প্রিয় রওশন আরাঃ
আজ রাতে অনেক চেষ্টা করেও আমি ঘুমাতে পারছি না। কেবলি মনে হচ্ছে, পাশের ঘরের বিছানায় আপনি শুয়ে আছেন। চোখ বন্ধ করতে পারছিলাম না ভয়ে। আবার আপনার কাছে যেতেও পারছিলাম না। সেই একই কারণ, ভয়।
তাই ভাবলাম, জেগেই যখন আছি, আপনাকে বরং একটা চিঠি লেখা যাক। জানি আপনি চিঠি পেতে খুব ভালবাসেন।
পৃথিবীর বেশ কিছু প্রান্ত থেকে আপনার কাছে নিয়মিত চিঠি আসে। এই ত্বরিৎ অনলাইনের যুগেও আপনি চিঠি পেতে পছন্দ করেন; আপনার ছেলেমেয়ে-আত্মীয়স্বজন ইমেইলের পাশাপাশি তাই চিঠিতেও যোগাযোগ করে সেটা আমি জানি। আমার কাছে কেন যেন চিঠিকে সবসময়ই এক ভূতুড়ে যাত্রা মনে হয়।
হাল্কা নীল বা সাদা খামের চারপাশে গাঢ় লাল-নীল বাঁকানো দাগকাটা এইরোমেইল, অথবা হলদে ছোট খাম। ভেতরে কত ভাব, কত মান-অভিমান, কত জরুরী শব্দ! দেশ বা বিদেশ-যে কোথাও থেকে কি অদ্ভুত উপায়ে প্রাপকের কাছে চলে আসে প্রেরকের বার্তা! ভিসা, টিকেট-কিছুরই দরকার নেই তার! সাত সমুদ্র তেরো নদী পাহাড় মরুভূমি ঝড়ঝঞ্ছা- কোনকিছুর বাধা মানে না! এই হিসেবে চিঠি নামক বস্তুটিকে আমার মানুষের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী মনে হয়! নরওয়ে, অ্যামেরিকার ইউটাহ, এবং সুইৎজারল্যান্ডে থাকেন আপনার ছেলেমেয়েরা; পুরনো এ্যালবামে বাচ্চাদের সাথে তাদের হাস্যোজ্জ্বল ফটোগ্রাফ, গ্র্যান্ডমার কাছে কচি হাতের লিখা, আঁকা ছবি আমিও দেখেছি। রায়েনের গ্র্যাজুয়েশন, অ্যাভেরির ইণ্টারস্কুল লনটেনিস, কিম্বার্লির পিয়ানো কনসার্ট, ছোট্ট ব্রিয়ানার ট্যাপ ড্যান্সিং, হ্যালোউইনের ভূতুরে কস্টিউম, আর্ভিনের প্রথম দাঁত পড়া আর টুথ ফেইরীর কাছে থেকে পাওয়া উপহার, ডিজনীল্যান্ডে মনো-রেইল, সাবমেরিন, ডাম্বো দ্য এলিফেন্ট, প্রিন্সেস ফেয়ার, স্যান্টা প্যারেড, আফ্রিকান সাফারি-আরও কত কি! "পাগল ছেলের কান্ড দ্যাখো, এতো বরফের ভেতর ক্যাপ পড়তে ভুলে গেছে; এম্নিতেই ঠান্ডার ধাত!" প্রতিটা ছবির সাথে এরকম কত মন্তব্য! আপনার হয়ে তাদের কাছে অনেকবার চিঠি লিখেছি, কারণ এই নব্বই-ঊর্ধ্ব বয়সে আপনার হাত কাঁপত, কলম ধরতে পারতেন না ঠিকমত। ভাইটামিন, ওষুধ, এক্সেসরিস কি কি লাগবে তার লিস্টি, পুরো বাড়ী কন্ট্রাক্টর দিয়ে নতুন ম্যাটগ্রে পেইন্ট করিয়েছেন তার বর্ণনা, জ্বরে কেমন ভুগেছেন তার সবিস্তার ফিরিস্তি। জিপিওতে পোস্টও করে দিয়েছি কখনো।
লিখতে না পারলেও আপনাকে প্রায়ই দেখতাম সাদা কাগজের উপর পেন দিয়ে একটানা কসরত চালিয়ে যাচ্ছেন-কিছু লেখার জন্য-নিজের, স্বামীর, অথবা ছেলেমেয়েদের নাম। ফিজিক্যাল থেরাপিস্টের নির্দেশনার থেকেও, নিজ অন্তরের তাগিদই বেশি ছিল বলে আমার ধারণা রওশন আরা!
