আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্লগ দিয়ে হুজুরদের ইন্টারনেট চালানোর ব্যাখ্যা

মুসাফির। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত গন্তব্যে। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ি দেবার দুরন্ত প্রয়াস।

নেট ব্যবহারকারী শাহবাগী ব্লগার-ফেসবুকারদের অজ্ঞতা, মূর্খতা ও সঙ্কীর্ণতা সীমাহীন। এরা মনে করে বাকি দুনিয়া মূর্খ- এটাই ওদের সবচেয়ে বড় মূর্খতা।

কেননা জ্ঞান একজন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে তার নিজের দিকে ফেরায়। গাছে ফল ধরলে যেমন এর শাখাগুলো ঝুঁকে পড়ে, তেমনি জ্ঞান মানুষকে নত হতে শেখায়। আর এরা অনুসন্ধান করে অন্যদের দোষত্রুটিগুলো। পরিণামে নিজেদের যে কি এবং কতটুকু ক্ষতি হচ্ছে তা ওরা ভাবতেও পারে না। এদের একটা বিশাল অংশ বাস্তব দুনিয়া থেকে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পারিবারিক-সামাজিক ন্যায়-নীতিবোধ, ভালোবাসা ইত্যাদি উপলব্ধি করার সেন্স আর আগের মত কাজ করে না। অতীত বন্ধু-বান্ধব, গুরুজন, আত্মীয়স্বজনকে সময় দেয়া হয়ে উঠে না, বিশেষ করে যারা নেট জগতে নেই। তবে হ্যাঁ, যদি নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করা যায় তা খুবই ভালো। কিন্তু এটা বেশ কঠিন এবং নিয়ন্ত্রণশক্তি বা জ্ঞান সম্ভবত অনলাইনের বাইরে থেকেই অর্জন করতে হবে। আর কওমিদের সফলতা এখানেই।

যারা গুরুত্বপূর্ণ ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব, চিন্তাশীল, লেখক, রাজনীতিক, সমাজগবেষক বা অন্যান্য বিশেষ কাজে নিয়োজিত/নিমগ্ন, তারা সাধারণত ব্লগ-ফেসবুকে খুব কমই সময় দেন। আর ব্লগার-ফেসবুকারদের দৃষ্টিতে ব্লগ-ফেসবুকে না থাকা মানেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। সেলুকাস!! অথচ উপরোল্লিখিত সম্মানিত ব্যক্তিদের অনেকে কম্পিউটার-ল্যাপটপ দূরের কথা, সামান্য ডিজিটাল মোবাইলও ব্যবহার করতে পারেন না। মিসকল দিলে সহকারীকে দেখাতে হয়। তাদের অনেকে নেট ব্যবহার করলেও একান্ত প্রয়োজনের বাইরে এতে সময় দেন না, আর এটাই কাঙ্খিত।

প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সময় দেয়া একদমই উচিত নয়। ইন্টারনেট বিশেষত ব্লগ-ফেসবুক অতিরিক্ত ব্যবহার করা একটা নেশা, একটা রোগ। এ থেকে মুক্তির পথও আবিষ্কার করতে হবে। নইলে জাতির বিশাল অংশের যুব-তরুণ প্রজন্ম মানসিক প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হবে। শাহবাগপন্থীদের গার্জিয়ানদের বিষয়টি ভেবে দেখতে আমি অনুরোধ করব।

প্রচুর খাটি ফেসবুকাররা ব্লগ সাধারণত পড়েন না, বরং ঘৃণা করেন। অধিকাংশ ব্লগাররাও তেমনি। আবর এক ব্লগ-সাইটের নিয়মিত ব্লগার অন্য ব্লগ সাইটের খবর রাখার সময় পান না। ফেসবুকে যারা বিশেষ গ্রুপ করেন, তাদের অনেকেই বাকি ফেসবুক জগৎ সম্পর্কে অজ্ঞ। আর যদি কেউ অল সাইট কাভার করেন, তাহলে নিশ্চয় বাস্তব দুনিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক এক প্রকার বিচ্ছিন্ন।

কারণ মানুষের সময় ও ক্ষমতা খুবই সীমিত। যারা মনে করেন “তথ্যই জ্ঞান”, তাদের বলি, আপনি কতটুকু তথ্য ধারনে সক্ষম? শুধু আপনার ছোট্র এলাকাটিতে প্রতিদিন যা ঘটছে, তার সবগুলো খবরও রাখা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। তাহলে আপনি কিভাবে জ্ঞানী হবেন? অথচ দাবি করেন কি? আপনাকে কেউ অজ্ঞ বললে....। বাস্তব কারণেই সমাজের বিশেষ একটা শ্রেণী অনলাইনে পারদর্শী হবে, সবার প্রয়োজন নেই। অথচ ওই শাহবাগী ব্লগারদের দাবি, সবার করতে হবে।

ইদানিং নেট ব্যবহারকারী মাদ্রাসার ছাত্র প্রচুর। সংখ্যাটা দিনদিন বাড়ছে দ্রুত গতিতে। আবার নেট ব্যবহার করে না, ব্লগ-ফেবু বুঝে না- কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকও প্রচুর। তাছাড়া আধুনিক প্রযুক্তিগুলো আমাদের দেশে অনেকেই বুঝেন না, সবার বুঝা শর্তও নয়। আই.এ পাশ অনেকে মিসকল বুঝেন না, অনেক লেখক-কলামিস্ট পিসি চালাতে পারেন না, এখনও হাতে লিখে পাঠান।

তাই বলে তারা মূর্খ? হুজুরদের প্রতি (ব্লগ দিয়ে ইন্টারনেট চালানো) যে কথাগুলো বলা হচ্ছে তা অবশ্যই অনেক বাড়িয়ে, মাঞ্জা লাগিয়ে। যারা শাহবাগী নাস্তিকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন তাদের মধ্যে অনেক আলেম-হুজুর ফেবু-ব্লগ না বুঝাটাও অস্বাভাবিক নয়। তবে তারা মূল মিনিংটা অবশ্যই বুঝেন। হুজুরদের নামাজ-রোজা আছে, সারাদিন প্রচুর কাজ-কাম আছে। অনেকেই অবসর পান না।

আবার অনেকে নেটের ক্ষতিকর দিকগুলোর কারণেও এড়িয়ে চলেন। এসব কি শাহবাগীদের মাথায় ঢুকবে? যাহোক, তারপরও একটা জিনিস বলা যায়, সেই দিন হয়তো বেশি দূরে নয়, যখন ব্লগ দিয়েই ইন্টারনেট চালানো হতে পারে। অর্থাৎ ইন্টারনেটের জন্য আলাদা লাইন বা চার্জ লাগবে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.