আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সর্বনিম্ন বেতন ৫৩০০ টাকা, পোশাক মালিকদের না

গার্মেন্ট শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে এ সংক্রান্ত বোর্ড। সরকার গঠিত নিম্নতম এই মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ে গতকাল মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তবে মালিকপক্ষ এতে সম্মতি দেয়নি। অন্যদিকে শ্রমিকরাও অখুশি। তাদের প্রতিনিধি সম্মত হলেও বিভিন্ন সংগঠন এরই মধ্যে এটি প্রত্যাখ্যান করেছে।

মালিকপক্ষ বোর্ডের অষ্টম বৈঠকে নিজেদের দেওয়া চার হাজার ২৫০ টাকার প্রস্তাবেই অনড় রয়েছে। সে কারণে তাদের প্রতিনিধিরা এ প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকেন। শ্রমিকরা আট হাজার টাকা দাবি করলেও বোর্ডের সভায় তাদের দুই প্রতিনিধি পাঁচ হাজার ৩০০ টাকার প্রস্তাবের পক্ষেই ভোট দেন। কিন্তু একাধিক শ্রমিক সংগঠন এতে আপত্তি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে। তারা সরকারের কাছে প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে।

তোপখানা রোডে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ে বৈঠকে বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে রায় সভাপতিত্ব করেন। উপস্থিত ছিলেন শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি, মালিকপক্ষের কাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ, মজুরি বোর্ডের স্থায়ী সদস্য ফজলুল হক মন্টু, নিরপেক্ষ প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ও আরশাদ জামান দিপু। বৈঠক শেষে বোর্ড চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের জানান, নবম বৈঠকে ভোটাভুটিতে ছয় সদস্যের মধ্যে চারজনের সমর্থন পাওয়ায় পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি প্রথমে আট হাজার, পরে ছয় হাজার এবং সর্বশেষ পাঁচ হাজার ৫০০ টাকার প্রস্তাব দেন। মালিকপক্ষের প্রতিনিধি এতে রাজি না হওয়ায় মজুরি বোর্ড খাদ্য ভাতাসহ পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করে খসড়া অনুমোদন করে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন হাজার ২০০ টাকা মূল বেতন, বাসা ভাড়া এক হাজার ২৮০ টাকা, চিকিৎসা ৩২০ টাকা, যাতায়াত ২০০ টাকা ও খাদ্যভাতা ৩০০ টাকা। বৈঠকে মজুরির খসড়া প্রস্তাবে মালিকপক্ষ সই না করেই চলে যায়। তবে নিয়ম অনুযায়ী এখন গেজেট আকারে এটি প্রকাশ করা হবে। গেজেট জারির ১৫ দিনের মধ্যে তা শ্রম মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের আদেশ দেবে সরকার।

এর আগে ২০১০ সালের ২৭ জুলাই পোশাক শ্রমিকদের নূ্যনতম মজুরি তিন হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে তাৎক্ষণিকভাবে মজুরি বোর্ড কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা-কর্মীরা। সকালে বৈঠক চলাকালেও কার্যালয় ঘেরাও করে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতা-কর্মীরা বিক্ষাভ করেন। তাজরীন ফ্যাশন ও সাভারে রানা প্লাজা ধসের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের স্বল্প মজুরির বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন সংগঠন বাংলাদেশি তৈরি পোশাক বর্জনের হুমকি দেয়।

এ প্রেক্ষাপটে গত ১২ জুন সাবেক জেলা জজ এ কে রায়কে প্রধান করে পোশাক খাতের বেতন পুনর্নির্ধারণে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়।

আপত্তি দুই দিকেই : মালিক ও শ্রমিক- দুই পক্ষই নূ্যনতম মজুরির প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, 'নূ্যনতম মজুরির এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা সরকারের কাছে এটি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানাব। ' শ্রমিকপক্ষের দুই প্রতিনিধির পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণে সম্মত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'সেই দুজন প্রতিনিধি শ্রমিক লীগের।

তারা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার চেয়ে সরকারের স্বার্থ রক্ষায় বেশি আগ্রহী। ' সম্মিলিত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, 'পাঁচ হাজার ৩০০ টাকার মধ্যে খাদ্য ও যাতায়াত ভাতা অন্তর্ভুক্তের বিষয়ে আমাদের ঘোর আপত্তি আছে। এ মজুরি মানি না। ' অন্যদিকে বিজিএমইএ'র সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, 'আমাদের সিদ্ধান্তে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। মজুরি নির্ধারণে গৃহীত সিদ্ধান্ত একতরফা।

আমরা এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছি। শীঘ্রই এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ জানাব। ' তিনি বলেন, 'শুধু একটি শ্রেণীর কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। মালিকরা সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা করে মজুরি দিতে পারবেন না। এতে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আর কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়বেন। ' নূ্যনতম মজুরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ, গার্মেন্টস শ্রমিক ও শিল্প রক্ষা জাতীয় মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে। এ সংগঠনগুলো মজুরি আট হাজার টাকা করার দাবি জানিয়েছে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.