আজ ৬ নভেম্বর দেশের প্রথিতযশা আলোকচিত্রী আমানুল হক-এর জš§ দিন।
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে ১৯২৫ সালে তিনি জš§গ্রহণ করেন। আজ তার আশি
তম জš§দিন উপলক্ষ্যে তার জš§স্থান শাহজাদপুরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালনের
আয়োজন করা হয়েছে। যুগান্তর স্বজন সমাবেশ ও পূরবী থিয়েটার শাহজাদপুর আয়োজন
করেছে তাঁর কীর্তিময় জীবনের ওপর আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
এছাড়াও পারিবারিকভাবে তাঁর স্মরণে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
১৯৫২-এর একুশে ফেব্র“য়ারি বাংলা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ
আলোকচিত্র বিশেষ করে পুলিশের গুলিতে মাথার খুলি উড়ে যাওয়া শহীদ রফিকের
একমাত্র দলিল-চিত্রটি যে আলোকচিত্রী ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে তুলতে
সক্ষম হয়েছিলেন তার নাম আমানুল হক। ভাষা আন্দোলন পরবর্তী নির্যাতনমূলক
পুলিশি তৎপরতায় মেডিকেল কলেজে ‘আর্টিস্ট ফটোগ্রাফার’-এর চাকরিতে ইস্তফা
দিয়ে দেশত্যাগী আমানুল হক কলকাতায় বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের
সান্নিধ্যে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে তার ‘ফটোগ্রাফার বন্ধু’ হিসেবে
পরিচিতি লাভ করেন এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রখ্যাত
চলচ্চিত্রবেত্তা মারি সিটন রচিত Portrait of a
Director-Satyajit Ray ( ইংল্যান্ড, আমেরিকা ও দিল্লি থেকে একযোগে প্রকাশিত) সুবৃহৎ জীবনীগ্রন্থে আমানুল হকের তোলা তাৎপর্যপূর্ণ বহু আলোকচিত্র স্থান পায়।
এ গ্রন্থে মারি সিটন আমানুলের বিস্তারিত পরিচিতি প্রসঙ্গে ‘Who is Who’
অংশে লেখেন,
Amanul Huq : an East Pakistani (East Bengal) Photographer of great talent... creater of great Photographs and a devoted friend of Ray...
পরে আমানুল সম্পর্কে সত্যজিৎ রায় লিখেছেন :
`... For over a generation
Amanul Haq has virtually recorded every aspect of life in his country revealing a deep love for Bengali life and culture in all its manifestations...’
উল্লেখ্য, ‘আমার দেশ আলোকচিত্রমালা’ ভিত্তিক
আমানুলের প্রকাশিতব্য সচিত্র গ্রন্থের সম্পূর্ণ Text রচনার ইচ্ছা সত্যজিৎ
রায়ের থাকলেও তাঁর অকাল প্রয়াণের কারণে আমানুল হক সেই দায়িত্বটি নিজেই
সম্পাদনে ব্রতী হন। অকৃতদার এ জীবনশিল্পী দেশের সামগ্রিক জীবনভিত্তিক
আলোকচিত্রের সুবৃহৎ প্রামাণ্য গ্রন্থ ছাড়াও নিজ অভিজ্ঞতাপুষ্ট সত্যজিৎ
রায়ের জীবন ঘনিষ্ঠ সচিত্র গ্রন্থ ‘প্রসঙ্গ সত্যজিৎ’ প্রকাশিত হলে যুগপৎ
ঢাকা ও কলকাতায় বিশেষভাবে সমাদৃত হয়।
২ মে ২০০১ সত্যজিৎ রায়ের ৮০তম জš§বার্ষিকীতে কলকাতায় সত্যজিৎ রায়
সোসাইটির উদ্যোগে দিল্লি থেকে প্রকাশিত গ্রন্থ SATYAJIT RAY AT WORK, Bijoya Ray Remembers, Photographs (35) by Amanul Haq বিশ্বখ্যাত নোবেল
বিজয়ী অমর্ত্য সেন এই গ্রন্থের মোড়ক উ›েমাচন করেন এবং ভারতের অগ্রণী
পত্রপত্রিকায় প্রশংসিত।
ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আমানুল হক গৃহীত আলোকচিত্র সংবলিত (ছবি ও কথায়)
‘একুশের তমসুক’ ও তার ইংরেজি সংস্করণ BANGLA SOUVENIR আমানুলের শ্রমশীল
চিন্তার ফসল। বিদেশে অবস্থানরত বাঙালি অভিবাসীদের তৃতীয়-চতুর্থ প্রজš§
যারা বাংলা ভুলে গেছে এবং ইংরেজি ভাষাভাষী বিদেশীদের কথা মনে রেখে রচিত
BANGLA SOUVENIR ইংরেজিতে লিখিত প্রথম এবং একমাত্র গ্রন্থ হিসেবে
স্বীকৃত।
