আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলা ওয়াশ শেষ ওয়ানডেতেও কিউইরা ৪ উইকেটে পরাজিত ॥ নিউজিল্যান্ড ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে আবারও বাংলাদেশের কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো

আমার অনেক কথা

কপিল দেবের নেতৃত্বে ১৯৮৩ সালে ভারত ও অর্জুনা রানাতুঙ্গার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ জয় ক্রিকেট ইতিহাসের স্মরণীয় ঘটনাগুলোর মধ্যে শীর্ষে। এ দুটি বিশ্বকাপে ক্রিকেট দেখেছিল দুটি নতুন পরাশক্তির উত্থান। ’৮৩-এর বিশ্বকাপ জিতে ভারত ও ’৯৬-এর বিশ্বকাপ জিতে শ্রীলঙ্কা বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দেয়। ভারত, শ্রীলঙ্কার পথ অনুসরণ করে বাংলাদেশও ক্রিকেটে পরাশক্তি হওয়ার পথে কক্ষপথে রয়েছে। সর্বশেষ এশিয়া কাপ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ এবং রবিবার অতিথি নিউজিল্যান্ডকে নাকাল করার মধ্য দিয়ে মুশফিকুর রহীমের নেতৃত্বে তামিম, নাসির, মাশরাফি, রাজ্জাকরা বহির্বিশ্বকে আরেকবার দেখিয়েছেন বাঘের গর্জন।

ভারত, শ্রীলঙ্কার মতো বিশ্বকাপ জয়ে না হোক এশিয়ার বিশ্বকাপ, উইন্ডিজ ও কিউইদের বিরুদ্ধে সিরিজে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিয়ে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, হেলাফেলার দিন শেষ! রবিবার তৃতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কাছে ৪ উইকেটে হেরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে নিউজিল্যান্ড। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা নিউজিল্যান্ড রস টেইলরের হার না মানা ১০৭ রানে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩০৭ রানের বড় পুঁজি পায়। ৩০৮ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে সম্মিলিত নৈপুণ্যে চার বল বাকি থাকতে অর্থাৎ ৪৯.২ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে (৩০৯ রান) পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম থেকে শুরু হয়েছিল বাঘের গর্জন। তার মধুর সমাপ্তি ঘটেছে বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে।

এগারো রয়েল বেঙ্গল টাইগার যেভাবে নিউজিল্যান্ডকে নাচিয়েছেন, সেটিকে ‘হোয়াইটওয়াশ’ না বলে ‘বাংলা ওয়াশ’ বলাই ভাল। ২০১০ সালের সিরিজেও যে বাংলাদেশের কাছে ‘হোয়াইটওয়াশ’ হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। সেবার টাইগারদের কাছে ৪-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল কিউইরা। বিষয়টি এমন যে, লাল-সবুজের দেশের মুখোমুখি হলেই হোয়াইটওয়াশের বেদনায় পুড়তে হচ্ছে ব্ল্যাকক্যাপসদের। যেন এমন, বাংলাদেশে এলেই খেলা ভুলে যায় নিউজিল্যান্ড! যার প্রমাণ মিলল টানা দুটি সিরিজে হোয়াইটওয়াশের মধ্য দিয়ে।

একটা সময় ছিল, বাংলাদেশের জয় মানে সাকিব-তামিমের অবদান। অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের নামটিও এ ক্ষেত্রে চলে আসে। কিন্তু কিউইদের বিরুদ্ধে সিরিজে টাইগাররা দেখিয়েছে শুধু সাকিব-তামিমই নয়, ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা রাখেন অন্যরাও। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব খেলতে পারেননি ওয়ানডে সিরিজ। কিন্তু তাতে কি! তাঁর বদলে একাদশে জায়গা পাওয়া নাঈম ইসলাম খেলেছেন চোখ ধাঁধানো ক্রিকেট।

শেষ ম্যাচে ছিলেন না ওপেনার তামিম ইকবাল। কিন্তু তাঁর অভাব বুঝতে দেননি নবাগত শামসুর রহমান শুভ। ৯৬ রান করে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার পথটা দেখিয়েছেন তিনিই। সিরিজসেরা হলেও টাইগার অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ফতুল্লার ওয়ানডেতে করেন মাত্র ২ রান। কিন্তু এতে থেমে যায়নি স্বাগতিকদের জয়রথ।

নাসির, সোহাগরা সেই অভাবটা পুষিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে, পৌঁছে দিয়েছেন গৌরবের আসনে। এই সিরিজ আরেকবার প্রমাণ করেছে, সাকিব-তামিমকে ছাড়াও জিততে পারে বাংলাদেশ। সিনিয়র ক্রিকেটার ছাড়াও জুনিয়ররা তাঁদের সক্ষমতার প্রমাণ রাখছেন। মুমিনুল, সোহাগ, শামসুররা ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজেদের জাত চিনিয়েছেন। সব মিলিয়ে ‘টিম বাংলাদেশে’রই দেখা মিলেছে।

সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জয় পায় ৪৩ রানে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয় ৪০ রানে। টানা দুই ম্যাচ জিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলে বাংলাদেশ। বাকি থাকে আরেকটি ম্যাচ। যেটা ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে হয়েছে।