এই যে আমি এখন ডেস্কে বসে আপনাকে লিখছি, একইসাথে আপনাকে কল্পনাতেও দেখছি। তিনতলার স্টাডির বিশালাকায় ভারি কাঁচের জানালা দিয়ে নীচে তাকিয়ে আছেন, হুইলচেয়ারে বসে। হেইযেলনাটের সুগন্ধি ছড়ানো সদ্য-ব্রু করা কালো কফির সুদৃশ্য কাপ সামনে নিয়ে, ধূসর পঞ্চোটা আলতো করে পিঠে ছড়ানো। গোসল-পরবর্তী হালকা ভেজা শুভ্র পাতলা চুল, ফ্রেমের মতই, মানচিত্রসম বলিরেখাময় মুখের চারপাশ আগলে রেখেছে।
মেইল এলো বলে। কাঠগোলাপের গাছটা সেই জানালার দিকে বেশি বেড়ে গিয়েছিল, জানালা থেকে ঠিকমত মেইলবক্সটা দেখা যাচ্ছিলো না; ফুলেল স্বচ্ছন্দ বিশাল ডালটাকে সেজন্য কি অবলীলায় কেটে দিতে বলেছিলেন রহমানকে! আপনার স্বামীর নিজ হাতে লাগানো আপনার অতিপ্রিয় সাদা-হলদে কাঠগোলাপের গাছ! আমি প্রায়ই স্টাডিতে যেতাম; নিত্যনতুন বই নিয়ে আসতাম, সেইসাথে শুকনো নাটস, ডার্ক চকোলেট আর কফিতে ভাগ বসাতাম। ডিপ্লোম্যাট স্বামীর সাথে পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছেন, থেকেছেন-সেইসব অনবদ্য গল্প ছিল বাড়তি পাওয়া। হলওয়ের একপাশ জুড়ে হাজারো ছবি আর স্যুভেনিরের গ্যালারি যেন! উইন্ডচিল (আপনি উচ্চারণ করতেন শিল, ওভাবেই নাকি বলা নিয়ম) কাকে বলে তা আপনার কাছেই জেনেছি, শুনেছি মেরু অঞ্চলের অরোরা বোরিয়ালিসের কথা। Fall back, Spring Forward রাইমটা দিয়ে বছরের দু'টি সময় কিভাবে পশ্চিমারা দিনের আলো সঞ্চয় করে, ট্রাফালগার স্কয়ারের ইতিহাস, আমিশদের নিরামিষ জীবনযাত্রা, স্কুইডের স্যালাড-আপনার ভান্ডারে কত অজস্র কাহিনী!