আলোকচিত্রে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নানা উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে পঞ্চাশ
দশকের গোড়ায় UNESCO World Exhibition of Photograph -তে খ্যাতি লাভ এবং
একটি ছবি World's Best Photographs সংকলনে স্থান লাভ করে। এছাড়া
জার্মানির বিখ্যাত PHOTOKINA উৎসব উপলক্ষে Royal Photographic Society
আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে আমানুলের ছবি প্রদর্শিত ও বিদেশী
পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
পঞ্চাশের দশকে বাংলাদেশ সফররত গণচীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই কে
তৎকালীন যুক্তফ্রন্ট সরকার প্রধান আতাউর রহমান খান আমানুল হকের ‘আমার দেশ
চিত্রমালা’র অ্যালবাম উপহার প্রদান করেন এবং বিশাল গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে
মওলানা ভাসানী উপহার দেন এ দেশের কৃষকের সুবৃহৎ একটি আলোকচিত্র।
চৌ এন
লাই -এর আমন্ত্রণে তৎকালীন সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের নেতা ‘সংবাদ’ সম্পাদক
জহুর হোসেন চৌধুরী সে দেশের সাংবাদিক ইউনিয়নকে আমানুলের ‘আমার দেশ
চিত্রমালা’র অ্যালবাম প্রদান করেন।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘আমার দেশ
চিত্রমালা’র সুবৃহৎ অ্যালবাম ভারতের সফরররত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি
ইন্দিরা গান্ধীকে ব্যক্তিগত উপহার হিসেবে প্রদান করেন।
প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষা আন্দোলনে সামগ্রিক অবদানের
স্বীকৃতি হিসেবে প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী আবদুল লতিফ ও ‘আমার দেশ’
চিত্রমালার আলোকচিত্রী আমানুল হককে জাতীয় জাদুঘরের পক্ষ থেকে ‘ভাষা
সৈনিক’ হিসেবে সংবর্ধনা ও স্মারক ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। বাংলা একাডেমীতে
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের রূপকার কানাডার Mother Language Lovers of the World -এর রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালামকে প্রদত্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে
আমানুল হকও সংবর্ধিত হন। কপালে গুলি লেগে মাথার খুলি উড়ে যাওয়া শহীদ
রফিকউদ্দিনের বিশাল প্রামাণ্য আলোকচিত্রটি আমানুল হক বাংলা একাডেমীকে
প্রদান করেন।
আলোকচিত্র সংস্কৃতি ও আলোকটিত্রভিত্তিক ফটোসাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বিশেষ
অবদানের জন্য ‘জনজণ্ঠ প্রতিভা সম্মাননা পুরস্কার’ আমানুল হকের প্রতিভার
স্বীকৃতি।
বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সর্বোচ্চ সম্মানসূচক Fellow আমানুল হককে
পৃথিবীর বহু খ্যতিমান আলোকচিত্রীর উপস্থিতিতে Prince Claus of the
Netherlands Foundation--এর পক্ষে DRIK আয়োজতি ছবি মেলায় সংবর্ধনা ও Life Time Achievement Award -এ ভূষিত করা হয়।
‘ঢাকা ৪০০ বছর পূর্তি উৎসব নাগরিক কমিটি’ ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী,
জীবিত ব্যক্তিবর্গকে ‘ভাষা সৈনিক’ হিসেবে সম্মাননা ও সংবর্ধনা প্রদান
করে (২০০৯)।
আমানুল হক বাংলা একাডেমীর সম্মানসূচক ফেলোশিপ ২০০৯ লাভ করেন।
২০১১ সালে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বর্ণপদক ‘একুশে পদকে’
ভূষিত হন আমানুল হক।
আমানুল হক। জš§ : ৬ নভেম্বর ১৯২৫। মৃত : ৩ এপ্রিল ২০১৩।
পিতা : (মৃত) ডা. আবদুল হক। মাতা : (মৃত) হাজেরা খাতুন।
‘রানীকুটির’, পো
: শাহজাদপুর, জেলা : সিরাজগঞ্জ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।