ম্যাচে টস জেতে বাংলাদেশ। কিন্তু আগে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাট করার সুযোগ দেয়। সুযোগটি কাজে লাগিয়ে রস টেইলরের অপরাজিত ১০৭ ও কলিন মুনরোর ৮৫ রানে ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩০৭ রান করে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সর্বোচ্চ ২ উইকেট নিতে সক্ষম হন। বাংলাদেশকে জিততে হলে দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করে রেকর্ড গড়েই জিততে হবে।

করতে হবে দেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো তিন শ’ রানের বেশি তাড়া। এ অবস্থায় যেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা এ রানকেও আহামরি কিছু মনেই করেনি। নিজেদের ছন্দেই খেলে গেছেন। এমন অবস্থা যে, জিতেও গেছে ৪ বল বাকি থাকতে! শামসুর রহমান শুভর ৯৬ রানের সঙ্গে নাঈম ইসলামের ৬৩ রান, নাসির হোসেনের অপরাজিত ৪৪ রান, মুমিনুল হকের ৩২ রান যোগ হয়ে ৬ উইকেট হারিয়ে ৪৯.২ ওভারে ৩০৯ রান করে জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। সঙ্গত কারণেই স্টেডিয়ামজুড়ে ‘বাংলা ওয়াশ, বাংলা ওয়াশ’ রব ওঠে।

আর ক্রিকেটাররা আনন্দে আত্মহারা হয়ে বরাবরের মতো দেশের পতাকা কাঁধে তুলে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন। সিরিজসেরা হন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। যাঁর নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ডকে আবারও বাংলা ওয়াশ করা গেছে। সেই মুশফিক ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘৩০৭ রান বড় টার্গেট নয়। অন্তত ওয়ানডে ক্রিকেটে।

সেই প্রথম থেকেই শুনছিলাম বাংলা ওয়াশ, বাংলা ওয়াশ। সেটা নিয়ে অনেক মনোযোগী ছিলাম। এটা আশা ছিল। আমরা যদি আমাদের যোগ্যতা অনুযায়ী খেলতে পারি, সিরিজটা জিতব। ’ অবশেষে হোয়াইটওয়াশই হলো নিউজিল্যান্ড।

বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বাংলা ওয়াশ করল কিউইদের। ফতুল্লায় ২০০৬ সালে সর্বশেষ খেলা হয়। সেই খেলায় বাংলাদেশ-কেনিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। পর পর দুই ম্যাচ হয় দুই দলের মধ্যে। কেনিয়াকে টানা দুটি ম্যাচ হারিয়ে চার ম্যাচের সিরিজ জেতে বাংলাদেশ।

কেনিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করে। যেটি বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রতিপক্ষকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করা সিরিজ ছিল। এবার নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সাড়ে সাত বছর পর ফতুল্লায় খেলে আবারও হোয়াইটওয়াশের স্মৃতিই পুঁজি করল বাংলাদেশ এবং ফতুল্লায় সবচেয়ে বেশি রান করেই জিতল। শুরুতে টেইলরের সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ড ৩০৭ রান করে। যেটি ফতুল্লায় সর্বোচ্চ রান।

টেইলর ক্যারিয়ারের অষ্টম শতক করেন। এর পর এ রান টপকে গিয়ে বাংলাদেশও ফতুল্লায় সবচেয়ে বেশি রান করে। এ রান বাংলাদেশকে রেকর্ডের সামনেও দাঁড় করায়। বাংলাদেশ ম্যাচটি জিতে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করার আনন্দই পায়নি, সঙ্গে থাকছে র‌্যাঙ্কিংয়ে ওপরের সাড়ির দলের মধ্যে প্রথম কোন দল হিসেবে নিউজিল্যান্ডকে টানা দুই সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার তৃপ্তিও। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ হয়েছিল ২০১০ সালে।

একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। বাংলাদেশ ৪-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে নিউজিল্যান্ডকে। এবার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ হয়। আর কিউইদের ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে দেয় টাইগাররা। এ নিয়ে মোট আটবার প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ পেল বাংলাদেশ।

২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে, এর আগে আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, জিম্বাবুইয়েকে একবার করে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। সবার আগে ২০০৬ সালে কেনিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ পায় বাংলাদেশ। একই বছর আবার নাইরোবিতে কেনিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করে। কেনিয়ার পর নিউজিল্যান্ডকে দুবার হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। যেন নিউজিল্যান্ডকে কেনিয়া বানিয়ে ফেলল।

যেন নিউজিল্যান্ডের ‘জমদূত’ হয়ে গেছে বাংলাদেশ। কিউইদের বিরুদ্ধে টানা ৭টি ম্যাচ জিতে নিয়েছে টাইগাররা! তিন বছর আগে যখন নিউজিল্যান্ড হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল, সেই সিরিজে ছিলেন না তামিম। এবার তামিম সিরিজজয়ী ম্যাচ পর্যন্ত খেলেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এবারও হোয়াইটওয়াশ করা ম্যাচে থাকতে পারেননি। তবে সাকিব একটি ম্যাচও খেলতে পারেননি।

এ দুজনকে ছাড়াই বাংলাদেশ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেছে। আবারও নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করেছে। যাকে বলা হচ্ছেÑ ‘বাংলা ওয়াশ। ’

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.