প্রিয় রওশন, আপনার ভালবাসা ছিল অদৃশ্য, পর্দাঘেরা।
তবে অনুভব করতে আমার বিন্দুমাত্র অসুবিধে হত না। মফস্বলের ছোট সীমানা ছেড়ে যখন পাঁচবছর আগে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে এলাম, নিজ থেকে আব্বুর সাথে কথা বলে, খানিকটা পীড়াপীড়ি করেই যেন, আপনার সাথে থাকতে বলেছিলেন আমায়। দূরসম্পর্কের আত্মীয় আপনি, সারাজীবন পরিবার নিয়ে বিদেশে থেকেছেন, দেশের স্বজনদের সাথে যোগাযোগ ছিল কম। স্বামী মারা যাওয়ার পর নিজভূমে থাকবেন মনস্থ করলেন, বনানীর পুরনো বাসাটাতে। চাইতেন আপনাকে নাম ধরে ডাকি; বলতেন, নাম আছে ডাকার জন্যই, নয়ত সম্বোধনের ভিড়ে একদিন নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন, ভুলে যাবেন নিজের নাম।
বলেছিলেন, এব্যাপারে আপনার কোন প্রেজুডিস নেই। আমি অবশ্য তেমন কিছুই সম্বোধন করতাম না ফুপু-সম্পর্কিত আপনাকে, আজ যদিও নাম ধরেই লিখছি। আমার সাথে কথা বলতে চাইতেন খুব। স্থির ন্যুব্জ দেহখানি নিয়ে শেষ বিকেলের হলদে আলোয় হয়ত অন্যদের মাঝে হারিয়ে-ফেলা-নিজেকে খুঁজে ফেরাই আপনার ভাল লাগত! বলতেন, কৈশোরের চঞ্চলতা আপনার ভাল লাগে, নির্জনতা একসময় অনেক আকাঙ্খিত হলেও এখন আর টানে না। তারুণ্যের উচ্ছল হাসি, অযথা বকবকানি, অন্যদের সঙ্গ আপনি ভালবাসেন।
কখনো আমাকে ডাকতেন বুচুবুড়ি বলে, '"আমার প্রাণের 'পরে চলে গেলো কে, বসন্তের বাতাসটুকুর মত" গানটা গাও তো বুচুবুড়ি!' আপনার চোখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে গাইতাম আমারও পছন্দের এই গানটি। ভারী চশমার আড়ালে লুকানো বয়সের ভারে নিষ্পলক অভিব্যক্তিহীন দু'চোখ বেয়ে ঝরার সময় অশ্রু অলখে জানিয়ে যেত, পৃথিবীর নিয়ম অস্বীকার করে শুধুমাত্র হৃদয়, কারণ যৌবনপ্রাপ্ত হওয়ার পর তার বয়স আর বাড়ে না।
প্রায়ই আমাকে জিজ্ঞেস করতেন, অ্যাই মেয়ে, নিজের ছোট ঘরটাতে বসে সারাদিন কি করো? উত্তরে লাজুক হাসতাম শুধু। আমি সারাদিন কি করি? এ যে আমার গোপন কথা! তবে আজ বলতে কোন বাধা নেই রওশন। যখন ঘরে থাকি তখন আমি সবকিছুই করি।
অনেকদূরের কোন কিছু নিয়ে ভাবতে ভাল লাগে আমার- এলিয়েন, সুপারনোভা অথবা রিক। বিছানায় শুয়ে নিজের নাম বাতাসে লিখি, একবার ডান থেকে বামে সোজা করে, তারপর বাম থেকে ডানে উল্টো করে। কখনো নানাভাবে চুল আঁচড়াই, আয়নায় দেখি, আবার উলটাপালটা করি। নিজেকেও উল্টেপাল্টে দেখি। এই গোছানো পৃথিবীটাকেও মাঝেমাঝে দু'হাতে ধরে উল্টে দিতে ইচ্ছে হয়।
