[ একটা সময় তিন গোয়েন্দা পড়তাম । নস্টালজিক হয়ে নিজেই লেখে ফেললাম একটা কিছু । অথবা বলা চলে , কিশোরের জবানবন্দী তুলে দিলাম এখানে ]
**********************************
সিগারেটটা অ্যাশট্রেতে গুঁজে আমার দিকে সরাসরি তাকাল ওমর ভাই ।
'বুঝতে পারছ নিশ্চয় ? কেন এর মধ্যে সিআইএ নাক গলাচ্ছে ? '
মাথা দোলালাম আমি । ' সে তো পরিষ্কার ! এই দেশে থাকলেও স্বীকার না করে উপায় নেই , আমেরিকা বেশ আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে চলে ।
তা ফিলিস্তিনিরা এ ব্যাপারে কি বলছে ? '
' ওরা তো ওদের বিজ্ঞানীকে ফেরৎ চাবেই । তবে সিআইএ-র রিপোর্টে তারা বলেই দিয়েছে অ্যারিজোনার কাছেই বিজ্ঞানীর বিমান সম্পূর্ণ বিদ্ধস্ত হয়েছে । কেবলমাত্র একজন এয়ার হোস্টেজ বেঁচে যায় দুর্ঘটনার পর । ড. ইরফাজ এর দেহবশেষ উদ্ধার করেছে স্থানীয় পুলিশ । পুলিশও একমত প্রকাশ করেছে ।
'
'এয়ার হোস্টেজের প্রথম সাক্ষ্য অনুযায়ী সিআইএ-র রিপোর্ট ঠিক নয় । ' , বললাম আমি , ' ড. ইরফাজ আরও আগেই প্যারাসুট নিয়ে গ্লাইড করে নেমে যাচ্ছিলেন । প্লেন ক্র্যাশ ল্যান্ডের পরে তার মৃতদেহ পুড়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না সেক্ষেত্রে । '
' ঠিক তাই ,' মাথা দোলাল ওমর । 'গোটা ঘটনার ব্যাখ্যা একটাই , সিআইএ তুলে নিয়ে গেছে ভদ্রলোককে ।
আমেরিকার স্বার্থে নিঃসন্দেহে তারা হাতে পেতে চাইবে একালের সর্বশ্রেষ্ঠ মিসাইল বিজ্ঞানীকে । '
'যাই বলুন ওমর ভাই , সিআইএ-কে সাধারণ কিডন্যাপারদের মত আচরণ করতে হচ্ছে এ ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না আমি । এর পিছনে আরও কিছু আছে । '
মুখ বাঁকালো ওমর , ' তুমি জান না , কিশোর , এরা কতটা নিচে নামতে পারে । সিআইএ-র ইতিহাসে এর চেয়েও জঘন্য ঘটনার কথা আছে ।
'
' উদ্ধার করেছিল স্থানীয় পুলিশ , সিআইএ এর ভেতর ঢুকল কি করে ? ' এই প্রথম মুখ খুলল মুসা ।
' পুলিশের কাছে জবানী দেওয়া হোস্টেজের বক্তব্য সিআইএ-র হস্তক্ষেপের পর-ই পালটে গেছে , এখন সেও সুর মেলাচ্ছে সিআইএ-র রিপোর্টের সাথে । ডক্টরকে গ্লাইড করে প্যারাসুট নিয়ে নেমে যেতে দেখাটা নাকি তার ট্রমা ! এই ধরনের রিপোর্টও দিয়েছে সাইকোলজিস্টরা । বোঝ তাহলে ! ' বলল ওমর ।
ঠোঁট থেকে হাত সরালাম , ' একটা প্রশ্ন ওমর ভাই ।
আমাদের এসব শোনাচ্ছেন কেন ঠিক বুঝলাম না ... কেস তো সিআইএ আর পিএসএ (প্যালেস্টাইন সাইন্স একাডেমী) র হাতে । আমাদের তো মনে হয় না এখানে ঢোকার কোন সুযোগ আছে । '
' তোমার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে না তুমি সুযোগ পেতে চাও না ',হাসল ওমর , 'পিএসএ-এর কিছু সমস্যা আগেও হ্যান্ডেল করেছি আমি । আমার কাছে এসেছিলেন সংস্থার ডেপুটি ডিরেক্টর । তিনি সাহায্য চেয়েছেন আমার কাছে ।
আমি তাঁকে কথা দিয়েছি । '
