আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ শিক্ষিত বাঙালীর ফার্স্ট ক্লাস’র পাঠ্যবই

এক লাখ পঁচাত্তর হাজার মুক্তিযোদ্ধার সাথে যোগ হল দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার ভারতীয় সেনা, পুরুদমে চলছে যুদ্ধ, ঢাকার গভর্নস হাউসে বোমা পড়ল, গর্ভনর মালেক মন্ত্রীদের নিয়ে পদত্যাগ করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে(শেরাটন/রূপসী বাংলা) আশ্রয় নিল। বিমান বন্দরে বোমা, যুদ্ধ জাহাজে বোমা, পালানোর পথ নেই, ঢাকা ঘিরে আছে মিত্র বাহিনী, বিমান থেকে পড়ছে আত্মসর্মপন করার অনুরোধ লেখা লিফলেট। পরম পরাক্রমশালী পাকিস্তানিরা গুটিয়ে এল, মাথা নিচু করে ১৬ ডিসেম্বরের বিকেল বেলা আত্মসর্মপনের ঐতিহাসিক দলিলে দস্তখত করে লজ্জাজনক বিদায়ের দিকে অগ্রসর হল জেনারেল নিয়াজির দল। # অন্তত: দেড়শ গ্রাম উন্নত কাগজে সবুজ জমিনের উপর শাহাবুদ্দিন আহমেদ’র আলোচিত পেইন্টিং লাল-সবুজের পতাকা হাতে ধাবমান মুক্তিকামীর ছবি খচিত প্রচ্ছদ। বইয়ে লেখকের নাম মুদ্রিত আছে মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

সাধারণ পাঠককে এই বিষয়টির উপর শিক্ষিত করবার অসাধারণ ক্লাস। বাংলার পাঠক মাত্রই এই ক্লাসে মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত জরুরি। - একটি মুক্তির উদ্যোগ প্রয়াস স্লোগানে প্রতীতি বার করেছে এই বইটি। ৮০ গ্রাম অফসেট কাগজে মুদ্রিত ২২ পৃষ্ঠার এই বই এর দাম ১০ টাকা রাখা হলেও মূলত বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬, ৭ ও ৮ টাকায়। মানুষকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে শিক্ষিত করে তোলার স্বল্পদৈর্ঘ্যের এক দান মানসিকতার প্রজেক্ট ছাড়া এই প্রকাশনাকে লাভজনক কিছু বলাটা অন্যায় হওয়ার মত।

বিগত ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বইটি বাজারে এলেও আমার হাতে এসে ঠেকেছে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। তৃণমূল পাঠকের জন্য মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর এক অসাধারণ হ্যান্ডআউট। এখানে ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব, ৪৭ এর দেশভাগ, ৪৮ এ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র ঢাকা আগম ও তৎপরবর্তি বিতর্ক। ভাষার আন্দোলন তীব্র হওয়ার পর ৫২’ ২১ ফেব্রুয়ারির প্রেক্ষাপট, ১৯৫৮ সালে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি আদায়। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সেনাপতি আয়ুব খানের ক্ষমতা দখল।

১৯৬৬’র ৬ দফা, জেল, জুলুম, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। জেলের বাইরে থেকে আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর এগিয়ে আসা। ৬৯ গণআন্দোলনে মতিউর, আসাদের ঝরে পড়া, একই বছর ২৫ মার্চ ইয়াহিয়া খানকে ক্ষমতা দিয়ে বিদায়। ৭০ এ ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচন, নির্বাচনে এখানকার ১৬২ আসানের মধ্যে ১৬০ আসন প্রাপ্তি, মহিলা আসন সহ সামগ্রিক ৩১৩ আসনে আওয়ামীলীগ ১৬৭ আসন পাওয়া। ওই বছর ১২ নভেম্বর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ১০ লাখ লোকের প্রাণহানি, খাবর ও পানির অভাব এবং প্রকাশ্য সভায় মাওলানা ভাসানীর স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান দাবী।

এর পরো নানা ষড়যন্ত্র । ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডেকে নানা টালবাহানা। ইয়াহিয়া খান ১ মার্চে আবার অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা। উত্তাল মার্চ, কমনওয়েলথ একাদশে ঢাকা স্টেডিয়াম যুদ্ধক্ষেত্র। ৫ দিনে হরতাল , অনির্দিষ্ট কালের অসহযোগ আন্দোলনের ডাক, ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগের জনসভায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমার সোনার বাংলা গানকে জাতীয় সংগীত নির্বাচন।

৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ৯ মার্চ পল্টন ময়দানে ভাসানীর আলাদা শাসনতন্ত্রের ঘোষণা। ঢাকায় আলোচনার ভান, সবকিছু ভণ্ডুল, ২৪ মার্চ সারাদেশে থমথমে ভাব। ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের গণহত্যা, সকলে চলে গেলেও সাংবাদিক সাইমন ড্রিং এর দেশে থেকে যাওয়া। ঢাবির ছাত্র হত্যা ও বুয়েট প্রফেসর নুরুল উলার ভিডিও। সাধারণ সৈন্য ও ইপিআরদের নিরস্ত্র করা।

বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার ও ইপিআর ট্রান্সমিটার থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা । কারফিউ। ২৭ মার্চ কারফিউ শিথিল। ভয়ার্ত মানুষের মুখ। অপ্রস্তুত বাঙ্গালীর প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

চট্টগ্রামে বাঙ্গালী সেনা বাহিনী ও ইপিআর বিদ্রোহ, মেজর জিয়ার পুণ:পাঠ। ৭ কোটি মানুষের ১ কোটি ভারতের শরণার্থী, ক্যাম্পে খাবর সংকট, শিশু মৃত্যু। ৩০ মার্চ তাজউদ্দিন আহমদের সীমান্ত পাড়ি দেওয়া, ১০ এপ্রিল মুজিব নগর থেকে ঐতিহাসিক স্বাধীনতা সনদ ঘোষণা, ১৭ এপ্রিল দেশি বিদেশী সাংবাদিকদের সামনে মুজিব নগর সরকার গঠন করে পরিকল্পিত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। ১১ সেক্টর, জেড ফোর্স, কে ফোর্স, এস ফোর্স গঠন। বাংলাদেশ বেতার, কবি, সাহিত্যিক শিল্পীদের অবদান, নারীদের ভূমিকা, দেশদ্রোহী, রাজাকার, আলবদর, আসসামস, দেশের বাইরে জনমত গঠনে প্রফেসর ইউনুস সহ অনেকের ভূমিকা।

মার্কিন কবি অ্যালেন গিনসবার্গ এর কবিতা। আমেরিকা, চীনের চরম বিরোধিতা, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা, ৭ম নৌবহর, নিউক্লিয়ার অস্ত্র নিয়ে আমারদের জন্য দুই পরাশক্তি মুখোমুখি। বিমান বাহিনী ধ্বংস করতে পাকিস্তানের ভারত হামলা, ভারতের ৮ ডিভিশন বাংলাদেশে যুদ্ধে অংশ নেওয়া, অল্প দিনে বিজনের নাগাল, পরম পরাক্রমশালী পাকিস্তানি সৈন্যদের আত্মসর্মপন। যুদ্ধাপরাধী, যুদ্ধের গ্লানি, গণহত্যার পরিসংখ্যান, স্বাধীনতা পরবর্তী অবস্থা সহ ছোটর ভেতর সামগ্রীকতা আনার প্রয়াস পেয়েছেন মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। এই যুদ্ধে বন্ধু ভারতের দেড় হাজার সেনা।

এনসাইক্লোপিডিয়ার তথ্যে ৩০ লক্ষ মানুষের গণহত্যা, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তানের জেল থেকে দেশ ফেরত, তাজউদ্দিনের সাথে তার বিরোধ, স্বাধীন দেশে ফের চরম ষড়যন্ত্র, চাল বোজাই জাহাজ অন্যত্র চলে যাওয়া, খাদ্যের অভাব, বাকশাল, দেশদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমা, ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের জন্য আটক, বঙ্গবন্ধু খুন, ৭৫ এর ৩১ ডিসেম্বর বিচারপতি আবু সাদাত ও জেনারেল জিয়া কর্তৃক যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া। ৭২ এর সংবিধানে ফের সাম্প্রদায়িকতার প্রবেশ। স্বপ্ন ও দু:স্বপ্নের ইশারা দিয়ে শেষ করা বইটিতে ৫৬ টি তথ্য সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে। আশা করছি বইটি বাঙ্গালী পাঠক মাত্রই পড়ে নিবেন। ধন্যবাদ।

Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.