বন্ধুদের মেসেজগুলো পড়ি, কখনো সেমিনার করি, পাওয়ারপয়েন্টে নিজের প্রেজেন্টেশান প্র্যাকটিস করি, কখনো ব্রায়ান অ্যাডামস, কখনো টাইলর সুইফটের সাথে গলা মেলাই, গ্রীনটি বানিয়ে চুমুক দিই, ইয়োগা করি। রওশন, আপনি প্রায়ই একসাথে নাশতা খেতে ডাকতেন, যেটা মাঝেমাঝে আমার কাছে বাড়াবাড়ি মনে হত। আপনি তো আর জানতেন না, হেমন্তের সকালে চাদরমুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা আমার আশৈশব বিলাসিতা! কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে এই প্রিয় বিছানায় প্রিয় নীলাভ-সবুজ চাদর টেনে আমার পৃথিবীর সাথে আপনার পৃথিবীর ভেতর এক অদৃশ্য দেয়াল বানাতাম। আপনার পৃথিবীর পানির একটানা ঝরঝরে আওয়াজ, ওয়াশারের মৃদু গুঞ্জন, কিচেনের টুং টাং, নিচের বাগানে মালিদের ট্রিমিংএর যান্ত্রিক একঘেয়ে শব্দ থেকে আমার পৃথিবীর সবুজাভ নিস্তব্ধ বন অনেক অনেক বেশী আকাঙ্খিত ছিল। রিকের হাত ধরে সেই বনে নিরলস ঘুরে বেড়াই আমি, গভীর আশ্লেষে একসময় তাকে বুকে টেনে নিই।
চাদর ভেদ করে আসা আবছা আলোছায়ায় স্বচ্ছ আধিভৌতিক এই আমি, অবসাদগ্রস্ত এই আমি, অপার্থিব এই আমি কৈশোরের রঙধনু খোলস ছেড়ে ক্রমশঃ নারী হয়ে বেড়ে ওঠি, আপনার অতিবাস্তব পৃথিবীর বিপরীতে আমার অতিপ্রিয় অপরবাস্তব পৃথিবীতে।
প্রিয় রওশন আরা, আপনি মৃত্যুকে ক্রমাগত অস্বীকার করে গেছেন, অনেকদিন যাবৎ। সকাল-দুপুর-বিকেলের কৌণিক আলোতে বদলে যাওয়া ডাইনিংরুমে টাঙ্গানো সেই অদ্ভুত বিরাট পেইন্টিং এর মত, চারপাশের জীবনের উল্লাসকে কড়ে আঙ্গুল দেখিয়ে, প্রাণের অকার্যকারিতাকে অনবধানে স্বীকার করে নেয়া কালোত্তীর্ণ সেই জড়জীবনের মত। গতবছর, সেই যখন আপনার ১০৪ ডিগ্রী জ্বর হল তখন, তারও আগের তিনবছরে, যখন দু'বার স্ট্রোক হল, সবাই ভেবেছিলাম আপনার সময় হয়ত শেষ! চিৎকার, ছোটাছুটি, ছেলেমেয়েদের কাছে লং ডিস্ট্যান্স কল, ডাক্তার- সব উপেক্ষা করে আপনি তবু বেঁচে ছিলেন, হয়ত আপনিও সময়কে অস্বীকার করতে চেয়েছিলেন। কে জানে? জানেন রওশন, মৃত্যুকে আমি সবসময় ভয় পাই।
ছোটবেলায় দাদুর মৃত্যুকালে জেনেছি দম নেয়া যায় না তখন, একফোঁটা বাতাসও না। গ্রামের পুকুরে সাঁতার শেখার সময় হাবুডুবু খেতে খেতে দম আটকানোর অনুভূতিটা কেমন জেনে গেছি ততদিনে। মনে আছে, একদিন মা'কে বলেছিলাম, ঘুমোতে আমার ভয় লাগে, যদি ঘুমের ভেতর মরে যাই?! স্বর্গের মত মহাঈপ্সিত স্থানকেও তখন ভয়াবহ মনে হত। মা অভয় দিত সবসময়ই; একদিন বলেছিল, মৃত্যুর আশিভাগ অংশই ঘুম, এতে ভয়ের কিছু নেই।
প্রিয় রওশন, এমন না যে, এইমুহূর্তে আমি ভাবছি আপনি ঘুমিয়ে আছেন।
এই যেমন, আজরাত আটটায় জানা গেল আপনি মারা গেছেন। ডাক্তার বলেছেন, ঘুমের ভেতর আপনার মৃত্যু হয়েছে। এই কথাটাকে আমি ঠিকমত বুঝতে পারি না, এতো নিশ্চিতভাবে ডাক্তাররা এইকথা কিভাবে বলেন? হতে পারে অনেকক্ষণ যাবত আপনি খারাপবোধ করছিলেন, তাই ঘুম থেকে জেগে গিয়েছিলেন, তারপর মৃত্যুবরণ করেছেন! হয়ত বিছানার সামনাসামনি দেয়ালে টাঙ্গানো আপনাদের আদ্যিকালের সেই বিয়ে-পরবর্তী প্রমাণসাইজের রোম্যান্টিক পেইন্টিং এর দিকে তাকিয়েছিলেন অনেকটা