' আপনি মানে কেবল আপনি নাকি ওকিমুরো কর্পোরেশান ? ' জানতে চাইলাম ।
' যে কোন প্রকার সাইড হেল্প আমি নিতেই পারি । সেজন্যই তোমাদের ডাকা । হাতে কোন কাজ আছে তোমাদের এই মুহূর্তে ? '
' নাহ ! আমি আর মুসা বসেই আছি ।
স্কুলও ছুটি এখন । '
' রবিনের পায়ের কি অবস্থা ? সারেনি এখনো ? '
' উঁহু , ওকে ৩ মাস বিছানায় থাকতেই হবে । '
সান্তা মারিয়া থেকে পড়ে গেছিল রবিন। পাহাড়ে চড়ার সখটা ওর গেলই না ।
'তাহলে তৈরী হয়ে নাও তোমরা দু'জনেই ।
কালই আমরা অ্যারিজোনায় যাচ্ছি । আমাদের কাজ শুরু হবে ক্র্যাশ সাইট থেকে । আর হ্যাঁ , রবিনের জন্য খারাপ-ই লাগছে । ও মিস করতে চাইবে না নিশ্চয়-ই ? কিন্তু কি আর করা ! ' দীর্ঘশ্বাস ফেলল ওমর ।
উঠে দাঁড়ালাম আমি আর মুসা ।
আরেকটা কেস ! এবারে সিআইএ জড়িত । নাহ , কেসটা জমবে ভাল । ভাবলাম আমি ...
**********************************
'হেই ! ম্যাকডোনাল্ড ! ' হঠাৎ চিৎকার করে উঠল ওমর ভাই ।
মাথা ঘোরাল ছোটখাট লোকটা । তবে আমি জানি , দেখতে সাধাসিধে হলে কি হবে ! এই লোককে স্কটল্যান্ড ইয়র্ডের গোয়েন্দারাও বেশ সমীহ করে চলে ।
এখন আছে এফবিআই-এ । ক্র্যাশ সাইটে গিজ গিজ করছে গোয়েন্দাবিভাগের লোকজন । ককপিটের ভাঙ্গা অংশের সামনে থেকে এগিয়ে এল ম্যাকডোনাল্ড ।
' আরে ওমর যে ! তুমিও ঢুকেছ এর ভেতর ! কিসে জোটাল তোমাকে ? ' ওমর ভাই-এর সাথে হাত মেলাতে মেলাতে বলল সে । 'পিএসএ ', জবাব দিল ওমর ।
' তোমাদের কোন অগ্রগতি হল
? '
' বোমাটা ছিল লাগেজ কম্পার্টমেন্টে । সিকিউরিটি চেকিং এ কিভাবে যে এড়িয়ে গেল জিনিসটা ! ' ঠোঁট কামরালো ম্যাকডনাল্ড ।
ততক্ষণে একটু দূরে সরে এসেছি আমি । কথা বলুক ওরা ... নিজের মত জায়গাটা দেখার ইচ্ছে ছিল আমার ।
জায়গাটা অ্যারিজোনার এক প্রত্যন্ত গ্রাম ।
সার্টিন সিটি । নামেই সিটি । এলাকাবাসী আছে ফার্মিং এর ওপর । হালচাষ , খামার আর মাছের ব্যবসা ছাড়া আর কিছু এরা বোঝে বলে মনে হয় না । গ্রামের মাঝে প্লেন আছড়ে পড়ায় সবখানে অবশ্য এখন একটা চাপা উত্তেজনা ।
টিলামত একটা জায়গার দিকে পা বাড়ালাম । টিলার মাথায় উঠে তাকালাম চারপাশে ।
বেশিক্ষণ খুঁজতে হল না , পেয়ে গেলাম জলাভূমিটা । ক্র্যাশ সাইট থেকে কিছুটা দক্ষিণে । আধ-মাইলের থেকে একটু বেশি-ই হবে দূরত্ব ।
নেমে আসলাম দৃঢ় পদক্ষেপে । গিয়ে দেখি আমাকেই খুঁজছে ওমর ভাই ।
'ছিলে কোথায় এতক্ষণ ? মুসাকে কতক্ষণ গাড়িতে বসিয়ে রেখে এসেছি খেয়াল আছে ? ' মেইন রোডের ধারে গাড়ি রেখে এসেছি আমরা । মুসাকে রেখে এসেছি গাড়িতে । গতরাত থেকেই জ্বর বেচারার ।
তাও জোর করেই এতদূর এসেছে । কিন্তু ওমর ভাইয়ের ধমক খেয়ে গাড়িতেই বসে থাকতে হয়েছে বেচারাকে । ' এখন আমার একটা সাইবার ক্যাফে লাগবে । ম্যাকডোনাল্ড মনে হয় একটা সূত্র দিয়ে গেল আমাকে । ভেরিফাই করতে হবে সেটা ।
