২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিদ্রোহের প্রায় দুই বছর পর এ বাহিনীর নাম বদলে ফেলা হয়, যে বিদ্রোহে তখনকার মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ বিডিআরে কর্মরত অর্ধশতাধিক সেনা কর্মকর্তা নিহত হন।
২১৮ বছর আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে ‘রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন’ নামে এই বাহিনী যাত্রা শুরু করেছিল।
এই বাহিনীর সর্বশেষ নাম পরিবর্তনের পূর্বে ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর ‘বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশ বিল-২০১০’ জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান বিলে স্বাক্ষর করেন।
রাষ্ট্রপতির সই করার পরই সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে বিজিবি লিখতে শুরু করে বিভিন্ন সংবাদপত্র।
তবে নতুন পতাকা উত্তোলন এবং মনোগ্রাম উন্মোচন হয় ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি, যে দিন থেকে দাপ্তরিকভাবে বিজিবির নতুন পথ চলার দিন গণনা শুরু হয়।
২০০৯ সালের ওই রক্তাক্ত বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষী বাহিনী পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে বাহিনীর নাম, পোশাকসহ বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। নতুন আইনে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কেউ বিদ্রোহ করলে সর্বোচ্চ সাজা হবে মৃত্যুদণ্ড, আগের বিডিআর আইনে সর্বোচ্চ সাজা ছিলো ৭ বছর কারাবাস।
ইতিহাস ঘেঁটে দেয়া যায়, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৯৪ সালে ‘ফ্রন্টিয়ার প্রটেকশন ফোর্স’ গঠন করে।
পরে ১৭৯৫ সালের ২৯ জুন এর নাম পরিবর্তন করে ‘রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন’ রাখা হয়। এই বাহিনীকেই আদি বাহিনী মনে করে থাকে বর্তমানে বিজিবি।
১৮৬১ সালে পূর্বাঞ্চলের পুলিশ বাহিনীর নিয়মিত ও অনিয়মিত ১৪৫৪ সদস্য সমন্বয়ে ‘ফ্রন্টিয়ার গার্ডস’ নামে এ বাহিনী পুনর্গঠন করা হয়। তখন এর সদর দপ্তর ছিল চট্টগ্রামে। ১৮৭৯ সালে ‘স্পেশাল রিজার্ভ কোম্পানী' নামে এ বাহিনী পিলখানায় প্রথম ঘাঁটি স্থাপন করে।
১৮৯১ সালে এ বাহিনীর নতুন নামকরণ করা হয় ‘বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশ'। তখন একজন ইউরোপীয় সুবেদারের নেতৃত্বে এ ব্যাটালিয়নের চারটি কোম্পানি ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অংশ ঢাকা, ধুমকা, ভাগলপুর ও গ্যাংটকে স্থাপন করা হয়।
১৯২০ সালে এর জনবল ও শক্তি বৃদ্ধি করে ১৬টি প্লাটুন সমন্বয়ে ‘ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার্স রাইফেলস’ নামকরণ করা হয়। তখন এর প্রাথমিক কাজ ছিল সীমান্ত রক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় সহায়তা করা।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর পুনর্গঠিত এ বাহিনীর নামকরণ করা হয় ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল্স)।
কলকাতা মেট্রোপলিটন আর্মড পুলিশের একটি দল, কিছু সংখ্যক বাঙালি এবং সে সময়ের পশ্চিম পাকিস্তানের এক হাজার প্রাক্তন সৈনিক এ বাহিনীতে যোগ দেয়।
পরে আরো তিন হাজার বাঙালি নিয়োগ করে বাহিনীকে সুসংগঠিত করা হয়। দক্ষ নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনার প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী থেকে অফিসার নিয়োগ করা হয়। ১৯৫৮ সালে বাহিনীকে চোরাচালান দমনের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত এ বাহিনীর জনবল ১৩,৪৫৪ জনে উন্নীত হয়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকার পিলখানার তৎকালীন ইপিআর সদর দপ্তর আক্রমণ করে পাক-হানাদার বাহিনী।
বিজিবির ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়, ওই আক্রমণের পর এই বাহিনী সদর দপ্তর থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার বার্তা ওয়ারলেস যোগে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়া হয়। ফলে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এদেশের সৈনিক-জনতা।
এতে আরো দাবি করা হয়, প্রথম দিকে ইপিআরের বাঙালি সদস্যরা রণকৌশলগত কারণে বুড়িগঙ্গা নদীর অপর তীরে জিঞ্জিরায় প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পরবর্তীতে এ বাহিনীর ১২ হাজার বাঙালি সৈনিক অন্যান্য বাহিনী ও মুক্তিকামী মানুষের সাথে সংগঠিত হয়ে বাংলাদেশের ১১টি সেক্টরে ৯ মাস ব্যাপী সশস্ত্র যুদ্ধে নিয়োজিত থাকে।
‘এ বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাগণ পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ, গেরিলা যুদ্ধ ও শত্রুঘাঁটি নিশ্চিহ্ন করতে আত্মঘাতী আক্রমণসহ অসংখ্য দুর্ধর্ষ অপারেশন পরিচালনা করে। মুক্তিযুদ্ধে ইপিআরের ৮১৭ জন সৈনিক শহীদ হন। এদের মধ্যে শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ এবং শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফকে সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব 'বীর শ্রেষ্ঠ' পদক দেয়া হয়। এছাড়া আট জনকে ‘বীর উত্তম’, ৩২ জন ‘বীর বিক্রম’ ও ৭৮ জন ‘বীর প্রতীক’ খেতাব দেয়া হয়। ’
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ রাইফেল্সকে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০০৮ প্রদান করা হয়।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ০৩ মার্চ এ বাহিনীর নামকরণ করা হয় বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেল্স)।
বিজিবির ওযেবসাইটে বলা হয়, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি বাহিনীর সদর দপ্তর, পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হয়। ওই ঘটনার পর বাহিনী পুনর্গঠনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
জাতীয় সংসদে ২০১০ সালের ০৮ ডিসেম্বর ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন, ২০১০’ পাস হয়ে ২০ ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকর হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি বাহিনীর সদর দপ্তরে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি) এর নতুন পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন এবং মনোগ্রাম উন্মোচনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবাহিনীর নতুন পথচলা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।