সময়! ভাবছিলেন আপনার স্বামীর সাথে হয়ত দেখা হতে যাচ্ছে খুব শিগগীরই! হতে পারে নার্সকে ডেকেছিলেন! টিভির আওয়াজকে ছাপিয়ে হয়ত তার কানে পৌঁছেনি আপনার ক্ষীনস্বর! হয়ত... কে জানে! রোববার কি মৃত্যুদিন হিসেবে বিশেষভাবে জনপ্রিয় রওশন আরা? প্রিয়জনদের জন্য ছুটির দিনের জমানো সব প্রতিজ্ঞাশেষ, আরেকটি ভয়াবহ কর্মব্যস্ত সপ্তাহ শুরুর দিনে সবাইকে বিদায় জানানো? আপনি তো অনেক জানেন, পৃথিবী ঘুরেছেন, জেনেছেন অনেক কিছুই। হয়ত উত্তর দিতে পারতেন, বেঁচে থাকলে।
সারা পৃথিবী জুড়ে আমিও ঘুরেছি, পৃথিবীর প্রায় সবগুলো দেশ, অতল মহাসাগরের নীচে, অন্তরীক্ষে -কোথায় নয়! আপনার চেয়েও অনেক অনেক বেশি জায়গায়! আমার ছোট ঘরে বসেই ল্যাপটপ, গুগল আর্থ, বই আর নিঃসঙ্গ আমাকে নিয়ে আমি ছুটে বেড়িয়েছি পৃথিবীময়।
কখনো রিকের হাত ধরে; কখনো একা, নিঃশব্দে। জানেন, অনভিজ্ঞ এই আমি স্পেনে একবার ড্রিঙ্ক করে ফেলেছিলাম! বারে বসে এতো কথা বলছিলাম যে পাশের লোকেরা হো হো করে হেসেছিল। মোহাবি ডেযার্টে পথ হারিয়েছিলাম সেবার, নেটওয়র্ক ছাড়া জিপিএস কাজ করছিল না। নুরেমবার্গে কংগ্রেস হলের সামনে ল্যাম্পপোস্টগুলোকে ঘিরে নেচেছি আমি, টরন্টোর সুউচ্চ সিনএন টাওয়ারের উপরকার সত্তর মিনিটে ৩৬০ ডিগ্রী-ঘূর্ণ্যমান কাঁচের রেস্টুরেন্টে বসে রিকের সাথে "স্পেশ্যাল লাঞ্চ ফর ট্যু" উপভোগ করতে করতে পুরো শহরটাকে দেখেছি! ইস্তানবুলের তীর্থযাত্রী হয়ে সুলতানাহমেৎএ, ক্রুজে করে মেক্সিকোর কানকুন, গ্রেট বেরিয়ার রীফে স্নরকেলিং, চীনের সিচুয়ান প্রদেশের জায়ান্ট পান্ডার স্যাঙ্কচুয়ারি, এমাজন রেইনফরেস্ট... শতশত শহরের প্রাচীর গলে, শতশত ভবন, মনুমেন্ট, টাওয়ার, হাট-বাজার, বিস্তৃত রুখু প্রান্তর, প্রেইরী, পাহাড়পর্বত, বরফাচ্ছন্ন দ্বীপ-বিস্তর ঘুরেছি আমি! রওশন জানেন? কম খরচে, সঙ্গীবিহীন, এভাবেও বেড়ানো যায়! আপনার মত সশরীরে হয়ত যাইনি কোথাও, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য সে সবকিছুর সংস্পর্শ হয়ত পাইনি, হয়ত নিজহাতে আমার রিককে ছুঁয়ে দেখা হয়নি আজো! হয়ত বিমর্ষ আমি, শুধু উদ্ভ্রান্তের মতই, ছুটে গেছি সবখানে; কিন্তু জানি, এভাবেও বেড়ানো যায়! প্রিয় রওশন, আপনার নতুন বসতি কোথায় জানতে পারলে দেখে আসার চেষ্টা করতাম আপনাকেও!
এই চিঠিটা আগামীকাল বনানী গোরস্থানে আপনার কবরে আমি দিতে চাইব, জানি না পারব কিনা। তবে চিঠিটা আপনি পড়বেন সেই আশাতেই লিখছি।
কখনো মুখ ফুটে বলা হয়নি যদিও, জানবেন আপনাকে অনেক ভালবাসি। অবশ্য আমার বিশ্বাস আপনি জানেন এই কথা। বিদায় রওশন আরা, বিদায় আমার ৯৩ বছর বয়সী বন্ধু! ভাল থাকুন, যেখানেই থাকুন না কেন!
ইতি,
আপনার আদরের বুচুবুড়ি,
লানা ।
নভেম্বর ০৩, ২০১৩
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।