাস আফগানিস্তানরে দিবার প্রস্তাব করেন?- বেশ, ভালো, করেন। ভারত মাতা তাহার ক্রিকেট কুলীনত্ব, বাজার খর্ব হইবার ভয়ে আমাদের এই খর্বকায় মমিনুল-মুশফিক- নাসির হোসেনদের আপনাদের দেশে ব্রাত্য করিয়া রাখিয়াছেন?- বেশ, ভালো, রাখেন। ওহ, এক্সকিউজ মি, মিস্টার শেহওয়াগের খবর কি? হোয়ার ইজ হি!! যে যেখানেই থাকেন, টাইগার্স আর রোরিং... দে আর কামিং... জ্বী, সাবধান, আপনাদের আসিতেছে দুর্দিন দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ ...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.