মেধাহীন ব্লগারের ব্লগে স্বাগতম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম http://www.facebook.com/kalponikvalo
২১শে ফেব্রুয়ারী
একজন বাংলাদেশী হিসেবে জাতিগতভাবে গর্ব করার মত যে অল্প কয়েকটি বিষয় আমাদের আছে তার মধ্যে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন অন্যতম। সালাম, বরকত, রফিক, জাব্বার সহ নাম না জানা আরো অনেক শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছিলাম মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার। পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য এই ধরনের ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের ঘটনা খুবই বিরল। তাই ২১ শে ফেব্রুয়ারী একাধারে আমাদের জন্য প্রচন্ড শোক এবং গৌরবের একটি অনন্য অধ্যায়।
বিশ্ববাসীও আমাদের এই আত্মত্যাগের স্বীকৃতি দিয়েছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষনা করেছে। সেই থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেশে এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
গুগল ডুডলসঃ
ডুডল হচ্ছে মূলত একধরনের লক্ষ্যবিহীন এলোমেলো আঁকাআকি বা স্কেচ। অনেক সময় আমরা খাতার পাশে বা কোন কাগজের সাইডে অহেতুক যে অনির্দিষ্ট বস্তুগুলো আঁকার চেষ্টা করি, সেগুলোর আভিধানিক নামই ডূডল।
আমাদের সেই সব অর্থহীন আঁকাআকি বা ডুডলের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল হয়ত কোন কমিক চরিত্রকে নিজেদের মত আঁকা কিংবা ক্লাসের কোন বদরাগী স্যার বা ম্যাডামের ছবি আঁকার চেষ্টা করা অথবা নিতান্তই লক্ষ্যবিহীন কোন কিছু ডিজাইন করা। ছেলেবেলার সেইসব মজাদার অর্থ বিহীন আঁকাআকির আমেজটি ধরে রাখার জন্য গুগল সার্চ ইঞ্জিন ১৯৯৮ সালের বার্নিং ম্যান ফেস্টিভ্যালে “গুগল ডুডলস” নামে একটি অভিনব জিনিস তার হোম পেজে সংযুক্ত করে। সারর্গেই ব্রিন এবং ল্যারী পেইজ নামের গুগলের দুই প্রতিষ্ঠাতা সর্বপ্রথম গুগল ডূডলসের ডিজাইন করেন। তারপর থেকে পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন উৎসবে বা বিখ্যাত কোন ব্যক্তির স্মরনে কিংবা বিশেষ কোন দিবসে উপলক্ষে গুগল তার লোগোতে সংশ্লিষ্ট কারন সংযুক্ত করে নানারকম মজার পরিবর্তন নিয়ে আসে যা বর্তমানে বেশ জনপ্রিয়। এর মাধ্যমে পৃথিবী জুড়ে হাজার হাজার গুগল ব্যবহারকারী ঐ নির্দিষ্ট দিন সম্পর্কে জানতে পারেন এবং অনেক সময় অনেক অজানা বিষয়ও সাধারন ব্যবহারকারীদের সামনে উঠে আসে।
একদল দক্ষ অংকনশিল্পী এই ডুডল তৈরী করার কাজে নিয়োজিত আছেন। এদেরকে বলা হয় ডুডলারস। বিভিন্ন দিবস বা উপলক্ষকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে গুগল কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত ডূডলের পাশাপাশি নতুন কোন দিবস বা উৎসবকেও ডুডলের আওতায় আনা সম্ভব। তার জন্য গুগলের ডুডল টিমকে ইমেইলের মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠাতে হয়। গুগল টিমের সদস্যরা প্রস্তাবগুলো যাচাই করে তারপর ব্যবস্থা গ্রহন করেন।
একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার ইতিকথাঃ
২০০০ সাল থেকে ২১ শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক ভাবে পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ গুরুত্বের সাথে এই দিবসটি পালন করে থাকে। এই ধরনের একটি আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা অবশ্যই চেয়েছিলাম গুগল কর্তৃপক্ষ এই দিবসকে কেন্দ্র করে একটি ডুডল প্রকাশ করুক। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পাবার এক যুগ পরেও গুগল কর্তৃপক্ষ এই দিবসটি পালন করার ব্যাপারে সঠিকভাবে তেমন কোন উদ্যোগ নেয় নি। বিষয়টি অবশ্যই আমাদের জন্য কিছুটা হলেও হতাশাজনক।
যেহেতু পৃথিবীজুড়ে নানা দিবস এবং বিশেষ কোন দিনের ব্যাপারে খুব সহজেই গুগল ডুডলের মাধ্যমে জানা যায়, সেহেতু আমরাও মনে করি, ২১ শে ফেব্রুয়ারী নিয়ে যদি গুগল কর্তৃপক্ষ কোন ডুডল প্রকাশ করে তাহলে এই দিনটিতে আত্মত্যাগের ঘটনা সম্পর্কে মানুষ সহজেই জানতে পারত এবং নিজ নিজ মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার অনুপ্রেরনা খুঁজে পেত।
যেহেতু গুগলের ডুডুলারস টীমকে বিশেষ কোন দিবস নিয়ে ডুডল প্রকাশ করার ব্যাপারে অনুরোধ করা যায় এবং তারা পরামর্শও আশা করে, সেহেতু আমরা সবাই যদি সম্মিলিত ভাবে প্রচেষ্টা চালাই তাহলে ইনশাল্লাহ আগামী বছর থেকে গুগল কর্তৃপক্ষ বিশেষ ডুডল প্রকাশের মাধ্যমে ২১শে ফেব্রুয়ারী তথা আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস পালন করবে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই এই ব্যাপারটি নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এবার মনে হয় সময় এসেছে সবার সম্মিলিত একটি প্রচেষ্টার। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা যদি সফল হতে পারি, তাহলে নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য তা হবে একুশের মর্যাদার প্রতি আরো একটি অনন্য অর্জন এবং আনন্দের একটি ব্যাপার।
আপনি কিভাবে এই সামগ্রিক ব্যাপারটি বিশাল ভূমিকা রাখতে পারেন?