'
বাধ সাধলাম আমি । ' ওমরভাই , ওইদিকে খালমত কিছু একটা আছে । চলুন আগে দেখে আসি আগে । '
বিরক্তির সাথে মাথা নাড়ল ওমরভাই , 'কিশোর , ওর দেয়া তথ্যটা ভেরিফাই করাটা বেশি জরুরী এখন খাল-পানি দেখার চাইতে । ওইদিকে কি পেয়েছ তুমি ? '
' মনে করে দেখুন , ওমরভাই , এয়ার হোস্টেজের কথা , ড. ইরফাজকে প্যারাসুটে করে পানিতে নেমে যেতে দেখেছিল ও ।
'
বিরক্তির ভাবটা নিমেষে কেটে গেল ওমরের মুখ থেকে । ' এখান থেকে তো দেখা যায় না , তুমি ওটা খুঁজে পেলে কি করে
? '
'উঠেছিলাম ওটার ওপর ' , দেখালাম টিলাটা , ' আপনি কি পেলেন ওইদিকে
? '
'সম্ভবতঃ ড. ইরফাজ এর ডুপ্লিকেট আছে একটা । ' শান্তমুখে বোমা ফাটাল যেন ওমর । 'বলেন কি ! ' বিস্মিত না হয়ে পারলাম না । 'এ বছর মের ৮ তারিখ সকালে বৃটেনে একটা সেমিনার করেছেন তিনি ।
মের ৮ তারিখেই , বেলা ১২টায় তাঁকে দেখা গেছে সুইজারল্যন্ডে , আরেকটা আলোচনা সভায় কথা বলতে । আর কি মানে থাকতে পারে
? '
কয়েকবার চিমটি কাটলাম ঠোঁটে , ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে রহস্য ।
*********************************
ফিরে যাচ্ছি আমরা গাড়ির দিকে । পানির ধারে এক জেলে কুটিরের পরিবারের সাথে কথা বলে বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েছি আমরা । ' দেখতেই পাচ্ছেন ওমর ভাই , কেবল মাত্র এয়ার হোস্টেজ-ই না ।
আস্ত প্যারাসুটসহ কাউকে পানিতে পড়তে দেখেছে ওরাও । নাহ , ড. ইরফাজের মৃত্যুর ব্যাপারে সিআইএ-র বিবৃতিটা অস্বাভাবিক নির্লজ্জ একটা মিথ্যাই ছিল । আর সন্দেহের অবকাশ নেই এর মধ্যে ।
'
' ট্রমা সংক্রামক - এ ধরনের কোন নতুন থিওরি আবিস্কার করে না বসে ওদের সাইকোলজিস্টরা ! ' তিক্ত স্বরে বলল ওমর , ' বুঝেছ কিশোর , যতই দেখছি এই দেশটার সরকারের প্রতি বিতৃষ্ণা ততই বাড়ছে ।
'
বলার তেমন কিছু নেই আসলে ।
চুপচাপ এগুলাম আমরা মেইন রোড এর দিকে ।
কেবলমাত্র চোখে পড়ল গাড়িটা , কোন রকম আগাম সংকেত না দিয়ে কমলা রঙের অগ্নিশিখায় পরিণত হল সেটা । কান ফাটানো শব্দের সাথে এল শকওয়েভ । ছিটকে মাটিতে পড়ে গেলাম আমরা । বোমা বিস্ফোরন যেন শুধু গাড়িতে নয় , বিস্ফোরন হল আমার মাথার ভেতর-ও ।
শকওয়েভ শরীরের শেষবিন্দু শক্তি শুষে নিয়েছে , তবুও হাঁচড়ে- পাঁচড়ে উঠলাম । প্রাণপনে ছুটলাম গাড়ির দিকে । 'মুসা ছিল গাড়ির ভেতর' - এছাড়া আর কিছু ভাবতেও পারলাম না । ছুটছি , চিৎকার করছি এবং সম্ভবত কাঁদছিও ।
একনিমিষে পৌঁছে গেল ওমরভাই পাশে , কাঁধ জড়িয়ে টেনে সরিয়ে নিল আমাকে পথ থেকে ।
ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি ওমর ভাইকে । যেতে হবে আমাকে ওর কাছে । বর্জ্যমুষ্ঠিতে ধরে থাকল আমাকে ওমরভাই । ' যেতে দিন আমাকে ওর কাছে ', চিৎকার করলাম আমি , ' গেট আউট অফ মাই ওয়ে !
