বিরাট কোহলিকে শূন্য রানে রান আউট করে দেওয়ার ক্ষতি পূরণ না করে মাঠ ছেড়ে গেলে বড় অন্যায় হতো। রোহিত শর্মা সেই অন্যায় করেননি।
এক দিনের ক্রিকেটে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ১৬ ছক্কা, ইতিহাসের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি, সাঈদ আনোয়ার-চার্লস কভেন্ট্রি-শচীন টেন্ডুলকারদের পেছনে ফেলে ১৫৮ বলে ২০৯! দীপাবলির পটকা-বাজির রোশনাই বাদ দিয়ে যাঁরা বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচ দেখতে, তাঁদের সন্ধ্যাটাকে রোহিত আলোকিত করে দিলেন চার-ছক্কার বিস্ফোরণে।
ভুল করে কোহলিকে রান আউট করে দেওয়ার মূল্য? সে তো অনেক আগেই হয়ে গিয়েছিল! উপরি হিসেবে এল দ্বিপক্ষীয় সিরিজে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড (৪৯১), এই বছরে এক দিনের ক্রিকেটে হাজার রান আর ক্যারিয়ারের তিন হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়ে যাওয়া।
বাগানের শহরে রোহিত শর্মার এমন বিস্ফোরক ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে ৩৮৩ রানের পাহাড়সমান চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল ভারত।
জবাবে দেশের হয়ে জেমস ফকনারের দ্রুততম সেঞ্চুরিতে (৫৭ বলে) ভারতের স্নায়ু কাঁপিয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াও। তবে শেষ পর্যন্ত জর্জ বেইলির দল থেমেছে ৩২৬ রানে। অস্ট্রেলিয়াকে ৫৭ রানে হারিয়ে ৩-২ ব্যবধানে সিরিজও জিতে নিল মহেন্দ্র সিং ধোনির দল।
১১৪ বলে যখন সেঞ্চুরি করেন, তখনো মনে হয়নি বাকি সময়টায় এমন বিস্ময় উপহার দিতে পারেন রোহিত। পরের ১০০ রান করতে খেলেছেন মাত্র ৪২ বল।
৪৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে কোল্টার-নাইলকে চার মেরে ছুঁয়েছেন সাঈদ আনোয়ার আর কভেন্ট্রিকে (১৯৪), পরের বলে দুই রান নিয়ে পেছনে ফেলে দিলেন দুজনকেই। ৫০তম ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা মেরে পেছনে ফেললেন টেন্ডুলকারকেও। রোহিত তখন ২০৩, হাতে আরও পাঁচটি বল, সামনে এক দিনের ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের মালিক বীরেন্দর শেবাগ (২১৯)। পরের বলেও ছক্কা দেখে মনে হয়েছিল শেবাগকে পেরিয়ে যাওয়াও অসম্ভব নয়। কিন্তু ক্লিন্ট ম্যাকাইয়ের তৃতীয় বলে ক্যাচ তুলে দিলেন ময়েজেস হেনরিকেসের হাতে।
যে হেনরিকেস তাঁর ক্যাচ ফেলেছিলেন ১২০ রানে!
শেবাগ নিরাপদে থাকলেন, তবে এরই মধ্যে একটা বিশ্ব রেকর্ড নিজের করে নিলেন রোহিত। ২০১১ সালে ঢাকায় বাংলাদেশের বিপক্ষে এক ম্যাচে ১৫ ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন শেন ওয়াটসন। কাল ওয়াটসনকে সাক্ষী রেখেই তাঁর চেয়ে একটি ছক্কা বেশি হাঁকালেন রোহিত। বাংলাদেশের লজ্জা ম্লান হয়ে এবার এই রেকর্ডে বসল অস্ট্রেলিয়ার নাম।
ওয়াটসনকে অবশ্য বোলার হিসেবে রোহিতের এই রুদ্ররূপের সামনে পড়তে হয়নি।
যতটা পড়তে হয়েছে তাঁর দুই সতীর্থ ক্লিন্ট ম্যাকাই আর জেভিয়ার ডোহার্টিকে। এই দুজনের বলেই পাঁচ-পাঁচ ১০টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন মুম্বাইয়ের ব্যাটসম্যান। ৩টি ছক্কা খেয়েছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও। ‘অগ্নিশর্মা’ রোহিতের সঙ্গে যোগ দিয়ে শেষ দিকে ঝড় তুলেছেন অধিনায়ক ধোনিও (৩৮ বলে ৬২)। দুজনের তাণ্ডবে শেষ ১০ ওভারে ভারত রান তুলেছে ১৫১, শেষ ৫ ওভারে ১০০!
অথচ শিখর ধাওয়ানকে নিয়ে যখন ইনিংস সূচনা করতে নামেন, তখন এমন কিছু নাকি স্বপ্নেও ভাবেননি।
এমনকি ভুল-বোঝাবুঝিতে কোহলি রান আউট হয়ে ফিরে যাওয়ার পর যখন তাঁর কাঁধে বাড়তি দায়িত্ব এসে পড়ল, তখনো না। ইনিংস শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘আমি কখনোই ভাবিনি ২০০ করে ফেলব। শুধু চেষ্টা ছিল যতক্ষণ সম্ভব উইকেটে থাকার। ’
এটুকু চেষ্টাতেই যদি এত কিছু হয়ে যায়, তাহলে আর বেশি কষ্ট করার দরকার কী! সূত্র: স্টার স্পোর্টস ও ওয়েবসাইট।
ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি
ম্যাচ ভেন্যু সাল
২১৯ বীরেন্দর শেবাগ ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইন্দোর ২০১১
২০৯ রোহিত শর্মা ভারত-অস্ট্রেলিয়া বেঙ্গালুরু ২০১৩
২০০* শচীন টেন্ডুলকার ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা গোয়ালিয়র ২০১০
এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কা
ম্যাচ ভেন্যু সাল
১৬ রোহিত শর্মা ভারত-অস্ট্রেলিয়া বেঙ্গালুরু ২০১৩
১৫ শেন ওয়াটসন অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ মিরপুর ২০১১
১২ জেভিয়ার মার্শাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ-কানাডা কিং সিটি ২০০৮
১১ সনাৎ জয়াসুরিয়া শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান সিঙ্গাপুর ১৯৯৬
১১ শহীদ আফ্রিদি পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা নাইরোবি ১৯৯৬
১৫৮
বলে
২০৯
রান
১ রান ৪৭
২ রান ৯
চার ১২
ছক্কা ১৬
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।