আপনি খুবই সহজেই এই ব্যাপারটিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে সামান্য সময় ব্যায় করে গুগল ডুডল টিমের কাছে একটি মেইল পাঠাতে হবে। এই মেইলের কোন নির্দিষ্ট ফরমেট নেই। তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি আপনার মেইলে একুশে ফেব্রুয়ারীর গুরত্ব এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ব্যাপারটি তাদের সামনে অল্প কথায় পয়েন্ট আকারে তুলে ধরতে পারেন। তারপর গুগল ডুডল ক্যাম্পেইন থেকে নির্বাচিত চূড়ান্ত লোগোটি মেইলে সংযুক্ত করে তাদের কাছে পাঠিয়ে দিন।
এই সংক্রান্ত মেইল এ্যাড্রেসটি হলোঃ
সম্প্রতি ফেসবুকে অনেকগুলো ইভেন্ট ক্রিয়েট করা হয়েছে। সেখানেও এই সম্পর্কে আপনি তথ্য পেতে পারেন। অনেকগুলো ইভেন্টে বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর ফরম্যাট দেয়া আছে যা অনুসরন করে আপনি খুব সহজেই গুগল টিমকে মেইলটি পাঠাতে পারেন।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে যে ইভেন্টটিতে যোগদান করেছি তার ফেসবুক লিংক পেতে
এখানে ক্লিক করুন।
সেখানে উল্লেখিত ফরম্যাটি অনেকটা এই রকমঃ
অথবা আপনি এই ভাবেও লিখতে পারেনঃ
আপনার জিমেইল একাউন্টে লগইন করুন।
জিমেইল না থাকলে নিজের নাম দিয়ে নতুন জিমেইল একাউন্ট করে নিন।
২. এবার মেইল কম্পোজ কমান্ড দিন। তারপর…
৩. To (বরাবর)-এ লিখুন :
৪. Subject-এ লিখুন: Request Google Doodle for 21 February – International Mother Language Day
৫. Description-এ:
Dear Doodle Team,
Please give a Doodle for 21 February – International Mother Language Day.
For instance please you have a look of these URL’s for consideration that this day had already been got international recognition:
UNESCO Link:
http://goo.gl/q88xW
United Nation Link:
http://goo.gl/xMcsf
Wikipedia Link:
http://goo.gl/9Xikq
We wished to select a doodle logo for our own made, if you wish to select please take a look for it at attachment. If you want to redesign the Doodle it will be appreciated too.
Thanks
Your Name (আপনার পুরো নাম ইংরেজীতে)
A Proud Citizen of Bangladesh.
৬. http://on.fb.me/21febDoodle
তারপর উপরের লিংক থেকে ডুডল প্রতিযোগীতায় বিজয়ী লোগোটি ডাউনলোড করে নিন এবং এ্যাটাচমেন্টে আপলোড করে দিন। তারপর সেন্ড করুন।
শেষকথা
বাংলাদেশে ভূখন্ডের জনগোষ্ঠী, ইতিহাস এবং সংস্কৃতির সাথে একুশের সম্পর্ক মৃত্যূহীন।
অবশ্যই এর উত্তরাধিকার বহন করতে হবে নতুন প্রজন্মকে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। তাই আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একুশের চেতনাকে সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, এই ভাষাচেতনা বহন করে আমাদের এই প্রজন্মই জাতির জন্য বয়ে আনতে পারে সম্মান এবং গৌরবের নিত্য নতুন প্রেক্ষাপট। আর তাই সম্ভব হলে এই বিষয়টি অন্যদের সাথে শেয়ার করুন, বুঝিয়ে বলুন, অন্যদের উৎসাহিত করুন। ইনশাল্লাহ আমরা এবার সফল হতে চাই।
তথ্যসুত্রঃ
ছবিঃ ইন্টারেন্ট।
নির্বাচিত এই ডুডলটি ডিজাইন করেছেন তানজিল ইসলাম আমাদের সকলের পক্ষ থেকে তাকে জানাই অনেক অভিনন্দন।
তথ্যগত সহায়তাঃ উইকিপিডিয়া এবং গুগল ডুডলস।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।