'
'শান্ত হও কিশোর , ফর গডস সেক , শান্ত হও । ' কানের কাছে মুখ নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল ওমর ।
' ইট ওয়াজ এ ট্র্যাপ , ড্যাম ইট ! চারপাশ না দেখে কাছে গেলে বেঘোরে মারা পরতে হবে তোমাকেও , আগে আমাকে দেখতে দাও । '
ধরে রাখতে পারলাম না আর চোখের পানি । 'কিন্তু , মুসা -
'
' এখান থেকে বেঁচে দিরলে যারা দায়ী নিজ হাতে খুন করব আমি । কিন্তু তারজন্য আমাদের দু'জনকেই বেঁচে থাকতে হবে । তুমি থাক এখানে ।
'
এতক্ষণে খেয়াল করলাম পিস্তল বের হয়ে এসেছে ওমর ভাইয়ের হাতে আগেই । চোখমুখ জ্বলছে আগুনের মত । বের হয়ে আসছে বেদুইন অকুতোভয় যুবকের দুঃসাহসী রূপ । ওমর ভাইয়ের কথার সত্যতা বুঝতে পারলাম । এতবড় ঘটনাতেও আবেগ ছুঁতে পারেনি তাকে ।
শতভাগ প্রফেশনালের মতই আমাকে রক্ষা করেছে ওমরভাই । মাথা ঝাঁকালাম । ' আমাদের বেঁচে থাকতে হবে । যান আপনি , আমি আছি এখানেই । '
ঝোপের আড়ালে আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেল দুর্ধর্ষ বেদুইন ওমর শরীফ ।
হাতে উদ্যত পিস্তল ।
**********************************
সম্পূর্ণ বিদ্ধস্ত গাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে আছি । এই মুহূর্তে আমি অসম্ভব শান্ত । আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকল বাহিনীর সদস্যরা । স্থানীয় পুলিশ চীফের সাথে কথা বলছে ওমর ভাই ।
চাউনি-ই বলে দিচ্ছে , অক্ষম ক্রোধ আর বেদনা কাজ করছে তার ভেতর ।
না , ছুটে গিয়ে কিছুই বের করতে পারেনি ওমর । বোমাটি কেউ অনেক আগেই টাইমার সেট করে লাগিয়ে দিয়েছিল । অনুমান নির্ভর আর কার্যকর একটা টাইমিং । আমি ওমর ভাইকে নিয়ে খালের ধারে না গেলে এখন ওই গাড়ির ভেতরেই থাকার কথা ছিল আমাদের ।
ছুটে যেতাম হাইওয়ে ধরে আর তখন-ই হয়ত ঘটত বিস্ফোরণ ।
ওমর ভাই মনে মনে নিজেকে দায়ী করছে বুঝতে পারছি । মুসা চেয়েছিল নেমে আসতে আমাদের সাথে । ওমর ভাই-ই নিষেধ করেছিল জ্বর নিয়ে ছোটাছুটি করতে । তবে এ ধরনের পরিস্থিতি দেখা দিবে সেটা আমাদের কারও বোঝার কথা নয় ।
স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আসলে করার তেমন কিছু নেই- ও । এখানে কোন সূত্র নেই । ফিরে যেতে হবে এখন । বের করতে হবে ড। ইরফাজের ডুপ্লিকেটকে ।
তিনি-ই আমাদের হয়ত নতুন কোন ক্লু দিতে পারবেন ।
আর কোন কেস নিয়ে ভাবার সময় এতটা ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা কাজ করেনি আমার ভেতর । মুসার কথা মনে হতেই ব্যথায় বুকটা মুচড়ে উঠল । ‘এই তো শুরু করেছ গ্রীক ভাষা ‘ অথবা, ‘ খাইছে !’ - ওর মুখ থেকে আর শোনা হবে না এসব কখনো । প্রাণপনে চোখের পানি আটকালাম ।
‘খাইছে ! রেন্ট – এ- কার কোম্পানীকে ক্ষতিপূরণ দিতে দিতে জান বের হয়ে যাবে !’ কানের কাছে বিস্মিত গলায় কেউ বলে উঠল , ‘ এই অবস্থা কেমন করে হল !’
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না ! বিদ্যুতবেগে ঘুরলাম শব্দের উৎসের দিকে ।
এক ও অদ্বিতীয় মুসা আমান দাঁড়িয়ে আছে হাতে একটা লেমনেডের বোতল নিয়ে । জনতার ভীড় ঠেলে বের হয়ে আসছে এখন ।
কখন যে ছুটে গেছি নিজেও খেয়াল করিনি , ‘ মুসা ! তুমি ! ওহ , বিশ্বাস-ই করতে পারছি না ... । ’
‘আমিও পারছি না ... আমাদের গাড়ির এই হাল কেন ! ’ বলে লেমনেডে চুমুক দিল ও ।
‘আরে রাখো গাড়ি , জাহান্নামে যাক ... খোদার অশেষ রহমত যে তুমি ঠিক আছ ! কোথায় ছিলে এতক্ষণ ? ’
‘ কি করব বল ! তোমরা গেছ তো গেছই আসার তো নাম-ই নেই । বের হয়ে পায়চারি করছিলাম । পরিচয় হয়ে গেল বেলা আন্টির সাথে । আন্টির ভ্যানের ইঞ্জিনের হয়েছে সমস্যা । এই একটু পিছনে থেমে গেছিল ওটা ।
সারিয়ে দিলাম । তেল ওভারফ্লো করছিল । ময়লা আটকে গেছিল লাইনে । যাই হোক , ওঁর বাসা কাছেই , উনি তো বাসায় নিয়েই যাবেন , দুপুরে খাওয়ার সময় কেন এখানে থাকব রোদের মধ্যে ইত্যাদি ইত্যাদি ... ‘ ঝকঝকে দাঁত বের করে বলল মুসা , ‘ মানে এত করে বলছে না গেলে কেমন দেখায় না , তাছাড়া তোমরা কখন আসো না আসো । মানে , বোঝই তো ... গেলাম আরকি ।
’ হাতের লেমনেডের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম লাঞ্চের শেষ ধাপ চলছে ওর । মুচকি হাসলাম ।
‘ বিস্ফোরনের শব্দ শুনেই নিশ্চয় ছুটে এসেছ লেমনেডের বোতল নিয়েই ? ‘
‘ও ইয়ে ... এইটা ? খেয়াল-ই করিনি হাতে ছিল । ’ বলতে বলতে বাকি তরলটুকু গলায় ঢালল মুসা । ‘সরি ।
’
হাসলাম আমি । ‘ জীবনে আর তোমার খাওয়া দাওয়া নিয়ে কিছু বলব না । একটু আগে যা টেনশনে ছিলাম ! ‘
হাসল মুসাও , ‘ আল্লাহ বড় বাঁচা বাঁচিয়ে দিয়েছে হে । বাবা মায়ের দোয়া ছিল । এটা কিভাবে হল ? বোমা ? ওমর ভাই কোথায় ? ‘
‘হুম , বোমা ।
প্রতিপক্ষকে ছোট করে দেখার আর কোন সুযোগ নেই । আমরা এখনো তেমন কাজ করতেই পারলাম না এরই মধ্যে ... । ’
আগুন এরমধ্যে নিভে গেছে । গাড়ির তলায় উকি-ঝুঁকি মারছিল ওমর । মুসাকে দেখে যতটা অবাক না হল তার চেয়ে বেশি হল খুশি ।
ঘন ঘন দাঁত দেখা গেল সদা গম্ভীর ওমর শরীফের মুখেও । মুচকি হাসলাম আমি ।
দূরে বালি উড়তে দেখা গেল । চকচকে চারটি কাল গাড়ি ঝড়ের বেগে এগিয়ে আসছে এদিকেই । দুর্ঘটনাস্থলকে ঘিরে থাকা জনতার ভীর ফাঁক হয়ে গেল নিমেষে ।
ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষল সেটা আমাদের কাছাকাছি এসে ।
নীরবে ওমর ভাই-এর দিকে তাকালাম । চোখে প্রশ্ন । বিভ্রান্ত দেখাল তাকেও । গাড়িগুলো এসেছে ক্র্যাশ-সাইটের দিক থেকে ।
স্পষ্ট সিক্রেট সার্ভিস – সিক্রেট সার্ভিস গন্ধ চেহারাতেই । গাড়িগুলোয় নয় শুধু , এইমাত্র বের হয়ে আসা ছয় জনের চেহারাতেও । গট গট করে আমাদের সামনে এসে থামল ওরা । অপেক্ষাকৃত লম্বা একজন সামনে আসল ।
‘এখানে ওমর শরীফ কে ? ’ কাঠখোট্টা গলায় জানতে চেল সে ।
‘আমি । ’ শান্তগলায় বলল ওমর । ‘আপনাদের জন্য কিছু করতে পারি? ’
‘আসুন আমাদের সঙ্গে । ’ কঠোর গলায় বলল লম্বু । গলার স্বরেই টের পেলাম এটা ছিল আদেশ , অনুরোধ নয় ।
‘কোথায় ? ’
লম্বুর মুখ থেকে জবাব শুনে চমকে উঠলাম , ‘কাস্টডিতে’
‘কারা আপনারা ? ’ বিতৃষ্ণার সাথে জানতে চেল ওমর ।
‘ এজেন্ট ফার্গুসন , সিআইএ ’ , একটা পরিচয় পত্র বের করল সে । ‘ আপনার সার্বিক সহযোগীতা কামনা করছি । আমাদের সঙ্গে আসুন । কাগজপত্র সাথেই আছে , আপনাকে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে আমাদের ।
’
‘বাহ ! দারুণ ! ’ তিক্তগলায় বলল ওমর , ‘ তা ,কারণটা জানতে পারি নিশ্চয় ? ’
‘এজেন্ট ম্যাকডোনাল্ড আধ-ঘন্টা আগে আহত হয়েছেন । কেউ তাকে পয়েন্ট ব্ল্যঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে । অন্যান্য এজেন্টদের ভাষ্যমতে ওই সময় আপনি মাত্র ক্র্যাশসাইট থেকে বের হয়ে ম্যাকডনাল্ডের পথেই যান । তাছাড়া এক রাখালছেলে নিজ চোখেও দেখেছে ব্যাপারটা । ’ এরমধ্যে একজন এজেন্ট ওমর ভাইকে সার্চ করে পিস্তলটা বের করে নিল কোটের পকেট থেকে ।
‘ঝামেলা বাড়াবেন না প্লিজ , চলে আসুন । ’
নিমের তেতো গলায় আটকে যাওয়ার মত চেহারা নিয়ে আমার দিকে ঘুরল ওমর । হাল্কা করে টিপল চোখ । মুখ খুলতে যাচ্ছিলাম , কিন্তু চুপ হয়ে গেলাম ।
আসলে পরো ব্যাপারটাই একটা সেট আপ ।
সুতরাং কথা বলে লাভ নেই । শেষে আমাদেরও কাস্টডিতে ভরে ফেললে রহস্যটা সমাধান হবে না । সেজন্যই ওমর ভাই নিষেধ করে দিল কিছু বলতে । দাঁতে দাঁত পিষলাম অক্ষম ক্রোধে ।
**************************************
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।